অর্থনৈতিক প্যাকেজ বিশ্লেষণ (প্রথম পর্ব) : অমিতাভ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ মে ২০২০ | ১৯৫২ বার পঠিত
পরিষেবায় যেহেতু কারখানা লাগে না, তার পুঁজির দাবিও কম। অন্য ভাবে বললে, দশ কোটি টাকা লগ্নি করে যত বড় পণ্য উৎপাদনের ব্যবসা ফাঁদা যায়, সেই একই লগ্নিতে পরিষেবার ব্যবসার মাপ অনেক বড় হবে। অর্থাৎ, পণ্য আর পরিষেবার মধ্যে ফারাক মুছে দেওয়ার ফলে পরিষেবা ক্ষেত্রে আরও অনেক বড় ব্যবসা চলে আসবে এমএসএমই-র সংজ্ঞার ভিতরে। গ্রামের অতিক্ষুদ্র শিল্প আর শহরের মাঝারি পরিষেবা উদ্যোগের মধ্যে ঠিক ততটাই ফারাক, ভারত আর ইন্ডিয়ায় যতখানি। নির্মলা সীতারামন আজ জানিয়ে দিলেন, তিনি কোন দলের হয়ে খেলছেন। আসলে শুধু তিনি নন, গোটা সরকারই খেলছে একটা দলের হয়ে। অন্নচিন্তায় দীর্ণ, বেকারত্বের গ্নানিতে ম্লান ভারতের কেউ সেই দলে নেই।
অর্থনৈতিক প্যাকেজ বিশ্লেষণ (দ্বিতীয় পর্ব) : অমিতাভ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ মে ২০২০ | ১৬০০ বার পঠিত
খোঁজ করা দরকার, কোভিড-১৯ কৃষিক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলল? উৎপাদনের পরিমাণ কমেনি, বরং গত অর্থবর্ষে তুলনায় এই বছর দেশে রবি ফসলের উৎপাদন বেড়েছে আড়াই শতাংশের মতো। খবরে প্রকাশ, এফসিআই-এর গুদামেও প্রয়োজনের তিন গুণ খাদ্যশস্য মজুত আছে। ফলে, কোভিড-১৯’এর ধাক্কায় খাবারের জোগান কমে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। কৃষিক্ষেত্রে সমস্যা অন্য অনেকগুলো। এক, অভিবাসী শ্রমিকরা ঘরে ফিরে যাওয়ায় রবি শস্য তুলতে বিপুল সমস্যা হয়েছে; দুই, নতুন ফসল বোনার সময় যে জিনিসগুলো লাগে, অর্থাৎ বীজ, ট্রাক্টর, চারার ওষুধ— বাজারে কোনওটারই যথেষ্ট জোগান নেই; তিন, লকডাউনের ফলে ফসলকে বাজারজাত করার সমস্যা— চাহিদার সমস্যা; চার, রফতানির বাজার বন্ধ। এমনই অবস্থা যে কিছু দিন আগে পি সাইনাথ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, যে কৃষকরা ক্যাশক্রপ বা পণ্যশস্য উৎপাদন করেন, তাঁরা ঘোর বিপাকের মুখে পড়বেন।
অর্থনৈতিক প্যাকেজ বিশ্লেষণ (তৃতীয় পর্ব) : অমিতাভ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ মে ২০২০ | ৩১৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
প্রশ্ন করা যাক, এই সংস্কারে কাদের লাভ, কতখানি লাভ। ভারতে এখনও সত্তর শতাংশ বিদ্যুৎই তাপবিদ্যুৎ। সবচেয়ে বেশি কয়লা খরচ হয় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেই— ২০১৭-১৮ সালের হিসেব বলছে, ভারতে শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল মোট ৮৯৬.৩৪ মিলিয়ন টন কয়লা, তার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবহৃত হয়েছিল ৫৭৬.১৯ মিলিয়ন টন, অর্থাৎ ৬৪.৩% । কাজেই, কয়লাখনি বিক্রি হলে কাদের লাভ, সেই খোঁজ করতে গেলে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার খোঁজ না নিয়ে উপায় নেই। ভারতে সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার নাম আদানি পাওয়ার লিমিটেড— মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২,৪১০ মেগাওয়াট। আছে অনিল অম্বানির রিলায়েন্স পাওয়ার— উৎপাদন ক্ষমতা ছ’হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। সস্তায় কয়লার ব্যবস্থা হলে মন্দ কী? এ ছাড়াও লাভবান হবে টাটা পাওয়ার, জেএসডব্লিউ। প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির জন্যও বিবিধ সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এটা অনুমান করার জন্য কোনও নম্বর নেই যে দেশের পয়লা নম্বর বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থার মালিকের নামও গৌতম আদানি।
শেষে কি নিজেকে খাবে? : অমিতাভ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : অর্থনীতি | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪১০৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
দুনিয়ায় এখন আর্থিক অসাম্য যতখানি, টমাস পিকেটি সাক্ষী, শিল্প বিপ্লবের পর আর কখনও অসাম্য এতখানি বাড়েনি। অসাম্য জিনিসটা তার নিজের কারণেই খারাপ— জিনিসটা অন্যায়, অনৈতিক। কিন্তু, পুঁজিবাদের একটা কু-অভ্যাস, তা নৈতিকতার যুক্তিকে স্বীকার করতে চায় না। কাজেই, চাহিদা-জোগানের দিক থেকেও যে অসাম্য জিনিসটা খারাপ, সেটা মনে করিয়ে দেওয়া ভাল।ধরুন, মোট ১০০ টাকা আছে, সেটাকে দু’রকম ভাবে ভাগ করা যায়— দশ জনের মধ্যে দশ টাকা করে; আর, এক জন ৯১ টাকা, বাকি ন’জন এক টাকা করে। দ্বিতীয় বিকল্পে শেষ ন’জনের ক্রয়ক্ষমতা বলে কার্যত কিছু নেই, ফলে তাঁদের চাহিদাও নেই। প্রথম জনের হাতে অনেক টাকা, কিন্তু ভোগব্যয়ে খরচ করার প্রথমত একটা সীমা আছে; আর দ্বিতীয়ত, প্রাথমিকপ্রয়োজন মেটানোর পর যে ভোগব্যয়, তাতে খরচ হওয়া টাকার বণ্টনও এই দ্বিতীয় বিকল্পের মতোই অসম।