ফুচকা সন্দর্ভ : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ অক্টোবর ২০১৮ | ১৮০৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
ফুচকার জন্মরহস্য কেউ জানে না। এমনকি তা জানতে কারুর সেরকম আগ্রহও দেখিনা। সাবেকি ফুচকার তিনটি বাসস্থান। বম্বে, থুড়ি মুম্বাইতে তার নাম পানিপুরি, দিল্লিতে গোলগাপ্পা আর কলকাতায় ফুচকা। পানিপুরি নামটি সমগ্রতই ব্যাকরণসম্মত। যে পুরির ভেতর পানি থাকে - এরকম ব্যাসবাক্য করলে স্বয়ং পাণিনিও বোধহয় রুষ্ট হতেন না। গোলগাপ্পা অন্ততঃ আধা ব্যাকরণসম্মত। আকারে এটি গোলই বটে। গাপ্পার ব্যাকরণগত ব্যুৎপত্তির হদিশ আমার কাছে নেই। কিন্তু ফুচকা? কোন মানেই হয়না। ব্যাকরণপরীক্ষায় ফুচকা ডাহা ফেল। এমনকি মার্কেটিঙেও। গুগুল বাজার গরম করার আগে জ্ঞানসমুদ্রে যার কদর ছিল রাশভারী জ্যাঠামশাইয়ে, সেই এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার অনলাইনে চাটের এন্ট্রিতে গোলগাপ্পা ও পানিপুরির উল্লখ থাকলেও ফুচকার নেই। এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে মমতা ব্যানার্জি থেকে আমরা বাঙালি - সবাইকার যে গর্জে ওঠা উচিত, সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
এক বক্তার বৈঠক : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ মে ২০১০ | ১৭১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এটাই শম্ভু মিত্রর আর্টের মূল কথা। চর্বিতচর্বন নয়। নতুন করে ভেবে কিছু করা। নতুন হতে হবে, ভাবনাও থাকতে হবে। বিভিন্ন প্রসঙ্গে, নানা ফর্মে এই কথা বারবার উঠে এসেছে - "(যেমন ফিল্মে করা হয়।) আমি জানি যে দেখলে পরে একটা ইমোশন জাগাতে হবে। যেগুলো স্বীকৃত। একটা মেয়ে একদম শাদা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে, হাওয়ায় চুলগুলো উড়ছে, মুখটা শুকনো। দেখালে, বেশ তাকে কেমন দু:খের প্রতীক বলে মনে হবে। এই-যে জানা ছবি, এইটেকে দেখালে আমি ভালো ছবিকার হব। এই তো? কিন্তু এতে ভাঙাটা কোথায়? ছাঁচ ভেঙে ফেলাটা কী করে আসবে? ছাঁচ ভেঙে ফেলতে গেলে পরে আমার চিন্তাটা না প্রকাশ করলে তো হবে না?'
নির্দল হইব না মানুষ হইব? : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৬ জুলাই ২০১০ | ১৫১৬ বার পঠিত
সুতরাং, হে বীর, সাহস অবলম্বন কর। সংসার সমরাঙ্গণে যুদ্ধ কর প্রাণপণ। ¢কন্তু দোহাই তোমার, ¢নর্দলত্বের ঢ্যামনা¢ম ছেড়ে পরে নাও কোন এক দলীয় বর্ম। ব্যস, তারপরে, হে বীর, কোন শালা তোমায় ঠেকাবে? এখন হইতে তোমার সকল কর্ম পা¢র্ট অনুমো¢দত। যাও, চ¢রয়া খাও। জ¢ম লও, কারখানা বানাও, ফÔÉ¡ট বানাইয়া প্রমোটা¢র কর, রাع¡ অবরোধ কর, বন্ধ কর - যাহা ইচ্ছা কর, খা¢ল ¢নর্দলী ক¢রয়ো না। স্বাধীন ¢চন্তা ক¢রয়ো না। পা¢র্টকে অনুসরণ ক¢রও। মনে রা¢খয়ো পা¢র্ট ভুল করে না। নেত«ব«ন্দ ঈশ্বরের দূত। প্রভু তাহাদের ভুল ক¢রবার ক্ষমতা ¢দয়া প্রেরণ করেন নাই।
তোষক আশগুপ্ত বিরচিত অনৃতভাষণ -- সতর্ক আছি : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | খবর : মায়া মিডিয়া | ০৭ জুন ২০০৯ | ১২৭৫ বার পঠিত
এভাবে হয়না। য¢দ হত, আগেও হত। রাজ্য আক্রান্ত আয়লার দাপটে। গাছ ফেলে, রাع¡ বন্ধ করে, ¢বদ্যুতের তার কেটে, জলে ভা¢সয়ে মানুষকে ¢ব¢চ্ছন্ন করার চক্রান্ত জা¢র আছে। জা¢র আছে প্রবল বর্ষণ ও ঝড় ¢দয়ে মানুষের সম্প¢ত্ত নষ্ট করার প্র¢ক্রয়াও। আর আছে প্রশাসন। সঙ্গে বাংলার অগ¢ণত মু¢ক্তকামী মানুষ। আমরাও আ¢ছ। ¢নজেদের মত করে। লড়াই কর¢ছ চক্রান্তের ¢বরুদ্ধে। প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধ ¢ম¢লয়ে।
তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের প্রতি আবেদন : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৫ জুলাই ২০০৯ | ১৪৬৯ বার পঠিত
¢নরপেক্ষতার পাঠ ¢নন। এর জন্যে য¢দ ছ' লাইন লেখেন, ওর জন্যেও ছ' লাইন ¢লখতে ¢শখুন। এর
জন্যে য¢দ ছ' সেকে¾ড, ওর জন্যেও ছ সেকে¾ড। বে¢শও নয় কমও নয়। মশা কামড়েছে বলে য¢দ মশার
¢বরুদ্ধে ছ'¢ট শব্দ ব্যবহার করেন, ¢নজের মনুষ্য জন্ম ও তৎসহ মনুষ্যরক্ত বহন করার ¢বরুদ্ধে ছ'¢ট
শব্দ ব্যবহার করুন।
গুগাবাবার গান : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৫ অক্টোবর ২০২০ | ৪৭২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
সুবিদিত হলেও, সত্যজিতের পশ্চিমি ধ্রুপদী সঙ্গীতের দখলের কথা যত বলা হয় তত বলা হয়না ওনার হিন্দুস্তানী সঙ্গীতের দখল সম্বন্ধে। পশ্চিমি ধ্রুপদী সঙ্গীতে ওনার দখল ও উৎসাহ তখনকার গড়পড়তা সঙ্গীতবোদ্ধাদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল সে কথা বহু-আলোচিত। আমি এমনও শুনেছি বন্ধুমহলে ওনাদের একটা খেলাই ছিল একটি কম্পোজিশনের পিস শুনে চিনতে হবে - কম্পোজার চেনা তো তুশ্চু - কন্ডাকটরকে! কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণা হিন্দুস্তানী সঙ্গীতে সত্যজিতের দখল ছিল পশ্চিমি সঙ্গীতের থেকে হয়ত বেশিই। গুগাবার গানের বাজির দৃশ্যটি তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ছবির দিক দিয়ে দেখতে গেলে গানের বাজির শুরুয়াৎ কিন্তু হাল্লার রাজসভারও আগে, যখন গুপি-বাঘা ভূতের দেওয়া খাবার খেয়ে হাত-মুখ ধুতে ধুতে ও সঙ্গে রাজকন্যার চিন্তা করার সময়ে দোলায় চড়ে টোড়ি গাইতে গাইতে যাওয়া ওস্তাদের সাক্ষাৎ পায়। সেই দৃশ্য শেষ হয় লয় বাড়িয়ে দ্রুতে খেয়াল গাইতে গাইতে যখন "বাপ রে বাপ, কী দাপট"-এর সঙ্গে ওস্তাদজী হাল্লার রাজসভার দিগন্তে মিলিয়ে যান। এও দেখার বিষয় যে গানের বাজিতে একটি কীর্তন আর একটি ঠুংরি ভিন্ন আর সবই যাকে বলে পাকা গানা। ধ্রুপদ ও খেয়াল। মানে পাকা আর আধা-ধ্রুপদীর বাইরে কোন গান নেই। নো লোকগান। নেই যন্ত্রসঙ্গীতও। এটাও স্রেফ একটা অবজার্ভেশান। কোন বিশেষ কারণ নির্দেশ করার চেষ্টা করছি না।
বুদ্ধদেব গুহ পড়া : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ০৩ অক্টোবর ২০২১ | ৪৬৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
তেমনই বুদ্ধদেব গুহ, থিম্যাটিকালি না হলেও, বাঙালি শহুরে, উচ্চবিত্ত আর ধনী চরিত্রদের বাংলা মূলধারার সাহিত্যে আনলেন। বুদ্ধদেব গুহর বাইরে মূলধারায় উচ্চবিত্ত চরিত্র সেরকমভাবে এসেছে কি? তার একটা কারণ অবশ্যই আমাদের সাহিত্যিকরা ব্যক্তিগত জীবনে মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরীরা ধনী ঘরের সন্তান ছিলেন। তাঁদের গল্পে উচ্চবিত্ত ও ধনী চরিত্র এসেছে সময়ে সময়ে, কিন্তু শরৎচন্দ্র থেকে হালফিলের যে উপন্যাস পড়ি, সেখানে উচ্চবিত্ত চরিত্র খুব কম ক্ষেত্রেই মূল চরিত্রের স্থান পেয়েছে ওই কারণে।
দুর্গাপূজা - দুটি প্রবন্ধকথা : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | বইপত্তর | ১৯ অক্টোবর ২০২১ | ১২৫১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১৪
আমাদের কৈশোর-যৌবনে, দশমীর পরে, পাড়ায় বন্ধুদের ও পরিচিতদের বাড়িতে বাড়িতে বিজয়া করতে যাওয়া প্রাইম অ্যাট্রাকশন ছিল জলখাবার, বিশেষতঃ মিষ্টি। কাজেই মনে হতে পারে সেই ট্র্যাডিশন আজও চলিতেছে। কিন্তু তা বোধহয় নয়। অন্ততঃ মহেন্দ্রনাথ দত্ত পড়লে তাই মনে হয়। "বিজয়ার দিন পাড়ার বুড়ো ব্রাহ্মণদের কিঞ্চিৎ প্রণামী দিয়া প্রণাম করিতে হইত। বিজয়ার দিন নারিকেলছাবা দেওয়া হইত। বিজয়ার কোলাকুলিতে সন্দেশ বা অন্য কোন খাবার চলিত না।" নো মাংসর ঘুগনি, নো রসগোল্লা। বোধহয় নারকোল নাড়ু নারিকেলছাবা-র জায়গা নিয়েছে। নারিকেলছাবা জিনিসটা কী, কে জানে!
শ্রাবণের সুর বাজে : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : গান | ০২ আগস্ট ২০২২ | ২৩৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
আমি নির্মলার জীবনী লিখতে বসিনি। তাঁর গায়কীর মূল্যায়নও আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। বহু গানে নির্মলা যে সাধারণ থেকে দীক্ষিত শ্রোতাদের আনন্দ দিয়েছেন, এ লেখায় তার স্মরণ করিয়ে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য। জনপ্রিয়তায় 'ও তোতাপাখিরে' বা 'এমন একটা ঝিনুক খুঁজে পেলাম না'র সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে এরকম গান নির্মলা আর গাননি। কিন্তু শুধু জনপ্রিয় সৃষ্টিই তো শিল্পীর একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না। এখানে নির্মলার অল্পশ্রুত চারটে গানের উল্লেখ করব, যা ব্যক্তিগতভাবে আমার সবচেয়ে প্রিয়। চার দিকপাল সুরকারের চারটে গানের ধরণ আলাদা, তাদের বৈশিষ্ট্য আলাদা।
কমরেড গঙ্গাপদ : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৮ নভেম্বর ২০২৩ | ১৯১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
হপ্তা দুয়েক আগে বাজারে নিতাইয়ের দোকানে বেলাবেলি বসে গঙ্গাপদ এক কাপ চা আয়েস করে খাচ্ছিল। হোক শালপাতা ফোটানো জলে এক চিমটে চা-পাতার চা। শীতটা যেরকম জমিয়ে পড়েছে তাতে নিতাইয়ের ওই যমের অরুচি চাও ভাল লাগছে। ত্যারচা করে রোদ এসে পড়েছে গায়ে। কতকগুলো শালিক তুরুক-তুরুক করে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। গঙ্গাপদর মনে হল দিনটা বড় ভাল। মনে হতে হতেই দেখে বাজারের এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা ধরে একটা টেম্পো ঢুকছে। টেম্পোর আগমন তাদের বাজারে সুলভ নয়। সবাই হাঁ করে চেয়ে রইলে টেম্পোর দিকে। টেম্পোর পেছনে দুটো আলিসান আর পেল্লায় সিন্দুক নাচতে নাচতে বাজার পেরিয়ে ঢুকে পড়ল মধু পালের বাড়িতে। নিতাই বলল, "মধু পালের টাকা রাখার আর জায়গা হচ্ছে না গো। নতুন সিন্দুক কিনতে হল।" গঙ্গাপদ মনে মনে বলল, "ভাল, ভাল। দিনটা বড় ভাল।"