টক-মিষ্টি-ঝাল ভোজ : নিয়ামৎ খান
বুলবুলভাজা | খবর : টুকরো খবর | ১২ এপ্রিল ২০১১ | ১১০৩ বার পঠিত
মা গাড়ি চালাতে জানেনা, কাজেই বাবাকেই বাজার যেতে হবে। মঙ্গলবারে আপিস থেকে ফিরে। অবশ্য মাকে সঙ্গে না নিয়ে গেলে হবে কি করে? কি কি লাগবে তা নিজে দেখে বেছে না কিনলে তার আবার চলেনা। দেশে থাকতে তো আমি আর মা রোজ বাজার যেতাম। ঘুরে ঘুরে ফল, সব্জি কেনা হতো, তাজা শাক,হার্বস কেনা হতো। কারুন আর আরভান্দ নদী থেকে ধরা টাটকা মাছ, চাষীকাকুদের খামার থেকে জ্যান্ত মুরগী। সবে তন্দুর থেকে বেরিয়েছে সেই হাতে গরম লাভাশ আর সাংগাক রুটি কিনতাম আমরা। সত্যি বলতে কি এখন বুঝতে পারি যে সেই ছোটবেলাতেই এই বাজারে ঘুরে ঘুরে আমি দিব্যি একজন খাবারদাবারের সমঝদার হয়ে উঠেছিলাম, এদেশে যাকে বলে "ফুডি'। এখানের বাজারে আর আমার যাওয়া হতোনা। বাবারা কতক্ষণ ধরে বাজার করবে তার ঠিক নেই! মানে, ঠিক আছে আর কি, মায়ের মেজাজের সাথে পাল্লা দিয়ে ঠিক হবে কতক্ষণ ধরে ঘোরাঘুরি হবে। দেরি হলেই বুঝবেন যা যা খুঁজছিলো তা পাচ্ছেনা, তাই বাজার একেবারে চিরুনী দিয়ে আঁচড়ানো হচ্ছে। আর এসে পরে যা চমৎকার তার 'মুড'! তখন তার সামনে যায় সাধ্যি কার! "এই পোড়া দেশে কি ভদ্রস্থ শাকসব্জিও পাওয়া যায় না?', "হতভাগারা ফলগুলো পাকা অব্দি গাছে রাখাতে পারেনা?',"কি সব মুরগী! ধাড়ি ধাড়ি, স্বাদের "স' নেই!',"কিছুই পাওয়া যায়না তা রান্নাটা হবে কি তোদের মুন্ডু দিয়ে?', "তার ওপরে এই ছাতার মাথা হাঁটু ব্যথা নিয়ে আমি কি করে এতসব উদ্ধার করবোটা কি করে শুনি?' ইত্যাদি মধুর ভাষন আর কি।
সাদার্ন সানডে : নিয়ামৎ খান
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ১৯ জানুয়ারি ২০১১ | ১২৪২ বার পঠিত
এবারে একটা বড় ডেকচি চাপান দেখি উনুনে। এবারে কুচি করে নিন পেঁয়াজ আর ক্যাপসিকাম। আরো লাগবে গাজর কুচি। এখানেও একটু ইম্প্রোভাইজ করেছি। আসলে লাগে সেলেরী। কিন্তু সেলেরী সব জায়গায় পাওয়া যায়না তো, তাই গাজর দিন তার জায়গায়। খুব মন্দ হবেনা,নিশ্চিন্ত থাকুন। সাদা তেল গরম করে দিন এই তিনরকম সব্জির কুচি। একটু ভাজা ভাজা হলেই দুটো টমেটো কুচি করে দিয়ে দিন। খানিকক্ষণ রান্না হোক। টমেটো গলে গেলে এবার দিন মাঝারী মাপের চিংড়ি। চিকেনের টুকরোগুলোও দিয়ে দিন এই সময়। আন্দাজ করে নুন দিন, আর আধ চামচ গোলমরিচ। আরো দিন এক চামচ চিলি স্যস। কেজান রান্না একটু ঝালই হয়। এবারে দেখুন আপনার পাড়ার দোকানটিতে উস্টারশিয়ার স্যস পাওয়া যায় কিনা। ইংরিজিতে এর বানান হলো worcestershire। পাওয়া গেলে সেই দিতে হবে এক চামচ। না পেলেও কুছ পরোয়া নেই। দু চামচ তেঁতুল ভেজানো জল দেবেন তার বদলে। বেশ ভালো করে নেড়ে চেড়ে মিশিয়ে নিন সবটা।
টার্কিশ টিউসডে : কাদিনবুদু কোফ্তে : নিয়ামৎ খান
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ১৩৮৬ বার পঠিত
'সাত দিনে দুনিয়া পাড়ি'
যা:, তাই কখনো সম্ভব নাকি, ভূতের রাজার বর না থাকলে? কিন্তু মনে করুন ছোটবেলায় পড়া সেই সব রূপকথা। সেই যে উড়ুক্কু তোরঙ্গ চেপে দুনিয়া ঘুরে বেড়ানো যেত মনে আছে তো? তা আমরাও যদি ধরুন তোরঙ্গ নয় চুল্লীতে চেপে সাতদিনে দুনিয়া ঘুরে আসি? ভুতের রাজার বরেই যাব আজ্ঞে। দ্বিতীয় বর নয়, প্রথম বর। 'যেখানে খুশি যাইতে' নয়, 'যা খুশি তাই খাইতে পারি'র বর। সাতদিনে চলুন না কেন চেখে দেখা যাক সাত দেশের স্বাদ? তাইই তো বললাম আমাদের দুনিয়া পাড়ি চুল্লী চেপে।
ওয়াসাবি ওয়েন্সডে : চিকেন টেরিয়াকি : নিয়ামৎ খান
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ১২৫৮ বার পঠিত
জাপানী কুইজিনে কিন্তু চীনের প্রভাব আছে অনেক। চীন থেকে শুধু যে বাটি করে ভাত নিয়ে কাঠি বা চপস্টিক দিয়ে খেতে শিখেছিলেন এঁরা তাইই নয়। চীন থেকেই এসেছিলো চা আর সয়বীন, যা আজ জাপানী খাদ্যধারার অবিচ্ছেদ্য অংশ। চা শুধু যেকোনো জাপানী 'মিল' এর অংশই নয়, 'চা পান উৎসব' বা 'চা ডৌ'এখানে একটা রীতিমতো বড় উৎসব। এই উৎসবের প্রাণকেন্দ্র হলো গিয়ে 'মাচা' বা সবুজ গুঁড়ো চা। এই চা তৈরী করার পদ্ধতিকে জাপানীরা ললিতকলার স্তরে নিয়ে গেছেন। সেই পদ্ধতি বা 'কাইসেকি রিয়রি'তে চোখ,নাক আর জিভ এই তিন ইন্দ্রিয়ই প্রাণ ভরে সে চা উপভোগ করতে পারে।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাইডেঃ ক্রেপ সুজেৎ : নিয়ামৎ খান
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ২৮ নভেম্বর ২০১০ | ১৬১৫ বার পঠিত
আর আর এইবার... সেই দ্বিতীয় জিনিষটি হলো .... যা বলেছেন, ফরাসী ওয়াইন। এদেশে সব চাষের মধ্যে আঙুরের চাষ হলো প্রধান। কাজেই দ্রাক্ষাসবের রমরমা হবে না তো কি? ওয়াইন এখানে খাবারের মূল সঙ্গত হিসেবে ধরা হয়। ঠিক মত ওয়াইন না হলে খাবারের পুরো স্বাদ পাওয়া যায় বলে এঁরা মানতে চান না। রোজকার খাবারের সাথে হয়তো একটাই ওয়াইন দেওয়া হয়, লাল বা সাদা, কিম্বা রোজে। তবে তেমন তেমন ভোজে প্রত্যেকটি পদের সাথে আলাদা ওয়াইন পরিবেশন হয়। শ্যাম্পেন, মার্লো, স'ভিনিয়ঁ ব্লঁ,দমপিরিনিয়ঁ এমন কটা নাম তো সবাইই শুনেছেন,কিন্তু সত্যি কথা জানেন কি ভাই? ফরাসী ওয়াইন সুন্দরীদের রূপবর্ণনা করা.... বাপ রে, তার স্পর্ধা এই নাচীজের নেই। স্বয়ং সাহিত্য সম্রাট 'আয়েষার' রূপ বর্ণনা করিতে পারেননি। ফরাসী ওয়াইনও রন্ধনসাহিত্যে 'আয়েষা'ই।
থাই থার্সডে : খানম ক্রক : নিয়ামৎ খান
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ০৮ নভেম্বর ২০১০ | ১১২৬ বার পঠিত
থাই রান্নার মূল মন্ত্র হলো টক-মিষ্টি-নোনতা-তেতো এই চার স্বাদের ব্যালান্স। এখানের যেকোনো খাবারেই দেখবেন এই ব্যালান্স এতটুকু টসকায়না। এর ওপরে আছে ঝালের কারুকার্য্য। এদেশের টিপিক্যাল মিল যদি ধরেন তাতে থাকবেই থাকবে একটা কোন স্যুপ, একটা ঝাল স্যালাড, একটা সব্জির ও মাছ বা মাংসের পদ, ভাত ও শেষপাতে কোনো মিষ্টি। আবার থাইদেশের নিয়ম হলো অনেকে মিলে একসাথে বসে খাবার ভাগ করে খাওয়া। এঁরা মনে করেন একা খাওয়া দুর্ভাগ্য ডেকে আনে। খাবার নিয়ে আরো ধর্মবিশ্বাস আছে এদেশে। থাইরা এও মনে করেন যে একদানা খাবারও নষ্ট হতে দেওয়া পাপ। "ধান্যদেবী' এতে রুষ্ট হন, অভিশাপও দিতে পারেন।
মেক্সিকান মানডে : নিয়ামৎ খান
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ২৩ আগস্ট ২০১০ | ১১৪৬ বার পঠিত
টাকো খেতে হয় পুরোটা হাতে ধরে। এমন ভাবে ধরতে হবে যাতে চাঁদের খোলা দিকটা থাকে ওপর দিকে, আর কামড় বসাতে হয় পাশ থেকে। খাবার সময় পাশ দিয়ে প্রায়শই বাঁধাকপি কি দই, কি স্যস একটু গড়িয়ে পড়বে, হাতে মুখে মাখামাখি হবে। তা হোক, এই খাবারই অমন, একটু মেসি। তাতে কি? আর হ্যাঁ শুনুন, কেউ যদি বলে অথেন্টিক টাকোতে লেটুশ থাকে, চীজ থাকে, হেনা থাকে তেনা থাকে তো সেসব কথায় কান দেবেন না মশাই। বলেছি তো আমাদের উদ্দেশ্যই হলো সাধারণ বাঙালী বাড়িতে সহজে সুবিধায় বানানো। পাড়ার দোকানে কি সব চীজ রাখে? সব বাজারেই কি লেটুশ পাওয়া যায়? কিছুটা ইম্প্রোভাইজেশন তো আমাদের করতেই হবে। তবে কোনো চিন্তা নেই, আসল মেক্সিকোর খুব কাছাকাছি স্বাদই পাবেন আপনি এই টাকোতে। গ্যারান্টী।
ধূম : নিয়ামৎ খান
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ১৬ আগস্ট ২০০৯ | ১১১০ বার পঠিত
হালের বারটেন্ডারদের কাছে নতুন জানলা খুলতে এসে গেছে,হ্যাঁ, আপনি যা ভাবছেন অথচ বিশ্বাস করতে পারছেন না সেই ধোঁয়া। একেবারে নিয্যস ধোঁয়া। আপনি আজীবন লেবু দিয়ে জিন্ এর কথা জেনে এসেছেন, কিম্বা টনিক ওয়াটার দিয়ে। কিন্তু ভাবুন তো ল্যাপস্যাং সাউচং এ ইনফিউস করা জিন্? বেশ ডিজাইনার পানা শোনাচ্ছে কিনা? আসলে এ হলো চেরিকাঠের ধোঁয়ায় কোকাকোলা সিরাপ নেড়েচেড়ে নিয়ে সেই দিয়ে আপনার চির চেনা জিন্ এর পরিবেশন।