এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পথে যেতে যেতে

    Luna Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ নভেম্বর ২০২৫ | ১২৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • আজ একটু বেলায় ধীরে সুস্থে বেরোলাম বারাসাত যাব। আমাদের একটি দল আছে, বছর তিন হল প্রত্যন্ত গ্রামে যাই একটু পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ নিয়ে। সেই সংক্রান্ত মিটিংয়ে যোগ দিতে যাচ্ছি। বিশেষ তাড়া ছিল না। বাস ধরে দমদম ক্যান্টনমেন্টে নেমে রিটার্ন টিকিট কেটে ওভার ব্রিজ থেকে নামতে নামতে ট্রেন ঢুকে গেল। সামনে লেডিজ পেয়ে উঠে গেলাম, বনগা লোকাল। বসলাম গিয়ে যাদের মাঝে তাঁরা তখন ভোর সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কলকাতার বিভিন্ন ফ্ল্যাটে কাজ করে ফিরে চলেছেন যে যার বাড়ি। ফিরতি পথে বেশ আয়েশ করে পা মেলে বসে চিকচিকি থেকে মুড়ি খেতে খেতে গল্প চলছিল। কেউ আবার একটু ঘুচিমুচি হয়ে শুয়ে। এদিক ওদিক অন্যান্য সব মেয়েরা বসে যে যার ফোনে মগ্ন।
    নিজেকে ওদের মাঝে কেমন বেমানান লাগছিল। একজন সঙ্গী থাকলে যেন ভালো হ’ত। জানলা দিয়ে বাইরে দেখি হেমন্তের ঘোলাটে নীল আকাশ। ঝকমকে রোদ্দুরে চারিদিক উদ্ভাসিত হয়ে আছে। দেখেই মন ভালো হয়ে যায়।
    এই সব প্রান্তিক স্টেশনের ট্রেনগুলিতে চাইলে হীরে থেকে জিরে টুকুও পাওয়া যায়। একের পর এক স্টেশনে ট্রেন থামলে উঠে আসছিলেন মহিলা হকার। (অল্প কিছু পুরুষ হকার) কি নেই তাঁদের কাছে! কেউ কুর্তি পালাজো, কেই শুধুই ওড়না, কেউ হরেক রকম চুড়ি বেলোয়ারী, কেউ হার মালা চুলের খামচি ব্যান্ড কি নেই। কেউ ফল, কেউ পাঁপড়। একজন দেখি সাদা কৌটোতে সাদা মত কি বিক্রি করছেন। ঘী তো নয়, তাহলে কি? বেজায় কৌতূহল মনে। কিন্তু জিজ্ঞাসা করতেও বাধছে। একটু বাদেই ওদিক থেকে একজন জানতে চাইলেন, কি না শ্যাম্পু।
    কেউ মেয়ের জন্যে কুর্তি কিনলেন, কেউ পায়ের নূপুর, নাতনির জন্যে। কেউ লেবু কিনে খেলেন। দিদিমনিরা ওদিকে ড্রাগন ফল কিনলেন।
    এই খেটে খাওয়া মহিলাদের দেখছিলাম আর ভাবছিলাম দুবেলা গতরে খেটে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পেটের ভাত জোগাড় করে কেমন মাথা উঁচু করে বেঁচে আছেন। হয়ত ছোট থেকেই লড়াই করে সব কিছু আদায় করতে করতে কাঠিন্য বাসা বেঁধেছে শরীরে মনে। দুনিয়াটা ওদের কাছে রণাঙ্গন মাত্র। Women empowerment তো একেই বলে নাকি!
    রাতের ট্রেনে রেল লাইনের ধারে অন্ধকারে সারি সারি টিনের ঘর। আলো জ্বলছে। ভিতরে খাট আলমারি ফ্রিজ টিভি কি নেই। আগে এগুলি ঝুপড়ি ছিল, এখন সরকারি সহায়তায় টিনের কামরা হয়েছে। জানিনা গরমে কি হাল হয়, তবু মাথা গোঁজার ঠাঁই তো। সকলেই রোজগারের ধান্ধায় বেরিয়ে পড়ে সকাল হতেই। এখানেই এদের জন্ম - বিবাহ - মৃত্যু একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়।
    জীবন তরণী ঘাটে ঘাটে বয়ে যেতে যেতে কত গল্প বলে যায়। কান পাতলেই শোনা যায়।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শ্রীমল্লার বলছি | ১১ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৫৩735694
  • আপনার এই লেখা অনেক অনেক দিন পর্যন্ত মনে থাকবে আমার। মহিলা হকারের কথা পড়তে পড়তে আমার একটা কথা মনে পড়ে গেল, মনে পড়ছে— কলকাতায় যখনই কোনও কাজে বা অকাজে গিয়েছি কিংবা যাই, ফেরার পথে যখন শিয়ালদহ স্টেশন থেকে কৃষ্ণনগরে ফেরার ট্রেন ধরি, তখন অনেকগুলো স্টেশন পেরিয়ে এসে; ঠিক কোন স্টেশন জানি না, খেয়ালও করা হয় না কোনওবার। একজন মহিলা হকারকে ট্রেনে উঠতে প্রতিবার দেখি। শুকনো খাবার দাবার বিক্রি করেন কিন্তু বিক্রি কি হয়? সম্ভবত তেমন বিক্রি হয় না। কিন্তু উনি চেষ্টা চালিয়ে যান৷ ওঁর মুখের দিকে যখনই তাকাই তখন ওঁর বাড়ির মানুষজনের কথা মনে পড়ে। নিশ্চই কোনও মেয়ে বা ছেলে আছে ওঁর। হয়তো স্বামী দূরের কোনও দেশে কাজ করেন। মনে হয় এমন প্রতিবারই... ওই মহিলা হকারের মুখের দিকে তাকালেই আমি একজন মায়ের মুখ দেখতে পাই। বড় মায়া মাখানো মুখ ওঁর... 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন