এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সরস্বতী পুজো

    Subhamoy Misra লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৮০৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • - সরস্বতী পুজো কেমন কাটল?


    - ভালোই।


    - ছোটবেলায় আমরা কত মজা করতাম, মনে পড়ে?


    - সে আর বলতে!


    - গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চিড়ে-নাড়ু-শশা-কলা খাওয়ার কথা মনে পড়ে? সব শেষে দুপুর গড়িয়ে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে খিঁচুড়ি খাওয়া।


    - বেশ মনে পড়ে, তবে সে তো মান্ধাতার আমলের কথা।


    - তারপর একটু বড় হলে স্কুলের পুজোর আয়োজন করার কথা? রাত জেগে কাগজের রঙিন শিকলি বানিয়ে ঝোলানো?


    - হ্যাঁ, তখন গঞ্জের স্কুলে পড়তাম।


    - তারপর কলেজে উঠে কোনোমতে অঞ্জলি সেরে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো?


    - সে আবার মনে নেই! আমাদের মফঃস্বলের গার্লস স্কুলগুলোর গেট সেদিন খোলা থাকত।


    - তারপর বড় শহরে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ের কথা? সেই সময়েই তো বাঙালিদের ভ্যালেন্টাইনস ডে ব্যাপারটা মাথায় ঢুকল। দল বেঁধে বেরিয়ে সময় সুযোগ বুঝে জোড়ায় জোড়ায় আলাদা হয়ে যাওয়া।


    - তাও মনে আছে।


    -তারপরে কেমন যেন হয়ে গেল সব। তাই না!


    - আরে না, তা কেন? প্রথম চাকরি পাওয়ার পর পাড়ার পুজোয় মেতে গেলাম। চাঁদা দিতে পারতাম বলে খুব ইজ্জৎ দিত ছেলেছোকরারা। কয়েক বছর বেশ মজা হয়েছে।


    - তারপর?


    - তারপর একটু বড় কোম্পানিতে ঢুকলাম। তবে পুজোর দিন ছুটি নিয়ে নিতাম।


    - তাও ভাল। ছুটি পাওয়া যেত।


    - তখন চেহারা একটু ভারিক্কি হয়েছে। একবার একজনের বাড়ির পুরুত বেপাত্তা হয়ে যাওয়ায় আমাকে ধরেবেঁধে পুজো করতে বসালো।


    -বাঃ। পুরোহিতগিরিও বায়োডাটায় ঢুকে গেছে!


    - তারপর থেকে কয়েক বছর ওদের বাঁধা পুরোহিত ছিলাম। ভালোই দিত থুতো।


    -তারপর?


    - তারপর ফ্ল্যাট কিনলাম। হাউসিং এর পুজো করতাম সন্ধেবেলা গানবাজনা, রাতে কচুরি আলুরদম।


    - তাই নাকি? তারপর?


    - তারপর একটু উঁচুতে উঠলাম। কাজকর্মের চাপ বাড়ল। তবে মা সরস্বতীকে অবহেলা তো করতে পারি না। তাই সকাল সকাল অঞ্জলি দিয়ে অফিস চলে যেতাম। হাফ ডে নিয়ে রাখতাম।


    - এবারেও কি তাই হল?


    - না, না, এখন আরো উঁচুতে উঠে গেছি। অনেক বড় কোম্পানিতে চাকরি করি। অনেক দায়িত্ব।


    - তাহলে, এবারে আর সরস্বতী পুজো হল না?


    - না তা কেন? অন্যভাবে হল।


    - কি রকম?


    - ক্লায়েন্ট এর মিটিং ছিল সারাদিন। খুব জরুরি মিটিং। বিশাল একটা প্রজেক্টের ব্যাপার, অনেক কিছুে আলোচনার ছিল।


    - পুজো?


    - হল তো। তবে ঠিক চালু রীতির পুজো নয়।


    - সেটা কেমন?


    - ক্লায়েন্ট ডেকে বলল, আপনাদের যন্ত্রপাতি টেকনোলজি ইত্যাদি নিয়ে বিশদে বলুন। বললাম। তারপর ক্লায়েন্ট যেখানে যা শুনেছে সোনার পাথরবাটির কথা, সব শোনাল আমাকে। ওই "knowledge sharing" যাকে বলে আমাদের লাইনে। এও তো একরকম জ্ঞানদায়িনীর আরাধনা।


    - তা বটে!


    - সারাদিন অনেক বকবক করলাম, অনেক বুকনি শুনলাম। এমনিতে সরস্বতী পুজোয় ঘন্টা দুয়েক যথেষ্ট। কিন্তু সকাল থেকে সন্ধ্যে বকবক করে সত্যি সত্যি বাগ্দেবীর পুজো করলাম তো। মাঝে শুধু আধঘন্টাটাক বিরতি ছিল, খাওয়ার জন্য। স্যান্ডউইচ আর জুস্ খেলাম।


    - তা প্রজেক্টের কাজটা কি হল?


    - হবে, ক্লায়েন্ট ভালো করে দেখেশুনে তলিয়ে বুঝে ভেবেচিন্তে পরে জানাবে বলেছে।


    - ওটা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। খিঁচুড়ির বদলে স্যান্ডউইচ খাওয়ার জন্য ক্লায়েন্ট এর জিভে দুষ্টা সরস্বতী ভর করেছিল। কুম্ভকর্ণের মত কয়েকমাস ঘুমিয়ে আবার একদিন জেগে উঠে হৈচৈ বাধাবে।


    - কে জানে সময়মত জাগবে কিনা!


    - চিন্তার কিছু নেই, লক্ষ্মী পুজো করলে আর নিয়মিত লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়লেই জেগে উঠবে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন