এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বাংলা সিনেমা কি উঠে যাবে? 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৫০৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • সাংসদ এবং তারকা দেবকেও নাকি হল পেতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। হবারই কথা, কারণ, বাংলা সিনেমা ব্যাপারটাই উঠে যেতে বসেছে। কাগজে পড়লাম, ২০২২ এ বাংলা সিনেমা রিলিজ করেছিল ১৭০ টা। ২০২৩ এ ১৩৭। আর ২০২৪ এ শুটিং হয়েছে মাত্র ৩৪ টার। রিলিজ তো পরের কথা। এর একটা কারণ বলা হচ্ছে ফেডারেশনের দাদাগিরি। আর একটা কারণ সম্পূর্ণ উহ্য থাকছে, সেটা হল বঙ্গের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযোজক যে সংস্থা এসভিএফ, যারা একই সঙ্গে ডিসট্রিবিউটর এবং মালটিপ্লেক্স-মালিকও বটে, হাতে আবার হাতের-পাঁচ ওটিটিও আছে,  তাদের বাংলা সিনেমা নিয়ে বিশেষ হেলদোল তো নেইই, বরং বাংলা সিনেমাকে হল না দেওয়াটাই তাদের ব্যবসার পক্ষে ভালো। কারণ, তাদের নিজেদের ওয়েবসাইটের বক্তব্য অনুযায়ী, তারাই পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় ডিসট্রিবিউটর। রেডি চিলিজ থেকে ভায়াকম, ডিজনি থেক ফ্যান্টম, সবার সঙ্গেই তাদের গাঁটছ্ড়া আছে এবং এদের সিনেমা পূর্বভারতে তারা ডিসট্রিবিউট করে থাকে। আপনাদের মনে থাকতে পারে, কাশ্মীর ফাইলস বা জওয়ান যখন রিলিজ করেছিল, মাল্টিপ্লেক্সে অন্য কোনো সিনেমার অস্তিত্ব বস্তুত ছিলনা। এই দুটো সিনেমারই ডিসট্রিবিউটর ছিল এসভিএফ (আমি এই দুটো খুঁজে দেখলাম, এর তো কোনো ডায়রেক্টরি নেই, আপনারা বাকি সিনেমাগুলোও দেখতে পারেন)। ফলে হলে বাংলাকে তুলে দিয়ে, হিন্দি বা হিন্দি-ডাব করা সিনেমা চললে, অনেক ক্ষেত্রেই এদের সরাসরি ব্যবসায়িক লাভ। 

    এখানেই শেষ নয়। ডিসট্রিবিউশন ছাড়াও আরেকটা বস্তু আছে, যার নাম প্রোজেকশন। আগে সেলুলয়েডের রিল পৌঁছে যেত হলে-হলে। এখন সে কারবার নেই, সবই ডিজিটাল। সার্ভার থেকে সরাসরি আসে, দেখানো হয়, এবং পয়সা গুণে নেওয়া হয়। এই বস্তুটা দুটো কোম্পানি করে থাকে পূর্বভারতে। একটির নাম ইউএফও এবং অপরটি, আবারও আপনাদের চিরপরিচিত এসভিএফ ( আমাকে অনেকেই বলেছেন, যে, এসভিএফ কার্যত একচেটিয়া, কিন্তু আমি যাচাই করিনি)। এতে বাংলা সিনেমার কোনো বিশেষ সুবিধে হত? একদম না। বরং ঠিক উল্টো। খবরের কাগজের রিপোর্ট অনুযায়ী,  এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত, বাংলা সিনেমা দেখানোর রেট ছিল আকাশছোঁয়া।সপ্তাহে-একদিন-একটা-শো  এর সর্বভারতীয় রেট ছিল প্রায় ৩০০০ টাকা। আর বাংলা সিনেমার জন্য তার দ্বিগুণেরও বেশি। ৭০০০ টাকা। এই হিসেবটা শো বাড়লে আরও জটিল, কিন্তু মোদ্দা হচ্ছে, বিজনেস মডেলটাই এমন, যাতে বাইরের ব্লকবাস্টারদের, যাদের অনেকের ডিসট্রিবিউটরও আবার একই সংস্থা, তাদের প্রচুর সুবিধে হয়।

    ফলে যুগপৎ, ডিসট্রিবিউশন এবং প্রোজেকশন, দুটো দিক থেকেই বাংলা সিনেমাকে গলা-টিপে মেরে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলার  সংস্থা। অন্য কোনো রাজ্যে এরকম হয় কিনা ঠিক জানা নেই। সিঙ্গল স্ক্রিনরা যে ঝপাঝপ উঠে গেল, তার পিছনেও এর অবদান থাকতে পারে। সেটা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো অনুসন্ধান দেখলাম না। পরিচালক-প্রযোজক-শিল্পী যাঁরা জনেন, তাঁরাও মুখে কুলুপ এঁটে। উঠে যাওয়া সিঙ্গল স্ক্রিন নিয়ে কৌশিক গাঙ্গুলি একটা সিনেমা বানিয়েছিলেন, খানিকটা জলসাঘরের আদলে, তাতে কায়দা-টায়দা সব আছে, কিন্তু কারণটা কী বলা নেই। ঋত্বিকের দেশভাগের সিনেমাগুলোতে যেমন দেশভাগের কারণ ছাড়া আর সবকিছু আছে। 

    এই রেটের ব্যাপারটা অবশ্য জুন-মাসের পর বদলেছে বলেই শুনেছিলাম। এখন অন্তত পয়সার ব্যাপারে সমানে-সমানে প্রতিযোগিতা হবার কথা। হয়েছে কিন জানিনা। কিন্তু ডিসট্রিবিউশন? যারা হিন্দি বা হিন্দি-ডাবড ছবির ডিসট্রিবিউটর, তাদেরই হাতে প্রচুর মাল্টিপ্লেক্স, তারা বাংলা সিনেমাকে খামোখা জায়গা দেবেই বা কেন? আর উন্নতির চেষ্টাই বা করবে কেন? বাংলা সিনেমা থেকে ছুটকো লাভ হলে মন্দ না, উঠে গেলেও তো তাদের সমস্যা কিছু নেই। এরা তো বস্তুত বলিউডেরই এজেন্ট। গাঁটছড়া তো ওখানেই বাঁধা আছে। এইটা সব্বাই জানেন। সিনেমার কুশীলব যাঁরা। কিন্তু তাঁদেরও তো করেকম্মে খেতে হবে। এসভিএফই একটা কোটারি বানিয়ে রেখে দিয়েছে, তাঁরাই বাংলা-সিনেমার-পাশে-দাঁড়ান জাতীয় আহ্বান-টাহ্বান করেন, এবং সযত্নে এসভিএফকে বাঁচিয়ে চলেন। সরকারি দলের একটা স্নেহচ্ছায়াও এদের উপরে আছে আন্দাজ করা যায়।অবস্থা এমনই, যে সাংসদ দেবকেও নিজের সিনেমা রিলিজের জন্য লড়াই করতে হয়।  বিরোধীও তো কম না, কিন্তু তাঁদেরও টিকি ওই এক জায়গায়ই তো বাঁধা। এছাড়াও আনন্দবাজার না বলে দিলে তাঁরা কিছু করতেও পারেননা। ফলে এই নিয়ে কোনো আওয়াজ নেই। 

    সরকার এই চক্রটা ভাঙতে পারে। মহারাষ্ট্রে যেমন হয়েছে, হলে মারাঠি সিনেমাকে বাধ্যতামূলক করে। তাতে একচেটিয়া ভাঙত, অনেক ছোটো প্রযোজক-পরিচালক যোগ্যতার বিচারে আস্তে আস্তে বড় হতেন। কিন্তু ভাঙবেনা। বাধ্য করাও যাবেনা, কারণ, এই নিয়ে কোনো আওয়াজও উঠতে দেখিনা। মূলত খুব নিচুমানের জিনিসপত্র দিয়েই চলছে কোটারি। এই করে চলে ছুটকো খ্যাতি পাওয়া গেলে, সেটাই এঁদের কাছে অনেক। ফলে "স্বাধীন" জিনিসপত্র যাঁরা বানান, তাঁদেরই বলব, শিল্প-টিল্প পরে হবে, জনপ্রিয় জিনিসপত্র ধরুন। মেনস্ট্রিমই যদি উঠে যায় তো কীসের প্যারালাল।  
     
    সূত্রঃ

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • PRABIRJIT SARKAR | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:০৭540196
  • বেশির ভাগ বাঙালিরা  হিন্দি ফর্মুলা সিনেমা দেখতে খুব ভাল বাসে। একই ধাঁচের বাংলা সিনেমা দেখতে তারা আঁতেল হয়ে যায়। তাই চলে না। হলে/মাল্টিপ্লেক্সে বাধ্যতামূলক করা যেতেই পারে। ওরা ক্ষিপ্ত হবে।
  • পাপাঙ্গুল | 103.87.***.*** | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৫৬540205
  • একটা না চারটে বাংলা ছবি একসঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে [তার মধ্যে এসভিএফের নিজেরও একটা ছবি আছে] বলে হল নিয়ে মারামারি। আর হল আটকে রেখেছে হিন্দিতে ডাব করা তেলুগু ছবি পুষ্পা ২ , এখন হিন্দি ছবির রিলিজ নেই। 
     
    আগে জোয়ান পাঠানের সময় বাংলা ছবি নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল , সেটা সিরিয়াস ব্যাপার। এখন ওরকম কিছু হচ্ছে না। 
  • # | 2001:67c:2628:647:6::***:*** | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৪০540240
  • বাংলা সিনেমা দেখতে খুব ভয় করে মশায়। এই সেদিন ইউটিউবে দেকলুম বুনিপ ব্যোমকেশ সেজেছে। সে যা জিনিস মশায় তিন রাত্তির ঘুম হয়নি।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন