এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • লিখেছিলেন বাংলা এনসাইক্লোপিডিয়া;বিস্মৃতির অন্তরালে নগেন্দ্রনাথ বসু

    Debabrata Mondal লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ মার্চ ২০২১ | ১০৪৮ বার পঠিত
  • উত্তর কলকাতার বাগবাজার। সময় যেন হঠাৎ করেই থমকে দাঁড়িয়েছে এখানে। বাগবাজারের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এখনও টের পাওয়া যায় বনেদি কলকাতার গন্ধ, বাগবাজারের প্রতিটি অলিগলি ঐতিহ্যের কথায় বলে সর্বক্ষণ। সিরাজউদ্দৌলা শ্রী রামকৃষ্ণ অথবা সুভাষচন্দ্র, ইতিহাস থেকে সাধনমাহাত্ম্য বারংবার মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে বাগবাজারের ঘাটে।

    তবে বাগবাজারের আদি বাসিন্দারাও হয়তো মনে রাখেননি নগেন্দ্রনাথ বসুর নাম। রামকৃষ্ণ সুভাষচন্দ্র অথবা সিরাজের ভিড়ে নিঃশব্দে হারিয়ে গিয়েছেন এই বাঙালি, যিনি সবার অন্তরালেই একপ্রকার বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছিলেন বাংলা সাহিত্যের জগতে।

    ১৮৬৬ সালের ৬ই জুলাই। সেদিন সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার।একনাগাড়ে কেঁদে কেঁদেও ক্লান্ত হয়না সে। গঙ্গার পাড়ের গাছগুলো বারংবার মাথা ঝুঁকিয়ে প্রকৃতিকে কুর্নিশ করেও রেহাই পাচ্ছে না। এমনই এক বর্ষণমুখর দিনে বাগবাজারের কাঁটাপুকুর বাই লেন নামক এক এঁদো গলিতে জন্ম নগেন্দ্রনাথ বসুর। নগেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য একইসঙ্গে ঐতিহাসিকও।১৯১৯ সাল নাগাদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হলো নগেন্দ্রনাথ বসুর নাম। তার আবিষ্কৃত বেশ কিছু তথ্যের উপর ভিত্তি করে শুরু হলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ। নগেন্দ্রনাথ বসুর হাতেখড়ি হয় ' ভারত ' এবং ' তপস্বিনী ' পত্রিকা সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। এমনকি পরবর্তীকালে ' শব্দকল্পদ্রুম ' নামক একটি পত্রিকার সম্পাদনাও করেছিলেন তিনি।

    সময় থেমে থাকেনা,মহাকালের রথের চাকা কেবলই ঘুরতে থাকে। সালটা ১৮৮৮। বাগবাজারের এঁদো গলির সেই ছোট্ট ছেলেটা ততদিনে করে ফেলেছে অসাধ্যসাধন। তার হাত ধরেই আত্মপ্রকাশ করে 'বাংলা এনসাইক্লোপিডিয়া'।

    ১৮৮৭ সাল নাগাদ রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায় এবং ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় প্রকাশিত হয় বিশ্বকোষ। ১৮৮৮ সালে এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন নগেন্দ্রনাথ বসু। দীর্ঘ বাইশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে সংকলিত বাইশটি খন্ড প্রকাশিত হল ১৯১১ সালে।মোহনবাগান শিল্ড জিতে যখন আওয়াজ তুলেছে ' ইংরেজ ভারত ছাড়ো ' প্রায় একই সময়ে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটালেন উত্তর কলকাতার বাগবাজারের নগেন্দ্রনাথ বসু।

    ১৯৩৩ সালে নগেন্দ্রনাথ বসু আবার শুরু করলেন বিশ্বকোষের পরবর্তী সংস্করণের কাজ। যদিও ১৯৩৮ সাল নাগাদ তার মৃত্যু ঘটলে সেই কাজ অসমাপ্তই থেকে যায়।

    না এই কাজের স্বীকৃতি সেভাবে কোনোদিন জোটেনি নগেন্দ্রনাথ বসুর। আত্মবিস্মৃতি রোগে আক্রান্ত বাঙালি নগেন্দ্রনাথ বসুকে ভুলেছে অনেককাল আগেই।নগেন্দ্রনাথ বসুর কল্যাণেই কাঁটা পুকুর বাই লেনের নাম হয় 'বিশ্বকোষ লেন' এবং এরই সঙ্গে ইতিহাসের সরণীতে পা রাখলেন নগেন্দ্রনাথ বসু। সম্ভবত কোন বইয়ের নাম অনুযায়ী এই প্রথম কোনো রাস্তার নামকরণ হল।' প্রাচ্যমহাবিদ্যার্ণব' - এখন বিস্মৃতির অন্তরালে অথচ সেই কাঁটা পুকুর বাই লেন এখনও বাগবাজারের ঐতিহ্যের কথা মনে করায় প্রতিনিয়ত।

    তথ্যসূত্র - কলকাতার সাতকাহন
    আনন্দবাজার পত্রিকা
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন