এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্মরণে তারাপদ

    Jahar Kanungo লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ অক্টোবর ২০২৪ | ৩০৫ বার পঠিত
  • (স্মরণে তারাপদ  .......)
     
    ছেলেটার বয়স আন্দাজ করা কঠিন। একটু মোটাসোটা।  হয়তো সবে কৈশোর অতিক্রম করেছে। হয়তো একটু বেশীই বা। ঘাটশিলা থেকেই তো উঠছিল মা বাবা আত্মীয় স্বজন নিয়ে। বড় দল। পাশের কামরাতেই সবাই। খরগপুরে  জানালার ধারের সিটটা খালি হতেই আমার পাশে এসে  বসেছে।  অনেক্ষন কথাবার্তা বলার লোক না পেয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। বললো কলকাতায় যাচ্ছে। 
    ফিরছো না যাচ্ছ? 
    তার মানে?  না না। যাচ্ছি, যাচ্ছি। হাসলো ফিক করে। আপনি খুব মজা করে কথা বলেন। দরজার দিকে তাকালো। ভারি গোঁপ ওয়ালা মোটা করে লোকটা দরজায় দাঁড়িয়ে ধুম্র পান করছে। ছেলেটা লাজুক হেসে বললো, “বাবা”।   
    চার পুরুষ ধরে ঘাটশিলার বাঙালি। নাম বললো  তারা পীট রায়। এ ধরনের নাম কখনো শুনিনি। হয়তো মন্দিরে মানস ছিল।   
    একচুএলি, আমার নাম তারাপদ রায়।  
    আমি একটু অবাক হলাম।  
    নামটাতে তো অসুবিধা ছিল না। তবে, আমার চেহারাটা একটু গোলগাল হওয়াতে, আর স্যার, আমার গলাটাও ছিল মেঘের ডাকের মত। বন্ধুরা ক্ষেপাতে আরম্ভ করলো।  বাবা ‘তারা’ আর ‘পদ’ কে আলাদা আলাদা করে দিলেন। তারা পি রায়। তাতেও রেহাই ছিল না। তারপর ধুর শালা বলে হাইয়ার সেকান্ডারির ফর্ম ভরবার সময় তারা পীঠ করে নিলাম। 
    পড়েছো ওনাকে? 
    ‘হ্যাঁ স্যার। খুব গুল মারতে পারেন’।  তারপর একটু চুপ থেকে নিজের মনেই বললো যেন, ‘ভালো’।
    ভালো অর্থে ?
    আবার লাজুক হাসলো। ‘মিথ্যে কথা বলার চেয়ে গুল মারা ভালো’। 
    মানে? 
    সত্যি কথাতে সাহিত্য হয় নাকি স্যার?  
    ওরে বাবা, এ তো ! আর কথা বাড়ালাম না। বাবা ধুম্রপান শেষ করে এদিকে এগিয়ে এলেন। আড়চোখে আমাকে জরীপ করে নিলেন, বুঝতে পারছি। হয়তো সিদ্ধান্ত নিলেন যে ছেলে ভালো সঙ্গে রয়েছে। এটা অনেকেই বলেছে আমার চেহারায় নাকি একটা রেস্পেক্টেবেল অবসরপ্রাপ্ত ব্যাক্তিত্তের প্রকাশ পায়। বাবা চলে গেলেন পাশের কামরায়।  তারা পীঠ এবার নিজেকে একটু ছড়িয়ে যুত হয়ে বসলো। খড়গপুর  পেরিয়ে গেছি বেশ খানিকক্ষণ হলো। সামনে বোধহয়য় পাশকুরা। এককালে পাশকুরা চপের জন্য এই স্টেসানটি বিখ্যাত ছিল।  এখন নাকি আগে পিছের স্টেসান গুলিতেও পাশকুরা চপ বিক্রি হয়।  তারা পীঠ বললো, পাশকুরা চপের মালিক নাকি কেস ঠুকেছিল । কিছু হয় নি।  পেটেন্ট নিতে পারেনিতো!
    ভাবলাম, ছেলেটি খবর রাখে। শুধু চেহেরা দিয়ে বিচার করলে ভুল করা হবে।
    তবে স্যার, ইতিমধ্যে, মানে ধরুন গত তিন চারবছরের মধ্যে আগে পিছের স্টেসান গুলির চপের নাম বদলে দিয়েছে ওরা। আদি পাশকুরা চপ, ওরিজিনেল পাশকুরার চপ, অনাদির পাশকুরার চপ ...  
    এক মিনিট। অনাদির মানে?  
    মানে বলরামপুর স্টেসানের  অনাদি জানা। সম্পর্কে পাশকুরার চপল সামন্তের ভাগ্নিজামাই হয়।
    চপল সামন্ত মানে?
    বিধু সামন্ত যিনি পাশকুরা চপের প্রতিষ্ঠাতা, তালে গোলে চপল হয়ে গেলেন আরকি।
    তাই? 
    তাই হবে স্যার। লজিকেল। 
    কথা বলে ভালো। তবে গুল মারে। ফাজিল। একটু গম্ভীর হয়ে টাটা স্টেসান থেকে কেনা সাপ্তাহিকটি তুলে নিয়ে পাতা ওলটাতে লাগলাম। অচ্ছে দিন আ গয়ে হে ......। সরকার বলছে। যত সব চালবাজি। সবাই গুল খায়।  তবে এই ছেলেটারইবা দোষ কি? চপওয়ালা হলো চপল। বিধুবাবু বউ হলে হয়ে যেতেন চপলা। তাকালাম ওর দিকে। সে যেন অপেক্ষা করেই ছিল।     
    স্যার, আপনি কি রাইটার?
    ভালো লাগলো কথাটা শুনে। রাইটারের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাপারটা থাকে না।   
    না রে ভাই।  লিখি না। দেখি। শুনি। 
    না স্যার, আপনার চেহারার মধ্যে ...
    যেতে দাও ভাই ওসব কথা।  কলকাতায় কেন যাচ্ছ জানতে পারি কি? কোন পারিবারিক উৎসব!
    ছেলেটা একটু যেন লজ্জা পেল। মাথাটা একটু হেঁট।
    একচুএলি স্যার, ঠিক কলকাতা নয়, আমরা যাচ্ছি রামরাজতলায়। হাওড়ার একটু আগেই। সাঁতরাগাছির কাছাকাছি।  
    একটু চুপ হয়ে গেল ছেলেটি। হয়তো বা নিজের বিয়ে। লক্ষ্য করলাম ওর ডান হাতের কব্জিতে কমলা রঙের সুতোগুলি।
    একচুএলি, বিয়ে স্যার। আমার বিয়ে। 
    বুঝতে পেরেছি, তোমার মনের টগবগে ভাব দেখে। 
    হাসলো। স্যার, আপনি নিশ্চয় লেখক।
    আরে না না ! 
    তাহলে বলুন স্যার, টগবগে কেন বললেন? 
    ঐ যে ... মানে ...ঐ আর কি! তোমার মনের মধ্যে যে চাপা খুশি ... ফুটছে আরকি, যেমন ডিমের ডালনা –  টগবগ টগবগ। 
    বলেই একটু আড়ষ্ট হলাম। উপমাটা ইম্প্রেসস করলো না বোধহয়!  
    স্যার, ঠিক ধরেছিলাম। আপনি লেখক।
    আরে না না ...
    স্যার, আমি বলছি স্যার। আপনার মধ্যে লেখকের মন। না বলবেন না স্যার।
    সন্দেহ হলো ছেলেটা আমায় নিয়ে মজা করছে না তো? 
    স্যার, সত্যি কথা বলি? আমি যাচ্ছি আমার স্ত্রিকে বিয়ে করতে। 
    ঠিক শুনলাম তো? বয়স ২০ হয়নি, এই পাকাটা বলে কিনা যাচ্ছে নিজের স্ত্রীকে বিয়ে করতে।
    ঠিকই শুনেছেন স্যার। অবাক লাগছে তো? তাহলে বলি স্যার।  আফটারঅল, আপনি লেখক। পৃথিবীর বিচিত্র যত ঘটনা নিয়ে আপনাদের কারবার। আমার ঠাকুরদা স্বর্গীয় ইন্দ্রনাথ রায় খুব অল্প বয়সেই মাকে হারান। কতই বা বয়স হয়েছিল! উনিশ কি বিশ!  দুঃখী ছেলে। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। তারপর একদিন না বলে না কয়ে  পরেশনাথের দিকে চলে গেলেন। ঠাকুর দেবতার প্রতি খুব যে আগ্রহ ছিল তা নয়।  খুব ছোটবেলায় একবার এসেছিলেন বাবার সঙ্গে  পরেশনাথ মন্দিরে। তখন থেকেই নিজের অলক্ষ্যেই পরেশনাথের পাহার জঙ্গল উনার ছোট্ট মনটার মধ্য বসে গেছিল আরকি! 
    আমার ঠাকুরদা বিশ্বাস করতেন, সমস্ত ভাবনা চিন্তা ঘটনার পিছনে কোন না কোন কারন রয়েছে। ঐ যে মনে হলো  পরেশনাথের কথা, নিশ্চয় এর পিছনে কোনো ইঙ্গিত আছে। তিন চার দিন এদিক ওদিক করেই কেটে গেল। না স্যার, এদিক ওদিক বলাটা হয় তো ঠিক হয় নি। উনি বসে বসে দেখতেন চারপাশে। হয়তো স্যার, একটা চিল উড়ল তো উনার চোখ ধাওয়া করতো চিলটিকে। বাঁদিক দিয়ে আকাশে চক্কর মারলো, না ডান দিক দিয়ে!  হয়তো একটা বন্য শূয়র চলে  গেল ঘোঁত ঘোঁত করতে, উনি লক্ষ্য করতেন যাওয়ার সময় একবার উনার দিকে পিছন ফিরে তাকিয়েছিল কি?  তাকালে হয়তো উনি তার পিছন পিছন যেতেন। ঠাকুরদা হলেও বয়সতো অল্প ছিল স্যার।  মোটকথা, ইঙ্গিত।  ইঙ্গিত খুজতেন।   সন্ধ্যায়, স্টেসানের পাশে চায়ের দোকানটি তে রাতের ডাল রুটি  খেয়ে নিতেন । চাওয়ালা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতো। রাতের মত দোকানটা সঁপে যেত এক সাধুর কাছে। মাঝ রাতে একটা এক্সপ্রেস না কি একটা থামতো। যদি কারো চা টা লাগে আর কি!  কিম্বা কেউ হয়তো দোকানে রাতটাই কাটাতে চাইলো। ও হ্যাঁ স্যার, বলা হয়নি, সাধু বললাম, কিন্তু সেই  অর্থে সাধু ছিলেন না। জটা জুটি ছাড়া, যেমন মানুষ দেখতে হয় সেরকম আরকি! তবে মুখে সবসময় হাসিটি লেগেই থাকতো। হ্যাঁ, তো স্যার, ঠাকুরদা যেদিন  ফিরবেন, ভোরের ট্রেন ছিল তো, তাই আগের রাত সেই দোকানেই কাটালেন। 
    থামল এক মুহূর্তের জন্য ছেলেটা।   
    স্যার, বোর হচ্ছেন বুঝতে পারছি। আমি ঠিক আপনাদের মত লেখক নয় তো স্যার।  ছোটবেলা থেকেই পড়ে পড়ে যে অভ্যাস রপ্ত করেছি, ছাড়া মুস্কিল। মানে,  সবকিছু বুঝিয়ে বলতে হয় আর কি ! মোদ্দা কথায় আসি।  পুনঃজন্মে বিশ্বাস করেন তো স্যার। সাধু বললেন মৃত্যুর পর আত্না  আকাশে  বিরাজ করে। কিন্তু সারা আকাশে নয় স্যার।  এটা ভাববার কথা। যেমন ধরুন পাখি। রোজ দেখা পাখি। কাক, চড়ুই, ময়না, টিয়া এরা। ঐ আকাশেও ওদের কিন্তু একটা সীমানা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।  মানে, প্রত্যেকের এক একটা পাড়া রয়েছে। ওর বাইরে যায় না। চিল হয়তো আরো উঁচুতে ওড়ে। কিন্তু ইচ্ছে হলেই সে বেপাড়ায় যেতে পারবে ?  মানে, খরগপুরের চিল যাক দেখি সে পাশকুরায়! আক্ষরিক অর্থে সে কি পারে না?  পারে। তবে অসুবিধা আছে স্যার।  পলিটিক্সের ব্যাপার। আর আপনি যদি উদাহরণ টানেন সারস ইত্যাদির  যারা দেশ বিদেশ ঘুরছে ইচ্ছেমত, কিন্তু স্যার, ওরা বেদুইনের জাত। মোট কথা, আত্না ... বলতে বলতে একটা  স্টেসানে ট্রেনটা থামল। ফেরিওয়ালা, চপ ওয়ালা, সিদ্ধ ডিম ওয়ালা, চউমিন ওয়ালা, ওয়ালা ওয়ালাদের কলরবে লোকে নামলো উঠলো।  দু চার মিনিটের মধ্যেই ট্রেন ছাড়ল। 
    পাশকুরা স্টেসান স্যার। দেখলে কি বোঝার উপায় আছে?  
    তারা পীঠের বাবা এলেন দু ঠোঙ্গা মুড়ি আর চপ নিয়ে। আমাদের দুজনের জন্যই ।  কৃতজ্ঞ চিত্রে গ্রহন  করলাম।    
    আমার বাবা স্যার।  বাবা, ইনি একজন বিখ্যাত লেখক।    
    নাম জানে না ধাম জানেনা, বলে কিনা বিখ্যাত লেখক। ডেঞ্জারেস। আমি বেশ অপ্রস্তুত। বাবা একটু ঝুঁকে নমস্কার করে চলে গেলেন। আমিও একটু গম্ভীর হয়ে জানালার দিকে মুখ ফেরালাম। ইতিমধ্যে ট্রেনটিও নিজের গতি আর ছন্দ ফিরে পেয়ে যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে।  শীতের রোদ মাথায় নিয়ে ছোটার আনন্দে ছুটছে। মাঝের স্টেসানটির পরেই মেচেদা। হয়তো থামবে। তারপর লম্বা  দৌড় হাওড়া পর্যন্ত।  ছেলেটা কোথায় যেন শেষ করলো... বেদুইন।
    আত্নার কথা বলছিলাম স্যার। সাধু বললেন, মৃত্যুর পর আত্না আকাশে আশ্রয় নেয়। কাছাকাছিই। ধরুন, যেখানটিতে দেহ ত্যাগ করলো তার প্রায় ১০৮ বর্গ মাইলের মধ্যে।  মরুভুমি টুমি হলে বেড়ে  যায়। রেয়ার  কেস।  
    ১০৮ বর্গমাইল? 
    হ্যা স্যার।
    সাধু বলেছে?  
    স্বয়ং ব্রম্মা। ৯। ৯ দুনি ১৮ মানে একে আর আটে মিলে হল ৯। ৯ বারো ১০৮ মানে  একে আর আটে মিলে হল ৯। ছাড়ুন তো স্যার, সাধু কি  অত বলে? ইঙ্গিত প্রদান করেছিলেন মাত্র।  সর্ব জায়গায় সর্বক্ষণে মহাকাল নানা কিছুর মাধ্যমে ইশারা করে চলেছেন।  ধরতে হয় স্যার।  তাহলেই দেখবেন, সবকিছু কত সহজ সরল।  মানুষের জন্ম, মৃত্যু, সংসার, বারধক্য রহস্যের বেড়াজালের বাইরে নিয়ন লাইটের মত জ্বল জ্বল করছে।  
    ছেলেটা মহা পাকা।  ওর মোটা চেহারার সারল্য একটা ফাসাড মাত্র।  
    হ্যাঁ স্যার, তারপর আমার ঠাকুরদা পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘ এক বছর ধরে অনুসন্ধান করলেন।  আমার গ্রেট ঠাকুরমা মারা যান নরঘাটে, উনার বাপের বাড়িতে। দুদিনের জর। ১০৭, ১০৮ টেম্পারেচার। বড় কষ্ট পেয়েছিল। আমার ঠাকুরদা নাকি উনার বড় নেওটা ছিল, তাই দিন রাত খাওয়া দাওয়া ছেড়ে ... । থেমে গেল হটাত তারাপীঠ।  
    সরি স্যার, আমি একটু আবার, আবেগপ্রবণ।  জানি, কোনোদিন ভালো লেখক হতে পারবনা। সংক্ষেপে বলি।  ২রা জুলাই ১৯৬৫ সালে বিকেল ৫টা ৫০এ আমার গ্রেট ঠাকুরমার মৃত্যু ঘটে।  স্থান নরঘাট। আপনি যদি নন্দকুমার হয়ে দিঘা যেতে ইচ্ছে করেন ...! সরি স্যার, আবার অন্য কথায় চলে যাচ্ছি।   তারপর ঠাকুরদা কি করলেন,  ঠিক নরঘাটকে কেন্দ্র করে ১০৮ বর্গ মাইলের একটা  বৃত্ত  আঁকলেন । ঐ বৃত্তে যত গ্রাম বা লোকালয় ছিল , সর্বত্র খোঁজ খবর চালিয়ে – বলতে গেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খবর সংগ্রহ করলেন। অনেক মাস লেগেছিল স্যার।  দেখলেন, ঐ বৃত্তে ২রা জুলাই থেকে ৩০এ জুলাই এর মধ্যে ৪ জন শিশু ভূমিষ্ঠ হয়। ২টি কন্যা সন্তান। ২ টি পুত্র সন্তান। ঐ দুটি কন্যা সন্তানের একজন জন্ম গ্রহন করে ২রা জুলাই রাত ৭টা ১৬ তে দেউলি তে।।  দ্বিতীয় জনের জন্ম নন্দকুমারে, ১৫ই জুলাই রাত ১০টা ২০তে। এবার প্রস্ন হল কোনটি আমার গ্রেট ঠাকুরমা।    
    অর্থাত ? 
    স্যার, গ্রেট ঠাকুরমার আত্না যে একলাই আকাশে বিচরণ করবেন তার তো গ্যারান্টি ছিল না। উনার আগে পরেও তো ... 
    হ্যাঁ, হ্যাঁ, বুঝেছি।  
    ছেলেটি এবার একটু থামল।  বোধহয় আমাকে একটু দম ফেলতে দিল।  মেচেদায় গাড়ি ইন করছে। 
    ডাব খাবেন স্যার? তবে এদিককার ডাবে মিষ্টি কম। 
    ছেলেটি দরজার দিকে এগিয়ে গেল। সত্যি বলতে কি, আমি পুরোপুরি মুঝ্যামান হয়ে পরেছিলাম।  ফিরে এল ফ্রুটির দুটো প্যাকেট নিয়ে। “স্যার, এদিককার ডাবে ...” আমি ততক্ষনে চোঁ চোঁ করে পুরো পদারথটি গলাধঃকরণ করলাম। তারপর অনেক্ষন ঝিম মেরে বসেছিলাম। বেশ  কয়েকটি স্টেশন পেরিয়ে গেল। উল্টো দিক থেকে হয়তো কয়েকটি ট্রেনও বেরিয়ে গেল।  ঘটর ঘটাং ঘটর ঘটাং করে কোলাঘাট  ব্রিজটি অতিক্রম  করাকালিন বোধহয় আমি সম্বিত ফিরে  পেলাম। ছেলেটি একদৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। 
    হাওড়া পৌঁছতে দেরী নেই স্যার।  শেষ করি?
    তারপর তার ঠাকুরদা নাকি আবার মাস খানেক ধরে খোঁজ খবর নিলেন যে ২রা জুলাই বা ঠিক তার আগে, মানে, তার  ঠাকুরমার মৃত্যুর ঠিক আগে অন্য কোন মহিলার মৃত্যু ঘটেছিল কিনা।  
    ওটা স্যার একটু ট্রিকি ছিল। কারন অন্য মহিলার মৃত্যুটা নরঘাটে না হয়ে পাশের গ্রামে বা ধরুন এগ্রাতে বা দিঘায় হলো। মানে, ধরুন আমার গ্রেট ঠাকুরমার মৃত্যুস্থান্তটিকে যদি বৃত্তের মধ্যস্থল ধরা হয়, এবং তাঁর মৃত্যুর ঠিক আগে বা পরে অন্য কোন এক মহিলার মৃত্যু ঘটল ঐ বৃত্তেই, কিন্তু মধ্যস্থল থেকে একটু দূরে ...  বুঝতে  পারছেন তো স্যার কি বলতে  চাইছি?  তাই ঠাকুরদা বৃত্তের পরিধিটাকে আরো বাড়ালেন। গোপালপুরে এক মহিলার মৃত্যু ঘটে ২৯ এ জুন সন্ধ্যা বেলায়, তার মানে আমার গ্রেট ঠাকুরমার মৃত্যুর তিন দিন আগে।  সাপে  কামড়েছিল।  তার মানে ঐ গোপালপুরের মহিলাটিই দেউলির কন্যা সন্তানটি হয়ে জন্মালেন। 
    এক মিনিট, অত তাড়াহুড়ো করো না। মানে বলতে চাইছ তোমার গ্রেট ঠাকুরমার মৃত্যুর আগে মানে ২রা জুলাই রাত ৭টা ১৬  তে যে মহিলাটি মারা যান, তিনি দেউলিতে ......। বেশ। তারপর।
    আর, আমার গ্রেট ঠাকুরমা ... 
    একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখেছেন স্যার? মেয়েদের জন্ম মৃত্যু বেশীর ভাগই সন্ধ্যে বা রাতের দিকে। এটাকি নামের জন্য ঘটে, নাকি ঘটে বলেই ওদের ওইরকম নাম? ওই যে, রাত্রি, সন্ধ্যা, পূর্ণিমা, জ্যোস্না, মালতি। মালতি মানে সন্ধ্যাইতো হলো স্যার। সন্ধ্যা মালতি! তারপর ধরুন, নিশা,  যামিনী, তারা, রজনী এরকম আরো অনেক আছে স্যার।  আপনি তো লেখক মানুষ, আপনি তো ... 
    আমি ধমক দিয়ে উঠলাম। দেখ ছোকরা গল্প বলছ বল, গল্প নিয়ে এদিক ওদিক অত ছোটাছুটি করছ কেন? সন্ধ্যা, মালতি... এগুলো আসে কোত্থেকে? বড় বিভ্রান্তিকর। 
    সরি স্যার, মুল ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসছি আমরা। তবে বিশ্বাস করুন গল্প নয়। সবই ঘটনা।  ব্যাস, তারপরেই ব্যাপারটা সোজা হয়ে গেল। তার মানে, ওই দ্বিতীয় কন্যা সন্তানটিই অর্থাত নন্দকুমারে যিনি ভূমিষ্ঠ হলেন তিনিই হলেন আমার গ্রেট ঠাকুরমা।   
    ওঃ! 
    না স্যার, ঘটনাটা আরো একটু গড়িয়েছিল । ভগবান বোধহয় আমার ঠাকুরদার টেনাসিটির পরীক্ষা  নিচ্ছিল। আমার গ্রেট ঠাকুরমা জন্মেই মারা যান।  ১৫ই জুলাইএর রাতেই। 
    মানে নন্দকুমারের শিশুটি? 
    হ্যাঁ স্যার। মন ভেঙ্গে গেছিল আমার ঠাকুরদার। হাজার হলেও মা ছিল তো! যাই হোক,  আবার অনুসন্ধান। তমলুক, গোপালপুর, মহিসাদল, লক্ষিকান্তপুর, এগ্রা, নরঘাট কোথায় কোথায় না যাননি। অবশেষে  সন্ধান পেলেন আমার গ্রেট ঠাকুরমার। নামালক্ষ্যা গ্রামের এক গরীব কৃষক পরিবারে তিনি আলোমা হয়ে সবাইএর চোখের মনি হয়ে রয়েছেন। কতই বা বয়স তখন? দু মাস? আলোমাকে দেখে ঠাকুরদার চোখে জল এসে গেছিল।   
    ভাগ্যের কথা স্যার, এরকম একটি আত্নার কারো বাড়িতে পদার্পণ। ভেবে দেখুন, বিগত জন্মের লোভ, মোহ, কামনার আঁচরটিও কাটতে পারেনি মনে। ১৫ই জুলাই ভূমিষ্ঠ হয়েই মারা গেলেন, এবং জন্মালেন ২০এ জুলাই নামালক্ষ্যায়।   
    মানে?
    শাস্ত্রে তো বলেছেই, ‘পঞ্চাশোরধে বনে যাবে’। সংসারে যত বেশী দিন থাকবেন, মোহে পরে যাবেন। তাই তো বনে যাওয়া। মনটাকে ঝরঝরে করে আবার একটা নতুন জীবন আরম্ভ করা। যক্ষের মত ধন আগলে রাখবেন, যক্ষই তো হবেন। শেষ বয়েস অব্দি মেয়ে মানুষের জন্য আপনার মন ছোঁকছোঁক করবে, তখন আপনার লোভী আত্নাটা কি আর সংসার ত্যাগ করতে চাইবে? তখন বাড়ির কাছাকাছি শেওড়া গাছ খোঁজা ছাড়া আত্নাটার আর কি গতি হতে পারে বলুন?  যেতে দিন স্যার এসব কথা।   
    না না, আমি ভাবছি নামটার কথা।  আলোমা । 
    স্যার, আপনাকে  দেখেই মনে হয়েছিল, আপনাকে সব কথা বলা যায়। তাই আমি ... না স্যার, আমাকে বলতে দিন। একটা  বাচ্চা কাঁদছে দেখলে আমরা কি বুঝি না যে সে কষ্ট পাচ্ছে? কাউকে হাসতে দেখলে যেমন বুঝি ...মানে, ঠিক তেমনিই আপনাকে দেখে ...
    ভাই তারাপীঠ, এই সবে আমাদের আলাপ। আমার নামটাও তোমাকে বলি নি এখন পর্যন্ত।
    কোন দরকার নেই স্যার।  আপনি সত্যিকারের লেখক। আপনার মন উদার। আমি দেখেই আপনাকে চিনতে পেরেছি।  আমার গ্রেট ঠাকুরমা মুসলিম পরিবারে আলিমা হয়ে জন্মালেন। এখন উনার নাম আলো।  আলোমা। আমার মা স্যার। পাশের কামরাতেই রয়েছেন।   
    মানে? 
    আমার ঠাকুরদা আমার বাবাকে বিয়ে দিলেন ঐ আলোর সাথে।
    আমি বাকশক্তিহীন। বাইরে সন্ধ্যা নেমেছে। প্রচণ্ড শব্দে একটা স্টেসান পেরিয়ে গেল। বোধহয় উলবেড়িয়া।  দু এক করে যাত্রীরা জিনিষপত্র দরজার কাছে জড় করছে। হাওড়া পৌঁছতে খুব একটা দেরি নেই।   
    ঠাকুরদার একটাই সর্ত ছিল। মেয়ের পরিবার যেন আলোমাকে গ্রহন করে নিজেদের মেয়ের মত করে মানুষ করে।    
    কোন মেয়ের পরিবার?
    ঠাকুরমার পরিবার স্যার। কোন চাহিদা ছিল না, কিন্তু আলোমাকে যেন নিজেদের বাড়ির মেয়ের মত মানুষ করে। ওটাই একমাত্র দাবী ছিল বলতে পারেন।  
    ওর ঠাকুরদার বিয়ে হয় ১৯৬৫ এর অক্টোবর মাসে মহেশপুরের  মাইতি পরিবারের মেজ  মেয়েটির সঙ্গে।  এক মেয়ের বিদায়, আরএক মেয়ের আগমন। আলিমা আলো হয়ে মাইতি পরিবারে এলেন। 
    ছেলেটি একটু থামল।  নিজের মনে একটু হাসল।  
    আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জেগেছে যে কি করে নামালক্ষ্যার পরিবার আলিমাকে ছাড়তে রাজী হল। স্যার, ওটা হল ডিটেইলসের ব্যাপার।   ট্র্যান্সফারের ব্যাপারটা হয়ে গেছিল স্যার।   
    আমার বাবার শ্বশুর মানে আমার দাদু আরকি, বড় আধুনিক মনের লোক ছিলেন স্যার। ১৯৪৫এ যখন  গান্ধীজী মেদিনীপুরে এলেন  আমার দাদু নিজের বাড়ির ছাগল নিয়ে এসেছিলেন স্যার, গান্ধীজীর সকাল বেলার দুধের সাপ্লাইয়ের জন্য। নিজের হাতে দুইয়ে দিতেন।  
    ভগবানের চমৎকার   মানেন তো? চিন্তা  করুন স্যার, ওই অক্টোবরে ঠাকুরমার পেটে বাবা না এসে   পিসিও তো আসতে পারতো?  
    মানে? এই শোন, অত লাফিয়ে লাফিয়ে চলো না তো। বুঝিয়ে বল।  পিসি মানে? 
    সরি স্যার। মানে, ঠাকুরদা চেয়েছিলেন তাঁর প্রথম সন্তান টি যেন পুত্রই হয়। 
    একটু থামল ছেলেটি। সত্যি বলতে কি, আমিও যে একটু অপ্রতিভ হয় নি তা নয়। ও হয়তো নিছক একটা হিউমার আনতে চেহেছিল।
    না ভাই, বল।
    ম্রিদু হাসল। সরল হাসি।
    স্যার, আমার বাবা জন্মগ্রহণ করলেন ১৯৬৬ এর সেপ্টেম্বর মাসে।  
    ১৯৮৬ সালের মে মাসে বাবা বিয়ে করে ঘরে আনলেন মহেশপুরের মাইতি পরিবারের  সন্তান অর্থাত ২১ বর্ষীয়া আলো, মানে আমার গ্রেট ঠাকুরমাকে। বয়সে এক বছরের মত ব্যাবধান ছিল। কিছুই  করার ছিল না।      
    ছেলেটি এবার একটু চুপ হলো। আমাকে বোধহয় একটু সময় দিল। আন্দুল পেরিয়ে গেছি। তার মানে  কিছুক্ষনের মধ্যেই হাওড়া। কিন্তু ও যে বললো নিজের স্ত্রীকে বিয়ে করতে  যাচ্ছে ! আমার মনে হয় আর কথা না বাড়ানোই ভালো। কিন্তু সেটা কি করে হয়? সিট ছেড়ে যে অন্য কোন খানে যাব – না, ওটা খারাপ দেখায়। ফেস করাই ভালো। 
    স্যার, আমার মৃত্যু ঘটে ১৯৮৮ সালের ২২এ নভেম্বরে।  
    হোয়াট? 
    ঘাটশিলাতেই। স্বাভাবিক মৃত্যু। জন্ম ২৪এ নভেম্বর ১৯৮৮।  ।  
    এক মিনিট, তারাপীঠ। এক মিনিট ভাববার সময় দাও।  তোমার ... মানে ...ওঃ, তোমার আগের জন্মের তোমার মৃত্যু। এটা তুমি কি করে জানলে? ওঃ, তোমার বাবা! 
    হ্যাঁ স্যার।  বাবা এর চেয়ে বেশি কিছু  বলেননি। তবে নাকি খুব সময় লেগেছিল খোঁজখবর করতে। ব্যাক কেল্কুলেসানের ব্যাপার ছিল।  আমার মৃত্যুর দু বছর পরেই আমার স্ত্রী দেহ রাখেন শিবপুরের সরকারি হাসপাতালে । আমার স্ত্রী জন্মগ্রহন করেন রামরাজতলার কনক বিহারি জানার বাড়িতে।  আমার স্ত্রীর নাম চঞ্চলা জানা। 
    তার মানে আপনি আপনার স্ত্রীকে ...।
    হ্যাঁ স্যার।   
    আপনার পুরো নামটা কি যেন বললেন? 
    আমায় বলছেন স্যার?
    হ্যাঁ, আপনাকেই ।
    আপনি আপনি করে বলছেন কেন স্যার?
    না ভাই, তুমি বলতে বাধে। 
    বলেছি তো স্যার, তারা পীঠ  রায়।  
    আপনার বাবা কি করেন?
    বিশেষ কিছু না স্যার। কিছু জমি জমা আছে। একটু আধটু সাহিত্য চর্চা করেন। তারাপদ বাবু ওনার বিশেষ প্রিয় লেখক।  আর পরিবারের রুটস খুঁজে বেড়ান। 
    রামরাজতলা পাস করলো স্যার।  সামনের দুটো স্টেসান পরেই হাওড়া।  ঘাটশিলা এলে আসবেন স্যার।  দুই রায় পরিবার আছে ওখানে।  বলবেন ভরা বাদল রায়ের বাড়ি।
    ভরা বাদল!
    হ্যাঁ স্যার, ভি বি রায়। ভরা বাদল রায়। আমার বাবা। 
    ওঃ! 
    আর একটা কথা বলি স্যার? আপনার মত লেখকের কাছে বলতে বাধা কোথায়?  বাবা  বছর খানিক ধরে আরেকটি কেসের সন্ধান করছিলেন। শেষ করলেন এই কিছু দিন আগেই।  ২০০৭ এ অগাস্ট মাসে দক্ষিন কলকাতার গড়িয়া অঞ্চলে  উনি জন্মগ্রহণ করেছেন।  
    উনি মানে?
    তারাপদ রায় বাবু।  বাবা একটা নাতনি চান।

    দ্বিতীয় পর্ব।
    আমার বন্ধু দুলালের সঙ্গে প্ল্যান করছিলাম সামনের মাঘে ঘাটশিলা যাওয়া যায় কিনা।  দুলালের বৈজ্ঞানিক মন। সেও যখন বলল চল ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করে আসি, তারমানে পুনর্জন্ম থিওরিটাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।  একদিন আমরা সকাল সকাল টাটা এক্সপ্রেস ধরে ঘাটশিলা পৌঁছলাম।  
    চঞ্চলা মিষ্টি মেয়ে। সাত মাসের পোয়াতি। গয়না বড়ি ভাজা নিয়ে এল আমাদের জন্য।  দুলাল কোন ফর্মাল আলাপ  বিলাপের ধার ধারে না। নিজের প্লেটটা তুলে নিয়ে অতি মনোযোগ সহকারে বড়িগুলো শেষ করল। তারপরেই,
    দেখুন বাদল বাবু ... 
    আপনি আমায় ভরা বাদল বলেই ডাকবেন। 
    থমকে গেল  দুলাল।  এই ধরনের অদরকারি ডিটেইলস বড় বিরক্ত করে ওকে।  ওর ভাবনা চিন্তা হোঁচট খায়।  দুলাল একটু গম্ভীর হয়ে সামনের প্লেট থেকে একটা গয়না তুলে নিয়ে কামড় বসালো।  খেয়াল করার পরোয়া করেনি যে ওই প্লেটটা ভরাবাদল বাবুর জন্যি নির্দিষ্ট ছিল।  
    আপনার থিওরি অনুযায়ী মানুষ মরলো, আর সাথে সাথে পুনরজম্ম নিল। তার মানে লোকসংখ্যা বাড়া কমার কোন ব্যাপারই নেই যেন।  অথচ আজগের দিনে, প্রতি বছর এক দশমিক শুন্য সাত শতাংশ করে লোক সংখ্যা বাড়ছে । আমার প্রস্ন হল এতগুলি এক্সট্রা আত্নার সাপ্লাই হচ্ছে কোত্থেকে ? 
    দেখুন স্যার, এ ব্যাপারে যে ভাবিনি তা নয়। আলোচনাও করেছিলাম বাবার সাথে। আমার যতটুকু ধারনা এই শূন্যে মানুষের আত্না থিক থিক করছে। তবে তাদের অনেকে কোন না কোন কারনে এই ধরায় পদার্পণ করার জন্য তৈরি নয় বা সুযোগ পাচ্ছে না। 

    ওয়ান্ডারফুল ! দয়া করে  একটু যদি বুঝিয়ে বলেন।
    বলছি স্যার। এই পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে প্রায় ২৫০ জনের জম্ম হচ্ছে এবং মৃত্যু হচ্ছে মাত্র ১০৫ জনের। অরথাত জম্মের হার মৃত্যু থেকে বেশি । কিন্তু আমার বিশ্বাস, অনেক বেশি জনের মৃত্যু ঘটছে যাদের হদিস কোন হাসপাতালে বা সরকারী নথিপত্রে নেই। স্যার, দুটি শুক্রের মিলনে একটি ভ্রূণের জম্ম, অরথাত প্রাণ। বউমা তুমি বরং আরো একবার চায়ের বন্দোবস্ত করে এসো। দুলাল বাবু, আরো এক কাপ চায়ে আপত্তি নেই তো?  যাও বউমা ।
    চঞ্চলা বউমা দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। একটু লজ্জা পেয়ে ভিতরে চলে গেল। 
    কিন্তু আজকের দিনে এই পরিবার কল্যানের প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে ভ্রূণের মৃত্যু ঘটছে প্রতি মুহূর্তে। এই যে অকাল মৃত্যু প্রতিরহ ঘটছে এগুলি অসুখী এবং অসম্পূর্ণ আত্না। পৃথিবীর উপর আকাশটিতে আত্নার অভাব নেই স্যার। 
    তার মানে আপনি বলছেন ভ্রূণ মানেই প্রাণ ।
    দেখুন দুলাল বাবু .........
    আপনি আমায় হয় দুলাল বাবু বলুন, নয়তো স্যার। এতে আমার পক্ষে ব্যাপারটা সহজ হয়। 
    ভরা বাদল বাবু একটু অপ্রস্তুত। দুলাল এটাই চাইছিল। মূল তর্কের মাঝে এইযে বিরতিটা নিয়ে এল তার মানে সে তার নিজের আর্গুমেন্টটা গুছিয়ে নিতে একটু সময় চায়। 
    দেখুন স্যার, প্রাণের বীজ আলোতে, মাটিতে, বাতাসে, জলে, শুক্রে, রক্তে, বীজাণুতে , সর্বত্র। এটা একটা প্রকৃতির চমতকার। এখন কথা হচ্ছে ............ এই নিন স্যার, চা এসে গেছে। 
    চায়ের কাপটা টেনে নিল দুলাল। শুধু চা। 
    মূল কথায় আসুন ভরা বাদল বাবু। 
    হ্যাঁ স্যার, মূল কথায় আসা যাক। প্রানের মূল বীজ হল ভ্রুনে এবং আধারও ভ্রূণে।   
    ফেয়ার এনাফ। দুটি প্রশ্ন। আপনার নাম ভরা বাদল হল কি করে?
    দুলাল আরো সময় চায়।
    আমার জম্মের সময় নাকি পৃথিবীতে একটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল।  মেঘের ভারে আকাশটা নাকি একেবারে নুইয়ে পড়েছিল পৃথিবীর উপর।  আমাদের দুগ্ধবতী গাভীটি নাকি ঐ সময় তারস্বরে ডেকে উঠেছিল । ও তার পাঁচ শের দুধের ভার বইতে পাড়ছিল না কারন ঐ সময়টিতে আমার আসন্ন জম্মের প্রস্তুতিতে সকাল থেকে সবাই ব্যেস্ত ছিল। আমার বাবার কাছ থেকে শোনা । হ্যাঁ স্যার, আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নটি ......? 
    দুলাল ভরা বাদল বাবুর মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল। 
    মানলাম আপনার আগের জম্মে আপনি হয়তো পাশের গাঁয়ে রুদ্র সিংহ হয়ে কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন বা ওরকম কিছু, এবং মানলামও না।  আপনার জম্মের ও মৃত্যুর মাঝে আরো অজস্র আত্না মানে ভ্রূণ আত্না যার পরিসংখ্যান নেই, তাদের মধ্যে কেউ যে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল না কে বলতে পারে? আপনি হয়তো রুদ্র সিংহের বদলে অন্য কোন আত্না বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারন আপনিই কিছুক্ষন আগে বললেন আকাশে আত্নার অভাব নেই।  
    স্যার, আমি সেই অর্থে বৈজ্ঞানিক নয়। আবার এক অরথে বৈজ্ঞানিকও বটে। বাচ্চার কান্নার ধরন দেখেই মায়েরা বুঝতে পারে এটা খিদের কান্না না ব্যাথার কান্না। মাদের কাছে এটা বিজ্ঞান। জ্ঞান যা অভিজ্ঞতাবলে অর্জিত।   
    আগে।
    এক মুহুরতের জন্য থামলেন ভরা বাদল বাবু। 
    আপনার কথা বলার ধরনেই প্রকাশ পায় যে আপনি উত্তর ভারতের প্রবাসী বাঙ্গালী ।
    এই কথাটা আসছে কেন? 
    আমরা বলি, ‘তারপর’। আপনারা বলেন ‘আগে’। সব সময় গেট সেট গো এর অপেক্ষায়। 
    দুলাল গম্ভীর।
    ভূতের অস্তিত্তকে নিশ্চয় অবিশ্বাস করবেন না। মৃত ব্যক্তির আত্না যা জীবিত মানুষের সামনে দৃশ্য আকার গ্রহনে সক্ষম। আবার ভূতের প্রকাশ অস্বচ্ছ বায়বীয় সত্তায়।  কুয়াশার মত তার আবির্ভাব । আলেয়ার মত তারা দেখা দেয়। তারা মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়ায়। এরা সেই সব আত্না যারা বিদেহী। এরা দেহ খোঁজে এবং দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর দেহ পায়। না স্যার, এরকম ঘটনা যে তা নয়।  ঘটে।   সামনের ঐ আলমারিটা দেখছেন। আমার ঠাকুরদা এবং বাবা কৃত কেস স্টাডিতে বোঝাই। দু একটা কেসে হিসাব মেলাতে পারেননি।  তবে আমার ঠাকুরদা নিশ্চিত যে আগের জম্মে আমি সেই অরথে আমিই ছিলাম।  
    বাইরে বোধহয় রিকশা এসে দাঁড়ালো। চঞ্চলা তাড়াতাড়ি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল। এক গাল হাসি নিয়ে তারা পীঠ ঘরে ঢুকল।
    লেখক কাকু এসে গেছেন?  কতক্ষন? দুলালকে হাত জোর করে নমস্কার জানালো। আপনারা খাননি এখনো ? খেতে দেবে কখন? বাবা, তেসা ডাল থেকে মেইল এসে গেছে। আমাদের সামনের মাসেই যাত্রা। আসছি এক্ষুনি বলতে বলতে চঞ্চলার পিছু পিছু রান্নাঘরে ঢুকে গেল।
    ভরা বাদল বাবু একটু যেন আনমনা।  দুলাল চিন্তায় মগ্ন। ইতিমধ্যে এক মহিলা উপরের ঘর থেকে নিচে নেমে এলেন। আমাদের দেখে হাতজোড় করে নমস্কার করলেন।  মুখের হাসিটি বড় মিষ্টি।  ভরা বাদল বাবু আলাম করিয়ে দিলেন। ওনার স্ত্রী আলো । তারপর এক্ষুনি আসছি বলে রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন। রান্নাঘর থেকে মা ছেলে বউএর চাপা স্বরে টুকরো টুকরো কথা, হাসি কানে আসছে। 
    স্যার একটা কথা বলি, পৃথিবীর ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ আত্নায় বিশ্বাস করে। বিজ্ঞানের কথা জানিনা। কিন্তু এটাতো ঘটনা যে তারা বিশ্বাস করে। এটার মধ্যে কিছু একটা ইঙ্গিত কি নেই?
    দুলাল মুখ তুলে একবার তাকালো। কিছু উচ্চবাচ্য করলো না। 
    আমরা সাধারন মানুষ, বিজ্ঞানের কতটুকুই বা বুঝি। আমি জানি আমার কাজ এখনো অসম্পূর্ণ। সামর্থ্যের অভাব।   
    আমি বললাম, আপনি সামর্থ্যের কথা বলছেন, তো সরকারের কাছে যাচ্ছেন না কেন?
    ভরা বাদল বাবু তাকালেন আমার দিকে, জবাব দিলেন না। 
    কোন সংস্থার কাছে যাচ্ছেন না কেন? আমার তো মনে হয় অনেক সংস্থা এগিয়ে আসবে আপনার অনুসন্ধানের কাজে সহায়তা করতে। 
    ম্লান হাসি হাসলেন ভরা বাদল’বাবু।
    গেছিলাম স্যার। ওরা আদৌই আগ্রহী নয়। সত্যি কথা বলতে কি ওরা চায় না যে এ ব্যাপারে আমি আর অনুসন্ধান করি। 
    কারন?  দুলাল জিজ্ঞেস করল। 
    ভরা বাদল’বাবু দুলালের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন। দুলাল কিছুক্ষন বাদে মাথা নেড়ে সায় দিল।  আমি কিন্তু ব্যাপারটা ধরতে পারলাম না। 
    খাবার দিয়েছে। ভাজা মুগের ডাল, অলঙ্কার বড়ি ভাজা, ট্যাংরা মাছের ঝোল, শাক, আরো একটা কি বুঝি। গ্রিহকত্রি আলো পরিবেশন করছেন। চঞ্চলা সোফার এক কোনে বসে দুদণ্ড জিরিয়ে নিচ্ছে। হাঁপিয়ে পরেছে বেচারি। টুকরো টুকরো কথার আদান প্রদান চলছে। দেওয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে পরিবারের নানা ছবি। হয়তো এগুলির মধ্যে রয়েছেন ভরা বাদল’বাবুর ঠাকুরদা, ঠাকুরমা। এক সাহেব সাহেব দেখতে ভদ্রলোকেরও ছবি রয়েছে। হয়তো ঠাকুরদার বস। ইচ্ছে হল জিজ্ঞেস করি। কিন্তু পর মুহূর্তে মনে হল, না এ কৌতূহল নিতান্তই অনাবশ্যক।  আবার মনে হল অনাবশ্যকই বা বলি কি করে। এই যে পরিবারের রুটস খুঁজে বেড়ানো, কৌতূহলবসতই তো?   চঞ্চলা আর তারা পিঠ, দুই জম্মের সাথী। হটাত খেয়াল হল ভরা বাদল’বাবু আমার দিকে এক দৃষ্টিতে  তাকিয়ে আছেন।    
    একটা কথা বলি স্যার? সরকারের ভয় কৌতূহল আমাদের মানব জীবনে অরাজকতার সৃষ্টি করবে, এবং ভয়টা অমূলক নয়। 
    (ভদ্রলোক কি মনের কথা পড়তে পারেন?) তার মানে?
    আমার  স্ত্রী আলোকে আমাদের অনেক আত্নিয়স্বজন মেনে নিতে পারে নি। 
    দুলাল হটাত হো হো করে হেসে উঠল এবং বিষম খেল। তারপর দু ঢোক জল খেয়ে হাসতে হাসতে বলল, চিন্তা করে দেখ, তোর পুরুত যে তো বাড়ির গৃহলক্ষ্মীর পূজারি, হটাত আবিষ্কৃত হল যে তাঁর আত্নার পূর্ব ঠিকানা কোন এক অন্য ধর্ম অবলম্বীর গৃহে। তোর বস তার আগের জম্মে ছিল পিওন। সইতে পারবি? তাসের ঘরের মত তোর ধর্মের কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে। 
    তবুও বিজ্ঞানের খাতিরে ......।    
    বিজ্ঞানের খাতিরে কেউ নিজের সর্বনাশ ডেকে আনবে? 
    বিকেলের ট্রেন ধরার কথা। তারা পীঠ রিকশা ডেকে আনলো। রিকশায় উঠবার আগে তারা পীঠ জানালো সামনের জুন মাসে সে আর ভরা বাদল বাবু নাকি ইংল্যান্ড যাচ্ছে ।
    আমরা দুজনে অবাক।  হটাত?  গবেষণার ব্যাপারে?
    তারা পীঠ লাজুক হাসল।  কিছুটা তাই স্যার।
    ভরা বাদল’বাবুর আরেকজন প্রিয় লেখক নাকি রোয়াল্ড ডাল।
    কিন্তু তিনি তো মারা গেছেন?
    হ্যাঁ স্যার।  ১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসে। এক মহান ব্যক্তির তিরোধান। তারা পীঠও ভালবাসে ওনার লেখা। মহান ব্যক্তি স্যার। ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা। ছবি আছে স্যার। পাঠিয়েছেন। দেওয়ালে ফ্রেম করে রেখেছি লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়।
    পাঠিয়েছেন মানে?
    তাঁর মেয়ে টেসা ডাল। লিখেছিলাম আমার ঠাকুরদার গবেষণার কথা। তারপর স্যার বেশ কয়েক বছর ধরে চিঠিপত্রের আদান প্রদান চলে। আজকাল ইন্টারনেটের যুগে অনেক কল্যান হয়েছে। সত্যি বলতে কি টেসা ম্যাডাম উনাকে আইডেন্টিফাই করতে সক্ষম হয়েছেন।
    কাকে? লেখক রোয়াল্ড কে?
    ওয়েলসরই কোন গ্রামে, মানে সাউথ ওয়েলস আর কি, তিনি জন্ম গ্রহন করেছেন। নাম বলতে বাধা। তবে এখনো সম্পর্ক স্থাপন করেননি। করবেন, তবে তার আগে তিনি আমার সঙ্গে  একটু বিচার বিমর্শ করতে চান আরকি। খরচপাতি উনিই দিচ্ছেন। 
    নাম নাই বা বললেন, কিন্তু তিনি কি করেন জানতে পারি কি?
    কোন বৈজ্ঞানিক সংস্থানের সঙ্গে জড়িত। এর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করবেন না স্যার।  
    তার মানে উনি আর লেখার লাইনে নেই।
    হাসল ভরা বাদল’বাবু। রোয়াল্ড ডাল তো পাইলটই ছিলেন।  স্যার একটা নিবেদন।
    ভরা বাদল’বাবু আমাকে একটা বইয়ের প্যাকেট দিলেন। 
    তারাপদ রায়’বাবুর তিনটে বই আছে স্যার। আপনি যদি ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেন।  টেসা ম্যাডামকে উপহার দিতে চাই। না করবেন না স্যার। আর এই খামটা গ্রহন করুন। আপনার জন্য সামান্য পারিশ্রমিক।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সমর চক্রবর্তী | 2402:8100:26d1:251b:656c:d41e:f88c:***:*** | ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ২১:২১538265
  • এ এক নতুন মনোভাব। অর্ঘ্য আর স্মৃতিচারণ যখন তারাপদ স্মরণে তখন লেখক তার বিষয় সে ভাবে সাজিয়ে প্রস্তুত করেছেন  তাতে  কোনো অবকাশ নেই এবং তাতে  লেখা উন্নত মানের পর্যায়ে পৌঁছেছে। 
    লেখককে সাধুবাদ। 
    আমরা লেখকের আগের লেখাতে   ও  নতুন্নতের  ছাপ  পেয়েছি ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন