এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ভয়েজ অফ স্টুডেন্টস: নম্বরহীন এক জগৎ (ব্যঙ্গাত্মক গল্প)

    SANKAR HALDER লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৯৮ বার পঠিত
  • ভয়েজ অফ স্টুডেন্টস: নম্বরহীন এক জগৎ (ব্যঙ্গাত্মক গল্প)
     
    কলমে : শংকর হালদার শৈলবালা 
    গল্পের শ্রেণী : ব্যঙ্গাত্মক বা স্যাটায়ার (Satire), সামাজিক সমস্যাভিত্তিক গল্প (Social Commentary) ও উপদেশমূলক বা নীতিগল্প (Moral Tale)
     
    আমাদের ক্লাস এইটের বন্ধু অরুণ হঠাৎ করে পড়া ছেড়ে দিল। আগে যে ছেলেটা অঙ্কের ভয়ে রাতে ঘুমাত না, ভূগোলের ম্যাপ মুখস্থ করতে করতে ঘেমে উঠত, এখন সে দিব্যি হাসিখুশি। কারণ, সরকার ঘোষণা করেছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আর ‘পাশ-ফেল’ থাকবে না। শিক্ষামন্ত্রী মশাই এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, “শিক্ষার্থীদের মাথার ওপর থেকে নম্বর নামক ভয়ঙ্কর রাক্ষসটাকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এখন থেকে আমাদের ছাত্ররা আনন্দের সঙ্গে শিখবে, আর রেজাল্ট কার্ডে থাকবে শুধু ভালোবাসার প্রতীক!” সাংবাদিকরা হাততালি দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর এই মহান উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেন।
     
    অরুণের বাবা-মা প্রথমে খুব খুশি হলেন। তাদের ছেলে আর ফেল করার দুশ্চিন্তা করবে না। স্কুল থেকে কোনো চাপ নেই, তাই অরুণ সারাদিন ক্রিকেট খেলে, মোবাইলের স্ক্রিনে 'পাবজি'র মতো কিছু গেম খেলে আর ইউটিউবে 'হাউ টু ইগনোর স্টাডিজ' ভিডিও দেখে সময় কাটায়। তার মনে কোনো ভয় নেই। সে তার বন্ধু শুভকে বলছিল, "কষ্ট করে পড়ার কী দরকার? 
    এমনিতেই তো পরের ক্লাসে উঠে যাব! দেখবি, এখন থেকে আমাদের স্কুলগুলো হলো এক একটা ট্র্যাভেলার্স হাব, যেখানে কোনো টিকিট ছাড়াই এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে যাওয়া যায়।"
     
    শুভ ছিল তার উল্টো। সে মন দিয়ে পড়াশোনা করত। সে দেখছিল, ক্লাসে পড়া বোঝানোর সময় অনেকেই মনোযোগ দিচ্ছে না। শিক্ষকরাও যেন আগের মতো কঠিন প্রশ্ন করেন না। কারণ, তারা জানেন, সব ছাত্রছাত্রীই পাশ করবে, তাই তাদের ওপর ফল ভালো করার চাপ কমে গেছে। কোনো শিক্ষক যদি ভুল করে কঠিন প্রশ্ন করে ফেলতেন, তাহলে হেড স্যার এসে বলতেন, “কী করছেন মশাই? নম্বর দিতে এসেছেন না ভবিষ্যতের নাগরিক গড়তে এসেছেন?” এতে করে, ক্লাসে একটা ঢিলেঢালা পরিবেশ তৈরি হলো। অনেক ছাত্রছাত্রীই পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। তারা ক্লাসে বসে স্মার্টফোনে চ্যাট করত, শিক্ষক কোনো প্রশ্ন করলে গুগলে উত্তর খুঁজত, আর শিক্ষকরা হাসিমুখে তাদের এই ডিজিটাল প্রজ্ঞা দেখতেন।
     
    এরকম করতে করতে বছর শেষ হলো। সবাই নবম শ্রেণিতে উঠল। নবম শ্রেণির প্রথম দিনেই তাদের সামনে এলো নতুন চ্যালেঞ্জ। শিক্ষক কঠিন একটি বিজ্ঞান পরীক্ষার ঘোষণা দিলেন। আর বললেন, এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও জানালেন, “তোমাদের এতদিন ফ্রি ডেটা দেওয়া হচ্ছিল। এখন থেকে তোমাদের নিজেদের ডেটা জেনারেট করতে হবে!” 
     
    শুভ খুব ভালো ফল করল, কিন্তু অরুণসহ আরও অনেকেই কিছুই লিখতে পারল না। কারণ, ক্লাস এইটে তারা যা পড়া ছেড়ে এসেছিল, নবম শ্রেণির সিলেবাস তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
     
    অরুণ খুব ভয় পেল। সে দেখল, ক্লাস এইটে সে যে বিষয়গুলো সহজ ভেবে এড়িয়ে গিয়েছিল, এখন নবম শ্রেণিতে সেগুলোই তার কাছে পাহাড়ের মতো লাগছে। অঙ্কে তার ভিত এতটাই দুর্বল যে, সে বীজগণিতের সাধারণ সূত্রও বুঝতে পারছে না। সে বলল, “আট বছর ধরে পাশ-ফেল না থাকায়, আমরা কেবল ক্লাস পার করে এসেছি, কিন্তু জ্ঞান অর্জন করিনি। একটা পরীক্ষা বা ফেল করার ভয় ছিল বলেই আমরা কিছুটা হলেও পড়তাম। এখন মনে হচ্ছে, আমরা যেন একটা ফাঁপা বাঁশের মতো। বাইরে থেকে দেখতে বেশ ভালো, কিন্তু ভেতরে সব ফাঁকা।”
     
    শুভর বাবা একজন শিক্ষক। তিনি তাদের দু'জনের কথা শুনছিলেন। তিনি বললেন, "তোমাদের শিক্ষাব্যবস্থা একটা কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। পাশ-ফেল প্রথা উঠিয়ে দেওয়ায় সুবিধা হয়েছে যে, ছাত্রছাত্রীরা আর ফেল করার মানসিক চাপ অনুভব করছে না। এতে তারা আনন্দ নিয়ে শিখতে পারছে, এবং যারা দুর্বল, তারা শিক্ষকের কাছে আরও বেশি সাহায্য চাইতে সাহস পাচ্ছে। কিন্তু এর অসুবিধাও আছে। যখন কোনো লক্ষ্য বা চ্যালেঞ্জ থাকে না, তখন অনেক শিক্ষার্থীই পরিশ্রম করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। শিক্ষার মান কমে যায়, কারণ ভালো ছাত্র আর খারাপ ছাত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। ফলস্বরূপ, তোমরা যখন দশম শ্রেণিতে উঠবে, তখন দেখবে তোমাদের মধ্যে জ্ঞানের এক বিশাল ফারাক তৈরি হয়েছে।"
     
    অরুণ এবার বুঝতে পারল, পাশ-ফেল না থাকলেও নিজের ভেতরের দুর্বলতাগুলো তার জীবনে একদিন সমস্যার সৃষ্টি করবে। সে সিদ্ধান্ত নিল, এখন থেকে সে প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করবে, যাতে সে তার ফাঁকা জ্ঞানের গোডাউনকে ভরিয়ে তুলতে পারে।
    শিক্ষার মান, সুবিধা-অসুবিধা, সবশেষে সবটাই নির্ভর করে শিক্ষার্থীর নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি ও সচেতনতার ওপর। পাশ-ফেল থাকুক বা না থাকুক, নিজেকে জানতে হবে, কেন জ্ঞান অর্জন করা জরুরি।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 2607:fb91:384:8952:896a:7c23:374:***:*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:২০734357
  • এটি ব্যাঙ্গাত্মক গল্প না। এটি নীতি শিক্ষামূলক গল্প এমনকি হিতোপদেশের কাহিনীও বলা যায়। আর বুলেট পয়েন্ট করে লিখলে পড়তে সুবিধা 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন