এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আমার বিদেশের এককভ্রমণ -পর্ব ৩ (শেষ পর্ব )

    Kriti Alam লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ এপ্রিল ২০২৫ | ৭৯ বার পঠিত
  • ডেটা পুরাণ শেষ হল আর ভাতঘুম এর রেষ কাটবার পর ভাবছি কি করলাম সারাদিন। এদিকে ভাবলাম খাওয়াদাওয়া কি করব আজকে কারন সেই প্যানকেক এর পান্সে ও শুঁকনো স্বাদটি মেটাতে হবে। রোদ কিছুটা কমলে একটু পায়ে হেটে আমার আশেপাশে কি আছে একটু ঘুরে দেখি। আবার তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরলাম। আমার কর্মক্ষেত্র ডেন্টনের সাথে তুলনায় গরমটি বেশী যার কথা আগেই উল্লেখ করেছি, কিন্তু বিকেলবেলা বলে গরমটা একটু কম। আশেপাশে বলতে বড় রাস্তা বাদে সেরাম কিছু একটা দেখতে পেলাম না। একটা জায়গায় গেলাম যেখানে দেখলাম অনেকগুলো পিলার ও সেখানে অঙ্কনকর্ম চলছে। আরও একটু ঘুরে এগিয়ে চললাম গুগল ম্যাপ দেখে একটি মেক্সিকান খাবার জায়গায়। ইচ্ছা ছিল একটু ট্যাঁকও খাওয়ার। হেঁটে দেখলাম বেশ খানিকটা লাগবে কিন্তু তাও লেগে পরলাম অচেনার পথে। দেখতে দেখতে বাড়ি ঘর ঘেরা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে পড়লাম বড় রাস্তার মুখে। এখান থেকে আরও পনেড়ো মিনিট লাগবে। তাও আজ গন্তব্য “টাকও” তাই ক্লান্তি উপেক্ষা করে এগিয়ে চললাম। কিছুটা দূরে এসে ওপারে দেখলাম আমার সেই “টাকও” এর দোকান দণ্ডায়মান। কিন্তু যা দেখলাম তাতে আমার মনটি ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। দেখলাম একটি রাস্তার ধারে দোকান যা দেখে এপার থেকেই খাওয়ার ভক্তি উঠে গেলো। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে হোটেল এর দিকে ফিরে গেলাম। রাস্তা অতিক্রম করে হেঁটে ফিরতে ফিরতে ভাবলাম আর কিছু না হলেও হেঁটে শহরটাকে আরেকটু চেনা হল। সবকিছুরই এক সদর্থক মানে থাকে তা মাঝে মাঝে  নিজেকে সান্ত্বনা দিতে কাজে লাগে। তারপর ঘরে গিয়ে শান্তি তে বসে আবার কিছুক্ষন পর সেই একাকিত্বের আভাস পেলাম। এবার নিজের ল্যাপটপ খুলে সিনেমা চালিয়ে দিলাম। “লাপাতা লেডিজ” সিনেমাটির অনেক সুনাম শুনে আজ নিজেই তা দেখতে বসে গেলাম আমার এই একক ভ্রমণে। এর মধ্যে আমার ইউটি অস্টিন এ পঠনরত বন্ধু সূর্যপ্রভর মেসেজ পেলাম। সে জানতে পেরেছে আমার ইন্সতাগ্রাম এর ছবি দেখে। জানতে চাইলো যে কদিন এর জন্য এসেছি এবং কোথায় উঠেছি। জানলাম যে ওর ক্যাম্পাস বেশ কাছেই। কথাবার্তা হয়ে গেল যে ওরই বিশ্ববিদ্যালয়তে ওর সাথে দেখা করবো। এরপর সিনেমা দেখতে দেখতে অর্ডার করে চাউমিন মোমো খেয়ে রাতের ইতি দিয়ে ঘুম দিলাম।

    পরের দিন সকালে উঠে ঠিক করে নিলাম যে আজকে আরেকটু ঘুরব ও কিছু দ্রষ্টব্য কিনে নেব কাল চলে যাওয়ার আগে। ইচ্ছা ছিল মিউজিয়াম গুলো দেখে নেওয়ার। বিশেষ সুনাম সুনেছি “বুলক মিউসিয়াম অফ আর্ট” ও “টেক্সাস হিস্ট্রি মিউসিয়াম” এর, তাই এই দুই দেখার আশা নিয়ে গাড়ি করে বেড়িয়ে পড়লাম। বেশ কড়া রোদ থাকা সত্ত্বেও বেশ ঝলমলে লাগছিল শহরের এই মধ্যমণি। শুরু করলাম টেক্সাস এর ইতিহাস এর প্রতীক দেখা দিয়ে। বিস্তারিত বলতে পারব না কারন ইতিহাস বিষয়টি আমি বরাবর একটু পেছনের সারির ছাত্র। তাও যা দেখলাম তাই বলি। শুরুতেই একটি বড় প্রতীকী ষাঁড় দেখে আমি একটু তথস্থ হলাম। সাহস রেখে আরও প্রদর্শনীর দিকে এগিয়ে গেলাম। পুরনো সভ্যতার অনেক ইতিহাসের বর্ণনা দেখলাম যা দেখে বেশ প্রশংসিত হলাম। যেহেতু টেক্সাসে বিখ্যাত কিছু জিনিস এর মধ্যে গাড়ি ও বন্দুক হল সেই তালিকার মধ্যে অন্যতম এক জিনিস। নানারকম এর রঙ-বেরঙের ও বিস্তর আকারের গাড়ি ও সাইকেল(যাকে এই দেশে “বাইক” বলা হয়) যার সাথে যুক্ত মালিকের ইতিহাস। অনেক লোকের নিজস্ব সংগ্রহের জিনিস যা টেক্সাসের ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। সেই দামি গাড়িগুলি দেখছি আর হাল্কা চোখ বোলাচ্ছি কিছু বর্ণনার দিকে। তাতে লেখা আছে মালিকের নাম বা বিশেষ নামের গাড়ি হলে সেই নামের বর্ণনা। এবার নিচের তলায় গেলাম ও দেখলাম সেখানে নানা ধরনের জিনিস বিক্রি হচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখলাম যে বেশ ভাল ফ্রিজ ম্যাগ্নেট বা টেবিলে রাখার জন্য কিছু অস্টিন শহরের খুদ্র সংস্করণ ইত্যাদি। সেখান থেকে পছন্দের কিছু জিনিস নিয়ে চললাম পরের মিউজিয়ামের দিকে যা হল “বুলক মিউজিয়াম অফ আর্ট”। সেখানে ঢুকে মন খুব প্রফুল্লিত হয়ে গেল। তার কারণ হল তার প্রবেশদ্বার দেখে। বেশ ঝলমলে ও সুন্দর আর গ্রীষ্মকালের গরম রোদ তার সৌন্দর্য আরও তিগুন করে দিচ্ছে যেন। ভেতরে ঢুকে প্রদর্শনী দেখতে শুরু করলাম। বেশ সুন্দর অঙ্কনচিত্রগুলি দেখতে দেখতে বেশ প্রশংসিত হলাম। কিছু বিশেষ কারুকার্যের মধ্যে একটি দেখলাম একটি পঙক্তি যা হাড় দিয়ে তৈরি ও তার ভারসাম্য যোগাতে পয়সার একটি সুবিস্ত্রিত ঢিপি। তারপর আরেকটি বাক্স দেখলাম যা ভারতবর্ষের থেকে আসন্ন। সব দেখা হয়ে যাওয়ার পর বাইরে এসে বসলাম। একটু দেখলাম এই চলমান টেক্সাসের রাজধানী অস্টিন কে। কেমন একটা লাগতে শুরু করল, যত বেলা এগিয়ে আসছে, দিনের শেষ হচ্ছে শহরের ভোল পালটাচ্ছে। যেহেতু সপ্তাহের শেষ এগিয়ে আসছে লোকজন একটু উৎসবের মেজাজেই আছে। আমার ও কাল সকালে চলে যাওয়া তাই আজ দেখে নিচ্ছি শহরটিকে। বাইরে একটু হেঁটে একটা নিরালায় একটা বেঞ্চি পেয়ে সেখানে বসে শহরের গতি দেখতে লাগলাম। ঝকঝকে পুরো অস্টিন শহরটি খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে। সময় হতে বন্ধুর মেসেজ এলো ওর ওদিকে যাওয়ার। ওর ক্যাম্পাস সেই মিউজিয়ামের পেছনেই। হেঁটে হেঁটে যেতে শুরু করলাম। পথে অস্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিস্ত্রিত ক্যাম্পাসের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চললাম। যেহেতু গরমের ছুটি তাই ক্যাম্পাসে ছাত্রদের খুব একটা ভিড় নেই। কিছু দূর যেতে দেখতে পেলাম একমুখ দারি নিয়ে দণ্ডায়মান আমার বন্ধু সূর্যপ্রভ মুখার্জি। জৈবিক রসায়নের গবেষণা তাকে ভালই পেয়ে বসেছে দেখে যা বুঝলাম। দীর্ঘ এক বছর পর আবার আলাপ হতে প্রথমে কিছু “ভাষা” আদানপ্রদানের পর চললাম তার সাথে থাই খাবার খেতে। পথে অনেক জিনিস নিয়ে আলোচনা হল ও তার অনেক গল্প শুনলাম। এটা ওটা নিয়ে আলোচনা হতে আমরা রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। সেখানে “প্যাড থাই” এর সুনাম করতে করতে খেয়ে ও কিছুটা আমার সঙ্গে নিয়ে তাকে একটু শহরের মাঝে একটু হেঁটে চলার আহ্বান জানালাম। সে রাজি হল তাই একটি ক্যাবে করে সেখানেই চললাম। অনেকক্ষণ ঘুরে ও কিছু ছবি তুলে একসময় এলো বিদায়বেলা। বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে তার বাস তাকে তার গৃহে তাকে নিয়ে গেল ও আমি চললাম আমার হোটেল এর দিকে। এরপর খুব বেশি কিছু হয়নি। পরের দিন সকালে হোটেল থেকে বের হচ্ছি যখন, তখন দেখি আমার প্রতিবেশী ভদ্রমহিলা বসে রয়েছেন বাইরে। তাকে অভিবাদন জানিয়ে চললাম এই তিনদিন এর ঘর কে ছেরে। বাসে ওঠার আগে ভেবে নিলাম এই নিজস্ব বেড়িয়ে পড়াটিকে নিয়ে। ভাবলাম আবার হয়তো আসব, আরও সাহস নিয়ে এবং আরও ঘোরবার ইচ্ছা নিয়ে। বিদায় জানালাম এই চলমান রাজধানীটিকে।

    আমার পরের যাত্রা বইসে (ইডাহো) কে নিয়ে লেখা শুরু করবো।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন