মা দিবস আজ। মা জন্ম দেয় শিশুকে। মা কী ঈশ্বরকেও জন্ম দেয়? রহস্যের সমাধানের আগে দেখি মা বলতে কী বুঝি আমরা? ম দিয়ে মাকে বোঝানো হয় নানান ভাষায়। ম মানে মিতকরণ বা পরিমিত করা। আর 'আ' হলো আধার। আমাদের অবস্থা যখন ছিলো ভ্রূণ অবস্থায় তখন আমাদের অবস্থা ছিলো ক্ষুদ্রতম বা পরিমিত। এই পরিমিত আমাকে ধারণ করেছিলেন ... ...
দিল্লি যখন গিয়েছিলাম তখন জামে মসজিদ ঘুরে তারই কাছে সারমাদ কাশানীর দরগায় গিয়েছিলাম। সারমাদ ছিলেন সুফি সাধক। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের মতো তিনি নিজেকে লয়লা মনে করে মজনু রূপী আল্লাকে খুঁজতেন। মনে করতেন যন্ত্রের মতো কিছু রীতি না মেনে প্রেমের মাধ্যমে আল্লাকে পেতে হয়। আবার বলতেন 'লা ইলাহা' বা 'খোদা নেই' মানে আচারের মাঝে আল্লাকে পাবে না। নামাজ করা, হজ করা বা রোজা রাখা হলো স্থুল ... ...
পাখীদের নামের সাথে মানব সমাজের নানা ধরণের মানুষের মিল রয়েছে। নামগুলো মানুষ চরিত্র বোঝাতে ব্যবহার হতো। এ যেন মানুষের সমাজের প্রতিবিম্ব। চীল/চিল বলতে যে দেওয়া নেওয়ার সময় চিৎকার করে। ইংরেজীতে hawker শব্দটাও hawk থেকে এসেছে কারণ তারা চিৎকার করে জিনিস বিক্রি করে। । বাংলায় চিল্লানো মানে চিৎকার করা আর এটা চীল থেকে এসেছে। চীল চিৎকার মানে জোরে চেঁচানো। বেচাকেনার সময় খুব চিৎকার হয়। বাজারে গেলে তা মালুম চলে কারণ সকলেই একসাথে দরদাম করছে। পাইকারী বাজার বা নিলামেও খুব বোঝা যায়। এগুলো এক ধরণের যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে রক্ত ঝরে না কেবল চিৎকার চলে। বিখ্যাত ভাষাবিদ কলিম খানের মতে সমাজে যারা চিৎকার করে কথা ... ...
কাক মানে কা কা করে যে পাখী। কা মানে কী কী করা। যেন বলছে কী আছে। কাককে বুঝতে হলে প্রাচীন সমাজ আর রীতিনীতি বুঝতে হবে। সে যুগে যজ্ঞ শেষে কাকের জন্যে সামান্য ভাগ রাখা হতো। গৃহস্থ মানুষ খাবারের অবশিষ্টাংশ কাকের জন্যে রাখতো। বিশেষ দিন ছিলো যেদিন কাকেদের উদ্দেশ্যে খাবার ঝোলানো হতো। শ্রাদ্ধে যে পিণ্ড মৃত আত্মার জন্যে রাখা হয় তা কাকেদের খাওয়ানো হয়। কাক যেন সেই মানুষের গোষ্ঠী যারা সকল অনুষ্ঠানে, দিনের শেষে কড়া নাড়ে আর বলে কী হয়েছে আজ। এদের অবশিষ্টাংশ দিয়ে বিদায় করা হয়। নইলে কাক চুরি করতেও সিদ্ধহস্ত। কলিম খান এক জায়গায় লিখেছেন গ্রাম বাংলায় এই মানুষদের ... ...
যার পক্ষ বা পাখা আছে সেই পক্ষী। পক্ষ মানে কী? প-য়ের ক্ষয় করে যে বা যার ক্ষয় হয়। প মানে পাওয়া, পালন। ক্ষয় করে বা ক্ষয় হয়। চাঁদের পক্ষ হয়। চাঁদ ক্ষয় হয় আবার পূরণও হয়। বর পক্ষ, কনে পক্ষ। বর গেলে কনের পূরণ আর কনে গেলে বরের। উভয় পক্ষ, বাদি পক্ষ, বিবাদি পক্ষ ইত্যাদিতে দুটি করে দিক আছে। একের ক্ষয় হলে অপরের লাভ হয়। পাখীরও দুটি ডানা বা পক্ষ। দুয়ের টানাপোড়েনে পাখী ওড়ে। পাখী এখানে বণিক শ্রেনীর প্রতীক। ক্রেতা আর বিক্রতার মাঝে দরাদরিতে ব্যবসা চলে। এতে এক পক্ষের অর্থ ক্ষয় হয় আর পণ্য লাভ হয় অপরের অর্থলাভ আর পণ্য ক্ষয় ... ...
নিমি ছিলেন রাজা। একবার তিনি যজ্ঞ করবেন বলে মনস্থ করলেন। যজ্ঞ মানে আদান প্রদান। কেউ কিছু দেবে আর তার বদলে কিছু পাবে। সাধারণ অর্থে ব্যবসা। ব্যবসায় লাগে দালাল। দালাল দুই পক্ষকে মেলায়। পুরোহিত হলো সেই দালাল। পুরের হিত করে যে। পুর মানে নগর বা পুর বা উৎপাদিত দ্রব্য। খাবারে তৈরী করা পুর পোরা হয়। পুরুষ তার দেহের পুর (বীর্য) স্থাপন করে নারী দেহে। নিমি তার পুরোহিত ঠিক করেছিলো বশিষ্ঠমুনিকে। মুনি হলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ন ( বঙ্গীয় শব্দকোষ মতে) হলো বিত্ত আর ম হলো মিত বা ক্ষুদ্র ভাব। ছোট পুঁজিপতি মুনি দুই পক্ষকে ( পুঁজিপতি আর উৎপাদককে) মিলিয়ে দিয়ে সফল ব্যবসা ... ...
ব্রহ্মার অশ্রু থেকে জন্ম হলো এক বানরের। ঋক্ষরাজ। বনের ভেতরে আনন্দেই ছিলো সে। একবার মানস সরোবরের তীরে শরীরচর্চা করছিলো ঋক্ষরাজ। সরোবরের জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে উঠলো সে। এ কে? শত্রু না মিত্র? ঝাঁপিয়ে পড়লো জলে। জল থেকে যখন সে উঠলো তখন সে আর বানর নয়। সে তখন সুন্দরী এক নারী। এতো সুন্দরী সে যে দেবরাজ ইন্দ্র আর সূর্য কামনায় পাগল হয়ে উঠলো। ইন্দ্রের বীর্য গিয়ে পড়লো সুন্দরীর চুলে বা বালে। জন্ম নিলো বালী। আর সূর্যের বীর্য পড়লো সুন্দরীর গ্রীবায়। জন্ম নিলো সুগ্রীব। ঋক্ষরাজ কে? ঋক্ষ মানে ভল্লুক। ঋক্ষ মানে সপ্তর্ষি। দক্ষের ছিলো বহু কন্যা। দক্ষ নানা গোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছিলো। তারা ... ...
শিবের ভক্ত রাবণ সমগ্র কৈলাশকে তুলে নিয়ে লঙ্কায় স্থাপন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লেন। শিবের আঙুলের চাপে সব ভার এসে চাপা দিতে শুরু করলো রাবণকে। চিৎকার করে উঠলো রাবণ। সেই রোদন থেকে নাম হলো রাবণ। রাবণ শিব রাজ্যকে লংকায় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলো। শিব রাজ্য কী তা পরে ব্যাখ্যা করা যাবে। যাইহোক শিব বাদে সমস্ত দেবতা আর গ্রহ নক্ষত্রদের নিজের সভায় আটক করেছিলো রাবণ। সয়ং ব্রহ্মা নাকি পড়াতেন শিশু রাক্ষসদের। এই বন্দী করার মানে কী বোঝাতে চেয়েছেন লেখক? শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ, পুরোহিত শ্রেষ্ঠ, বীর যোদ্ধা রাবণ। বর্ণময় চরিত্রের রাবন মারা যাবার পরেও হয়ে উঠেছিলো রাম-সীতার বিচ্ছেদের কারণ। কেমন ছিলো রাবণের রাজ্য? রামায়ণ কী বলে? ... ...
প্রাচীন ভারতে একটা যুদ্ধ হয়েছিলো। তিন ধরণের তন্ত্র বা রাজনৈতিক আদর্শ তাতে জড়িয়ে পড়েছিলো। রাম রাজ্য নাকি রাবণ রাজ্য না বালি রাজ্য, কোনটা ছিলো আদর্শ রাজ্য সে সম্পর্কে রামায়ণ বাল্মিকী পক্ষ নিয়েছিলো রামের। নাকি তা আমাদের বোঝার ভুল? না বোঝা অনেক কথা রামায়ণের প্রতিটি লাইনে লেখা আছে। বাল্মিকী লিখেছেন একরকম আর তার ভেতরে সংকেত দিয়েছেন অন্যরকম। ধর্মীয় আবেগের দিক দিয়ে নয়, নয় আবেগে আঘাতের কোন চেষ্টা, শুধুমাত্র ভাষার সংকেত উদ্ধারই একমাত্র উদ্দেশ্য এই লেখার। বাল্মিকী রামায়ণ মতে রাম নাকি রাজত্ব করেছিলেন ১১ হাজার বছর। অর্থাৎ তার প্রবর্তিত নীতি চলেছিলো ১১ হাজার বছর বা দীর্ঘদিন। কেমন ছিলো সে রাজত্ব? সকলে নাকি সুখে ছিলো। ... ...
প্রথম শিল্পবিপ্লব কি মা কালী করেছিলো? তার সংকেত কি রাখা আছে পুরাণে? বিষ্ণু নিদ্রায় রয়েছে। আর সেই সময় মধু আর কৈটভ বিষ্ণুর কানের মল থেকে তৈরী হয়ে ব্রহ্মাকে খেতে গেলো। ব্রহ্মা মহামায়ার স্তব করলে মহামায়া কালী বিষ্ণুর ঘুম ভাঙালো আর বিষ্ণু বধ করলো তাদের। তাদের মেদ দিয়ে তৈরী হলো মেদিনী বা পৃথিবী। গল্পটাতো জানা। এই গল্পকে সংকেত ধরলে আরেকটা গল্প বেরিয়ে আসে। বিষ্ণুকে নগদ নারায়ণ ধরলে সেই হলো আদি ক্যাপিটালিষ্ট। পূর্বের যৌথ সমাজ ভেঙে বিষ্ণু তৈরী করেছিলো ব্যবসায়ী সমাজ, বিনিময় প্রথা, দুধ সাগর আর সর বা উদ্বৃত্তের লেনদেন। যৌথ সমাজে সকলে সমান ভাগ পেতো। ধনতন্ত্রে শ্রমিক পেতো কেবল পারিশ্রমিক আর লাভ নিতো ... ...