এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শয়তান 

    Latifur rahman Pramanik লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২৩ বার পঠিত
  • শয়তান। 

    আবুল ফজলের একটা লেখা পড়েছিলাম স্কুলে থাকতে।  চমৎকার আরব্যে গল্পে " শয়তান " কে বেচে রাখা জরুরি কেন তা নিয়ে। বহুবার রাজনৈতিক তর্কে সেটা অস্ত্রের মতো ব্যবহার করেছি। এতই যুক্তিগ্রাহ্য বিষয় যে, আমার প্রতিপক্ষের জন্য যে, তা খন্ডন করা দুঃসাধ্য। এভাবেই বহুদিন জিতেছি। ইচ্ছে না থাকলেও আওয়ামী লীগের টাটকা প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের আমলে কেউ কেউ মৃদুস্বরে অভিযোগ করে বলে, সেই সময় বি এন পি নাকি যুদ্ধ অপরাধী বিচার নিয়ে শক্ত অবস্থান নিতে পারেনি। একেবারই অসত্য বলবো না। স্বাধীনতার মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সহজে কারো পক্ষে অগ্রাহ্য করা কঠিন। আওয়ামী লীগের তুরপের তাস সেখানেই। আওয়ামী লীগের পলিসি মেকাররা সেই সুযোগ ই কাজে লাগাতে নেমে পড়ে। বি এন পি যুদ্ধ অপরাধীদের পক্ষের লোক কিংবা যারাই তার বিরোধিতা করবে তারাই সমাজের চোখে ঘৃণ্য ব্যক্তি হয়ে দাঁড়াবে সেই ঝুঁকি কেউ নিতে না চাইলেই ভোটের বাক্স আওয়ামী লীগের ফুলে ফুলে উঠবে তার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারাই আওয়ামী লীগের লোকজন সফলতা হিসাবে প্রতিস্টিত করতে পেরেছিল।  যদি ও ধিরে ধিরে প্রশ্ন করতে থাকে কেউ কেউ যে,  আওয়ামী লীগ ৯৬ সালে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার করলো না কেন? এর উত্তর জানতে আবুল ফজলের গল্পে পেয়েছিলাম। শয়তানকে মেরে ফেললে পাদ্রীর সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে যেতে সময় লাগবে না। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পক্ষ আর বিপক্ষ নিয়ে সারাদেশের মানুষের মধ্যে দু ভাগ করে দেয়। তার ইতিহাস পাঠকের জানা আছে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা দখলের এসব ইস্যুভিত্তিক প্রচারণা নতুন নয়, তার সফলতা ও আমরা দেখেছি অনেক। কিন্তু তার দীর্ঘস্থায়িত্ব কম। সারা বাংলাদেশ স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে " স্বৈরাচারী " তকমা লাগিয়ে এরশাদের পতন ঘটায়। যদি ও এক সময় সেই আওয়ামী লীগ বড় স্বৈরাচার হয়ে উঠে কালক্রমে।  আওয়ামী লীগের ধারণা ছিলো স্বাধীনতার এই বানিজ্যের উপর ভর করে দীর্ঘদিন শাসক হয়ে থাকতে পারবে। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি। হাছিনার পতন হলে ও বাংলাদেশ নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার যে কারণ নেই তা হাদীর হত্যাই চোখে আংগুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে। দেশীয় রাজনীতি আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি কে আমরা একসাথে গুলিয়ে ফেলি। আমরা সেখানে ই অজ্ঞ। তারেক রহমান ভারতের সাথে যুদ্ধ করতে চায়নি, ভারত আক্রমণ করতে চায় নি, ভারতের মানুষের সাথে বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্ক নিয়ে তাগিদ দিয়েছেন। নিজের দেশের স্বার্থ রক্ষা করে ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে তাগিদ দিয়েছেন। এটাই আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিলো। কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মতো বিছানার সম্পর্ক কেউ প্রত্যাশা করে নি। আওয়ামী লীগ তা নিজ স্বার্থের জন্য ইজ্জত ত্যাগ করেছিল। 
    সামনে নির্বাচন। প্রতিটি দলের ই নিজ্বস্ব পলিসি থাকে, জনগণকে নিজেদের স্বার্থে নিতে জান্নাতের টিকিট, ভারতের প্রতি আমরাই সবচেয়ে উগ্র প্রতিবাদী ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় গুলো নির্বাচনের মাঠে নাজায়েজ বলে মনে হয় না। কিন্তু এসবের আড়ালে জনগণের সাথে কতটা প্রতারণা রয়েছে সেটাই দোষের।  নিঃসন্দেহে আগামীর নির্বাচনে বি এন র ভালো ফলাফল প্রত্যাশা যোগ্য। কিন্তু তার বিপক্ষ দলের অবস্থান কি? তাদের ভোটের হার বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় কতটা এগিয়ে এই নিয়ে তাদের নিজ্বস্ব পলিসি রয়েছে। বি এন পি আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের দ্বারেদ্বারে যাচ্ছে, তারেক রহমান ভোট কৌশল হিসেবে দীর্ঘদিন সাথে থাকা জামায়াত কে যুদ্ধ অপরাধী বলে প্রচার করছে। জামায়াত সহ বাম দলগুলো বি এন পি র দুর্নীতি, টেন্ডার বানিজ্য, অন্যায়কারী, চাদাবাজ আখ্যায়িত করে বেড়াচ্ছে। এ-সব ই হচ্ছে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়মিত বিষয়। এই নিয়ে আপত্তি নেই। 
    তাহলে হাদী খুন হলো কেন?
    হাদী খুন হয়ে কার লাভ হলো?
    নাকি তার নিজেদের পক্ষের কেউ খুন করে স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে?  
    এসব প্রশ্ন জনগণের সামনে। 
    হত্যার ঘটনা তদন্তের পর্যায়ে তাই সেই নিয়ে মন্তব্য করা বে আইনী। কিন্তু আমাদের মনের ভিতর নানা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেসব নিয়ে চিন্তা করতে আইনের কোন বাধা নেই।  
    হাদির আজ জানাজা। কাল সারাদেশে একটা তান্ডব লীলা দেখেছি। সরকারি সম্পত্তি যা আমাদের জনগণের টাকার তা নষ্ট হয়েছে। সাধারণ মানুষের মনে ভীতিকর পরিবেশ বানানোর চেষ্টা চলেছে, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশের সুনাম নস্যি করে কে লাভবান হলো সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। যাইহোক পরবর্তীতে  ইনকিলাব মঞ্চ, জামায়াতে ইসলাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শান্ত থাকতে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। পত্রিকা অফিস সহ অন্যান্য স্থানে ভাংচুরের নিন্দা করেছে বি এন পি সহ প্রায় সব দলই। সন্ধ্যা পরে এন সি পি সহ অনেক দলের নেতাদের ঘটনাস্থলে গিয়ে সহমর্মিতা দেখান ভালো রাজনৈতিক বিষয়।  
    এবার মুল আলোচনায় আসি আগামীর পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না রেখে কথিত ভারতীয় আগ্রাসনের নাম দিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে নির্বাচন প্রলম্বিত করার কিংবা স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষের মতো স্পর্শ কাতর, অমিমাংসিত  বিষয় মতো ভারতের সাথে ৪৭ সালের পর থেকে যে অমিমাংসিত চলমান দ্বন্ধ বিরাজিত থাকবে আজীবন,  তাকে অবলম্বন করে জনগণকে বিভক্ত করে রাজনৈতিক উত্তরনের চেষ্টা চলছে তা কখনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বাহন নয়। হাদীর বিচার সহ ভারতের সাথে চোখে চোখ রেখে বাংলাদেশের স্বার্থ হাসিল রেখে অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশের মতো বাংলাদেশের সম্পর্ক চলমান রাখার বিকল্প কিছু নেই। সেই সুর জামায়াত ইসলামের মতো বি এন পি তথা সব দলের কথায় স্পষ্ট।  দেশকে অস্থিরতায় রাখলে যাদের সুবিধা তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। অন্ধকার আছে বলেই আমরা আলোর মর্যাদা বুঝি, খারাপ আছে বলেই আমরা ভালোর ময্যদা বুঝি, অসুন্দর আছে বলেই আমরা সুন্দর খুজি, দেশদ্রোহী আছে বলেই আমরা দেশপ্রেমিক বুঝি, আমাদের শত্রু আছে বলেই আমরা বন্ধুর মর্যাদা বুঝি,  শয়তান আছে বলেই আমরা পুর্ন্যবান মানুষের মর্যাদা বুঝি। তাই আবুল ফজলের মতো বলতে পারি শয়তানকে কখনো বিনাশ করতে নেই। শয়তান হলো ভালোর জন্য আশির্বাদ। 
    লেখক ঃ লতিফুর রহমান প্রামাণিক। 
    লেখক, আইনজীবী। 
    ২০/১২/২৫.
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন