- স্যার, চুলটা রং করে দিই? - না, দরকার নেই। - ভালো রং ছিল। - না, থাক।- করেই দেখুন না একবার, মাত্র দেড়শো টাকায় তিন মাসের গ্যারেন্টি। - পকেটে পয়সা নিয়ে বেরোইনি, পরে হবে। - পয়সা পরে দেবেন, আপনি কি আর পালিয়ে যাচ্ছেন! - আরে আমার পাকাচুলও কি আর পালিয়ে যাচ্ছে! পরের বার হবে। সেলুনে গিয়ে চুল কাটার শেষ পর্যায়ে প্রতিবারই এমন প্রস্তাব আসে ভোলাবাবুর কাছে, ভোলাবাবু এটা ওটা বলে এড়িয়ে যান। - দাদা, চুল যে সব সাদা হয়ে ... ...
- সরস্বতী পুজো কেমন কাটল? - ভালোই। - ছোটবেলায় আমরা কত মজা করতাম, মনে পড়ে? - সে আর বলতে! - গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চিড়ে-নাড়ু-শশা-কলা খাওয়ার কথা মনে পড়ে? সব শেষে দুপুর গড়িয়ে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে খিঁচুড়ি খাওয়া। - বেশ মনে পড়ে, তবে সে তো মান্ধাতার আমলের কথা। - তারপর একটু বড় হলে স্কুলের পুজোর আয়োজন করার কথা? রাত জেগে কাগজের রঙিন শিকলি বানিয়ে ঝোলানো? - হ্যাঁ, তখন গঞ্জের স্কুলে পড়তাম। - তারপর কলেজে উঠে কোনোমতে অঞ্জলি সেরে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো? - সে আবার মনে নেই! আমাদের মফঃস্বলের গার্লস স্কুলগুলোর গেট সেদিন খোলা থাকত। - তারপর বড় শহরে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ের কথা? সেই সময়েই তো বাঙালিদের ভ্যালেন্টাইনস ডে ... ...
“কি এত চুষছিস তখন থেকে! কি আছে ভেতরে?”“মজা, কাঁকড়ার ভেতর মজা আছে।”মজা না মজ্জা! ইয়াব্বড় একটা কাঁকড়ার দাঁড়া মুখে পোরা মুখটা নালেঝোলে মাখামাখি। তাই কথাটা ঠিক বোঝা গেল না। সে যাকগে, বড়রা কবেই বা ছোটদের কথা বুঝেছে! মাথা না ঘামিয়ে কাঁকড়ার মজ্জাতেই মনোনিবেশ করলেন ভোলাবাবু। তখন তাঁর বয়স মেরেকেটে পাঁচ।ছোটবেলা থেকেই ভোলাবাবু কাঁকড়া-পাগল। ঝাল, চচ্চড়ি, টক কোনও কিছুতেই তাঁর আপত্তি নেই। সুযোগ পেলেই খান; বড় হয়েও, বুড়ো হয়েও। কর্কট রাশির জাতক না হয়েও কাঁকড়ার মজা তাঁর মজ্জায় মিশে গেছে। কোন ছোটবেলায় বলা কথাটাও সেই সঙ্গে পরিচিত মহলে প্রবাদ হয়ে গেছে - কাঁকড়ার ভেতর মজা আছে। কাঁকড়ার জন্য এহেন ভোলাবাবুর একবার কাঁদো কাঁদো ... ...
পরের মুখে ঝাল খাওয়ার বদ অভ্যেস অল্পস্বল্প থাকলেও লংকার ঝাল আমায় বড় ঝামেলায় ফেলে। পশ্চিম ভারতের একটা গঞ্জ মতো জায়গায় অফিসের কাজে গিয়ে আমি এক জব্বর লংকাকাণ্ডের মধ্যে মুখ পুড়িয়ে ফিরেছিলাম কোন পুণ্যবলে কে জানে। সাল দু’হাজার তিন, অক্টোবরের এক ভোরবেলায় বাস থেকে নামলাম প্রায় জনমানবহীন বাসস্ট্যান্ডে। শুনেছিলাম, শহরের মধ্যে একটা ‘লজ’ আছে। দাঁড়িয়ে থাকা একমাত্র অটোতে চড়ে কপাল ঠুকে রওয়ানা দিলাম সেই দিকে। পৌঁছলাম একটা তিনতলা বাড়ির সামনে। ... ...
ওয়ার্ক ফ্রম হোম চলছে এখনও। সকাল বিকেল অফিসের অনলাইন মিটিং করছি। অফিস মানে মিটিং তো ছিলই, ইদানিং মিটিং মানেই অনলাইন হয়েছে। মিটিং-এর আলোচ্য বিষয়বস্তু অবশ্য কোনোদিনই আমার মাথায় ঢোকে না। অফিসে বসে মিটিং করলে মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর অনলাইনে ইয়ার প্লাগ বেয়ে এ কানে ঢুকে ও কান দিয়ে বেরিয়ে সার্কিট কমপ্লিট করে। একটু কান কটকট করলেও মাথাটা বেশ হালকা থাকে সারাদিন। ব্যান্ডউইড্থ না কি একটা কারণে ক্যামেরা বন্ধ থাকায় মিটিংগুলো খুব আরামের হয়। সে যাইহোক, কয়েকদিন আগে নতুন করে লকডাউন ঘোষণা হল এখানে। পরদিনের মিটিং-এ অফিসের এক গুরুজন সঠিক পরিকল্পনা, সময় আর সম্পদের সদ্ব্যবহার, খরচ কমানো, দক্ষতা বৃদ্ধি, 'ওয়ার ফুটিং'-এ ... ...
তখন সদ্য চাকরি করতে শুরু করেছি। পার্কস্ট্রিটে অফিস।অফিসের কাজে একবার বিলাসপুর যেতে হল। প্ল্যান ছকে নিলাম। সন্ধ্যে সাড়ে আটটায় ট্রেন। অফিস থেকে বেরিয়ে কোনো একটা রেষ্টুরেন্ট থেকে বিরিয়ানি প্যাক করে নেব। তারপর ট্যাক্সি ধরে সোজা হাওড়া স্টেশন। ট্রেন ছাড়লে আরামসে খেয়ে দেয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুম দেব। তখনও সংসারী হই নি, ভাড়ার বাসায় নিজেই ভাত ফুটিয়ে খেতাম। বিছানার চাদর মাসে একবার কাচা হত কিনা সন্দেহ। তাই অফিসের কাজে এদিক ওদিক যাওয়া মানে আমার কাছে রাজার হালে থাকা। সুতরাং রাজকীয় প্ল্যান এ কোনো ফাঁক রাখিনি।কিন্তু ওপরওয়ালা জল ঢেলে দিলেন আমার নিখুঁত প্ল্যানে, আক্ষরিক অর্থেই। বিকেল হতেই শুরু হল ঝড়বৃষ্টি। ... ...