এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বাংলাদেশ 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ নভেম্বর ২০২৪ | ২৯ বার পঠিত
  • পশ্চিমবঙ্গে যখন বামফ্রন্ট সরকার সবে তৈরি হয়েছে, ইরানে তখন বিপ্লব হল। এর দশ-বারো বছর আগে বাংলায় যখন নকশালবাড়ি, ফ্রান্সে তখন চতুর্থ ফরাসি বিপ্লব। দুটোই ব্যর্থ হয়েছিল। ফলে ফরাসি বুদ্ধিজীবীরা ইরান দেখে লাফিয়ে উঠলেন। মিশেল ফুকো তখন মধ্যগগনে। ফরাসি বিপ্লবের সময় তিনি লিফলেট বিলিয়েছিলেন, আর এই সময় 'যৌনতার ইতিহাস' প্রথম খণ্ড বেরিয়ে গেছে। উৎসাহ পেয়ে জীবনে প্রথমবার ফুকো সাংবাদিকতা শুরু করলেন। সোজা চলে গেলেন ইরান, খোমেইনি সহ একগাদা সাক্ষাৎকার নিলেন। তারপর যে লেখাগুলো লিখলেন, সেগুলো আমি পড়িনি, কারণ ইংরিজি অনুবাদ নেই, কিন্তু তার সারাংশ হল, প্রথাগত ধ্যানধারণা শেষ, এবার ইরান বিপ্লবের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বলাবাহুল্য, খোমেইনি ঠিক তেমন গৌরী ছিলেন না। অচিরেই তিনি খাপ খুলে ফেললেন, এবং ফুকো নিঃসন্দেহে ভুল ছিলেন। ভুলটা বড় কথা না, কিন্তু ফুকো এরপর যেটা করলেন, সেটা অকল্পনীয়। নিজের ধারণাই আঁকড়ে ধরে থাকলেন অনেকদিন। যখন ইরানে সমকামীদের খতম করা হচ্ছে, তখন ফুকো বললেন, সমকামী বলে ওদের মারা হচ্ছেনা, অন্য দোষ ছিল। মেয়েদের উপর পর্দা চাপানো দেখে চুপ করে রইলেন। এইসব নানা কাণ্ড করার পর, যখন দেখা গেল, বিপ্লবের নামে অশ্বডিম্ব হয়েছে, তখন সবচেয়ে ক্ষতি হল ফুকোর। তিনি নিজের এতদিনের বিশ্বাসযোগ্যতাটা হারিয়ে ফেললেন। একই সঙ্গে গেল র‌্যাডিকাল চিন্তার উচ্চস্থানের মাহাত্ম। এরপর ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়ে রক্ষণশীলরা ঝপাঝপ ক্ষমতায় এলেন। অবশ্যই সেটা ফুকোর কারণে নয়, কিন্তু ইতিহাস ওইভাবেই গড়াল।
    এসব কথা কেন? কারণ এখন বাংলাদেশের এবং দুই বঙ্গেরই কারবার সেই ৭৮-৭৯ এর কথা মনে করায়। বাংলাদেশই ধরুন। বাংলাদেশে নাকি বিপ্লব হল। তাতে অনেকেই দু-হাত তুলে সংহতি ও অশ্রুজল জানিয়ে ফেললেন। আপত্তি করতে গালাগাল বিতরণও হল প্রচুর। তাতে কোনো সমস্যা নেই, মানুষমাত্রেই ভুল হয়, একদম গোড়ায় আমারও হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হল মৌলবাদীরা "মেটিকিউলাসলি প্ল্যান" করে কাণ্ডটা ঘটিয়েছে, এটা পরিষ্কার হয়ে যাবার পরেও, তাঁরা খড়কুটোর মতো সেই জায়গাই আঁকড়ে ধরে আছেন। জান যায় যাক, তবু বাংলাদেশের বিপ্লব আমারই বিপ্লব। অথচ এতদিনে না বোঝার কিছু নেই। অনেককিছু হয়েছে, গত কদিনের চট্টগ্রামের ঘটনাও দেখাচ্ছে ঘটনাপ্রবাহ কোনদিকে এগোচ্ছে। যা হয়েছে, সেটা গুজরাতের মতই। ওখানে ছিল গোধরা-মুসলমান মৌলবাদ এবং পাল্টা। এখানে উকিল খুন - হিন্দু মৌলবাদ এবং পাল্টা। কে কাকে মেরেছে, সেটা অবান্তর, কারণ সবাই জানে, এ অজুহাত মাত্র। পাল্টা দেওয়াটাই আসল। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসকন, সঙ্ঘ-পরিবার, সংগঠন বানিয়ে ফেলেছে, সেটাও অবান্তর, কারণ সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরুর মৌলবাদ কোত্থাও এক না। ভারতেও না বাংলাদেশেও না। সংখ্যালঘুদের পিছনে মোদীর মদৎ থাকলেও না, আবাপ সমর্থন করলেও না। এঁদের হিসেব আছে নিশ্চয়ই, কিন্তু তাতে করে সংখ্যালঘুর অবস্থাটা মিথ্যে হয়ে যায়না। অবান্তর কথাটা অবশ্য একদমই ঠিক হলনা, 'প্রগতিশীল' ন্যারেটিভ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুকে কখনও আশ্রয় দেয়নি, তাদের মধ্যে মৌলবাদের বিস্তার ঘটলে আঙুল তাদের দিকেই উঠবে, দায়টা সংখ্যালঘুর না, দায়টা তাঁদের। এবং এটা স্রেফ নির্দোষ দায় না নেওয়া নয়, পুরোটাই ঘটছে এমন সময়ে, যেটা একদিক থেকে গুজরাতের চেয়েও খারাপ হবার সম্ভাবনা, কারণ গুজরাতে অন্তত হিংসায় সেনাবাহিনী জড়িয়ে ছিলনা। এখানে শুনছি জড়িয়ে। এটা অবশ্য পুরো ঠিক নাও হতে পারে, সূত্রটা সমর্থিত নয়।
    তা, এই পরিস্থিতি মুখে কুলুপ এঁটে, বা কার্যত নিজের পুরোনো অবস্থানকে কোনোক্রমে সমর্থন করে যাবার একটাই পরিণতি আছে। ফুকোর যেটা হয়েছিল। অর্থাৎ বিশ্বাসযোগ্যতা জিনিসটার পরিসমাপ্তি। ফুকোর অবশ্য অন্যান্য কারণে গগনচুম্বী খ্যাতি ছিল। এখানে সেটা নেই, আর বিশ্বাসযোগ্যতা নানা কাণ্ডে ইতিমধ্যেই প্রায় ঋণাত্মক। নতুন করে হারাবার কিছু নেই। কিন্তু তার চেয়েও বড় ক্ষতি হল মৌলবাদের উত্থান। বাংলার দুই পারেই "আলোকিত" একাংশের কাজকর্ম প্রত্যক্ষ অথব পরোক্ষভাবে মৌলবাদের সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করা ছাড়া আর কিছু দেয়নি গত কিছু বছরে। সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা থেকে শত্রুনির্বাচন, সবই আপাদমস্তক ভুল, খুব দুঃখজনক, কিন্তু এটাই ঘটনা। সাংবাদিকতা এবং সূত্রের যা আগ্রাসী বিস্তার দেখলাম, তাতে এটা অনিচ্ছাকৃত কিনা বলাও মুশকিল, বিশ্বাসযোগ্যতা এতটাই নিচে।
    আমরা অবশ্য এই গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাইনি। গুরুর সাইটে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ থেকে টানা ধারাবিবরণী বেরিয়েছে। একদম গ্রাউন্ড জিরো থেকে। সেটা আমরা বইও করতে চলেছি। মৌলবাদ পরাস্ত হোক, হুজুগ নয় ফ্যাক্ট, বাতেলা নয় তথ্য, হোয়াটস্যাপ নয় ঘটনাস্থল, এটা আমরা এত আক্রমণেও রক্ষা করে চলেছি। এবং করব। একদম একা করতে হলেও করব। খুব সম্ভবত বাংলাদেশ নিয়ে একাধিক বই বেরোবে। যাঁরা সঙ্গে থাকতে চান থাকবেন।
    গুরুর বই প্রকাশের মডেলটা আপনারা জানেন। আমরা বইয়ের জন্য দত্তক অর্থাৎ অর্থসাহায্য নিয়ে থাকি। বইয়ে দাতার নাম থাকে (আপত্তি না থাকলে)। যদি কেউ দত্তকে আগ্রহী হন, তো মেসেজে কিংবা মেলে জানাবেন। মেল আইডি guruchandali@gmail.com । কেউ না চাইলেও কোনো সমস্যা নেই, তবে বইগুলো পড়বেন। যাঁরা লিখছেন, টানাই লিখছেন। এখনও লিখছেন, ঝুঁকি নিয়েই লিখছেন। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন