এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কে প্রেমিকা

    জাহিদুল ইসলাম সবুজ লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ জুন ২০২৪ | ১৮৯ বার পঠিত
  • আমার যখন বয়স ৩২ আর বলতে গেলে মনে হওয়া শুরু হয়ে গেছে মৃত্যু আসন্ন। আর নেই কৈশোরের ভাবনাহীন জীবন। তখন মনে হচ্ছিল আমার বোধ হয় নারীসঙ্গ ছাড়াই জীবনটা কেটে যাবে। কিন্তু প্রকৃতি, আল্লাহ বা ঈশ্বরের প্ল্যান তো আলাদা। বা সেই অলৌকিক ব্যাপারগুলো কেউ বা কিছু তো ঘটায়ই। সেই অদৃশ্য আলাপ বা বয়ান রেখেই আমি বলতে চাচ্ছি আমার জীবনের যে ঘটনাটা সেটা হলো ৩২ বছর বয়সে আমার পরিচয় হয় ২২ বছর বয়সী এক মেয়ের সঙ্গে। অনেক অনেক আগে হয়তো এ রকম ১০ বছরের ডিস্ট্যান্স কোনো ব্যাপার ছিল না। কিন্তু যেই সময়ের কথা বলছি তখন মোটামুটি ৮০% ছেলে মেয়ে ক্লাসমেটের সঙ্গে ডেট করে, বিয়ে করে। রেস্টুরেন্টগুলো সমবয়সী কাপলের ভিড়ে জমজমাট থাকে, সিনেমা হলের পেছনের সিট নিয়ে কাড়াকাড়ির প্রয়োজন পড়ে না। যেহেতু কেউ কাউকে আর লজ্জা পাওয়ার চিন্তা করে না। কেউ কেউ কাপল সোয়াপও করে। গ্রুপ করেও নানানকিছু করে। আর আমার মতো ৩২ হয়ে যাওয়া রিস্কি বয়সের লোকজন সপ্তাহের তিনদিন শহরের নানা বারে গিয়ে আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করে। একটু বেশি খরুচে বারগুলোতে নাচ গান আর সাংস্কৃতিক চর্চায় মেতে উঠে। কোলে এসে বসতে চায় চল্লিশ বছর বয়সী মেয়েরা যাদের দেখলে কখনোই মনে হবে না তারা তাঁদের ২২ বছর বয়স অতিক্রম করতে পেরেছে। ওদেরকে কোলে নিয়েও পকেট থেকে কিছু খরচ হয়ে যায়। তাকে মদ খাওয়াতে হয় আর ইনিয়ে বিনিয়ে এমন আচরণ করে যেন বা সে বহুদিনের গোল্ড ডিগার গার্লফ্রেন্ড। আর নারীহীন কিংবা আজীবন অধিক নারী ছোঁয়া বাসনার পুরুষরা পাতার মতো টাকা বান্ডিল থেকে ছুঁড়তে থাকে। কেউ কেউ সেক্সটিং করে আর অন্যের প্রেমিকার সঙ্গে মেকআউট করে। মোটামুটি সবারই কিছু না কিছু ওয়ে আছেই। এসব অনেক কাছ থেকে আর অনেক দূর থেকে দেখে মাঝেমধ্যে মনে হতো আয় হায় নারী সঙ্গ পাওয়া তো কোনো রকেট সায়েন্স নয়। অতি সহজেই হয়। আমার জীবনেও সেই ৩২ বছরে ২২ বছরে পাওয়া মেয়েটার সঙ্গে পরিচয়ও খুব সহজেই হয়।
     
    আমি একটা ক্লান্ত সন্ধ্যায় বসে ছিলাম মিরপুর ১৩ নম্বরের বসার মতো রাস্তার পাশের জায়গাটায়। হঠাৎ একটা মেয়ে আমাকে নাম ধরে ডেকে উঠে। আমার ধ্যান ভাঙ্গে ক্লান্তির। আমি ভাবতে থাকি নিজের মনে মনে যে এই মেয়ে আমাকে কীভাবে চিনল এই ফুটপাথে। কোনো অলৌকিক ঘটনা না ঘটুক তাই চাচ্ছিলাম। যেহেতু ক্লান্ত আর ঘোরগ্রস্ত সন্ধ্যা আর বয়সটা হতাশার তাই চাচ্ছিলাম না আরেকটা বাজে ঘটনার সাক্ষী হই। আর নিজেকে মাতাল ভাবি। যেহেতু আমি মাতাল না আর যেহেতু অনেকেই বলে না খেয়েই মাতাল। এই তকমা থেকে বের হতেই হবে। মেয়েটি বলল, আপনাকে তো আমি চিনি। আমি একটু মুখ হা না করেই হা হয়ে থাকার ভানে তার দিকে ইতস্ততভাবে তাকিয়ে আছি। বলল, একটা সাহিত্যের ইভেন্টে কী কী জানি বলতেছিলেন। আমি দূর থেকে দেখেছিলাম। আর কেন যেন মনে হয়েছিল আপনার সঙ্গে আমার আবার দেখা হবে। আমি ফিক করে ভদ্রভাবে হেসে বললাম, আপনি হাত দেখেন? ও একটু আশ্চর্য হয়ে গিয়ে প্রশ্ন করল, আপনি এসব বিশ্বাস করেন। রাশিচক্র, শনি মঙ্গল হাহা। আমি বললাম যে, আমার কিছুই অবিশ্বাস হয় না। এমনকি ভূতপ্রেত। আপনাকে তো প্রথমে ভেবেছিলাম পরী। হালকা করে একটু ফ্লার্ট মারার ট্রাই করলাম। কিন্তু ইন্টারেসিং হলো না বলেই মনে হলো তার বুকের দিকে তাকিয়ে। অবাক লাগতে পারে আপনাদের যে কারও মুখের দিকে না তাকিয়ে বুকের দিকে তাকিয়ে কী এমন ইন্টারেস্টিং জিনিস বের করে এই প্রায় মাঝবয়েসী সেক্সুয়াল ফ্রাস্টেট ব্যাটা। আমি আসলে কীভাবে যেন বুক দেখে মানুষের মনের কথা বুঝতে শিখেছিলাম। আচ্ছা সেই অবিশ্বাস্য কথা যেহেতু বিশ্বাস করানো কঠিন তাই মূল গল্পে ফেরা যাক।

    সেদিন বলল, আপনার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থাটা রেখে যান। সেই সময় মোটামুটি যোগাযোগের সহজ সব উপায় ছিল মানুষের জীবনে। অনেকে তো হতাশায় ভাবছিল যে এআইয়ের সঙ্গে প্রেম করবে। অনেকে তাই করছিলও বট চ্যাট।

    আমার আর অত হতাশার মধ্যে যেতে হয়নি। সেক্সের অভাব ছিল। নারী শরীরের অভাব ছিল ঠিকই। কিন্তু নারীর অভাব ছিল না। এদিকে নতুন একজন ২২ বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে পরিচয়। আমার আন ইজি থাকলেও জাস্টিফাই করে নিচ্ছিলাম নানাভাবেই। যেহেতু বয়স আন্ডার আঠারো না। নানান আলাপে মনে হচ্ছিল আমাদের প্রেম হয়ে গেছে। আমরা চাইলে যেকোনো কিছুই করতে পারি এমন পরিস্থিতি হয়ে গেছে। সম্পর্কের মধ্যে কোনো ধরনের আর আন ইজিনেস নাই। আমাদের সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করা অভ্যাস হয়ে গেল। বাসে কাকে দেখে হাসি পেয়েছিল কে সিগারেটের পুটকি কুড়িয়ে খায় লাখপতি হওয়ার পরও এসব গল্প যেমন চলে তেমনই সমানতালে চলে আমাদের বন্ধুরা কে কার গার্লফ্রেন্ডকে লাগাচ্ছে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। লয়ালিটি ব্যাপারটা হাস্যকর রূপ হয়ে গেছে। দুঃখ ভুলতে গোপনে গোপনে নানান জায়গায় শোয়। আমরা এসব ব্যাপারে আবার সেন্সেটিভ হয়ে পড়ি। বলি সিহ, কী খারাপ!

    একটু দেরি হয়ে যায় জানতে আমার ২২ বছরের গার্লফ্রেন্ডটির বাবা নেই। মানে মারা গেছে আরকি ৫ বছর হয়। তার মায়ের নিঃস্বঙ্গতার গল্প শুনি এরপর থেকে নিয়মিত। একদিন তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাই। অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে গিয়ে দেখি আমার পছন্দের খাবার সাবুদানার পায়েস। যেটা আমি কখনো বলিনি প্রেমিকাটিকেও। একটা আলাদা দরদ তৈরি হয়ে গেল তার মায়ের প্রতি।

    তার মায়ের সঙ্গে আলাপ জমে উঠল। তার আবার আমার সঙ্গে বয়সের গ্যাপ ১০। ৪২ বছর আরকি। কেমন যেন একটা সমান রেখায় চলতে থাকা একটি সরলপথ। আমি কী কী মিস করে গেছি তার সময়ের আর তার মেয়ে আমার সময়ের কী কী মিস করে গেছে সেই আলাপে রাত বাড়তে বাড়তে কখন যে ঘড়ির কাটায় ১২ হয়ে গেছে আমরা টের পাইনি। কী করব বুঝতে পারছি না। থেকে যাওয়ার হালকা সিগন্যাল পেলেও থেকে যাব ভাবছি। আর তাই হলো। ৪২ বছরের সুন্দরী নারীটিই থাকতে বলল। আমি বললাম চলেন, উনো খেলি তিনজনে। উনো খেলে আমরা পুরো রাত সজাগই থাকলাম।
     
    এরপর থেকে এখন দুইজন বন্ধু হয়ে গেল আমার। মা আর মেয়ে । একটু অনুশোচনা হতে থাকল ২২ বছর ছোট মেয়েটার সঙ্গে প্রেম আগানোটা তো ঠিক হয়নি। সেটা ওর মাথা থেকে কীভাবে মুছে নতুন প্রেমটাতে সেট হব বুঝতে পারছি না। কে আসলে আমার যোগ্য প্রেমিকা হতে পারে! মা না মেয়ে! আবার দুজনের সঙ্গেই সম্পর্কে কোনো সংশয় নেই। কোন বা পথে নিতাইগঞ্জ যাই?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • syandi | 45.25.***.*** | ১৩ জুন ২০২৪ ১৩:৫০533113
  • বাহ্ আইনস্টাইন সিনড্রোম!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন