এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মাঠতুতো বন্ধুদের গল্প

    abhisek bose লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ জুন ২০২৪ | ১৮৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • নিউস়ফিডে আসা একটা ফোটোর দিকে আমি দশ সেকেন্ডের বেশি তাকিয়ে ছিলাম। ফোটো আর ফোটোগ্রাফারের বিন্দুমাত্র কোনো বাহাদুরি ছিলনা। মামুলি একটা ছবি। যেমন হয় আর কী। পাঁচজন বন্ধু, ছেলেবেলার খেলার মাঠের বন্ধুর বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে, যেমন ফোটো তোলে। দু'জনের মুখে তিলেখচ্চর মার্কা হাসি। একজন গম্ভীর। আরেকজন হয়তো বুঝে উঠতেই পারেনি ছবি তোলা হচ্ছে। আর শেষের জন একটু বেশি সতর্ক। 

    এদের সবাইকে আমার বন্ধু বললে ভুল বলা হবে। দু' একজন বন্ধু। কিন্তু সবাইকেই আমি আশৈশব চিনি। ঐ খেলার মাঠ থেকেই। পাশের পাড়ার ছেলেদের সাথে যেমন চেনাজানা থাকে। দেখা হলে খুচরো গল্প।

    ঐ যে প্রথমজন। ওর ছিল একদম ছিপছিপে চেহারা। নিমেষে মাঠের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দৌড়ে যেতো। মাঠের ওপারেই ওর বাবার মস্ত বড় একটা মুদি দোকান ছিল। সেই সময় এই তল্লাটের সবথেকে বড় দোকান। ওখানে হাতি, ঘোড়া বিস্কুট পাওয়া যেতো। আর পাওয়া যেতো নীল-সোনালি প্যাকেটে নারকোল কুচি দেওয়া চকোলেট। 

    দোকানের সামনের দিকে অনেকগুলো কাঁচের বয়াম আর পেছনে রাখা থাকতো সারি সারি টিনের কৌটো। আমার বাবার থেকে বয়সে বেশ বড় হলেও সামনে কাকু বলেই ডাকতাম। মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম, এই মানুষটা কোনোদিনও মাঠে দৌড়য়নি, ফুটবল খেলেনি, বৃষ্টিতেও ভেজেনি। আজন্মকাল শুধু দোকানদারিই করছে। আর দ্বিতীয় জন, যে আমার বেশ ভালো বন্ধু, ওর বাবার অনেকগুলো ট্রাক ছিল। আমাদের খেলার মাঠের একপাশে রাখা থাকতো।

    আমরা ট্রাকের পেছনের ডালা খুলে উঠে পড়তাম। তারপর আরেকটু সাহস করে, এক্কেবারে ট্রাকের মাথায়। এখনকার মতো মুখ চ্যাপ্টা ট্রাক না। চওড়া নাক উঁচু, কমলা, কালো, নীল, হলুদ ইন্ডিয়ান কীচ-আর্ট করা ট্রাক। ট্রাকের মাথা থেকে ঐ নাক বেয়ে নিচে নেমে আসতাম। যখন হাতে গোনা বাড়িতে গাড়ি ছিল, তখন আস্ত একটা ট্রাকের মালিকানা কোনো মামুলি ব্যাপার ছিলনা। আমার বন্ধু বিজ্ঞের মতো মাঝে মাঝে জানাতো — ও নাকি ওর বাবার সাথে বসে ট্রাক চালিয়েছে। 

    আমরা তখনও ঠিক করে হাফ প্যাডেল চালাতে শিখিনি আর ও ব্যাটা স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ট্রাক চালিয়ে বেড়াচ্ছে। ভাবলেই সিনেমা সিনেমা মনে হতো। ওর ফুরফুরে মাথা ভর্তি চুল অথচ ওর বাবার মাথায় চুল প্রায় নেই বললেই চলে। পেছন দিকে আর কানের পাশে হাতে গোনা যায়, এরকম কয়েকগাছি চুল। নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকেই এরকম। লিভার খারাপ ছিল হয়তো। হয়তো স্নানের আগে মাথায় সর্ষের তেল মাখতো না। রোজ রোজ মাথায় সাবান দিয়ে সব চুল উড়ে গেছে। আর ফোটোর তৃতীয় জন। ওকে ছোটবেলা থেকেই চিনি, একসাথে খেলাধূলাও করেছি। খেলা শেষে সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফেরার আগে পালা করে টিউবওয়েলের হাতল ধরে ঝুলে আজলা ভরে জল খেয়েছি। কিন্তু ঠিক বন্ধু বলা চলেনা। ও একটু মাতব্বর গোছের ছিল। সবসময় হম্বিতম্বি চলছে। অথচ ওর বাবাকে দেখতাম, শেষ বিকেলে নিঃশব্দে একটা ঢ্যাঙা সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছে । যতটুকু আওয়াজ তা শুধু ঐ সাইকেলটুকুর। ওর বাবার কোনো আওয়াজ কোনোদিন শুনতে পাইনি।

    বিয়েবাড়িতে ওদের ফোটোটা দেখে এতকিছু একসাথে ভিড় করে মনে পড়ল। ঐ নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়। এখনকার ফোটো দেখে, পুরনো চেহারাগুলো মনে করে করে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কী আশ্চর্য! এত মিল। প্রায় একরকম। অথচ মাঝখানে এতগুলো বছর কেটে গেছে। ওদের মুখগুলো হুবহু ওদের বাবাদের মতো দেখতে লাগছে। অবিকল একরকম। ওদের কাউকেই দেখে মনে হচ্ছে না, ওরা কোনোদিনও মাঠে দৌড়েছে, ফুটবল খেলেছে কিম্বা বৃষ্টিতে ভিজেছে...
     
     
    — অভিষেক বোস
    ( ২রা মার্চ ফেসবুক, রিপোস্ট) 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন