গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে সবচেয়ে বড় চিঠির তালিকায় যেটি অন্তর্ভুক্ত, সেটি কিন্তু একটি প্রেমপত্র। নর্থ এবং সাউথ কোরিয়ার মধ্যে তিন বছরের একটু বেশি সময় ধরে যে যুদ্ধ চলেছিল, সেই সময় ১৯৫২ সালে নিউইয়র্ক ব্রুকলীনের এক নারী তাঁর প্রেমিককে যে চিঠি লিখেছিলেন তা ছিল ৩ হাজার ২০০ ফুট লম্বা। এই চিঠি লিখতে সময় লেগেছিল এক মাস। প্রেমিকটি মার্কিন সেনাবাহিনীর সৈনিক ছিলেন। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট চিঠির সম্বন্ধেও, যেটি স্থান পেয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। যদিও সেটি প্রেমের চিঠি নয়। ১৮৬২ সালে ফরাসি সাহিত্যিক ভিক্টর হুগো তাঁর উপন্যাস ‘লা মিজারেবল’ প্রকাশের পর প্রকাশককে লিখেছিলেন একটি চিঠি, সেখানে ছিল একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন ... ...
“টুসু, কি শাড়ি চাই গো দকানে। যেটি লাগে তর মনে। / হরেক রকম সায়া শাড়ি / বেলাউজ নাই দকানে। / কলকাতা গেলে ইবার দিব গ বেলাউজ কিনে। / পয়সা দিতে হবে নাই গ দিব গ অন্যে দিনে।“সুরের মূর্ছনায় জাগিয়ে রাখে রুখা-মাটির পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, সিংভুম অঞ্চলের গ্রামগুলোকে পৌষ মাসের প্রতিদিন সন্ধ্যায়, শীতল রাতে। পৌষালী শীতে টুসুদেবী বাড়ির জীবন্ত কন্যা আদরিণী 'টুসুমনি' হিসেবে পরিচিত। টুসু দেবী কুমারী দেবী, তাই এই পূজার প্রধান উদ্যোক্তা ও ব্রতী হন রুখামাটির অঞ্চলের নারীরা। টুসু দেবীর পূজা মূলত মহিলা কেন্দ্রীক। তাই নেই কোনও পুরোহিতের বালাই। আচার উপাচারও নামমাত্র। কৃপণ প্রকৃতি, বিস্তীর্ণ ঊষরতা, শীত ও তাপের সঙ্গে ... ...
পথের পাঁচালীর অপু ও দুর্গার মতো বুনো গাছপালার ঝোপঝাড়ে, কাশফুলের অলিগলিতে কিম্বা কালবোশেখি ঝড়ে আমের গুঁটি কুড়িয়ে শিশুকাল হয়তো আমাদের অর্থাৎ পঞ্চাশ-ষাট ঊর্ধ্বের বয়সী অনেকেরই কেটেছে। চড়েছি আমরা জামরুল অথবা পেয়ারা গাছে কাঠপিঁপড়ের কামড় সহ্য করে, মাছ ধরেছি কাকা-জেঠুর সাথে পুকুরে ছিপ ফেলে। বাতাবি লেবু অথবা কাপড়ের বল বানিয়ে খেলেছি ফুটবল। খেলেছি কানামাছি, গোল্লাছুট, ডাংগুলি। করেছি দাপাদাপি কর্দমাক্ত বৃষ্টির জলে ভরা মাঠে, সাঁতারে পুকুর এপার-ওপার করে। আমাদের অনেকেরই হয়তো শৈশব কেটেছে মফস্বল শহরে। অক্ষর পরিচয়, নামতা, সহজ পাঠ শিখেছি পাঁচ-ছয় ভাইবোন মিলে বাবা-কাকা-জেঠার কাছে একসাথে গোল করে বসে গল্পের মাধ্যমে – খেলার মাধ্যমে – ছবির মাধ্যমে – আঁকিবুঁকির মাধ্যমে আর ... ...
রূপম-ঝুমঝুম-বুলুদি-দুলু-পল্লব এবং আরো অনেকে মিলে দেখে এসেছিলাম বলরাজ সাহানির 'ঘর ঘর কী কাহানি' সিনেমা। হিন্দি কিছুই বুঝতাম না, কিন্তু ভাই-বোনেরা একসাথে সিনেমা দেখা - সেটাতেই আনন্দ লুকিয়ে ছিল।পরবর্তী জীবনে কাকিমণির স্নেহ এবং শাসন দুটোই পেয়েছি। পরবর্তী কালে মায়ের উপদেশে আমার স্ত্রী এবং ভাইবৌ কাকিমণিকে 'মেজোমা' বলেই সম্বোধন করে। ****১৯৭১ সালের শেষের দিকে বাবা নৈহাটিতে বদলি হওয়ার খবর পেয়েছিলেন। যেহেতু ডিসেম্বরের শেষের দিকে ছিল, তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে আমরা এখন বারাসাতে ফিরে যাব। বাবা কোয়ার্টার ইত্যাদির ব্যবস্থা করে নৈহাটিতে স্থায়ী হতে কিছুটা সময় নেবেন। আমাকে এবং পল্লবকে বারাসতের স্কুলে ভর্তি করা হবে, সত্যভারতী স্কুলে। সুন্দরদাদু কথা বলে রেখেছিলেন আগে থেকে, যাতে ... ...
আমাদের কী উত্তেজনা ! বারাসাতে শুধু দিগন্তই উন্মুক্ত নয়, কিছুদিনের জন্য জীবনটাও। দিন কয়েকের জন্য কোনও শাসন নেই। প্রতিটি মুহূর্তই নিজের মতো করে থাকা। প্রত্যেকটা দিন কেবলই উদযাপনের, একেবারে নিজের মতো করে। বারাসতের বাড়ি ঘিরে আছে গাছপালা, হাঁস চড়া পুকুর, ধানক্ষেত, ধুলোমাখা পথ আর আত্মীয়-স্বজন। আর তাছাড়া শুনেছি শান্তিনিকেতন থেকে মেজপিসি, ঝুমঝুম, ভজু'রা সব আসবে। দাদাভাই, বুলুদি, দুলু'রা তো আছেই।আমাদের যেদিন যাওয়ার ঠিক হয়, তার একদিন আগে ছোটকাকু চলে যান। আগেই জানিয়েছি ছোটকাকুও তখন বাবার সাথে একই অফিসে কাজ করেন। ছোটকাকু বারাসাত স্টেশন থেকে দুপুর বেলায় আমাদের বাড়িতে হেঁটে যান। রাস্তা একদম ফাঁকা। হাত-মুখ ধুয়ে ভিতরে খেতে বসেছেন। মেজপিসি ঝুমঝুম ... ...
টিফিনের সময় অন্যান্য সহপাঠী সুনীল, সুবীর, তাপস, প্রণব'দের সাথে একসঙ্গে ক্যাম্পাসে ঘুরতাম। কোনো কোনো দিন আমরা গাছপালা ঘেরা প্রিন্সিপালের বাড়িতে যেতাম। ওখানে গেলেই খুব ভয় লাগত। এত গাছ এবং অন্ধকার, সূর্যের আলো গাছ ভেদ করে ভিতরে ঢোকার সুযোগই পেত না। আমাদের ক্লাসে প্রায় জনা-আটেক মেয়ে পড়ত। আমার তিনজনের নাম মনে আছে। কবিতা, সুপর্ণা ছাড়া আরেকজন মীনাক্ষী ছিল। মীনাক্ষীর নাম মনে আছে কারণ ও আমাদের সাথে ঘুরতে, টিফিন শেয়ার করতে, খেলতে পছন্দ করত। এমনকি, পিটি স্যারকে জোরাজুরি করে আমাদের সাথে ক্রিকেট পর্যন্ত খেলত। বেশ ডানপিটে টাইপের ছিল। বেশ লম্বা এবং সবল চেহারার ছিল। কবিতার সাথে আমাদের জমতো না বলে, ও আরও ... ...
প্রথম দিকে যখন আমি ছোট ছিলাম, আমাকে নিতো না দাদারা এবং বেশির ভাগ সময়েই মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতাম। পঞ্চম শ্রেণী থেকে, বড়রা (সুখেন-দা, সুধীর-দা এবং অন্যান্যরা) আমাকে দলে নেয়।প্রাথমিকভাবে তাদের দিক থেকে অনিচ্ছা ছিল, কারণ এটি সিনিয়রদের একটি দল ছিল। সবাই সপ্তম, অষ্টম অথবা নবম শ্রেণীতে পড়ত। আমার পীড়াপীড়িতে একদিন তারা আমাকে একটি চলমান ক্রিকেট ম্যাচে বল করতে বলে এবং আমার বল করা দেখে তারপরে আমাকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।আমাদের বাড়ির পিছনে একটি আমার বয়সী ছোটদের গ্রুপ ছিল। আমি তাদের সাথে প্রথমে ক্রিকেট, ফুটবল খেলতাম। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল, সামনের মাঠে বড়দের সাথে খেলার। কারণ বাড়ির পিছনের ছোটদের গ্রুপটাতে বেশিজন ... ...
সেই দিনগুলিতে, স্কুল ছুটির সময় মেজোপিসি ওনার মেয়ে ঝুমঝুম এবং ভজুকে এবং মাঝেমাঝে শান্তুকে নিয়ে শান্তিনিকেতন থেকে ঘন ঘন আমাদের বাড়িতে আসতেন এবং আমরাও প্রায়ই শান্তিনিকেতনে যেতাম। ঝুমঝুম আর আমার মধ্যে সেই সময় থেকেই ভাইবোন সম্পর্ক ছাড়াও একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয় । ঝুমঝুম আর আমি প্রায় সমবয়সী। ঝুমঝুম খুব শান্ত ছিল, আর পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। তার শান্ত স্বভাবের কারণে আমার সমস্ত দুষ্টুমি কান্ডকারখানা সহ্য করত। যদিও আমি সেই সময় একটু দুষ্টু ছিলাম, কিন্তু আমাদের দুজনের স্বভাবের অনেক মিল ছিল। অন্তর্মুখী, পড়াশোনার ব্যাপারে সিরিয়াস, লোকজনের কোলাহলের থেকে দূরে থাকা, গল্পের বই পড়া।এক সন্ধ্যায়, ঝুমঝুম আর আমি বাইরের বারান্দায় একটা মাদুরে ... ...
কিন্তু ইন্দ্রাণীদের বাগানটি বিশাল, সুন্দর ঘাসের লনে আচ্ছাদিত। রাস্তার পাশে সারি দিয়ে গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা ফুল গাছের টব বসানো এবং সুন্দর করে পরিচর্যিত। পরে শুনেছিলাম একজন মালি বাগানটির পরিচর্যা করতো। আমরা বাইরের বসার ঘরে বসেছিলাম। একটু পরে আমরা যাই ভিতরে একটি আলাদা ডাইনিং রুমে, যেখানে পাতা আছে একটি কাঠের ডাইনিং টেবিল, ঢাকা দেওয়া একটি সুন্দর কাপড় দিয়ে। আমার চোখে প্রথম দেখা ডাইনিং টেবিল। এই পর্যন্ত্য মেঝেতে বসে খেয়ে এসেছি, বারাসাতে পিঁড়ির উপর বসে আর এখন কাপড়ের আসনের উপর বসে। টেবিলের উপরে রাখা আছে সাদা সুন্দর প্লেট, বাটি। মনে হয় কাঁচের। সাজানো নানারকম খাবার বিভিন্ন বড় বড় বাটি এবং থালাতে। পরে ... ...
এই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে, প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর জন্য একটি কাঠের বিল্ট-ইন টেবিল এবং চেয়ার একসাথে থাকত এবং নিউটন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ম ছিল একজন ছাত্র এবং একজন ছাত্রী পাশাপাশি বসবে। এটা লটারির মাধ্যমে ঠিক করা হত, কে কার সাথে বসবে। আমার ভাগ্যে পড়ল বাণী, ক্লাস মনিটর। আমার থেকে লম্বা ছিল বলে আমি বাণী-দি বলে ডাকতাম। পেয়ে গেলাম আরেকজন বকুল-দি। বকুল-দির মতন ফর্সা দেখতে ছিল না, গায়ের রঙ অনেকটাই চাপা। কিন্তু মুখশ্রী খুব সুন্দর, খুব হাসি-খুশি, ঝলমলে স্বভাবের। পড়াশোনায় অবশ্য খুব একটা ভালো ছিল না, কিন্তু স্কুলের সব খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিল। বাণী-দির সহায়তায় - আমি পতাকা উত্তোলন, মার্চপাস্ট, সরস্বতী পুজো, ইত্যাদিতে ... ...