সালটা ১৮৯৯। চুরুলিয়া গ্রামের আকাশের মুখ সেদিন গম্ভীর। গতরাত থেকে অবিশ্রান্ত ভাবে কেঁদে চলেছে সে, এমনকি সকালেও সে কান্নার বিরাম নেই। এমনই এক বর্ষণমুখর দিনে চুরুলিয়া গ্রামের শেষ প্রান্তে এক কুঁড়েঘরে জন্ম নিলেন দুখু মিঞা ওরফে কাজী নজরুল ইসলাম। বাবা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। জন্মের পর থেকেই সংসার সীমান্তে স্বল্প রোজগেরে বাবা – মায়ের নিত্যদিনের এক অসম লড়াইয়ের স্বাক্ষী ছিলেন একরত্তি নজরুল। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সেই সময় খুব দ্রুত বদল ঘটছিল মানুষের যাপনে। খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছিল সমাজ অর্থনীতি এবং বিশ্বরাজনীতির মানচিত্র। সময়ও তার মতো করে গড়েপিটে নিয়েছিল নজরুলকে।১৯১৭ সালে মাত্র আঠেরো বছর বয়সে নজরুল যোগ দিলেন সেনাবাহিনীতে। ... ...
দক্ষিণ ফ্রান্সের রোকেনব্রুন শহর। উত্তাল সফেন সমুদ্র যেনো প্রতি মুহূর্তে চুম্বন এঁকে দিচ্ছে শহরের ওষ্ঠে। শান্ত সমাহিত অথচ প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর দক্ষিণ ফ্রান্সের এই শহর। সালটা ১৯৩২। রোকেনব্রুন শহরের একপ্রান্তে প্রিমেভেরা নামক একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতে এলেন হ্যান ভা মীগরে নামের এক ব্যক্তি, আর তারপরেই রহস্যের জাল ঘনীভূত হয়ে উঠলো প্রিমেভারা কে নিয়ে। কিন্তু কে এই - হ্যান ভা মীগরে? চিনতে না পারারই কথা, কারণ তখনও মিডিয়ার স্পটলাইট মীগরেকে নজরবন্দী করতে পারে নি। সেই সময় তিনি আপাত অখ্যাত এক চিত্রশিল্পী। যদিও পরবর্তীতে এই মীগরেই হয়ে উঠেছিলেন আমস্টারডামের ধনকুবেরদের মধ্যে অন্যতম। তবে শুধু এটুকু বললে মীগরে সম্পর্কে অনেককিছুই না বলা থেকে যায়। ... ...
সালটা ১৮২২। প্রতিষ্ঠিত হল নেটিভ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশন। নেটিভ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশনের প্রধান হিসেবে যোগ দিলেন এক বাঙালি ডাক্তার - মধুসূদন গুপ্ত। এরপর প্রায় তের বছরের বিরতি। ১৮৩৫ সালে ভারতীয় চিকিৎসাক্ষেত্রে ঘটে গেল এক নিঃশব্দ বিপ্লব। কল্লোলিনী তিলোত্তমার বুকে তৈরি হল মেডিক্যাল কলেজ। ইউরোপীয় পদ্ধতিতে ভারতীয় ডাক্তাররা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে প্রথমবারের জন্য করমর্দন করলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের বদান্যতায়। ... ...
Debabrata Mondal আঁতেল হতে পারলেননা। তাঁর পড়ার উপযুক্ত বইঃ রোদ্দুর রায়ের নির্বাচিত রচনা ... ...
তেইশে আগস্ট, ১৯১১। ক্যালেন্ডারে বলছে দিনটা বুধবার। প্যারী শহর অন্যান্য আর পাঁচটা দিনের মতোই সেদিনও আর একটা কর্মমুখর দিনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। প্যারী যেনো কখনও ক্লান্ত হয় না, প্রানোচ্ছলতার সার্থক প্রতিমূর্তি সে। সে ক্ষণিকবাদী, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আকণ্ঠে উপভোগ করার মধ্যেই তার সার্থকতা। ২৩ আগস্ট বুধবারের সকালে আপামর প্যারীর জনসাধারণ কি জানতো আগামী কয়েক মিনিটের মধ্যে এক ভয়ানক দুসংবাদ অপেক্ষা করে আছে তাদের জন্য! অন্যান্য দিনের মতোই খবরের কাগজ পৌঁছে গেছে প্যারীর প্রায় প্রতিটি মানুষের দরজায়। আর সংবাদপত্রের পাতা ওল্টাতেই চমকে উঠলেন সকলে। হেডলাইন - "লা জ্যাকোন্ডা অপহৃতা!" ... ...
উত্তর কলকাতার বাগবাজার। সময় যেন হঠাৎ করেই থমকে দাঁড়িয়েছে এখানে। বাগবাজারের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এখনও টের পাওয়া যায় বনেদি কলকাতার গন্ধ, বাগবাজারের প্রতিটি অলিগলি ঐতিহ্যের কথায় বলে সর্বক্ষণ। সিরাজউদ্দৌলা শ্রী রামকৃষ্ণ অথবা সুভাষচন্দ্র, ইতিহাস থেকে সাধনমাহাত্ম্য বারংবার মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে বাগবাজারের ঘাটে। তবে বাগবাজারের আদি বাসিন্দারাও হয়তো মনে রাখেননি নগেন্দ্রনাথ বসুর নাম। রামকৃষ্ণ সুভাষচন্দ্র অথবা সিরাজের ভিড়ে নিঃশব্দে হারিয়ে গিয়েছেন এই বাঙালি, যিনি সবার অন্তরালেই একপ্রকার বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছিলেন বাংলা সাহিত্যের জগতে।১৮৬৬ সালের ৬ই জুলাই। সেদিন সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার।একনাগাড়ে কেঁদে কেঁদেও ক্লান্ত হয়না সে। গঙ্গার পাড়ের গাছগুলো বারংবার মাথা ঝুঁকিয়ে প্রকৃতিকে কুর্নিশ করেও রেহাই পাচ্ছে না। এমনই ... ...
একটার পর একটা দিন কেটে যায়। দিন শেষের সূর্য ঢলে পড়ে পশ্চিমে।দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ যেন মেতে ওঠে অকাল হোলির আনন্দে।সূর্য একা নয় ,সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে আজকের মতো পাখিদেরও মিলেছে ছুটি।পিছুটান রাখতে নেই...রাখলে শুধু কষ্টই বাড়ে।এটা কি পাখিরা জানে না?জানে নিশ্চয় জানে তারা কিন্তু কিছু পিছুটানই যে শেষপর্যন্ত আশ্রয় দিয়ে যায়,সম্পর্কগুলোকে একটা সুতোয় বেঁধে রাখে।এই কারণেই পাখিরাও বোধহয় দিন শেষে ফিরতে চাই ঘরে,আপনজনের কাছে।হয়তো একটু নিরাপদ নিভৃত আশ্রয়ের আশায়। আচ্ছা পাখিরাও ঠিক যেনো আমাদের মতোই,বরং আমরা ওদের থেকে একটা দিকে পিছিয়ে।আমরা যে ইচ্ছে হলেই ইচ্ছেডানায় ভর করে সীমানা পেরোতে পারি না,ভাঙতে পারি না অচলায়তন।সীমানা?অচলায়তন?হ্যাঁ তা বটে,এই সীমানা রক্ষার জন্যই কতো লড়াই,অচলায়তন ভাঙার আশায় ... ...
একটার পর একটা দিন কেটে যায়। দিনাবসানে ক্লান্ত সূর্য পায় ছুটি। রোজ দশটা-পাঁচটার ডিউটি করতে করতে শহরটাও সামান্য সময়ের জন্য পাওয়া এই অবসরটাকে আঁকড়ে ধরে। কাল আবার প্রতিদিনের মতো অসংখ্য মানুষের কোলাহলে বিদীর্ণ হবে শহরটার কান। অসংখ্য অফিসযাত্রী অথবা 'বেকার' যুবক মারফত পদপিষ্ট হতে হতে হাসফাঁস করে উঠবে এই বুড়ো শহরটা। ... ...
সালটা ১৭৫২।ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল শহরের আকাশের মুখ সেদিন গম্ভীর।রাত থেকে অবিশ্রান্ত ভাবে কেঁদে চলেছে সে।এমনকি সকালেও সে কান্নার বিরাম নেই। এমনই এক দিনে ব্রিস্টল শহরের এক প্রান্তে এক বস্তিতে জন্ম টমাস চ্যাটাটর্নের।জন্মের পরে বাবাকে দেখেনি সে,মা সামান্য রোজগারে সংসার - সীমান্তে নিত্যদিন এক অসম লড়াই চালাতেন।যার একমাত্র সাক্ষী ছিল ছোট্ট টমাস। ১৭৫৯ সাল। টমাসের বয়স যখন মাত্র সাত বছর,মায়ের হাত ছেড়ে সে বেড়িয়ে পড়লো ভাগ্য অন্বেষণে।আশ্রয় মিললো সেন্ট মেরী চার্চে।অর্থাভাবে পড়াশোনা হয়নি টমাসের। চার্চের ফাদারের উৎসাহেই পড়াশোনার প্রথম পাঠ শুরু হলো তার।এই চার্চের মধ্যেই ছিল এক লাইব্রেরী।যেখানে টমাস খুঁজে পেলো তার নিজস্ব জগৎকে।চার্চের কাজে আর মন বসে না তার।সারাদিন বসে থাকে হাতে ... ...
১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল। ঘড়ির কাঁটা বলছে সময়টা মধ্যরাত। গোটা বার্লিন শহর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শুধু ঘুম নেই এক নবদম্পতির চোখে। দুজনের প্রেম দীর্ঘ পনেরোটি বসন্ত পেরিয়ে এসে আজ পূর্ণতা লাভ করেছে। এই অনন্ত অপেক্ষার অবসানের দিনেও খুশির লেশমাত্র নেই তাদের চোখে মুখে। যে ছেলেটি কিশোরবেলায় দানিউব নদীর তীরে বসে তার ক্যানভাসে ঝড় তুলতো, যার তুলির মূর্চ্ছনায় প্রাণ পেতো পড়ন্ত বিকেলের ভেনিস থেকে রূপবতী অষ্টাদশী কন্যার মুখ সেই ছেলেটি আজ সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর সঙ্গে গভীর উৎকণ্ঠায় নিঃশব্দ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে রাতের বয়স ক্রমশ বাড়ছে। একসময় খবর এলো রেড আর্মি বার্লিন শহরের দখল নিচ্ছে। অতঃপর! আত্মহত্যা! ... ...