বেনারস পর্ব ৭সন্ধ্যা হয়ে আসছে। বেনারসের রাস্তা আলোয় ঝলমল করছে। জনস্রোত চলেছে। নিজস্ব ছন্দে, গতিতে এগিয়ে চলেছে সকলেই। আমিও চলেছি দোকান দেখতে দেখতে, মানুষ জন দেখতে দেখতে। এ চলাও এক অদ্ভুত চলা ! এমন ভীড় রাস্তায় একমাত্র কলকাতার পূজোর সময়েই চলেছি। জামাকাপড়, বাসনের দোকান, মিষ্টি, রাবড়ি, চাট, ঠাণ্ডাই , মশলা দুধ, চা – কি না! সব দোকানেই ভীড়। একটি জায়গায় দেখা গেল বড় বড় হাঁড়িতে খিচুড়ি – বিলি করা হচ্ছে পথ চলতি মানুষের মধ্যে । সেই প্রসাদ কেউ গ্ৰহণ করছেন প্রসাদরূপে কেউ বা ক্ষুধা নিবৃত্তির উদ্দেশ্যে। স্বয়ং মা অন্নপূর্ণার বাস বারাণসীতে – সেখানে মায়ের কোনোও সন্তান কি আর অভুক্ত থাকতে ... ...
বেনারস পর্ব ৬পায়ে পায়ে পৌঁছে গেলাম মন্দির চত্বরে। এইবার অবশ্য সরু গলি দিয়েই গেলাম। মহারাজদের ঐ ভদ্রলোক নিয়ে গেলেন। আমরা চারজন ওঁর কথা মতোই পূজার সামগ্রী নিয়ে লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভীড় তুলনামূলকভাবে কম এই লাইনে। মন্দির তখন বন্ধ। একটু পরেই লাইন চলতে শুরু করল। এক হাতে পূজার থালা, ফল, অন্য হাতে দুধের গ্লাস – চারিদিকে বাঁদর লাফালাফি করছে – বেশ টেনশনে আমি আর মঞ্জুলাদি। মঞ্জুলাদি মুখে সমানেই বিড়বিড় করে বলে চলেছেন "ও বাবা! বাবা গো! দয়া করো বাবা! নির্বিঘ্নে তোমার কাছে যেন পৌঁছতে পারি।" মেয়ে, সৌমিতা বাঁদরের লাফালাফি দেখে বেশ কৌতুক বোধ করছিল। শুধু সৌমিতা নয়। আমিও। পুঁচকে বাঁদরের কেরামতি ... ...
বেনারস পর্ব ৫পরের দিন সকালে জলখাবারের পর গেলাম অদ্বৈত আশ্রমের কাছেই "লক্ষ্মী নিবাস" এ। মহিলা ভক্তদের সঙ্গে শ্রীশ্রীমা টানা আড়াই মাস এই বাড়িতে ছিলেন। বড় আনন্দের ছিল সে সব দিন। বাড়ির মালিক কলকাতার বাগবাজারের বাসিন্দা। শ্রীশ্রীমায়ের ভক্ত। ভক্তদের কাছে মা স্বয়ং লক্ষ্মী – স্বয়ং জগজ্জননী। ভক্ত পরিবার তাই নব নির্মিত বাড়িটিতে শ্রীশ্রীমাকে দিয়েই গৃহপ্রবেশ করিয়েছিলেন। সেই পূত পাদস্পর্শে পবিত্র হয়ে বাড়িটি মন্দিরের মর্যাদা পায়। এখনও বাড়িটিতে পরিবারের লোকজন বসবাস করেন নীচের তলায়। উপরের তলায় সুন্দর, আড়ম্বরহীন শ্রীমায়ের মন্দির। জানা গেল, ঐ ঘরটিতেই শ্রীমা বসবাস করেছিলেন বলেই ঘরটিকে মন্দির করা হয়েছে। গোটা বাড়িটির দেওয়াল জুড়ে শ্রীশ্রীমা ও তাঁর সঙ্গী সাথী, শ্রীমায়ের ... ...
বেনারস পর্ব ৪দুপুরের খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে একটি রিক্সা নিয়ে বেরোন হল। উদ্দেশ্য নৌকাবিহার। একটি রিক্সা নিয়ে পৌঁছলাম অসি ঘাটে। বিকেল হয়ে আসছে তখন। দরাদরি করে একটি নৌকায় গিয়ে বসা হল। নদীতে নানা আকারের নৌকার ভীড়। একে একে পার হয়ে যাচ্ছে এক একটি ঘাট। নতুন করে সংস্কার হওয়া সত্ত্বেও প্রাচীনতা এতটুকুও হারায় নি যেন ! আমার ভিতরের 'আমি' টা যেন বলে উঠল – ' আবারও এমনভাবে দেখছ? কত শতবার এই নদীতে, নদীর ঘাট গুলোতে আসা যাওয়া করেছ – ভুলে গেলে? মন দিয়ে দেখ দেখি! ঐ যে সিঁড়ির উপরেই ঘাটের মোটা থামগুলো... যেগুলোতে ফাটল ধরেছে আর ফাটলের মধ্যে দিয়ে কত ... ...
বেনারস পর্ব ৩ ভোরবেলা অন্ধকার থাকতেই স্নান সেরে তৈরী হয়ে নিলাম বেরোবার জন্য। জলখাবার সেরে অদ্বৈত আশ্রমের মন্দিরে গিয়ে বসলাম। সকালের পূজো চলছে মন্দিরে। মন্দির চত্বরেই দুর্গা দালান – শ্রীশ্রীমা এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের সন্তানদের পদধূলি ধন্য । কাশীধামে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করবার জন্য ভিঙ্গার রাজা স্বামী বিবেকানন্দকে কিছু অর্থ প্রদান করেছিলেন। কাশীতে মূলতঃ বেদান্ত প্রচারের উদ্দেশ্যে স্বামীজীর নির্দেশে এই বেদান্ত আশ্রম স্থাপন করেন স্বামী শিবানন্দ। নাম রাখা হয় "শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রম"। কোনোও পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত স্থানে গেলে তা অনুভূতিতে ধরা দেয়। গোটা বাড়িটি জুড়ে যেন কি এক আধ্যাত্মিকতার পরশ! শত বছরেরও বেশী সময় পার হয়ে গিয়েছে এই আশ্রম বাড়িটির উপর দিয়ে। দেওয়াল, থাম, ... ...
বেনারস পর্ব ২ ভীড় রাস্তা, যানজট পার করে রামাপুর লাকসা রোডে রামকৃষ্ণ মিশনের গেস্ট হাউসে এসে পৌঁছলাম। গেটের উপরে লেখা দেখে মন পৌঁছিয়ে গেল গত শতাব্দীর শুরুতে। ১৯০০ সালের কথা। স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনজন তরুণ শ্রী চারুচন্দ্র দাস (পরবর্তীতে স্বামী শুভানন্দ), শ্রী কেদারনাথ মৌলিক (স্বামী অচলানন্দ) ও যামিনী রঞ্জন মজুমদার কোনোওরকমে 'চার আনা' যোগাড় করে শুরু করেছিলেন 'দরিদ্র জনের সেবার্থে এই সেবাশ্রম' 'জীব জ্ঞানে শিব সেবা' র আদর্শ রূপদান এর প্রচেষ্টায়। প্রথমে শুরু হয়েছিল কাশীর জঙ্গমবাড়ি এলাকায় ছোট একটি ভাড়া বাড়িতে ডিসপেনসারি করে। পরে ১৯০১ সালে রামাপুরে একটি বড় বাড়িতে সেবাশ্রমের ঠিকানা হয়। ১৯০২ সালে স্বামী বিবেকানন্দ এই দরিদ্র, ... ...
বেনারস পর্ব ১©তীর্থদেবতার আহ্বান না এলে যে কোনও তীর্থ অধরাই থেকে যায়, যতই সেই জায়গা সহজগম্য হোক না কেন। এই ধরণের কথা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। আমার ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে বেনারস বা কাশীধামের ক্ষেত্রে। কত জায়গায় কত বেড়ানো হয়ে গেল কিন্তু কাশী পৌঁছতে এত বছর লেগে গেল। তবে হ্যাঁ, কেমন যেন হুট করে এইবার যাওয়াও হয়ে গেল। কাশী বা বেনারস বাঙালীর second home বলা হয়। কাশী বা বেনারসের পটভূমিতে বিখ্যাত বহু গল্প, উপন্যাসেও এর পরিচয় পাওয়া যায়। কাশী বিশ্বনাথ, দশাশ্বমেধ ঘাট, বাঙালিটোলা অথবা বেনারসের রাবড়ি, দই – আর অবশ্যই বেনারসের গলি – ছোটবেলা থেকেই অনেকের মুখে মুখে শুনে এসেছি। এতদিনে ... ...
আজকাল থেকে থেকেই মনে প্রশ্ন জাগে – কে আমি? এই 'আমি' টা কে দেখা যায় কি? দেখতে কেমন? এল সে কোথা থেকে? যা কিছু দেখি সবই 'আমার' বলেই চিনি। 'আমার মাথা, আমার চোখ, আমার হাত, পা... বাড়ি, ঘর, পরিবার.... শখ, সৌখিনতা ... রাগ, দ্বেষ, অভিমান .... আরও কত সম্পদ – সবকিছুর মালিকানা দিব্যি উপভোগ করে চলেছেন সেই 'আমি' টি কে বিশেষ চিনি বলে মনে হয় না। দৈনন্দিন ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে সে কোন এক অন্তরালেই গা ঢাকা দিয়ে থেকে যায়। তাকে ধরাও আমার কর্ম নয় বলেই মনে হয়। একটা কথা বুঝেছি মাঝেমধ্যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লে 'আমি' টি দিব্যি খোশমেজাজে থাকেন। ... ...
খেরোরখাতায় বেশ কিছু মাস আগের লেখা কিভাবে পাব? বিশেষ কিছু কারণে অনেকদিন লেখা দেওয়া হয় নিআজ চেষ্টা করলাম লেখা দেওয়ার। ... ...
গত দুদিন ধরে আছি সবুজ জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি গ্রামে। আছি বড় শান্ত, নিরালায় এক হোম স্টে র একমাত্র অতিথি হয়ে। ঘরের বাইরে ব্যালকনিতে এলেই পাহাড়, জঙ্গলের বড় সুন্দর ছবি – তারা সকলেই আমার একান্ত আপনার! বারান্দা ঘেঁষে এবড়োখেবড়ো রাস্তা গ্রামের দিকে চলে গিয়েছে। দিনেরবেলায় হাতেগোনা কয়েকজনের যাওয়া আসা ঐ রাস্তা ধরে। সন্ধ্যে নামলেই সবকিছু বড় শান্ত। উল্টোদিকের পাহাড়ের ... ...