এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কলকাতার বুকেই হয় ভারতের প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ; কৃতিত্বের অধিকারী এক বাঙালি

    Debabrata Mondal লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ এপ্রিল ২০২১ | ১৭৩৮ বার পঠিত
  • সালটা ১৮২২। প্রতিষ্ঠিত হল নেটিভ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশন। নেটিভ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশনের প্রধান হিসেবে যোগ দিলেন এক বাঙালি ডাক্তার - মধুসূদন গুপ্ত।

    এরপর প্রায় তের বছরের বিরতি। ১৮৩৫ সালে ভারতীয় চিকিৎসাক্ষেত্রে ঘটে গেল এক নিঃশব্দ বিপ্লব। কল্লোলিনী তিলোত্তমার বুকে তৈরি হল মেডিক্যাল কলেজ। ইউরোপীয় পদ্ধতিতে ভারতীয় ডাক্তাররা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে প্রথমবারের জন্য করমর্দন করলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের বদান্যতায়।

    কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম সুপার হিসেবে নিযুক্ত হন এম জে ব্রামলে এবং আনাটমি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এইচ এইচ গুডিভ। অন্যদিকে নেটিভ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশন থেকে ডেমনস্ট্রেটর হিসেবে যোগ দেন পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত। ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে সেই সময় ইউরোপীয় পণ্ডিতদের একাধিপত্য সেই সময়ই হুগলির বৈদ্যবাটির মধুসূদন গুপ্ত ঘটিয়ে ফেললেন এক আশ্চর্য কাণ্ড। যদিও হুগলির বৈদ্যবাটি থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পথ মধুসূদনের জন্য আদৌ প্রশস্ত ছিল না। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে বৈদ্যবাটির এক বৈদ্য পরিবারে জন্মগ্রণ করেন মধুসূদন।চিকিৎসার চৌহদ্দির মধ্যে বেড়ে ওঠা তার কিন্তু কিশোর বয়সে পড়াশোনায় অমনোযোগী হবার কারণে একসময় বাড়ি থেকে তাকে বের করে দেন তার বাবা। তারপর একপ্রকার জেদের বশেই সংস্কৃত কলেজের আয়ুর্বেদ বিভাগে ভর্তি হলেন মধুসূদন, পুঁজি বলতে ছিল রাম কবিরাজ নামক এক কবিরাজের কাছে কিছুদিন শিক্ষানবীশির কাজ। একসময় সংস্কৃত কলেজের আয়ুর্বেদ বিভাগটি বন্ধ হয়ে গেলে নেটিভ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশনে যোগ দেন তিনি। সেখান থেকে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ মধুসূদন যোগ দিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে।

    ১৮৩৬ সালের ১০ই জানুয়ারি (মতান্তরে ২৮এ অক্টোবর) সমগ্র মেডিক্যাল কলেজ ভেঙে পড়েছে মর্গের সামনে, তিল ধারণের জায়গা নেই। কিন্তু কেন এই জনসমুদ্র? কারণ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মধুসূদন গুপ্তের হাত ধরে কল্লোলিনী তিলোত্তমা সাক্ষী থাকবে এক নতুন ইতিহাসের। ভারতের মধ্যে কলকাতার বুকেই প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ তৈরি করবে এক অনন্য ইতিহাস।

    তবে শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে তৎকালীন সময়ে দাঁড়িয়ে আদৌ সহজ ছিল না এই কাজ। তার অন্যতম কারণ ছিল হিন্দু রক্ষনশীল সমাজের রক্তচক্ষু। বিধবা বিবাহ বাল্য বিবাহ তখনও প্রচলিত, হিন্দু সমাজ ঘুরে মরছে অন্ধকার চক্রবুহ্যে। শব ব্যবচ্ছেদকে হিন্দু রক্ষনশীল সমাজ তখন দেখত বাঁকা চোখে। এমনই পরিস্থিতিতে আরও চার সহযোগী রাজকৃষ্ণ দে উমাচরণ শেঠ দ্বারকানাথ গুপ্ত এবং নবীনচন্দ্র মিত্রকে নিয়ে সুসম্পন্ন করলেন ভারতের প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ। সেদিন ফোর্ট উইলিয়াম থেকে তাদের পঞ্চাশ রাউন্ড গান স্যালুটে সম্মান জানানো হয়।

    কেমন ছিল সেদিন শহর কলকাতার পরিস্থিতি? এলিট ড্রিঙ্ক ওয়াটার সাহেবের বক্তব্য ছিল এমন - "মেডিক্যাল কলেজের সব ফটকগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাছে এই বিধর্মী কাজ করার জন্য প্রাচীনপন্থীরা কলেজে আক্রমণ চালায়...।" এই সামান্য বক্তব্য থেকেই ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে সেদিন শহর কলকাতার পরিস্থিতি আদৌ এই ঐতিহাসিক কাজের অনুকূলে ছিল না।

    ১৮৫৬ সালের ১৫ই নভেম্বর মৃত্যু হয় মধুসূদন গুপ্তের। তবে তার আগেই আরও এক ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। বাঙালিদের সুবিধার জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে একসময় বাংলাতেই ডাক্তারি শাস্ত্র পড়ানো শুরু হয় তার অধ্যক্ষ রূপে যোগদান করেন মধুসূদন। ১৮৫৩ সালে প্রকাশিত হয় তার 'এনাটমি' নামক বইটি। এমনকি এনাটমি-কে যে আমরা বর্তমানে 'শারীরবিদ্যা' বলে অভিহিত করি সেই কথাটির পথিকৃৎ হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে আছে মধুসূদন গুপ্তের নাম।

    হুগলির বৈদ্যবাটি থেকে কলকাতার বুকে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ - কঠিন ছিল সেই পথ। কিন্তু তাকেই হেলায় অতিক্রম করেছিলেন মধুসূদন। আমরা তাকে মনে রাখিনি কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রে এক আলোকোজ্জ্বল পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন মধুসূদন গুপ্ত।

    তথ্যসূত্র : 'মধুসূদন গুপ্ত; ভারতের প্রথম এনাটমিস্ট' - অতনু চক্রবর্তী

    https://kolkatasaatkahon.wordpress.com/2018/03/28/%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%a8-%e0%a7%ad-%e0%a6%8f%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a6%be-%e0%a6%a4%e0%a6%a5%e0%a6%be-%e0%a6%ad%e0%a6%be/#more-35
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন