এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কী ভাবে আগ্রা থেকে পালালেন শিবাজি ?

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ জুলাই ২০২৪ | ২৬৪ বার পঠিত
  • সঙ্গত কারণেই শিবাজি নিজেকে এক স্বাধীন রাজা মনে করতেন, যারা আছে কেল্লা, আছে অনুগত নিম্নবর্ণের রায়ত প্রজার দল আর এক দায়িত্বশীল প্রশাসন কিন্তু মোঘলরা তাঁকে বিজাপুরের জমিদার বই অন্য কিছু মনে করেনি। দরবারের কানাকানিতে যা জানা যায় সেটা হল ফরমান দেওয়া হয় আগ্রার যে বাড়িতে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে তা ছেড়ে যেতে চাইলে তাঁকে কাবুলে গিয়ে মোঘল মনসবদারি করতে হবে। কিন্তু শিবাজি এতে সম্মত হন না আর ফরমান বাতিল হল।সরাসরি দরবারে না যেতে পারলেও ঘুর পথে শিবাজি চাইছিলেন তাঁর কাছ থেকে যে সমস্ত কেল্লা মোঘলরা কেড়ে নিয়েছে সেগুলো ফেরত পেতে আর ঔরঙ্গজেব চাইছিলেন তাঁর কাছে যা কেল্লা আছে সব নিয়ে তবে তাঁকে মনসবদার করতে। দুয়ের ঠেলাঠেলিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এসময় শিবাজিকে আবার কোতল করার ফরমান হতে হতে জয় সিংহের হস্তক্ষেপে আটকে গেল। ভয়ানক এক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে শিবাজিকে ভেক ধরতে হয়। এক দুর্ভেদ্য পাহাড়ি কেল্লার কথা আপনিই তাঁর স্মৃতিতে ভেসে এলো। সে কেল্লায় এমনি এমনি ঢোকা যাবে না।সত্যি কথা বললে তিনি এই বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাবেন না। গোপনে দেওয়াল বেয়ে ঢুকতে হবে, নইলে ধূর্ত শাহী ঘেরাটোপ থেকে তিনি মুক্তি পাবেন কী করে? এমন এক বাদশাহের সঙ্গে মোকাবেলা হচ্ছে যার সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যায় না। দীর্ঘ এক লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে দরবারের জৌলুশ দেখে চলে আসতে হয়। বাদশাহকে কুর্নিশ করলে তিনি ফিরেও তাকান নি তাঁর দিকে, যা যোগাযোগ সব অপ্রত্যক্ষ, করতে হচ্ছে মুরুব্বী মারফৎ যারা শুধু টাকা চেনে। ঠিক এসময় সন্ত তুকারামের সঙ্গে শিবাজির কথোপকথন শোনা গেল। তুকা কহিলেন :

    ঠিক যখন গেলেন বাবা আমার মরে
    ছিলেম আমি ছেলেবেলার ঘোরে।
    আমায় হয়নি ভাবতে একটুকুন
    বাড়ির যতেক কথা ছিল তখন।
    বিষটু ঠাকুর জগৎ খানা তোমার এবং আমার
    নয় তাহাদের আছেক যত চামার।
    কবেই মরে গেছে আমার বউ :
    ঘুমোয় যেন শান্তিতে মোর প্রিয়ে।
    নিলেন প্রভু শতেক
    বাঁধন মোর।
    বিষটু ঠাকুর জগৎ খানা তোমার এবং আমার
    নয় তাহাদের আছেক যত চামার।
    মরেই গেল বাড়ির ছেলেপিলে
    ভালোই হল
    মুক্তি দিলেন প্রভু
    শেষের যতেক মায়ার বাঁধন থেকে।
    বিষটু ঠাকুর জগৎ খানা তোমার এবং আমার
    নয় তাহাদের আছেক যত চামার।
    শেষে যখন মাও গেল চলে
    অভাগা মোর চোখের সামনে থেকে
    বলে তুকা চিন্তা গেল সবই।
    বিষটু ঠাকুর জগৎ খানা তোমার এবং আমার
    নয় তাহাদের আছেক যত চামার।
    (এখানে চিরাচরিত প্রয়োগে চামার শব্দটা ব্যবহৃত)

    When my father died
    Saint Tukaram
    (Translated by Dilip Chitre in Says Tuka)

    When my father died
    I was too young to understand;
    I had not to worry
    About the family then.

    Vithu,¹ this kingdom is Yours and mine.
    It’s not the business of anyone else.
    My wife died:
    May she rest in peace.
    The Lord has removed
    My attachment.

    My children died:
    So much the better.
    The Lord has removed
    The last illusion.

    My mother died
    In front of my eyes
    My worries are all over
    Says Tuka.

    তুকারামের সঙ্গে কথায় কী বার্তা আসে? শিবাজির মাথায় বিদ্যুৎ চমকের মতো কী যেন খেলে যায় তা আর পশ্চিমা মোঘলরা বুঝবে কী করে। তাই শিবাজি খাড়া পাহাড়ি কেল্লার পাঁচিল টপকানোর কায়দা ধরলেন যা তাঁর মতো কেউ পারত না। তিনি আর্জি জানালেন তাঁর লোকদের ঘরে ফেরার অনুমতি দিতে আর তিনি বারানসিতে চলে গিয়ে সন্ন্যাস নেবেন। এই আর্জি নামঞ্জুর হল। হপ্তা খানেক বাদে জুলাইয়ের প্রথমে তাঁর লোকদের ঘরে ফেরার অনুমতি মেলে।টাকা বিলিয়ে তাঁর নিজস্ব মুরুব্বী ঠিকঠাক রাখতে গিয়ে সব টাকা পয়সা খরচ করে বসেছিলেন শিবাজি ফলে তাঁকে ছেষট্টি হাজার টাকা কর্জ করতে হয় দরবারের মুরুব্বীদের থেকে। কে তাঁকে কর্জ দিচ্ছে জানা যাচ্ছে না। তেমনি ঔরঙ্গজেব কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করেও কিছুতেই জানতে পারছেন না কেমন করে ত্রিস্তর নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে শিবাজি হঠা ৎ উধাও হয়ে গেলেন। কয়েক মাস চেষ্টা করেও তিনি বা তাঁর দিদবান - গুপ্তচর বাহিনী কোন ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়নি। যদিও বাদশাহের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল জয় সিংহের ছেলে কুমার রাম সিংহ জড়িত না থাকলে শিবাজি পালাতে পারেননা। কিন্তু কিছু প্রমাণ হয় না। শুধু শিবাজির বিশাল টাকা কর্জ করা আর মোঘল নকোরশাহীর টাকার অনন্ত লোভ দেখে, ইতিহাসকাররা অনুমান করলেন ঘুষের টাকাই ত্রিস্তর নিরাপত্তা বলয় ফাঁকা করেছিল আর শিবাজিও ''পাহাড়ি ইঁদুরের '' দক্ষতায়, ঔরঙ্গজেব আলমগীর তাঁকে যে নামে ডাকতে পছন্দ করতেন, সেই ক্ষুদ্র জানোয়ারের অসীম অভিযোজন ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে পালাতে পেরেছিলেন। কী ভাবে যে পাহাড়ি ইঁদুররা খাড়াই কেল্লার দেওয়াল অনায়াসে বেয়ে যায় তা সভ্য মোঘলরা জানবে কী করে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন