Evil has wings- নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এন আর সি : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : NRC/CAA | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৩১০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
নাগরিকত্ব আইনের পাশাপাশি বিদেশি চিহ্নিত করার আইনও দেখা দরকার। ১৯৪৬-এর ব্রিটিশ শাসকদের হাত ধরে আসা আইন অনুসারে একজন যে বিদেশি নয় সেইটা প্রমাণ করার দায়িত্ব সেই ব্যক্তির ছিল। এই আইনের ফলে, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে (বিশেষতঃ আসামে), ১৯৮৩ সালে ইল্লিগাল মাইগ্রেশন (ডিটারমিনেশন বা ট্রাইবুনাল) বা IMDT আইন প্রচলন হয়। এই আইনে একজনকে বিদেশি হিসেবে অভিযুক্ত করলে তা অপ্রমাণের দায় আর সেই ব্যক্তির থাকল না বরং পুলিশ এবং অভিযোগকারীকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ দিতে হতো। বিদেশি আইনের ফলে সাধারণ গরিব মানুষের নির্যাতন অনেকটাই কমাতে সক্ষম হয়েছিল এই IMDT আইনটি। এই আইনের ফলে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোখা যাচ্ছেনা বলে সর্বানন্দ সোনোয়ালের করা একটি মামলার ভিত্তিতে ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা আইনটি বাতিল করা হয়। ফলে, একজন যে বিদেশি নন, সেই প্রমাণের দায়িত্ব তাঁর ঘাড়েই পড়ে। অর্থাৎ দেশের যেকোনও মানুষকে নাগরিকত্ব আইনের ধারা অনুযায়ী তথ্য পেশ করতে হতে পারে, বিদেশি হওয়ার অভিযোগ এলে।
ব্রিটিশরাজ ও গাঁজার গল্প : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৪০৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
গাঁজা জিনিসটা সেইসময়ে যেহেতু খুব সস্তার নেশা ছিল, সেটা নিয়ে পার্লামেন্ট আগে খুব মাথা ঘামায় নি। মুঘল আমলেও গাঁজার ওপর কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ বসেনি। তবে ১৭৭০-এ কোম্পানি যখন প্রায় দেউলিয়া হয়ে পার্লামেন্টের দ্বারস্থ হয়, বেল আউট প্যাকেজের পাশাপাশি কোম্পানির থেকে লাভ বাড়ানোর অপশনগুলো পার্লামেন্ট বিচার করে। ১৭৯০ এ ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার গাঁজা-চরস-ভাং-এর ওপর ট্যাক্স বসানো হল। এই ট্যাক্স বসানোর ব্যাপারে পরবর্তীকালে কিছু মজার ঘটনা ঘটেছিল। গাঁজা ভাং-এর ব্যাপক ব্যবহারে কালেক্টররা বুঝে উঠতে পারছিল না কীভাবে ট্যাক্সেশন করলে সবচেয়ে বেশি রেভিনিউ আসে। ফলে কখনো দোকানগুলোকে গুণগত তারতম্যে বিক্রির ওপর ট্যাক্স দিতে হয়, কখনো ট্যাক্সের নিয়ম পালটে দৈনিক ফিক্সড ট্যাক্স করা হয়, কখনো দামের ফারাক না দেখে সব ধরণের গাঁজা ভাং-এর ওপর ওজন অনুযায়ী ট্যাক্স ধরা হয়। ১৭৯০ এর নির্দেশনামায় কালেক্টররা সরাসরি ট্যাক্স নিতেন না, নিজের এলাকায় গাঁজা ভাং চরস বিক্রির থেকে জমিদারদের ট্যাক্স কালেক্ট করতে হত। ১৭৯৩ এ ৩৪ নং রেগুলেশন অনুযায়ী কোম্পানির অধীনস্থ এলাকায় গাঁজা ভাং চরস চাষও ব্যবসা করার জন্য আলাদা করে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হয়। বলাবাহুল্য, লাইসেন্সিং ছিল রেভিনিউ আদায় করার সবচেয়ে সহজ পন্থা। লাইসেন্স পাওয়া এবং রাখার জন্য নিয়মিত ফি দিতেই হত। রেগুলেশনের কারণ হিসেবে সেটা উল্লেখও করা হয় যে লাইসেন্সের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কমবে এবং সরকারের অর্থাগমও সম্ভব হবে। ১৮০০ সালে আরেকটা রেগুলেশন বের হয়, যাতে বলা হয় এগুলোর মধ্যে চরস সবচেয়ে ক্ষতিকারক এবং চরস বানানো বা বিক্রি সম্পূর্ণরূপে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। আর মজার ব্যাপার, ১৮২৪এ আরেক নির্দেশনামায় বলা হয় যে গাঁজা বা অন্যান্য নেশার জিনিসের থেকে মেডিকেলি চরসের কোনো বেশি ক্ষতিকারক প্রভাব নেই, ফলে ব্যান তুলে নেওয়া হল। ১৮৪৯এ বেশি আবগারি শুল্ক আদায়ের জন্য খুচরো গাঁজার ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। এই সময় থেকে পরের কয়েক দশক ট্যাক্স দৈনিক হিসেবে হবে না ওজনের ওপর হবে এই নিয়ে বিভিন্ন আইন আসে। ফলে দ্যাখা যাচ্ছে যে কোম্পানির শাসনের আমলে গাঁজা ভাং-এর ব্যাপারে অর্থাগমের সুযোগ নিয়েই বেশি মাথা ঘামানো হয়েছিল। গাঁজা নিয়ে আফিং-এর মতন ব্যবসার সুযোগ ছিল না। কারণ গাঁজা সস্তা, প্রায় ঘরেই চাষ করে ঘরেই খাওয়া যায়, আর লোকে যেরকম সেরকম ভাবে জোগাড় করে নিতে পারে। সুতরাং চাষ আর পাইকারি ব্যবসাতে ট্যাক্স বসানোই এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় ছিল। একই কারণে খুচরো গাঁজার ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণও করতে চেয়েছিল কোম্পানি।
২২শে শ্রাবণঃ রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষ্যে : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ আগস্ট ২০১১ | ১৬৯৮ বার পঠিত
এইসব জ্ঞান শতবর্ষপ্রাচীন লেখনীর। এইসব গান শতবর্ষেরও পূর্বে স্বরলিপিকৃত। অথচ আজিকার এই ন্যানো-বায়ো প্রযুক্তসভ্যতার শিখরদেশে, দূরবর্তী সম্পর্কের ট্রমাঘোরের সাইকো-বিশ্লেষণে, অনির্দিষ্ট যুক্তিজালের ফাজিনেস্-এর মধ্যেও সেই প্রাচীন অক্ষর আর প্রাচীন সুরতালের মন্দ্ররোল শুনিতে পাইতেছি আমরা। প্রায় নিরুচ্চারে রাতের পাখির ন্যায় একাকী গভীরে প্রতিভাত হয় বাণী তাঁর। আমরা বুঝিব না, এই বাণী অনাগতকালের আবার ইহারই উচ্চারণ বিশ্ববীণার তন্ত্রীসমূহে স্থলে জলে নভতলে উপবনে অসীমকালের হিল্লোল হইয়া বাজিয়াছে? আর ঠিক সেই কারণটিতেই, আজিকার এই খণ্ডমুহূর্তে, এই সামান্য জীবনের বারিসিক্ত আচ্ছাদনটিতেও আমাদের উদ্বেলতার উদ্ভাস লইয়া শ্রুত হইতেছেন তিনি, গুরুদেব।
আজ আমাদের নেড়াপোড়া : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ মার্চ ২০১১ | ৩৩১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
সভ্যতা এভাবেই ভাবে- ক্রিয়া করে, অর্থের শাস্ত্রই ধর্ম তার। বিনিময়ের অতীত যা যা, তাকে অতীত করে দিয়ে নিয়ে আসে শিল্পবিপ্লব, কলোনি-বানানোর লড়াই, ইনকুইজিশনের নেড়াপোড়া। তবু সেই যজ্ঞের কালি আবির হয়ে গুঁড়োগুঁড়ো মিশে যায় সব চেয়েছির রাজত্বে। বেদবিরোধী শূন্য উপাসক বৌদ্ধ নাগার্জুনের মায়ায় ধর্মসংস্থাপক শঙ্কর ধর্মকেই মায়া ভেবে বসেন। স্তূপের আদল রেখে শিবলিঙ্গ পুঁতে যান মানুষের বাড়িতে বাড়িতে, অবধারিত করে যান খাদ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ, ব্রতয় ব্রহ্মচর্য, কর্মে আত্মনির্যাতন । নেড়া বৌদ্ধের মতই শিখা কেটে ফেলেন ব্রাহ্মণ বিশ্বম্ভর মিশ্র। উপবীত ছিঁড়ে ফেলে ভূলুণ্ঠিত হন মোক্ষের উপাস্যে। ভারতের প্রান্তে প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়ে বেদ-বিমুখ জাতবিহীনদের হোলিখেলা। সম্বলে বাঁদরের রঙ, ভাঙের সিদ্ধিদ্রব্য। ক্রমশ: মন্দির বহির্ভূত:, যজ্ঞরহিত উচ্ছ্বাসের সামাজিক সংশ্লেষ তৈরি হতে থাকে আশূদ্র ভারতসমাজে। হোলিকা নিধনের ফাগোৎসবের দিন ইতিহাস মুখ ঘুরিয়ে দেয় লালন সাঁইজির সাধুসঙ্গের উৎসবে, একব্রহ্মের উপাসক রবিঠাকুরের বসন্ত উৎসবে। শূদ্রভারত তো এভাবেই ব্রাহ্মণ্য উৎপাদনতন্ত্রের অত্যাচারের সমস্ত দাগ গায়ে রেখেও, কান্না-অবিচারের ঊর্ধ্বে উঠে যেতে শেখে আনন্দের উপাসনায়।
খাপ-সালিশি: রাষ্ট্রীয় বিচারপদ্ধতির সামাজিক বিকল্প
: তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৫৮৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
অসাম্য, হিংসা, জাতি-লিঙ্গ দ্বেষ রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থায় কম নেই। বস্তুত রাষ্ট্রীয় ন্যায় প্রতিষ্ঠাই করা হয় ‘পুলিশ’ নামক হিংসা সংগঠনটির মাধ্যমে। রাষ্ট্রের বিচার ব্যায়বহুল, নিম্নতর পুলিশ থেকে উচ্চতম প্রধান বিচারপতি সকল পেশাজীবীর জন্য রাষ্ট্র যা ব্যয় করে তা সাধারণ মানুষের কাছে অকল্পনীয়। প্রশান্ত ভূষণের এক টাকা জরিমানার পিছনে দেশের মানুষের কয়েক লক্ষটাকা নিশ্চিতভাবে খরচ হয়েছে আদালত-পদ্ধতিতে।
সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলন ও কৃষিসমাজের বিভিন্ন বর্গের অবস্থান- একটি উপক্রমণিকা : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ৪২০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সরকার যে শুধুমাত্র চাষির স্বার্থ ভেবে নতুন ব্যবস্থা আনছেন না তা শুধু এই উদ্যোগেই বোঝা যায় যে, এই বিল প্রস্তাব করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের জায়গাটি রাখা হয় নি এবং চাষির আইনি পরিসর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। প্রান্তিক চাষির সুবিধা যদি প্রাথমিক লক্ষ্য হয়, তবে প্রাথমিক শর্তও হবে তার আইনি ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার দিকটি মজবুত করা। স্বাভাবিকভাবে একজন প্রান্তিক চাষি শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার ও আইনি সুবিধায় অনেকটা পিছিয়ে। বড় কর্পোরেটের সাহেবদের সঙ্গে এঁটে ওঠা তার পক্ষে কঠিন।
নাগরিকত্ব সংশোধনী, ২০১৯ - বিভাজনের বিধান : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ৩০ মার্চ ২০২১ | ৪৩৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আফগানিস্তানকে সি এ এর আওতায় রাখা হল, কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে হল না, এই বিসদৃশতার পিছনে একটিই কারণ থেকেছে। তা হল, এই আইন ধর্মীয় নিপীড়নের কথা বলেছে, জাতিগত নিপীড়নের কথা বলে নি। ধর্মীয় নিপীড়নের পিছনেও একটি মাত্র ধর্মকে দায়ী করে এই আইনের প্রণয়ন, তা হল ইসলাম। সহজ বাংলায় ইসলাম-বিদ্বেষই এই আইনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। শ্রীলঙ্কান তামিলদের উপেক্ষা করাও সেই কারণে, যে তাঁদের দুর্গতির পিছনে মুসলিম-প্রধান কোনও রাষ্ট্রকে দায়ী করা যায় না।
ওই গ্রামে সবাই তৃণমূল : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৩ মার্চ ২০২২ | ৩০১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
বাংলা করে বললে, এই রাজ্যের শনির দশা চলছে। একের পর এক গ্রাম মফস্বল থেকে রাজনৈতিক কর্মী বা তার পরিবারের মানুষের হত্যার খবর আসছে। হত্যার বহর বাড়তে বাড়তে ঘরে আগুন দিয়ে গণহত্যার খবরও আমরা দেখতে বাধ্য হলাম, গতকাল, বীরভূমের বগটুই গ্রামে।
ডাবল নিরলস : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | সমোস্কিতি | ১৬ মে ২০২২ | ৩৫৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৩
কিন্তু, আমরা দেখি আকাদেমির সদস্যদের মধ্যে ভাষাবিদ কেউই নেই। সকলেই প্রায় সাহিত্যিক, কয়েকজন আমলা বা প্রকাশক এবং সাহিত্যিকদের মধ্যেও মাত্র একজন এইমুহূর্তে সরাসরি অধ্যাপনার সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ, ভাষাচর্চার লোক প্রায় কেউই নেই। সাহিত্যিকরা ভাষাকে দিশা দেখাতে পারেন, কিন্তু ভাষার সংস্কার বিশারদদের কাজ। এবং বাংলাভাষা যেহেতু বহুভাষার থেকে পুষ্টিগ্রহণ করে, বিবিধ ভাষার এক্সপার্টদের আকাদেমির প্রথমসারির নিয়ামকের ভূমিকায় থাকার দরকার তা নেই। তাহলে কারা আছেন? যাঁরা আছেন, তাঁরা সকলেই প্রায় সাহিত্যিক, তদুপরি তাঁরা সকলেই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ। আকাদেমির চেয়ারম্যান বাংলার বিশিষ্ট নাট্যকার, কিন্তু তিনি তো মন্ত্রীও। তিনি নিরলসভাবে রাজনীতিটিও করেন। আকাদেমির আরেকজন প্রভাবশালী সদস্যের কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, তিনি কবি। ২০১৩ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান, উৎপলকুমার বসু তখনও সাহিত্য আকাদেমি পান নি।