খুব ছোটোবেলায় একবার দিদিমণি প্রশ্ন করেছিলেন ক্লাসে,--"যদি হঠাৎ একটা জাদুশক্তি পেয়ে যাও, তোমরা কে কোন্ পাখি হতে চাইবে?"
ভয়ে ভয়ে বলেছিলাম
"মিস্, আমি হতে চাই চাতক।"
একঘেয়ে ডাক যার 'বৃষ্টি হোক! বৃষ্টি হোক!'
তৃষ্ণার্ত প্রতীক্ষায় রাঙা দুটি চোখ
আর মেঘের ঘনঘটার দিকে লুব্ধ দৃষ্টি অপলক।
সবাই হো হো হেসে বলে, "বোকা, আর পাখি পেলি না?
শেষে কিনা চাতক?
যুক্তিহীন, অনর্থক!"
চাতকপাখি কেমন দেখতে?
দেখেছে কতোজন?
শুধু বৃষ্টি ওই পাখিটার একান্ত আপন।
এখনো আমি বৃষ্টি চাই।
'গিলগামেশের' মতো একটি জলপ্লাবন।
ধুয়ে যাক রক্ত আর ক্লেদ পৃথিবীর..
মুছে যাক শোষকের তেজি কন্ঠের কর্কশ উচ্চারণ
চাতকের তো নেই দিবাস্বপ্ন দেখায় কোনো বারণ!
যতোবার বৃষ্টি নামে পৃথিবীতে
আমি কেবল বলে চলি, "বৃষ্টি, আরো বৃষ্টি হোক।"
যখন পৃথিবীতে বর্ষা নামে, আর মাঠের চাষির সারাদেহের কাদাকে এড়িয়ে চলতে বাবুর গাড়ির জন্য তৈরী হয় আলাদা ব্যবস্থা,
তখন যেন ছিটেবেড়ার ঘর থেকে একঝাঁক কাদায় মাখামাখি ছেলেমেয়ের দল এসে দাঁড়ায় রাজপথে,
সমবেত গলায় তারা যেন ছড়া কাটতে পারে
"আয় বৃষ্টি ঝেঁপে
ফাঁপা গর্জন যাক কেঁপে
জীবন মানে কি ধোঁকা?
আমরা সবাই বোকা?"
যন্ত্রণার ভিত্তিপ্রস্তরে জলস্রোতের বান আসুক।
সভ্যতার সদ্যস্নাত পদ্ম বিকশিত হয় যে বৃষ্টিতে,
তাকেই ডাকবার জন্য তো চাতক বাঁচে বর্ষার পর বর্ষা অপেক্ষায়।..
সভ্যতার বুকে দানবের প্রলয়নাচন দেখে
তার অপলক চোখ আরো রাঙা হয় কেবল,
হায়! চাতকের একার যে নেই বৃষ্টি আনার সামর্থ্য।
আমার খুব ছোটোবেলার সেই ইচ্ছেটা ফলে গেছে!
মিস্, আপনার প্রশ্নের উত্তর তবে দিয়েছিলাম নির্ভুল।
আমি আজ এক নতুন বৃষ্টির চাতক।
সারাদিন ডাকি, "বৃষ্টি, আরো বৃষ্টি হোক।"
চোখের দৃষ্টি রাঙা হতে হতে আজ নিষ্পলক।
নীরব, কাতর অঙ্গীকার যার
যুক্তিহীন, অনর্থক!
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।