এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • না। বাংলায় চাকরি নেই 

    কালের নৌকা লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৯৮ বার পঠিত
  • আমরা সকলেই প্রায় নিশ্চিত। পশ্চিমবঙ্গে ছেলেমেয়েদের আর চাকরি নেই। শুধুই যে রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক বিরোধীতার পরিসরেই এই বিষয়টি বারংবার উঠে আসছে, তাই নয়। মিডিয়া জুড়ে সকলেই এই একটি বিষয়ে একমত। কারণ পশ্চিমবঙ্গ থেকে শিল্প তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কলকারখানায় তালাচাবি পড়ে গিয়েছে। বাঙালির ছেলেমেয়েদের তাই চাকরি পেতে দিল্লী বোম্বে মাদ্রাজ ব্যাঙ্গালোরে ছুটতে হচ্ছে। আমাদের নিজেদের ঘরে ঘরেই তো এই ছবি। ফলে এই বিষয়ে আর যাই হোক বিতর্ক নেই যে, পশ্চিমবঙ্গে ছেলেমেয়েদের চাকরি নেই। আর থাকবেই বা কি করে? শুধুই তো শিল্প বাণিজ্যে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে রয়েছে, তাই নয়। রাজ্যসরকারের, কেন্দ্র সরকারের দপ্তরগুলিতেও যে নিয়মিত ভাবে যথেষ্ট সংখ্যক চাকরির দরজা খুলে যাচ্ছে, তাও নয়। আমরা সকলেই চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। তবুও রাজ্যসরকারের যে যে দপ্তরগুলিতে চাকরি দেওয়া হচ্ছিলো। সেখানেও বিস্তর চুরি জোচ্চুরি। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি প্রাপ্তির বিষয়টি রাজ্যবাসীর সামনেই ঘটেছে। এই যেমন রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির ফলে একদল বছরের পর বছর পথে বসে রইলো চাকরি না পেয়ে। আর একদল লাখ লাখ টাকা দিয়েও জ‌োচ্চুরি করে পাওয়া চাকরি ধরে রাখতে পারলো না। সেই সূত্রেই আবার একদল যোগ্যতার বলে চাকরি পেয়েও চাকরিহারা হয়ে আবার চাকরির পরীক্ষায় চাকরি প্রার্থীর লাইনে। সেই চাকরি চুরির ফলেই আজকে ছিল একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা।

    খবরে প্রকাশ, আজকের পরীক্ষায় ১৩ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী ভিন রাজ্য থেকে এসেছে। যারা বাংলা জানে না। তারা বাংলার সরকারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বসে গিয়েছে বাঙালি ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি। বাংলার যে ছেলেমেয়েদের বাংলায় চাকরি নেই বলে আমাদের সকলের রাতের ঘুম উধাও। কদিন আগেও নবম দশম শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাতেও এই একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। বিহার উত্তরপ্রদেশ হরিয়ানা রাজস্থানের ছেলেমেয়েরা হাজারে হাজারে বাংলায় ছুটে এসেছে সেই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাতেই বসতে। যে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বিস্তর কারচুপি ও দুর্নীতির কারণেই ২০১৬ সালের নেওয়া পরীক্ষা বাতিল করে প্রায় এক দশকের মাথায় পুনরায় আবার পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ছেলেমেয়েরা কিন্তু বছরের পর বছর এইভাবেই ছুটে আসছে একটা চাকরি’র জন্যে, ঠিক সেই রাজ্যেই। যে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা রাজ্যে যথেষ্ট পরিমাণে চাকরি না থাকার কারণে ভিন রাজ্যে ছুটে যেতে বাধ্য হচ্ছে। রোজগারের ধান্দায়। আমরা যখন বাড়ির বাইরে যাই। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। যখন যাই কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরগুলিতে। যখন প্রায়শই আমাদের গিয়ে পৌঁছাতে হয় রাষ্ট্রায়ত্ব বিভিন্ন ব্যাংকগুলিতে। যখন টিভির পর্দায় নানান গোলমালের খবরে পুলিশকে সক্রিয় ভুমিকায় দেখা যায়। তখন আমরা দেখতে পাই বিগত দশ কুড়ি বছরের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক অবাঙালি ছেলেমেয়েদেরকে সরকারি চাকরিগুলির বিভিন্ন পদে কর্মরত অবস্থায়। ঠিক যে পদগুলিতে আমাদের ছেলেমেয়েদের চাকরি নেই বলেই রাজ্যজুড়ে এই হাহাকার। এই রাজ্যে ছেলেমেয়েদের চাকরি নেই।

    বিষয়টি কি অদ্ভুত না? না বোধহয়। এটাই তো স্বাভাবিক। ভারতবর্ষের যে কোন নাগরিক যে কোন অঞ্চলে (শুধু কয়েকটি বিশেষ অঞ্চল বাদে) রোজগার করার এবং বসবাস করার অধিকারী। ঠিক যেমন আমাদের রাজ্যে চাকরি নেই বলেই আমাদের ছেলেমেয়েরা ভারত জুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে ছুটে গিয়ে স্থিতু হয়েছে। রোজগার এবং বসবাসের উদ্দেশে। তবে তো ঠিকই আছে। অসুবিধা কোথায়? না, অসুবিধা আসলে অন্য কোথাও নয়। অসুবিধে শুধু আমাদের নিজেদের ভিতরেই। আমরাই আসলে একটু অদ্ভুত রকমের। তাই না? রাজ্যে চাকরি নেই চাকরি নেই বলে বিলাপ করছি। অথচ দেখতে পাচ্ছি রাজ্যজুড়ে একের পর এক দপ্তরে অবাঙালি ছেলেমেয়েরা জাঁকিয়ে বসে গিয়েছে। দাপিয়ে রোজগার করে চলেছে। না, শুধুই তো আর রাজ্য এবং কেন্দ্রের অধীনস্ত বিভিন্ন ধরনের সরকারি দপ্তরগুলিতেই নয়। অধিকাংশ বেসরকারি ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের ভিতরে পা দিলেই আমরা দেখতে পাই, বেশিরভাগ কর্মীই বাংলা জানে না। এই বাংলার ছেলেমেয়ে নয়। বাঙালির সন্তান নয়। কিন্তু তাতে তাঁদের কিন্তু কোনভাবেই এই বাংলায় করেকম্মে খেতে বিশেষ কোন অসুবিধে হচ্ছেও না। তাদের জন্যে চাকরির অভাবও নেই। বেশ দেখা যাচ্ছে বিগত তিন দশকে রাজ্যের সরকারী এবং বেসরকারী কর্মক্ষেত্রগুলিতে বাঙালির তুলনায় অবাঙালির ছেলেমেয়েরাই অধিক পরিমাণে কাজ পেয়ে চলেছে। হতে পারে তাদের যোগ্যতা বাঙালির ছেলেমেয়েদের থেকে অনেক বেশি, তাই। কিন্তু বিষয়টা কেমন অদ্ভুত না? আমাদের সেই তুলনায় কম যোগ্যতার বাঙালি ছেলেমেয়েরাই তো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নানান ধরনের চাকরিতে কর্মরত। ও, তবে বোধহয় অন্যান্য রাজ্যগুলিতে কম দক্ষতার কর্মীদেরই কদর বেশি। তাই তুলনায় বেশি দক্ষতার অবাঙালি ছেলেমেয়েরা আমাদের রাজ্যে সরকারী এবং বেসরকারী চাকরির একটা বড়ো অংশেই কর্মরত রয়েছে। তাই নিশ্চয় হবে। নাকি আমাদের রাজ্যের বেতন এবং মজুরির হারে আমাদের বাঙালির ছেলেমেয়েরা সন্তুষ্ট নয়। নয় বলেই অধিকত রোজগারের উদ্দেশেই তাদের ভিন রাজ্যে গমন? কিন্তু তাহলেও যে একটা প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। এই রাজ্যের তুলনামূলক কম হারের বেতন ও মজুরির লোভে ভিন রাজ্যের ছেলেমেয়েরা অধিক হারের বেতন মজুরি ফেলে ছুটে আসছে তবে? হাজারে হাজারে? কি অদ্ভুত না?  না হলে আমরা বাঙালিরাই নিশ্চয় খুব অদ্ভুত একটি জাতি। কোনটা আমাদের আসল ধারণা। আর কোন ধারণাটিকে আমরা বেশি করে প্রচার করতে ভালোবাসি। কিংবা কোন কোন বহুল প্রচারিত ধারণায় আমাদের বিশ্বাসের নোঙর ফেলে রাখতে আমরা আনন্দ পাই। সব কিছুর হিসাব মেলানো সত্যিই খুব কঠিন। কোনটা অদ্ভুত আর কারা আসলেই অদ্ভুত। সেই বিতর্ক হয়তো কোনকালেই মিটবে না। কিন্তু সত্য এটাই, পশ্চিমবঙ্গে সরকারি এবং বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে অবাঙালি ছেলেমেয়েদের কোন অভাব নেই। সংখ্যাটি অবশ্য প্রতি বছরেই বৃদ্ধির পথে। একদিন এমন দিনও আসতেই পারে। রাজ্যের স্বনির্ভর জনবিন্যাসে বাংলাভাষী বাঙালিই সংখ্যালঘু হয়ে গেল। তা যাক। তাতে কি? আমরা তো ভারতীয়।

    ©কালের নৌকা ১৪-০৯-২০২৫
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debanjan Banerjee | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:১০734128
  • হক কথা l 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন