সেদিন প্রিয়া একান্ত অবসরে নিজেকে নিয়েই ভাবনায় ডুবে গিয়েছিলো, আসলে ওকে অবাক করছিলো ওর এইরকম অফুরান অবসর সময়েও ওর বিবাহিতা বান্ধবীদের কর্মব্যস্ততা। প্রতিটি মানুষ ভালো তখনই থাকে যখন তারা নিজেকে ভালো রাখে। কিন্তু ওর বান্ধবীরা তো নিজের কথাই ভাবার সময় পায় না, ভালো থাকার কথা তো দূর।
তখনই প্রিয়ার মনে পড়ে গেলো বহু পুরোনো দিনের কথা -
তখন ও সদ্য কলেজ শেষ করেছে আর সাথে সাথে একটি চাকরিও পেয়ে গেছে। তখন ওর অনেক স্বপ্ন দুচোখ জুড়ে নিজেকে নিয়ে, জীবনকে নিয়ে ইত্যাদি। বাড়ি ফেরার পথে ও লক্ষ্য করে দেখেছে বিশেষ কেউ একজন যেন ওর প্রতীক্ষায় থাকে, ওর ফেরার অপেক্ষা করে।এই কথাটা মনে হলে ওর মনটা এক অদ্ভূত ভালো লাগায় ভরে ওঠে!
এরকমই একদিন অফিস ফেরৎ বাসে ওর সামনে এক বয়স্কা ভদ্রমহিলা এসে দাঁড়ালে, প্রিয়া উঠে ওনাকে বসতে জায়গা ছেড়ে দেয় আর তারপর দু - এক কথায় গল্পের শুরু। ওর সবকথা শোনার পরে, ভদ্রমহিলা নাবার আগে ওকে বলেন, " আজ তোমাকে দেখে আমার নিজের মেয়ের কথা মনে হলো, ও বিয়ে করতে চায়নি। আমাদের মন রাখতে বিয়ে করলো, কিন্তু আমি বুঝি সব থেকেও ও ভালো নেই, তাই জীবনটাকে বুঝে খরচ করো। " এই বলে উনি নেবে গেলেন।
সেদিন প্রিয়া অনেক ভেবেছিলো, ওর বিয়ে করা বান্ধবীদের জীবন দেখেছিলো - ওদের ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই, নিজস্ব কোন পরিচিতি নেই, ভালোবাসাও সংসারের যাঁতাকলে চাপা পড়ে কোথায় হারিয়ে গেছে, এখন শুধুই রোবট বা দম দেওয়া পুতুলের মত সংসার ঠেলে যাচ্ছে।
কয়েকদিন পর বৃষ্টিভেজা এক রাতে, প্রিয়ার অফিস থেকে ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিলো। প্রিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে দেখলো চারিদিক ফাঁকা ও নিস্তব্ধ, শুধু দূরে ছাতা মাথায় একটি চেনা মুখ। ওকে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে
পাশে এসে বললো, " রাস্তাটা একদম ফাঁকা, যদি একটু এগিয়ে দি তাহলে আপত্তি হবে কি? এটা আমার শান্তির জন্য। " প্রিয়া বললো, " আপত্তি কেন হবে? যে ভালোবাসে সে কখনও ভালোবাসার মানুষের ক্ষতি চায় না। এটা আমি জানি, উপল। তাই এই ভালোবাসাটাই সম্পদ হয়ে থাক আমাদের জীবনে, কোন চাওয়া - পাওয়া নয় - শুধুই ভালোবাসা। " উপল এক গভীর দৃষ্টিতে ওর চোখে চোখ রেখে বললো, " ঠিক বলেছো তুমি "। সেদিন উপল বাড়ি অবধি পৌঁছে দিয়ে চলে যাবার পরে প্রিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ও বিয়ে করবে না।
হঠাৎ ও ওর ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো, সন্ধ্যে হয়ে গেছে। বেরোনোর জন্য ড্রেস পড়ে নিলো, তারপর হাঁটতে হাঁটতে প্রিয়া বাসস্ট্যান্ডের সামনে এসে দাঁড়ালো, দেখলো চেনা একজোড়া চোখও ওকে দেখে হাসলো, তারপর সেও রওয়ানা দিল তার গন্তব্যে। প্রিয়াও হেসে বাড়ির পথে ফিরতে ফিরতে ভাবতে লাগলো উপলটার চেহারায় বয়সের চাপ পড়লেও হাসিটা সেই আগের মত আছে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।