রোজ ভোরে পূর্বে রক্তকমল এসে,বিবর্ণ নদীর জলকে বলে ভালোবেসে
'তোমার কথা সারারাত ধরে ভাবি,
তোমাকে দিচ্ছি শালুকের নাকছাবি।'
নদীটিও হাসে নিত্য সুরকল্লোলে
রেঙে ওঠে স্রোত তার হিল্লোলে
ওদের মধ্যে সেই কথা হতে হতে
সকালের রোদ মেশে ভাটিয়ালি স্রোতে
লালপেড়ে শাড়িতে নদী তখন প্রেমময়ী
আলো বলে, "যদি তৃতীয় পান্ডব হই?
তুমি মম আদিমাতা বলে, হে ঊর্বশী
সমর্পণকে তোমার যদি ভুল বুঝে বসি?"
স্রোতস্বিনীর বিভঙ্গে জাগে রৌদ্রবসনের চিক্কণ
ভাঙা পাড়ের পিঞ্জরেতে ওঠে বেজে নূপুরনিক্কণ।
বললে সে, "পাপবোধে যদি কেঁদে বলো চরণে
এ মহাপাপে ভীত ; নইলে ভয় করি না মরণে
পুরূরবা তব প্রিয়তম, হে লজ্জাহীনা স্বর্গনটিনী!"
আরো হেসে বলে চলে প্রগলভা সেই তটিনী
"অপ্সরীর চিরন্তন দায়ভার দেবকুলের চিত্তবিনোদন
বিস্মৃত হয়ে নিজ-উত্তরপুরুষকে করো আত্মনিবেদন?"
আলো বলে, "তাই প্রশ্ন করি , সঙ্গে সেইসব অভিশাপ
দিতে কি তাও, বলতে, "এ প্রত্যাখ্যানের পাপ
সহিবে না ফাল্গুনী, পৌরুষের এতো অহংকার
দৃপ্ততা,বীরত্ব তব, পুরুষের চির অলংকার
ত্যাজিয়া একদিন দেখো ক্লীবনটী বেশে
দর্পণ সম্মুখে নৃত্যছন্দে তুমিও দাঁড়াবে এসে!"
নদী বলে, "বুঝি না কেন অভিশাপ বলো এরে?
কিরীটি যবে বিরাটগৃহে সখীরূপে ফেরে
শাপে বর হয়নি কি নটীর এই কথাখানি?
শোনো তো বলি, আমি এও জানি
রাজকন্যার উত্তরার সংগোপন প্রেম
কিশোরী-কল্পনার সে নিকষিত হেম
আশ ধরে বসেছিলো, দিতে হবে এনে
সৈনিকের মস্তকে তীব্র শরজাল হেনে
ছিন্ন উষ্ণীষের পীত-হরিৎ বস্ত্ররাজি
পুতুল খেলার তরে তার আজি!
অভিশাপে লাভই তো হলো ক্ষতির পরিবর্তে
রাজগৃহে দিনযাপন ছদ্মবেশের শর্তে
সাথে কন্যার অন্তরের প্রেমস্পর্শও পায় যে কৌন্তেয় ভাগ্যবলে
ইন্দ্রসভায় ঊর্বশীর নূপুরে দীর্ঘশ্বাসের সুর কেবল বেজে চলে!
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।