এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রাজনৈতিকবিচ্যুতি (আইডিয়োলজিক্যাল রিকয়েল)

    SHANKAR BHATTACHARYA লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৬৬ বার পঠিত
  • এই আর্টিকল #: 33786
    আইডিয়োলজিক্যাল রিকয়েল
    —- ---------------
    এই পর্যবেক্ষণ বলছে—একটি রাজনৈতিক দল নিজের ছায়াপথ, অর্থাৎ নিজস্ব মতাদর্শ থেকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছে। তার পরেও সেই ছায়াপথেরই ধার ঘেঁষে সে এগিয়ে চলেছে—যেখানে এখনও কিছু মানুষ অন্ধ আনুগত্যে আবদ্ধ। কিন্তু দলটির অভিমুখ স্পষ্টভাবে আন্তঃছায়াপথ শূন্যস্থানের দিকে—বিভিন্ন মতাদর্শের মাঝখানে তৈরি হওয়া এক আদর্শহীন শূন্যতার দিকে।

    এই বিচ্যুত দৌড় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মোটেই বিস্ময়কর নয়। বিস্ময় তৈরি হয়েছে অন্যত্র—সাধারণ মানুষের চোখে। সেই বিস্ময় এতটাই প্রবল যে তা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো।

    পর্যবেক্ষণের মূল প্রশ্নটি হল—বিপুল আনুগত্য-ভরে পরিপূর্ণ এই দলটি কীভাবে নিজের মতাদর্শের পথ থেকে বেরিয়ে গেল? কী পরিমাণ প্রবল রাজনৈতিক ধাক্কা তাকে খেতে হয়েছে? এই ধাক্কার উৎস খুঁজতেই এই পর্যবেক্ষণ। প্রাথমিক ভাবে মনে করা যায়, মানুষের পছন্দ–অপছন্দ, আশা–হতাশার সম্মিলিত রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াই ছিল সেই অভূতপূর্ব ধাক্কা।

    আরও গভীরে তাকালে দেখা যায়, দলের ঊর্ধ্বতন স্তর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত নেতৃত্বের মধ্যে একাধিক ক্ষমতালোভী স্বার্থচিন্তা ও আত্মরক্ষার প্রবণতা একত্রিত হয়েছিল। এই একত্রীভবনের ফলেই তৈরি হয় এক ধরনের মতাদর্শগত সংকোচন—যাকে বলা যায় আইডিওলজিক্যাল রিকয়েল। সেই রিকয়েলই দলটিকে তার নিজস্ব ছায়াপথ, অর্থাৎ আদর্শ থেকে ঠেলে বার করে দেয়।

    এর সরাসরি রাজনৈতিক ফলাফল ছিল স্পষ্ট—সাধারণ মানুষের সমর্থন ক্রমশ সরে যায়। নির্বাচন এলেও রাজ্য-শাসনের ক্ষমতায় ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। একসময় যে দল ছিল শক্তি কেন্দ্রীভূত, সে হয়ে পড়ে পরিত্যক্ত। এই পরাজয়ই ছিল সেই প্রবল ধাক্কা, যার ফলে দলটির সম্পূর্ণ বিচ্যুতি ঘটে।

    এই ধরনের পরিণতির পূর্বাভাস অবশ্য আগেই দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ—তাঁদের ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও সমালোচনার ভাষায়। বলা হয়েছিল, আদর্শ থেকে পশ্চাদপসরণ করলে, মতাদর্শের কেন্দ্রকে যদি নিজস্বার্থ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার কৌশলে বিকৃত করা হয়; যদি সাধারণ মানুষের উপর স্বৈরাচারী নির্যাতন ও অর্থনৈতিক শোষণকে স্বাভাবিক করে তোলা হয়—তবে তার অনিবার্য পরিণতি হবে ক্ষমতার অঙ্গন থেকে বিচ্যুতি।

    এই বিচ্যুত দলের পরিণতির মধ্যেই তার ছায়া স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সবকিছু একত্র করলে ফলাফল এক জায়গাতেই এসে দাঁড়ায়।

    গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক দল সংক্রান্ত এই তত্ত্বের পক্ষে একাধিক বাস্তব তথ্য ভবিষ্যৎ গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠতে পারে। পর্যবেক্ষণে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্পষ্ট হয়—রাজনৈতিক দল যে কোনো দর্শনকে বিকৃত ব্যাখ্যা করতে পারে এবং মতাদর্শকে ছদ্মাবরণের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে পারে। এই ধরনের রাজনৈতিক অস্তিত্বের প্রমাণ এই পর্যবেক্ষণে প্রথম স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ল।

    পর্যবেক্ষণ আরও মনে করে, রাজনীতির অঙ্গনে এমন বহু রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা নেতা–নেত্রীদের নিজস্ব স্বার্থরক্ষার জন্য কৃষ্ণগহ্বরের মতো অদৃশ্য হয়ে থাকে। তারা সাধারণ মানুষের মঙ্গলের নামে আকর্ষণীয় ভাষণ, অসংখ্য প্রতিশ্রুতি ও সেবার অভিনয় করে; অথচ বাস্তবে নানা মতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভাজন, আনুগত্য, জাতপাত, হিংসা, বিদ্বেষ ও অস্পৃশ্যতাকে টিকিয়ে রাখার কাজই চালিয়ে যায়।

    আগামী দিনে এই দলগুলোর বিচ্যুতির কারণ, সাধারণ মানুষের সচেতনতা থেকে আসা প্রবল ধাক্কার ফলাফল এবং তার সামাজিক–রাজনৈতিক পরিণতির সূত্রগুলোর গবেষণা ও আবিষ্কারও সম্ভব হবে।

    কৃষ্ণগহ্বর থেকে Artificial Reality Field : রাজনৈতিক বিচ্যুতির গভীর কাঠামো

    আগের পর্যবেক্ষণ থেকে একটি মৌলিক সত্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে—বিচ্যুত রাজনৈতিক দলটি কেবল তার মতাদর্শের ছায়াপথ হারায়নি, সে নিজেই ধীরে ধীরে একটি কৃষ্ণগহ্বরের রূপ নিয়েছিল। এই রূপান্তরটি হঠাৎ নয়; এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফল।

    কৃষ্ণগহ্বর যেমন নিজের চারপাশের সব আলো, বস্তু ও তথ্যকে গ্রাস করে অদৃশ্য করে দেয়, তেমনই এই রাজনৈতিক সত্তাও নিজের চারপাশের বাস্তবতাকে গ্রাস করতে শুরু করে। মানুষের অভিজ্ঞতা, দুঃখ, দাবি, এমনকি প্রতিবাদ—সবকিছুই সে টেনে নেয়, কিন্তু বাইরে কিছুই প্রতিফলিত হতে দেয় না। এখানে থেকেই জন্ম নেয় এক বিশেষ ক্ষেত্র—Artificial Reality Field।

    এই Artificial Reality Field কোনো শূন্যতা নয়, বরং কৃত্রিমভাবে নির্মিত এক বাস্তবতা। যেখানে ভাষণ বাস্তবের বিকল্প, প্রতিশ্রুতি নীতির বিকল্প, আর আবেগ যুক্তির বিকল্প হয়ে ওঠে। মানুষ আর নিজের জীবন থেকে সত্য যাচাই করে না; যাচাই করে দলীয় ভাষ্য থেকে। বাস্তব আর উপলব্ধির মাঝখানে তখন এক অদৃশ্য ক্ষেত্র কাজ করে—ঠিক যেমন কৃষ্ণগহ্বরের ইভেন্ট হরাইজন।

    এই পর্যায়ে রাজনৈতিক দলটি আর আদর্শে বিশ্বাসী থাকে না; সে আদর্শকে ব্যবহার করে। মতাদর্শ এখানে সত্য নয়, ঢাল। ইতিহাস এখানে শিক্ষা নয়, অস্ত্র। ভবিষ্যৎ এখানে সম্ভাবনা নয়, ভয় দেখানোর কৌশল। এই Artificial Reality Field-এর ভিতরে বসবাসকারী মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতেই পারে না—সে আদর্শ অনুসরণ করছে, না কি কেবল একটি শক্তিক্ষেত্রে বন্দি হয়ে আছে।

    এই ক্ষেত্রের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হল—এটি নিজেকে প্রশ্নমুক্ত (কৌতূহল শূন্য) করে তোলে। যেমন কৃষ্ণগহ্বরের ভিতরের নিয়ম আমরা জানতে পারি না, তেমনই এই রাজনৈতিক বাস্তবতার ভিতরের সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়াও অদৃশ্য থাকে। প্রশ্ন করলেই মানুষকে ছিটকে দেওয়া হয়—দেশদ্রোহী, বিশ্বাসঘাতক, শত্রু ইত্যাদি তকমা দিয়ে।

    কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের মতোই সমাজেও একটি নিয়ম কাজ করে—কোনো ক্ষেত্রই চিরস্থায়ী নয়। Artificial Reality Field যত ঘন হয়, ততই তার ভর বাড়ে। ভর বাড়লে অস্থিতিশীলতা আসে। ভিতরে জমে থাকা বৈপরীত্য, মিথ্যা ও শোষণ একসময় নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণেই ফাটল ধরায়।

    সেই ফাটল দিয়েই শুরু হয় বিচ্যুতি—যাকে আমরা আগের পর্যবেক্ষণে রাজনৈতিক ধাক্কা হিসেবে দেখেছি। সাধারণ মানুষের সচেতনতা এখানে বাহ্যিক শক্তি নয়; এটি সেই শক্তি, যা Artificial Reality Field-এর বাইরে থেকে বাস্তবকে আবার দৃশ্যমান করে তোলে।

    এই কারণেই বলা যায়—রাজনৈতিক কৃষ্ণগহ্বর যত শক্তিশালী দেখাক না কেন, তার পতনের সূত্র তার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। আলো একদিন ফিরে আসবেই, কারণ বাস্তবকে চিরকাল গিলে রাখা যায় না।
    —---------
    #রাজনৈতিকবিচ্যুতি #কৃষ্ণগহ্বররূপক
    #কৃত্রিমবাস্তবতা #ক্ষমতাররাজনীতি
    #মতাদর্শ #সাধারণমানুষ
    #রাজনীতি_বিশ্লেষণ
    #BlackHolePolitics #ArtificialRealityField
    #PoliticalMetaphor #PowerAndNarrative
    #IdeologicalCrisis #PoliticsToday
    #SabitaEunoiaworldviews 
    —-
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন