এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শান্তি বিলাস

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ জুন ২০২৪ | ২০৮ বার পঠিত
  • শান্তি বিলাস
    শুকদেব চট্টোপাধ্যায়

    জীর্ণ বাড়িটার সদর দরজার পাশে খোদাই করে লেখা “শান্তি বিলাস”। স্পষ্ট বোঝা যায় না, কষ্ট করে পড়তে হয়। কোন এক সময় অনেক সাধ করে নামটা লেখা হয়েছিল।

    বর্তমানে বাড়ির বাসিন্দা মাত্র চারজন। ছোট পরিবার, কিন্তু হলে হবে কি ‘ছোট পরিবার সুখী পরিবার’ নিদানকে বেহুদা সাব্যস্ত করে দিয়েছে ওই গুটি কয়েক মানুষ। পারস্পরিক বাকবিতণ্ডায় প্রায়ই মুখরিত হয়ে ওঠে বাড়ির অন্দরমহল। ‘শান্তিবিলাসে’ শান্তি অধরা। কেবল বাড়ি নয়, বাড়ির মানুষগুলোর নামের সাথেও তাদের চরিত্রের বিস্তর ফারাক। পাড়ার ফক্কুড়েরা তাই মস্করা করে বাড়িটাকে বলে “ভ্রান্তি বিলাস”।

    বাড়ির ভেতরে একটু ঢোকা যাক। সাহস রায় হলেন গৃহকর্তা। বাবা তরাস রায় স্ত্রীর ভয়ে সদাই ত্রস্ত হয়ে থাকতেন। ছেলের যাতে এ হেন দুর্গতি না হয় তাই নাম রাখলেন ‘সাহস’। ছেলেকে পুরুষ সিংহ রূপে বড় করে তোলার একান্ত বাসনা ছিল। জীনের প্রভাব কি আর নামে খণ্ডায়? ছেলে বাপের ধারাই পেল, উপরন্তু ভুলো। বাসনার অপমৃত্যু তরাসকে বেশিদিন দেখতে হয়নি। দজ্জাল স্ত্রী অকালে কলেরায় মারা যেতে একটু সুখে জীবনটা কাটছিল, কিন্তু সইল না। বছর দুয়েক পর তারও ডাক এসে গেল। ছেলেটা সেই থেকে পিসির কাছেই মানুষ। প্রমোদিনী বিধবা হওয়ার পর থেকে ভাইয়ের কাছেই থাকতেন। কাঠখোট্টা মানুষ, প্রমোদের কোন লক্ষণই আচরণে নেই। ভাইপোটিকে ভালবাসেন বটে কিন্তু কড়া শাসনের বেষ্টনী ভেদ করে অপত্য স্নেহের স্নিগ্ধ স্পর্শ সাহস খুব কমই পেয়েছে। ফলে পিসিকে ভীষণ রকমই ডরায়। ভয় পেলে সাহস সব কিছু গুলিয়ে ভুলভাল করে ফেলে। ভুলে ভরা মাথা নিয়ে লেখাপড়া হওয়ার কথা নয়, হয়ওনি। বহু বছরের পরিশ্রমে কোনমতে ক্লাস এইটটা টপকেছে। তারপর বয়স হতে বাবার এক বাল্যবন্ধুর চেষ্টায় এক সরকারি দফতরে পিওনের চাকরিতে ঢুকেছে। সরকারি দফতর বলে শত ভুলেও চাকরিটা খোয়া যায়নি। ভুলের চরম ঘটনা ঘটেছিল বিয়ের পর অষ্টমঙ্গলায় শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে। একগাদা অল্পবয়সী মেয়েদের একসাথে দেখে সাহস ভীষণ নার্ভাস হয়ে গিয়েছিল। এত মেয়ের মাঝে সদ্য চেনা নিজের বউকে গুলিয়ে ফেলে কাতরভাবে শুধিয়েছিল, ”আমারটা কোন জন?”

    প্রমোদিনীই পছন্দ করে প্রীতিলতাকে সাহসের বৌ করে ঘরে এনেছেন। একঝলক দেখে বেশ লেগেছিল লক্ষ্মীমন্ত মেয়েটাকে। যেমন নাম তেমনই মিষ্টি স্বভাব। সাহসের মত একেও বশে রাখতে সমস্যা হবে না। আসার কয়েক মাসের মধ্যেই প্রীতিলতা বুঝিয়ে দিয়েছিল যে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে সে মোটেই আগ্রহী নয়। প্রথম দিকে ডুয়েল সমানে সমানে চললেও প্রমোদিনীর প্রমোদতরীকে বেসামাল করতে সময় লাগেনি। তবে পরাজয় নিশ্চিত জানলেও পিসি কখনও ওয়াকওভার দেননি, সাধ্যমত লড়ে যান।

    সাহস আর প্রিতীলতার সন্তান ধীমান হল এই বাড়ির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। ছেলেটা যাতে তার মত মুখ্যু না হয় তার জন্যে সাহস স্কুলের বাংলার মাস্টারের কাছ থেকে চেয়ে এনে ওই নামটা রেখেছিল। ছেলেটা পক্ষপাতদুষ্ট ছিল না। বাবা আর মা দুজনের জিনকেই সমান গুরুত্ব দিয়েছিল। বাপের মত ধীহীন নিরেট মাথার সাথে ছিল মায়ের মত রোষে পূর্ণ কোষ। আদর্শ গাম্বাট বলতে যা বোঝায়। কয়েক বছর স্কুলে যাওয়ার পরেই লেখাপড়াকে বিষবৎ পরিত্যাগ করেছে। রাজনীতির জন্য আদর্শ চরিত্র, তাই ওতেই মেতে থাকে। ওই সুবাদে কারখানায় একটা কাজও জুটিয়েছে।

    সেদিন অফিস থেকে ফিরে সাহস দেখে একদিকে ধীমান আর অপরদিকে শত্রুতা ভুলে এক হয়ে লড়ছে প্রমোদিনী আর প্রীতিলতা। দরজার পাশে গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা মিষ্টি মেয়ে। সাহস বেশ ধমকে সকলকে থামিয়ে মেয়েটাকে শুধোল, “নাম কি মা?”
    -- শান্তি।
    -- বাঃ সুন্দর নাম। এই বাড়িতে তোমার বড় অভাব, ঘরে এস মা।

    জীবনে প্রথমবার এতটুকু না গুলিয়ে স্বীকৃতির এই বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিল সাহস। শান্তি এল ‘শান্তি বিলাসে’।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Suvasri Roy | ০৫ জুন ২০২৪ ২২:০৭532739
  • মিষ্টি একটা গল্প তবে আরেকটু খেলিয়ে লেখা যেতে পারত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন