আমার কোনো উৎসব নেই : জিনাত রেহেনা ইসলাম
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ নভেম্বর ২০১৮ | ১৬৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
'বেজাতে' বিয়ে বলে নিজ মহল্লায় দামামা বেজেছিল। পাত্র ডাক্তার এই কথাটা কর্পূর হয়ে 'হিন্দু ছেলে' এটাই প্রচার হয়েছিল। তো, এই কালী পুজো নিয়ে আমার এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। কালীমা আমার প্রতিদিনের। ছাত্রজীবন থেকে কলেজ টানা সময় জুড়ে আমায় 'মা কালী' বলে পথে ঘাটে ডেকে দিত কেউ। অবশ্যই পুরুষকণ্ঠ। কখনো পেছন ফিরে দেখিনি। দেখতে নেই এটাই ছিল পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা। তখন অবশ্য আমি খুব ভয় পেতাম এই ডাকে। লজ্জা হত খুব। কী এমন আছে এই চেহারায়? নিজের মাও মাঝে মাঝে কেঁদে ফেলতেন, আমার পেটের মেয়ে এমন কালো কীকরে?বুঝতাম না এই সমাজে মেয়েদের কেন কালোরঙ হওয়া বারণ ? কেন এত নেগেটিভ? তারপর মাথায় সিঁদুর চড়ানোর পর আমায় কেউ কোনদিন 'মা কালী' বলে ডাকেনি। সিঁদুর ছাড়ার পরও। জানিনা, বিবাহিত মেয়েদের বুঝি সব মাফ। ধীরে ধীরে নিজের গায়ের রং ও চেহারার সঙ্গে কম্ফর্টেবল হয়ে গেলাম। নিজেকেই ভালবেসে ফেললাম।
বিয়ের আগেই জানতাম আমার স্বামী কালীভক্ত। বিয়ে রেজেষ্ট্রির আগের দিনই সে নিয়ে যায় আমায় দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি পুজো দিতে। সেখানেই লাইনে দাঁড়িয়ে সে জানায় আমার কাছে তার একটিই দাবি। মন্দিরে তার পাশে দাঁড়িয়ে পুজো দিতে হবে ও প্রসাদ খেতে হবে। তার এই ভক্তি একইভাবে সন্তানের মধ্যে জন্ম নিল । প্রতিদিনই ড্রাইভার অভিযোগ করত মেয়ে স্কুলের পথে যেখানেই মন্দির দেখছে গাড়ীর কাচ নামাতে বলছে। নেমে পড়ে প্রণাম করছে। এরপর আমার নিজের বাড়িতে মেয়ের পছন্দের কালী মায়ের ওয়াল হ্যাঙ্গিং লাগানো হল। তার নিজের পূজা করার জায়গা ক'রে দেওয়া হল। আনা হল লাল কাপড়,ঘণ্টা,কর্পূর, সিদুর,গঙ্গাজল,ধূপকাঠি। কাছের মন্দিরের পুরোহিতের কাছে গিয়ে লিখে আনা হল মন্ত্র। আমার মা এখানেই কখনো কখনো কোরান পাঠ করতেন, নামাজ পড়তেন। আমার বাবা কালীপুজোর জন্য চারটে করে জবাফুল এনে দিতেন বাজার থেকে প্রতিদিন।
ফিদায়ে চাঁদ রাত : জিনাত রেহেনা ইসলাম
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ঈদের কড়চা | ২৩ জুন ২০১৮ | ১৫৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
গভীরে ক্ষতটা আমরা দেখি, যারা দুই সম্প্রদায়ের মানুষদের অন্দরমহলের বাইরে থেকে গেছি। পূজা ও ঈদের মাঝে আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি নিজেদের।যে একফালি চাঁদ এত আনন্দের তাকে ছুঁতে পারিনি আবার বিসর্জনের সময় দুর্গামাকেও সাথ দেওয়া হয়নি একবার।উৎসবে অবগাহন অধরা থেকে গেছে।মানুষ হওয়ার বোধহয় এটাই ট্রাজেডি।তাকে হিন্দু নয় মুসলিম হতেই হয়।মুসলিম জন্মায় না।মুসলিম হয় বিশ্বাসে।সে বিশ্বাসের আবার ৫ স্তম্ভ।তা চর্চার বাইরে আমি।তাই চাঁদ রাত আমার কাছে এক গল্পমাত্র ।আর আমি যদি বলি সিন্ধুর তীরের হিন্দু আমি, কে দেবে আমায় দুর্গা ঠাকুর পছন্দ করে মণ্ডপে আনতে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সেই সরস্বতীদেবীকে তো হোষ্টেল সুপার আনতে দিতে বাদ সেধেছিলেন।জানিয়ে দিয়েছিলেন এক অহিন্দুর কখনো ঠাকুর চয়েস করার কাজ করতে পারে না!আমার মত অনেকের উৎসবের চেনা পথ তাই নির্জন,ব্যতিক্রমী।তবু আনন্দ জাগে…………