এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হ য ব র ল 

    Debabrata Mondal লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৯ মার্চ ২০২১ | ১৫৩৩ বার পঠিত
  • একটার পর একটা দিন কেটে যায়। দিনাবসানে ক্লান্ত সূর্য পায় ছুটি। রোজ দশটা-পাঁচটার ডিউটি করতে করতে শহরটাও সামান্য সময়ের জন্য পাওয়া এই অবসরটাকে আঁকড়ে ধরে। কাল আবার প্রতিদিনের মতো অসংখ্য মানুষের কোলাহলে বিদীর্ণ হবে শহরটার কান। অসংখ্য অফিসযাত্রী অথবা 'বেকার' যুবক মারফত পদপিষ্ট হতে হতে হাসফাঁস করে উঠবে এই বুড়ো শহরটা।

    আপাতত সেসবের বালাই নেই, এখন শহরটার অখন্ড অবসর। মায়াবিনী রাত শহরের ওষ্ঠে চুম্বন আঁকছে এখন। না এখন এই শহর কোনো অফিসফেরত ছ্যাকরা গাড়িকে তার বুকে জায়গা দেবে না, তাদের কাজ ওই দশটা-পাঁচটার আর তারপর? বাড়ি ফেরা, অ্যাসিডিটি আর রাতে চিরাচরিত সন্তান উৎপাদন। ওদের মরা চোখদুটোর দিকে তাকালে কেমন যেন বুক কেঁপে ওঠে বুড়ো শহরটার। সেও তো বুড়ো হয়েছে, হাড়ে জোর কমেছে কিন্তু কই ওদের মতো মরার আগেই তো মরে যায় নি সে। এই তো সেদিন একপলক দেখেই বছর চারেক আগে এক প্রবল বৃষ্টির সন্ধ্যায় দেখা সেই মুখটার সঙ্গে মিল খুঁজে পেতে অসুবিধা হয় নি তার। অবশ্য চার বছর আগের যে যুবক বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে প্রেমিকার করা অভিযোগকে সঙ্গে করে রাস্তা পার হচ্ছিল তার সঙ্গে সেদিনের দেখা যুবকের অমিলও অনেকটা। সেও ওই মধ্যবিত্ত অফিস যাত্রীদের মতো কেমন মরা চোখদুটো নিয়ে তাকিয়ে ছিল তিন মাথার মোড়ের সিগন্যালটার দিকে।যেখানে সেই বছর চারেক আগে রোজ একজন যুবকটির জন্য অপেক্ষা করতো। আচ্ছা আজও কি তার জন্য কেউ অপেক্ষা করে? কে জানে হয়তো সেদিনের সেই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যার পর অপেক্ষার মাধুর্য ফুরিয়েছে সেই মেয়েটির কাছে। আর তারপর থেকেই কি ছেলেটির সেই উজ্জ্বল চোখদুটো কোন জাদুবলে মরে গেছে? যেন সোনারকাঠি আর রুপোরকাঠি অদল - বদল করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে কেউ।

    না আজ রাতে বুড়ো শহরটা তাদের, যেসব বোহেমিয়ান যুবক এখনও দিন বদলাবার স্বপ্ন দেখে, এখনও ঘুমোতে যায় পরের দিন সকালে উঠে কোনো নতুন পৃথিবী দেখবার আশায়। আজ সারারাত ভরে যাক গান আর কবিতায়। অবশ্য প্রতি রাতেই ওরা আসে গান কবিতা গিটারকে সঙ্গে নিয়ে। রাত যত দীর্ঘ হয় ওদের রাত ছিঁড়ে সকাল দেখার আশাও যেনো আরও তীব্র হয়।আর বুড়ো শহর.... ঘুম যে এখন বড়ো বিশ্বাসঘাতক। সুতরাং রাতের সঙ্গে পাল্লা দিতে থাকে প্রাচীন শহরটাও।

    ওই ওরা এসেছে। আর সামান্য কিছু সময় তারপর ওদেরই মধ্যে কেউ গেয়ে উঠবে 'উই শ্যাল ওভার কাম' অথবা 'ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু' কেউ তার সমস্তটুকু উজাড় করে দেবে গিটারে কেউ বা ঝড় তুলবে মাউথ অর্গানে। হ্যাঁ ওরা এখনও স্বপ্ন দেখে... ঝড় থেমে পৃথিবী শান্ত হবার স্বপ্ন, কিন্তু সেই ঝড়কে থামাতে আরও বড়ো ঝড় যে প্রয়োজন.... তার কি হবে? আচ্ছা তারই কি অপেক্ষায় আছে ওরা? আচ্ছা সেই ঝড়কেই কি 'বিপ্লব' বলে? না বুড়ো শহর জানে না এতো কিছু। অনেক বছর আগে বুড়ো শহরটা একবার একটা ট্রামকে দাউ-দাউ করে জ্বলতে দেখেছিল। সেদিনও এমন কিছু ছেলে রোজ রাতে গানে কবিতায় অকাল বসন্ত নামিয়ে এনেছিল তার বুকে। অথচ ' বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ' শুনতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোথায় যেন হারিয়ে গেল সেইসব ছেলেগুলো। তারাও বোধহয় এমন দিন বদলানোর কথা বলতো, একটা নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখত। ওদের মুখগুলো কেমন আবছা হয়ে এসেছে। আসলে তারপর থেকে তো মহাকালের রথের চাকা কম বার ঘোরে নি। আচ্ছা ওদের মতো এই ছেলেগুলোকেও যদি গিলে খায় অন্ধকার? আলোর পথের সন্ধান করতে গিয়ে যদি হারিয়ে যায় চিরতরে? ভয় হয় বড়ো ভয় হয় বুড়ো শহরের।

    আর তখনই যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে নেমে আসে বহুবছর আগে পিছনে ফেলে আসা সেই দিনগুলো। যখন গলির মুখে গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যাওয়া তরতাজা যুবকের লাশ আর গলাকাটা কনস্টেবলের মুখের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গিয়েছিল ওই মধ্যবিত্ত অফিসযাত্রীরা। কি অদ্ভুত ওরা সেদিনও যেমন চোখ - কান বন্ধ করে অফিস যেত রাতে বাড়ি ফিরে ব্যস্ত হয়ে পড়তো সন্তান উৎপাদনে আজও তেমনি। যুগের পর যুগ পেরিয়ে যায় অথচ একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীকে সেদিনও কোনো আগুন স্পর্শ করেনি আজও না। চিরদিন আগুনের আঁচে হাত-পা সেঁকে নিতেই অভ্যস্ত ওরা অথচ আগুনে ঝাঁপ দিয়ে একটা নতুন পথের দিশারী হতে বড্ড অনীহা ওদের। কেন কে জানে! উত্তর বোধহয় ওদের কাছেও নেই।

    কে জানে আবারও হয়তো কবে কোথাও আগুন জ্বলে উঠবে আসলে আগুন তো নেভেনি, ধিকিধিকি সে এখনও জ্বলছে। আজকের গান কবিতা পাগল ছেলেগুলোই হয়তো বদল আনতে ছুটে যাবে উত্তর থেকে দক্ষিণ পুব থেকে পশ্চিম। আজ যারা সিগারেটের কাউন্টার থেকে যুবকমনে সুড়সুড়ি দেওয়া বই অথবা নীল ছবি নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত তারাও হয়ে উঠবে আগামীদিনের লং মার্চের কান্ডারী। তার অপেক্ষায় দিন গোনা।দিনের পর দিন কেটে যায় বিপ্লবের প্রতীক্ষায়। বুড়ো শহর প্রহর গুনতে থাকে...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন