এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • একটি ডিপ্রেশনের গপ্পো

    Debabrata Mondal লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ মার্চ ২০২১ | ১৪৪৪ বার পঠিত
  • একটার পর একটা দিন কেটে যায়। দিন শেষের সূর্য ঢলে পড়ে পশ্চিমে। দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ যেন মেতে ওঠে অকাল হোলির আনন্দে। সূর্য একা নয়, সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে আজকের মতো পাখিদেরও মিলেছে ছুটি। পিছুটান রাখতে নেই... রাখলে শুধু কষ্টই বাড়ে। এটা কি পাখিরা জানে না? জানে নিশ্চয় জানে তারা কিন্তু কিছু পিছুটানই যে শেষপর্যন্ত আশ্রয় দিয়ে যায়, সম্পর্কগুলোকে একটা সুতোয় বেঁধে রাখে। এই কারণেই পাখিরাও বোধহয় দিন শেষে ফিরতে চাই ঘরে, আপনজনের কাছে। হয়তো একটু নিরাপদ নিভৃত আশ্রয়ের আশায়।

    আচ্ছা পাখিরাও ঠিক যেনো আমাদের মতোই, বরং আমরা ওদের থেকে একটা দিকে পিছিয়ে। আমরা যে ইচ্ছে হলেই ইচ্ছেডানায় ভর করে সীমানা পেরোতে পারি না, ভাঙতে পারি না অচলায়তন। সীমানা? অচলায়তন? হ্যাঁ তা বটে, এই সীমানা রক্ষার জন্যই কতো লড়াই, অচলায়তন ভাঙার আশায় কত প্রতীক্ষা। পাখিরা এসব থোড়াই কেয়ার করে... তারা সীমানা পেরোতে জানে, অচলায়তন ভেঙে মুক্তির আলোর প্রবেশপথ উন্মুক্ত করে দিতে জানে। এই কারণেই হয়তো ছোট্টবেলায় আমাদের মনে প্রশ্নের ভিড় জমতে থাকে। আর বড়ো হতে হতে সেই প্রশ্ন বদলে যায় হিংসায়। আমরা তখন পাখিদের হিংসা করতে শিখি। না পাওয়ার যন্ত্রণা, পিছিয়ে পড়ার ভয় আমাদের মনের গভীরে বপন করে হিংসা নামক ফলের বীজ। আর দিনের শেষে সেই হিংসার বিষবাষ্প দমবন্ধ করে আনে আমাদের।

    ফ্ল্যাটের জানালায় নাক ঠেকিয়ে আকাশের রংটা কিভাবে গোলাপি আর লালে মিশে একটা অদ্ভুত মনখারাপ করা রঙে পরিণত হয়েছে। আকাশ দেখতে দেখতে ওর মনে পড়ছিল সেই মেয়েটাও আকাশ দেখতে ভালোবাসতো। আকাশ পাখিদের ঘরে ফেরা এসব দেখতে দেখতেই কেমন যেন বুঁদ হয়ে যেত মেয়েটা। ওই গোল্ড মেডেলের লোভে রাতদিন ঘাড় গুঁজে পড়তে থাকা ছেলেটাকে শিখিয়েছিল আকাশ কখনও পুরোনো হয় না। অবশ্য সেদিনের সেই ছেলেটাও শুধু গোল্ড মেডেল আর প্রফেসরদের পিঠ চাপড়ানোর প্রত্যাশায় থাকেনি, সঙ্গে বোধহয় চেয়েছিল তাকে যে মেয়েটা আকাশ দেখতে শিখিয়েছে ঘরে ফেরা পাখিদের চিনতে শিখিয়েছে সেই মেয়েটা যেন দিনের শেষে ভালো থাকে। না অন্যান্য আঁতেল পাবলিকের মতো বিপ্লবের প্রতীক্ষা সে করেনি, দিনবদলের স্বপ্নটাকে আঁকড়ে ধরতে শেখে নি সে। নাম না জানা ছেলেটা হয়তো বুঝেছিল 'বিপ্লবের আর এক নাম মাধবীলতা।' তাই সেই মেয়েটিকে ঘিরেই সে রচনা করেছিল বিপ্লবের 'ব্লু প্রিন্ট।'

    আর মেয়েটা? প্রথম প্রেমে ভরাডুবির পর কি আবার নতুন করে প্রেমে পড়তে চেয়েছিল? আচ্ছা নতুন করে প্রেমে পড়া যায়? যায় হয়তো কিন্তু না নতুন করে ভালোবাসা যায় না আর। প্রথম সবকিছুর অনুভূতি যে অন্যরকম হয়, তাকে একইভাবে বারংবার ফিরে পাবার চেষ্টা করা বৃথা। প্রথমবার একলা হয়ে গিয়ে সেই মেয়েটারও কি মনে হয়েছিল পিছুটান রাখতে নেই? সেদিন কি তার কাছে রোজকার নতুন আকাশটাও ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল? হয়তো বা... কারণ তাকে একদিন যে মানুষটা আকাশ দেখতে শিখিয়েছিল সে তো তখন অনেক দুরে। সে তখন অন্য কারও... অন্য মানুষকে আবার আকাশের নতুন সংজ্ঞা বোঝাতে ব্যস্ত হয়তো।

    গল্পটা এমন হলেই বোধহয় ভালো হতো। কিন্তু কিছু গল্প যে দিনের শেষে সত্যি হয়ে ওঠে। স্মৃতি যদি বিশ্বাসঘাতক হতো তাহলেই বোধহয় ভালো হতো। আচ্ছা কিছু মানুষ সবকিছু তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে পারেনা তাই না? তাই তাদের এতো কষ্ট? আজ ফ্ল্যাটের জানালায় উঁকি মেরে যে আকাশ দেখতে চাইছে সে যে বড়ো একা। তার একমাত্র বন্ধু এখন একাকীত্ব। কিন্তু এমন তো কথা ছিল না... তাকে যে মেয়েটা বলেছিল আকাশ কখনো পুরোনো হয় না সেও যে শেষপর্যন্ত বদলে গেলো। পুরোনো আকাশ দেখার সঙ্গীকে ফিরে পেয়েছে সে। কিন্তু নতুন ছেলেটি তার কাছে কি মেয়েটি তবে শুধুই বন্ধুতা চেয়েছিল? অন্য কিছু না? কিচ্ছু না? ছেলেটি আজও এই প্রশ্নের উত্তর পায় নি। কে জানে কেনো!না মেয়েটি আর তার সঙ্গে কোনোদিন আকাশ দেখতে চায়নি নতুন করে, কোনোদিন না। তারপর? সিগারেট মদ অথবা গাঁজা। না তাতেও ভালো থাকা হয়নি তার... অতঃপর.... ইনসোমনিয়া ডাক্তার আর ঘুমের ওষুধ। কিন্তু তারপরেও এখনও প্রতিরাতে বিশ্বাসঘাতকতা করে ঘুম। এখনও ঘুম ভেঙে উঠে বসে ছেলেটি ভাবে আকাশ কি কখনো পুরোনো হয়? আজকাল এক একটা রাত ভীষণ দীর্ঘ... ভীষণ। ভয় করে ছেলেটার... একাকীত্বের ভয়। গভীর রাতেও বন্ধুদের খুঁজে ফেরে সে। একটা সত্যিকারের বন্ধু... একটা সত্যিকারের বন্ধুতা। মিথ্যে কথার শহরে সমস্তকিছু হারিয়ে ফেলেছে সে। এখন যে বাঁচার জন্য একটা কাঁধ ভীষণ প্রয়োজন। সবাই আজকাল সত্যি এতো ব্যস্ত? এতো ব্যস্ত যে তার কথা শুধু মনে পড়ে পরীক্ষার ঠিক আগে? যখন প্রয়োজন হয় ক্লাসনোটের? কিন্তু সে যে বাঁচতে চায় তার কি হবে? সে নিজে কি পালটে গেছে? নাকি অন্যরা? হিসেব মেলে না। সে মনে হয় অনেকটা বড়ো হয়ে গেছে....অ ন্যরা তাকে ছুঁতে পারে না অন্যরা তাকে চিনতে পারে না।কিন্তু সে যে বড়ো বাঁচতে চায়!আচ্ছা সেই মেয়েটা যাকে নিয়ে সে একদিন বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল তারও কি এই একটা কাঁধ খুঁজে ফেরা ছেলেটার কথা একবারও মনে পড়ে না? কিন্তু কেন? প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলে? তাহলে সত্যি পিছুটান রাখতে নেই? দিনের শেষে শুধু একরাশ যন্ত্রণা মেলে... আর কিছু না। না এই প্রয়োজনের বন্ধুত্ব সে চায়নি.... সে চেয়েছে মেয়েটা যেন ভালো থাকে। আসলে যারা চাই অন্যরা ভালো থাকুক তাদের বোধহয় নিজেদের ভালো থাকা আর হয়ে ওঠে না! অতঃপর... আবার সিগারেট মদ অথবা গাঁজা। বাঁচার তীব্র আকুলতায় কখনো ডাক্তার কখনো বা ঘুমের ওষুধ। আবার কখনো ব্লু ফিল্ম বা নিতান্ত চটি বই। কিন্তু বাঁচতে ভুলে গেছে সে... বাঁচতে চেয়েও বাঁচতে ভুলে গেছে... কারণ সে যে চেয়েছিল অন্যরা ভালো থাকুক প্রয়োজনে তাকে বন্ধু ভাবা মানুষগুলো ভালো থাকুক যার সাথে সে আকাশের রং খুঁজে ফিরেছিল সেই মেয়েটা ভালো থাকুক। আর যে চাই অন্যরা ভালো থাকুক তার নিজের ভালো থাকা হয় না যে.... সবাইকে ভালো রেখেও দিনের শেষে নিজেকে ভালোবাসতে গিয়ে দেখে সামান্য ভালোবাসাটুকু বাকি নেই যা দিয়ে সে নিজেকে ভালোবাসতে পারে। না ছেলেটার আর ভালো থাকা হলো না.... অতঃপর! আত্মহত্যা!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন