- সরস্বতী পুজো কেমন কাটল?
- ভালোই।
- ছোটবেলায় আমরা কত মজা করতাম, মনে পড়ে?
- সে আর বলতে!
- গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চিড়ে-নাড়ু-শশা-কলা খাওয়ার কথা মনে পড়ে? সব শেষে দুপুর গড়িয়ে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে খিঁচুড়ি খাওয়া।
- বেশ মনে পড়ে, তবে সে তো মান্ধাতার আমলের কথা।
- তারপর একটু বড় হলে স্কুলের পুজোর আয়োজন করার কথা? রাত জেগে কাগজের রঙিন শিকলি বানিয়ে ঝোলানো?
- হ্যাঁ, তখন গঞ্জের স্কুলে পড়তাম।
- তারপর কলেজে উঠে কোনোমতে অঞ্জলি সেরে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো?
- সে আবার মনে নেই! আমাদের মফঃস্বলের গার্লস স্কুলগুলোর গেট সেদিন খোলা থাকত।
- তারপর বড় শহরে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ের কথা? সেই সময়েই তো বাঙালিদের ভ্যালেন্টাইনস ডে ব্যাপারটা মাথায় ঢুকল। দল বেঁধে বেরিয়ে সময় সুযোগ বুঝে জোড়ায় জোড়ায় আলাদা হয়ে যাওয়া।
- তাও মনে আছে।
-তারপরে কেমন যেন হয়ে গেল সব। তাই না!
- আরে না, তা কেন? প্রথম চাকরি পাওয়ার পর পাড়ার পুজোয় মেতে গেলাম। চাঁদা দিতে পারতাম বলে খুব ইজ্জৎ দিত ছেলেছোকরারা। কয়েক বছর বেশ মজা হয়েছে।
- তারপর?
- তারপর একটু বড় কোম্পানিতে ঢুকলাম। তবে পুজোর দিন ছুটি নিয়ে নিতাম।
- তাও ভাল। ছুটি পাওয়া যেত।
- তখন চেহারা একটু ভারিক্কি হয়েছে। একবার একজনের বাড়ির পুরুত বেপাত্তা হয়ে যাওয়ায় আমাকে ধরেবেঁধে পুজো করতে বসালো।
-বাঃ। পুরোহিতগিরিও বায়োডাটায় ঢুকে গেছে!
- তারপর থেকে কয়েক বছর ওদের বাঁধা পুরোহিত ছিলাম। ভালোই দিত থুতো।
-তারপর?
- তারপর ফ্ল্যাট কিনলাম। হাউসিং এর পুজো করতাম সন্ধেবেলা গানবাজনা, রাতে কচুরি আলুরদম।
- তাই নাকি? তারপর?
- তারপর একটু উঁচুতে উঠলাম। কাজকর্মের চাপ বাড়ল। তবে মা সরস্বতীকে অবহেলা তো করতে পারি না। তাই সকাল সকাল অঞ্জলি দিয়ে অফিস চলে যেতাম। হাফ ডে নিয়ে রাখতাম।
- এবারেও কি তাই হল?
- না, না, এখন আরো উঁচুতে উঠে গেছি। অনেক বড় কোম্পানিতে চাকরি করি। অনেক দায়িত্ব।
- তাহলে, এবারে আর সরস্বতী পুজো হল না?
- না তা কেন? অন্যভাবে হল।
- কি রকম?
- ক্লায়েন্ট এর মিটিং ছিল সারাদিন। খুব জরুরি মিটিং। বিশাল একটা প্রজেক্টের ব্যাপার, অনেক কিছুে আলোচনার ছিল।
- পুজো?
- হল তো। তবে ঠিক চালু রীতির পুজো নয়।
- সেটা কেমন?
- ক্লায়েন্ট ডেকে বলল, আপনাদের যন্ত্রপাতি টেকনোলজি ইত্যাদি নিয়ে বিশদে বলুন। বললাম। তারপর ক্লায়েন্ট যেখানে যা শুনেছে সোনার পাথরবাটির কথা, সব শোনাল আমাকে। ওই "knowledge sharing" যাকে বলে আমাদের লাইনে। এও তো একরকম জ্ঞানদায়িনীর আরাধনা।
- তা বটে!
- সারাদিন অনেক বকবক করলাম, অনেক বুকনি শুনলাম। এমনিতে সরস্বতী পুজোয় ঘন্টা দুয়েক যথেষ্ট। কিন্তু সকাল থেকে সন্ধ্যে বকবক করে সত্যি সত্যি বাগ্দেবীর পুজো করলাম তো। মাঝে শুধু আধঘন্টাটাক বিরতি ছিল, খাওয়ার জন্য। স্যান্ডউইচ আর জুস্ খেলাম।
- তা প্রজেক্টের কাজটা কি হল?
- হবে, ক্লায়েন্ট ভালো করে দেখেশুনে তলিয়ে বুঝে ভেবেচিন্তে পরে জানাবে বলেছে।
- ওটা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। খিঁচুড়ির বদলে স্যান্ডউইচ খাওয়ার জন্য ক্লায়েন্ট এর জিভে দুষ্টা সরস্বতী ভর করেছিল। কুম্ভকর্ণের মত কয়েকমাস ঘুমিয়ে আবার একদিন জেগে উঠে হৈচৈ বাধাবে।
- কে জানে সময়মত জাগবে কিনা!
- চিন্তার কিছু নেই, লক্ষ্মী পুজো করলে আর নিয়মিত লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়লেই জেগে উঠবে।