এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • তাম্রাশ্য সভ্যতা

    Naresh Jana লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ মার্চ ২০২৪ | ৯৪০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৫ জন)
  • যদি কিছু তামা'রে শুধাও
    নরেশ জানা



    ঠাকুর ঘরের কোষাকুষি, পাইলস দমনের 'অব্যর্থ উপায়' হিসাবে আড়াই প্যাঁচের আংটি আর অম্বল নিবারনের জন্য ছোট্ট কলস অথবা গ্লাস। এর বাইরে গেহস্থলিতে আজকাল আর তামার ব্যবহার দেখিনা সচরাচর। সব তামা যেন সরু কিংবা মোটা তার হয়ে ইনসুলিটার আবৃত হয়ে বিদ্যুৎ পরিবহনের কাজে কিংবা মোটরে কয়েলবন্দি। আজকের ভারতীয় তামা কে যদি বাংলা ভাষায় প্রশ্ন করা যায়, তামা তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? তামা নিশ্চিত ভাবেই উত্তর দেবে, রাজস্থানের ক্ষেত্রি অথবা মধ্যপ্রদেশের মালাঞ্জখন্ড কিংবা ঝাড়খণ্ডের সিংভুম হইতে। কিন্তু যখন ভারত নামে কোনও দেশ ছিলনা, যখন এই বিস্তৃত ভূখণ্ডের উত্তর ভাগ ষোড়শ জনপদে বিভক্ত কিংবা তারও আগে যখন বিন্ধ্য পর্বত ডিঙিয়ে অগস্ত্য মুনি দক্ষিনে যাত্রা করেননি, অর্থাৎ দাক্ষিণাত্য অগম্য। সেই কালে তামা বোঝাই নৌকার মাঝিকে যদি প্রশ্ন করা হত মাঝি তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? খানিক দম নিয়ে সে বলত, "সে অনেক দুর বাবু। মগধ রাজ্যের দক্ষিনে শবরনাখা নদীর পাড়ে পিপলি বলে একটি গ্রাম আছে, সেখান থেকে ওই নদী বরাবর দন্তপুর বলে একটা জায়গায় উঠে ছোট বড় খাড়ি বেয়ে এইখানে উঠে এসেছি। শেষ যে খাড়িটা বেয়ে এলাম তাকে স্থানীয় লোকেরা ক্যায়াঘাই বলে।" একাল হলে আপনি তাকে শুধরে দিয়ে বলতেন, ক্যায়াঘাই নয়, ও খাড়ির নাম কেলেঘাই।

    অন্য মাঝিটি তখন বন্দরে দোল খাওয়া একটা বিশাল নৌকার সাথে নিজের ছোট পানসিটি কাছি দিয়ে বেঁধে ফেলে গামছা দিয়ে গায়ের ঘাম মুছতে ব্যস্ত। সে যদিও আগের মাঝির মত অতটা দীর্ঘ পথ বেয়ে আসেনি তবুও তার পথটি খুব কম দীর্ঘ নয়। নদী পথে তাকে আসতে হয়েছে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার। সে এসেছে মগধ আর বঙ্গ সীমান্তের পাহাড় আর ঘন জঙ্গল বেস্টিত একটি গ্রাম থেকে। সেই গ্রামের নাম তামাজুড়ি। তামাজুড়ি থেকে গরুর গাড়িতে তামার ভান্ডার নিয়ে প্রথমে তাকে কয়েক কিলোমিটার যেতে হয় কেচেন্দা বলে একটি গ্রামে। সেই গ্রামের পাশেই তারাফেনি নদী। ছোট্ট আঁকাবাঁকা পাহাড় কেটে চলা সেই নদীতে রাখা নৌকায় তামা বোঝাই করে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার যাওয়ার পর সে এসে পৌঁছায় সিজুয়া গ্রামের কোলে যেখানে তারাফেনি ঝাঁপ দিয়েছে কপিসা নদীর বুকে। অতঃপর কপিসার প্রসস্থ বুকে নৌকা ছুটতে থাকে, ছুটতেই থাকে। ও আচ্ছা, কপিসা নদীর নাম জানা নেই। আসলে মাঝি তো বলছে হাজার বারশ বছর আগের কথা। তখন নদীটার নাম অমনই ছিল। এই হালে তাকে আমরা কাঁসাই বা কংসাবতী বলে ডাকতে শুরু করেছি। ওই দেখ আগের মাঝি যে শবরনাখা নদীর কথা বলেছিল তারও হাল আমলের নামটি তো জানা হয়নি! হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, ও নদী এখন সুবর্ণরেখা নামেই পরিচিত।
          
    তো সেই আদি কপিসা বেয়ে আসতে আসতে বন জঙ্গল ছাড়িয়ে দক্ষিণবাহী নদী এবার পুবমুখী হয়। ছোট নাগপুর মালভূমির শেষতম টিলা গোপগড়ের কোল বেয়ে রক্ত মৃত্তিকা লাঞ্ছিত রাঙামাটি আর মিধুনপুরকে উত্তর কোলে রেখে নদী বরাবর নৌকা গিয়ে বন্দরের লৌহদ্বারে এসে পৌঁছায়। সেই মিধুনপুরই আজকের মেদিনীপুর আর লৌহদ্বার হল লোয়াদা, তাম্রলিপ্তি বন্দরে প্রবেশের পশ্চিম দরজা। ঘাটোয়াল কয়েকজন বরকন্দাজ নিয়ে মাঝির কাছে তথ্য তল্লাশ চালিয়ে নৌকা ছেড়ে দেয়। আজকাল কাউকেই বিশ্বাস নেই। বন্দরের নাম করে ছদ্মবেশে দস্যুদের দল ঢুকে যেতে পারে রাজধানীর ভেতরে। তাম্রলিপ্তি এখন শুধু তো বন্দর নয় রাজধানী বটে। এবার একটি ছোট শাখা ধরে নৌকা এগিয়ে যাবে বন্দরের দিকে। ও দিকে মগধ ছাড়ার পর বৈশালীও ছেড়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধ তাপস। সশ্রু নয়নে তাঁর সঙ্গী হতে চাইছেন শ্রমনরা। নাছোড়বান্দা হরিন শিশুটিকেও মায়ের কাছে ফেরালেন বুদ্ধ। এবার তিনি চলেছেন গোরখপুরের কুশী নগরের পথে। আগামী বৈশাখী পুর্নিমায় মহাপরিনির্বাণে যাবেন তিনি। 



    তারও ২৪০০ বছর পরের কোনও ঘটনা। দিনটা ছিল বেশ জাঁকালো শীতে পরিপাটি। ২০০০ সাল, জেলা ভাগ হয়নি তখনও। অবিভক্ত মেদিনীপুর। বছর খানেক আগে চাকরিটা পেয়েছি বটে কিন্তু একটা বাইক কেনার মত পকেটে রেস্ত নেই। চড়ে বসলাম মেদিনীপুর- তামাজুড়ি বাসের মাথায়। হাঁ হাঁ করে উঠলেন বেলপাহাড়ির রবি দাস। আরে মশাই করেন কি? বাসের মাথায় আপনার মত লোকে চাপে? আপনি রিপোর্টার বলে কথা! আরে রাখুন মশাই রিপোর্টার আমি বাসের মাথাতেই যাব, চাদ্দিক দেখতে দেখতে। বেলপাহাড়ী ছাড়িয়েই চড়াই উৎরাই শুরু। দুপাশে শুধুই পাহাড় আর ঘন জঙ্গল তবে বাঁ হাতে পাহাড়ের সংখ্যা বেশি। বেলপাহাড়ী পাক্কা ১১ কিলোমিটার গিয়ে নামলাম তামাজুড়িতে। ততদিনে কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরের সংগে জুড়ে গিয়েছে তামাজুড়ি, তারাফেনি, সিজুয়ার নাম। তামাজুড়ির মাটির নিচ থেকে পাওয়া গেছে নানাবিধ তামার হাতিয়ার, যেমন বর্ষার মুখ, তীরের ফলা এবং অদ্ভুতদর্শন মনুষ্যাকৃতি ধার-বিশিষ্ট একটি হাতিয়ার। কলকাতার ভারতীয় যাদুঘরে রাখা ওই বস্তু গুলি দেখে ঐতিহাসিকদের অনুমান যে হাতিয়ারগুলো নিঃসন্দেহে প্রাচীন প্রোটো-অষ্ট্রোলয়েড আদিবাসীরা নির্মাণ করেছিল। তামাজুড়ি তে বাস থেকে নামার পর আমার শরী আন্দোলিত হয়। রোম কূপ খাড়া হয়ে ওঠে। আমি যেন পৌঁছেগেছি হাজার সাড়ে তিন কিংবা চার হাজার বছর আগে ক্যালকোলিথিক যুগে। বাসের পেছনে পেছনেই বাইক চালিয়ে হাজির রবি দাস। তাঁর মাধ্যমেই কথ হল এক বয়স্ক ব্যক্তির সংগে। তিনি বললেন, গ্রামের উত্তর পুর্ব দিকে যে ছোট টুংরি বা টিলা আছে সেখানে গেলে কিছু গলানো পাথর দেখতে পাওয়া যায় বটে তবে চুল্লির আর দেখা মেলেনা। রাস্তা নেই, বাইক যাবেনা অগত্যা হাঁটা পথেই রওনা দিলাম আমরা। আর গিয়েই দেখলাম, গলিত পাথর বা ধাতুমলের ছড়াছড়ি। একটি নয়, দুটি নয় তিনটি চুল্লির স্পষ্ট দেখা মিলল। পোড়া মাটির নলাকৃতি চুল্লির চোঙা গুলো  মাটির ওপরে দাঁড়িয়ে আছে ফুট দেড়েক। কোনও টার মাথা ভাঙা। সেই সময় মাটির তলায় গর্ত করে তার চারপাশ লেপে দেওয়া হত। একদম নিচের কিছুটা অংশের ওপরে একটি পোড়া মাটির নল জোড়া থাকত পাশে করা একটি গর্তের সাথে। মাটির ওপরে পোড়া মাটির গায়ে ছিদ্র করে ঢোকানো হত আরও একটা নল। সেই নলের বাইরের মুখে হাপরের মুখ লাগিয়ে চুল্লিতে বাতাস ঢোকানোর ব্যবস্থা। এরপর তামার আকরিকের সাথে কাঠকয়লা মিলিয়ে দুটো বস্তুকে একসাথে গুঁড়ো করে চুল্লির ভেতরে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া। তারপর হাপর দিয়ে ভেতরে বাতাস ঢুকিয়ে প্রচন্ড উত্তাপ তৈরি করা। প্রায় ১১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তামা গলে নীচের দিকে নামতে থাকবে আর তামার চেয়ে হালকা অপ্রয়োজনীয় ধাতুমল বা স্লাগ চুল্লির মাটির ভেতরের অংশে থাকা নল বেয়ে পাশের গর্তে জমা হবে। চুল্লির পাশে একটি ক্ষীণ স্রোতা জলাশয়। জানা গেল এই স্রোত গিয়ে পড়েছে তারাফেনি নদীতে। অর্থাৎ তারাফেনি নদীর উচ্চ অববাহিকায় অবস্থিত তামাজুড়ি। 
       
    মাস ছ'য়েক পর প্রচন্ড এক গরমের দিনে ফের রবি দাসকে নিয়ে হাজির হলাম তামাজুড়ি। না এবার বাসে নয়, রবি দাসের বাইকে। তামাজুড়ি তে নতুন কোনো চুল্লির সন্ধান মিলল না বটে কিন্তু যা মিলল তাতে আমার ধারণাটাই বদলে গেল। সন্ধান মিলল চার ডজনেরও বেশি গ্রামের। তামাজুড়ি কেন্দ্র করে দু-চার কিলোমিটার বৃত্তাকারে রয়েছে রাজাবাসা, মাজুগোড়া, আমরৌলি, ডোমগড়, বাঁশকেটিয়া, তুরুপাহাড়ী, আগুইবিল,অস্টজুড়ি, কুলডিহা, সিঁদুরিয়া, তাংভেদিয়া, আসারি, জামতলগেড়া ইত্যাদি গ্রাম গুলি। চুল্লি মিলল কয়েক'শ! আর প্রতিটি চুল্লি অবস্থিত কোনও না কোনও জলধারার পাশে। আর প্রতিটি ক্ষীণ স্রোতা গিয়ে মিশেছে তারাফেনি নদীতে। এ যেন তাম্র উপত্যকা! আমি যেন তাম্র প্রস্তর যুগে দাঁড়িয়ে। ২০০৪ সালের মধ্যে আমি ছোটো বড় মিলিয়েপ্রায় ৭০টি গ্রামের সন্ধান পেলাম। শেষ চমকটা আমাকে দিল তারাফেনি নদী ছুঁয়ে থাকা কেচেন্দা নামক  গ্রামটি। এই গ্রামের আশেপাশেই মিলল প্রায় ২৫টি তামা গলানোর চুল্লির। আমার মনে হল তামা গলানোয় পারদর্শী গোষ্ঠীগুলি ক্রমশঃ ছোট ছোট জল খাত ছেড়ে সরাসরি তারাফেনি নদীর তীরেই বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। এতে তাঁদের দুধরনের লাভ হয়েছিল। কীরকম সেই লাভ সেইটি এবার বলি।

    আমরা প্রতিটি চুল্লিকে জলাশয়ের ধারে অবস্থান করতে দেখেছি এই কারণেই যে ওই গোষ্ঠীগুলির জীবন নির্বাহের জন্য জল ছিল আবশ্যিক। দিন রাত সপরিবারে তাঁদের তামা নিষ্কাশনের কাজে নিযুক্ত থাকতে হত। কাঠ কয়লার সাথে তামার আকর হামানদিস্তায় গুঁড়ো করা, প্রচন্ড উত্তাপ তৈরি করার জন্য দিনভর হাপর টানা, ধাতুমল চুল্লি থেকে আলাদা করা ইত্যাদি কাজে নারী থেকে সামর্থ্যবান শিশু সবাইকে অংশ নিতে হত। ফলে গোটা পরিবারটাকেই চুল্লির পাশে থাকতে হত। পরিবারের রান্না বান্না, চান থেকে ধোয়াধুয়ির জন্য জল আবশ্যক। এই সব এলাকায় গেহস্থলির ব্যবহার যোগ্য প্রচুর পোড়ামাটির ভগ্ন উপকরণ মিলেছে। সুতরাং চুল্লি বানানো হত জলাধারের কাছাকাছি। ক্ষীণ স্রোতা হলেও চিরস্রোতা জলাধারকেই প্রাধান্য দেওয়া হত। এই স্রোত গুলির উৎসে গিয়ে কোনও কোন ঝোর বা ঝর্নার সন্ধান মিলেছে। কিন্তু এই ধারাগুলোর কোনটাই পরিবহন যোগ্য ছিলনা। তারাফেনি সেই অসুবিধা দুর করল। তারাফেনি নদী দিয়ে সরাসরি কপিসা বা কংসাবতী হয়ে তাম্রলিপ্তি বন্দরে পৌঁছানো যায়। তাম্র নিস্কাশনের গোষ্ঠীরা তাই ধিরে ধিরে সরে আসল তারাফেনীর পাড়ে। আমাদের দ্বিতীয় মাঝি গরুর গাড়িতে তামা বোঝাই করে তামাজুড়ি থেকে তারাফেনি এসে নৌকায় মাল তুলত কিন্তু পরবর্তীতে গরুর গাড়িতে তামা আনতে হতনা কারন তামা ততদিনে তারাফেনির পাড়েই নিস্কাশিত হয়। ততদিনে হয়ত বেথলেহেমের মেষ পালকের পশুশালায় ট্যাঁ করে প্রথম কান্নাটি কেঁদে উঠেছেন মাতা মেরি অথব মরিয়মের সন্তান। তারও তিনশ বছর পর তাম্রলিপ্তি বন্দরে পা রাখছেন ফা ইয়েন, দেখছেন রেশম, নীলের সাথে তাম্রলিপ্তি বন্দর থেকে পাল তোলা নৌকা বোঝাই তামা যাচ্ছে শ্যাম, মালয়, ইন্দোচিন, জাভা, সুমাত্রা বোর্নীয়, শ্রীলঙ্কার পথে। 



    গরুর গাড়ির ঝামেলাটা কিন্তু রয়েই গেল। অন্ততঃ তামাজুড়ি গ্রাম থেকে তারাফেনি অবধি পথটায় তাম্র আকরিক বহন করার জন্য তো গরুর গাড়ি লাগে। মনে রাখতে হবে এতক্ষণ যে এলাকার কথা বলা হল তার কাছাকাছি কোনো তাম্র আকরিকের উৎস নেই। সে উৎসের খোঁজে যেতে হবে বেশ কিছুটা দূরে, নাই নাই করে ৩০ কিলোমিটার । প্রথম মাঝি যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল সেই পিপলি গ্রামের কাছাকাছি রয়েছে তাম্র আকরিকের ভান্ডার মুসাবনী, মৌভান্ডার, রাখা, জাদুগোড়া, নারোয়া ইত্যাদি। জায়গা গুলি নিশ্চিত ভাবেই  পাঠকের পরিচিত যদি তাও মনে না পড়ে তাহলে পাঠক মনে রাখুন ঘাটশিলা অথবা গালুডির কথা। আমাদের আলোচ্য অঞ্চল এই দুটি পর্যটন কেন্দ্রের কাছাকাছি আর তামাজুড়ি থেকে জাদুগোড়া সহ এই বিস্তৃত অঞ্চলের পুরোটাই ছোটনাগপুর মালভূমির দলমা পাহাড় শ্রেণীর। এই সব এলাকা থেকে গরুর গাড়ি বোঝাই তাম্র আকরিক নিয়ে যাওয়া হত তারাফেনি উপত্যকায়। এখন প্রশ্ন হল পিপলি অথবা পিপল গ্রামটি তাম্র আকরিক ভান্ডারের খুব কাছে হওয়া সত্ত্বেও এবং পাশে একটি পরিবহন যোগ্য নদী (সুবর্ণরেখা) থাকা সত্ত্বেও এখান থেকে তিরিশ পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার উৎরাই পেরিয়ে তামাজুড়ি কিংবা আরও দুরে কেচেন্দা অবধি বিস্তৃত তারাফেনি উপত্যকায় তামা নিস্কাশনকারী গোষ্ঠীগুলি ছড়িয়ে পড়ল কেন?

    এ প্রশ্নের উত্তর এই ক্ষুদ্র পরিসরে খোঁজা সম্ভব নয়। আমরা এখনো এর সঠিক উত্তর জানিনা। তবে কিছু ধারণা করা যেতে পারে। প্রথম এবং আবশ্যিক কারণটি হল নিম্ন অববাহিকায় সুবর্ণরেখার গতিপথ পরিবর্তন, নাব্যতার সমস্যা। এ নদী দিয়ে সরাসরি তাম্রলিপ্তি বন্দরে পৌঁছানো যেতনা। কেলেঘাই ইত্যাদি ছোট নদীর খাড়ি ধরে সবংয়ের ভেতর দিয়ে বন্দরে পৌঁছাতে হত। সে সময় তামাই মূল্যবান ধাতু এবং তা এতটাই মূল্যবান যে সাধারনের নাগালের বাইরে। রাজা কিংবা বনিকের সম্পদ। হয়ত ছোট নদী, খাড়ি ইত্যাদি গুলোতে পরিশোধিত খাঁটি তামার জন্য লুটপাট, দস্যুবৃত্তি, রক্তপাত চলত। এর চেয়ে অশোধিত তাম্র আকরিক অনেক দুর অবধি বহন করা নিরুপদ্রব। দস্যুরা তো আর তামা নিষ্কাশনের কৌশল জানেনা। তারপর নিরপাদ কোনও জলপথ খুঁজে নেওয়া। তাই তাম্র আকরিক নিয়ে তামা নিষ্কাশন গোষ্ঠীগুলি উঠে আসল আরও উঁচুতে, দুর্গম জঙ্গল আর পাহাড় বেষ্টিত এলাকায়। তখনও তারাফেনির ব্যবহার হয়নি। জলপথ হিসেবে কাঁসাই তখনও অপরিচিত। সুবর্ণরেখাই পরিচিত পথ। পিপলি থেকে সরাসরি সে নদীতে নাও ভাসানোর পরিবর্তে প্রথম বিকল্প হিসেবে তাঁরা খুঁজে পেলেন ডুলুংকে। 

    এই উপত্যকাটিকে আমরা ডুলুং উপত্যকা বলতে পারি। আজকের ঝাড়খণ্ডের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কাঁকড়াঝোর কিংবা তার কিছুটা আগে ঢাঙিকুসুম যাওয়ার পথে পড়বে ওদোলচুয়া, বালিচুয়া, নটাচুয়া, কটুচুয়া, ডোলোংডিহা। মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ডাইনে বাঁয়ে পাহাড় রাজির নাম কানাইসর, ঠাকুরান পাহাড়, লখাইসিনি, চেরাং, ধ-ডাঙর, টুয়ার ডুংরি, মড়েডুংরি ইত্যাদি। পাহাড় থেকে নামে জল চুইয়ে ছোট ছোট ঝোর। ডোলোংডিহার কাছাকাছি সেরকমই কয়েকটি ঝোরের মিলিত ক্ষীণকায়া স্রোত, নাম হল ডোলোং।তাকেই আরও নীচে ডাকা হল ডুলুং নামে। আরও এগিয়ে সেই স্রোতে মেশে বারেদহ নামে ঝর্নার স্রোত । তারপর ধড়সার কাছে ডানদিক থেকে এসে মিলে যায় কুপন। সব মিলিয়ে ডুলুংয়ের গর্ভ বড় হয়। আরও নীচে চিলকিগড়, চন্দ্রি, ফেকো, রোহিনী হয়ে নদী ঝাঁপিয়ে পড়ে সুবর্ণরেখায়। এই পথেই সুবর্ণরেখা হয়ে তাম্রলিপ্তের পথ খুঁজে নিত তাম্র বেনের দল। এই তাম্র বেনের দল তখন জৈন দিগম্বর ধর্মাবলম্বী। এঁরা সরাক সম্প্রদায় বলে পরিচিত ছিলেন। ডুলুং উপত্যকা জুড়ে, নদীর গা ঘেঁষে, গাঁ গঞ্জে এখনও অজস্র ভগ্ন জৈন দেউলের সন্ধান মেলে। অধূনা সেই সব খন্ডিত অথবা অখন্ড ঋষভনাথ, পার্শ্বনাথ, মহাবীর পুজিত হন হিন্দু দেব দেবতা জ্ঞানে।  অর্থাৎ পিপলির পাশাপাশি সুবর্ণরেখা জলপথের আরও একটি পথ বেছে নেওয়া হল। কিন্তু যে সমস্যাটা থেকেই গেল তা'হল সুবর্ণরেখা থেকে খাড়ি পথ বেয়ে ফের উপর দিকে উঠে আসা, তাম্রলিপ্ত অবধি।
                                        


    জলপথ হিসেবে সুবর্ণরেখা সমস্যার সমাধান হল কপিশা বা কাঁসাইয়ে জলপথ আবিষ্কারের পর। সিজুয়া গ্রামের কাছে তারাফেনি নদীর সংগে কাঁসাইয়ের যোগাযোগ আবিষ্কারের পর। ক্রমশ জলপথ হিসেবে কাঁসাই জনপ্রিয় হয়ে উঠল। ডুলুংয়ের উৎস থেকে তাম্র নিষ্কাশনের চুল্লি গুলি এবার তারাফেনি উপত্যকায় চলে এল। কিন্তু তারও চেয়ে দামী কোনও গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছিল কী তারাফেনি উপত্যকা? সে কথায় যাওয়ার আগে অন্য আরেকটি কথা বলি।

    এই তো সেদিন ২০১৬-১৭ হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং জুড়ে বেশ চাপা গুঞ্জন শুরু হল। পূর্ব মেদিনীপুর সীমান্ত ছুঁয়ে দশগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের মশাগ্রামের ধান জমি থেকে মিলেছে সোনার চাকতি। একটা নয়, দুটো নয়, ছ-সাতটি! বেশ প্রমাণ সাইজের চাকতি, টাঙির আকার। বন্ধু কাম ভাই শিক্ষক শান্তনু অধিকারী ফোন করলেন, দাদা ওই চাকতি গুলো রক্ষা করুন। ওগুলো যে সোনার চেয়েও দামি! আমিও জানি ওগুলো সোনার চেয়েও দামি, ও যে তাম্রাশ্ম যুগের তাম্র কুঠার। মানব জাতির ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। ফোন করলাম পুলিশ সুপার মহোদয়াকে কিন্তু সাড়া মেলেনি। ফোন করলাম আর্কিও লজিক্যাল সার্ভের এক কর্তাকে। মোগলমারি খনন কার্য চলাকালীন তাঁর সাথে কিঞ্চিত আলাপ হয়েছিল। সব শুনে তিনি বললেন, জায়গাটি আমার কর্তব্য পালন এলাকার মধ্যে পড়ে বটে কিন্তু আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কিছু করতে পারিনা। আপনি বিষয়টি আমাদের বিভাগীয় প্রধানাকে জানান। ম্যাডাম বললে আমি ওই কুঠার গুলো উদ্ধার করতে যেতে পারি। না, এরপর আমি এগুতে পারিনি। এত সমৃদ্ধ জাতীয় সম্পদ সম্পর্কে এমনই গা ছাড়া মনোভাব আমাদের সমাজের। অথচ এই সবংয়েরই পেরুয়া থেকে পাওয়া একটি তাম্রকুঠার আগে থেকেই ভারতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত হয়েছে।

    আসলে এভাবেই আমরা আমাদের অতীতকে, ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে চলেছি প্রতিদিন। বেলপাহাড়ীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও দারুন। পাহাড়, জঙ্গল, ঝর্নার পাশাপাশি ওই শত শত তামার চুল্লি গুলোর কথা ভাবুন, ভাবুন কত হাজার হাজার বছর আগের মনুষ্য কীর্তির কথা। যদি ওই কীর্তি গুলি সংরক্ষিত করা হয় তবে রাজ্য নয়, দেশ নয়, সারা বিশ্ব থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক, পুরাতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিকদের পাশাপাশি পর্যটকরা ছুটে আসবেন ওই কীর্তি গুলি দেখতে। আরও আলোচনা, আরও গবেষণায় নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে তারাফেনি উপত্যকার। 

    পাশাপাশি এও বুঝতে হবে যে দুর্গম জঙ্গল আর পাহাড় বেষ্টিত মালভূমির অনুর্বর উপত্যকাকে তারাফেনি যেমন কৃষিক্ষেত্রে পুষ্ট করেছিল তেমনই তারাফেনির গুরুত্ব অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিল কাঁসাই। তারাফেনি উপত্যকার ইতিহাস তাই আমাদের প্রিয় কাঁসাই অথবা কংসাবতীরও ইতিহাস! এক সুপ্রাচীন বানিজ্য জলপথ যার খাঁজে খাঁজে প্রাগৈতিহাসিক গাথা। সুপ্রাচীন মহাভারতে উল্লেখের পর কালিদাসের রঘুবংশে যে নদীকে কপিশা বলা হয়েছিল।  লোক গবেষক ডঃ মধূপ দে অবশ্য কালিদাসের কপিশা কে কাঁসাই বলতে  রাজি নন। তাঁর মতে কালিদাসের রঘুবংশে রাজা রঘু যে কপিশা নদী পেরিয়ে পূর্ব মহাসাগরের কোলে পৌঁছেছিলেন এবং পরে উৎকল অভিযান করেন সেই কপিশার তীরকে বিস্তৃত বেলাভূমি বলা হচ্ছে। কাঁসাইয়ের এমন বেলাভূমি নেই। দ্বিতীয়তঃ পূর্ব মহাসাগর বা বঙ্গোপসাগরে কাঁসাই পতিত হয়নি কখনও বরং সরাসরি সুবর্ণরেখাই মিশেছে। সুতরাং কালিদাসের কপিশা কাঁসাই নয়। ডঃ দের এই অনুমানকে খন্ডন না করে ভিন্ন একটা সম্ভাবনার কথা ধরা যাক।

    আমরা যে লোয়াদার কথা বলছি তাকেই অনেকেই বলছেন লৌহদ্বার থেকে লোয়াদা। আবার স্থান নাম চর্চায় দা শব্দটি দহ থেকে আসার দাবিও করা হয়। সেই লৌহা দহ বা লোহাদহ থেকে লোয়াদা হতে পারে। দুটি অর্থেই কাঁসাইয়ের ওই অংশে লোহার অস্তিত্ব। অনেক প্রাজ্ঞ ব্যাক্তির মতে বৃহত্তর তাম্রলিপ্তে জলপথের প্রবেশমুখ ছিল দেবভূমি ডেবরার এই অঞ্চল। সবং পিংলা কৃষ্ণমৃত্তিকা সমুদ্র লালিত পলিতেই সৃষ্টি। কাঁসাই একসময় এখানেই সমুদ্রে মিলিত হত। আজও সবং বাজার থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দুরে একটি গ্রামের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা শতাধিক বছরেরও প্রাচীন লবনাম্বু উদ্ভিদ একদা মোহানার কথা বলে। তার উত্থিত শ্বাসমূলরাজি যেন একদা এতদঞ্চলে নোনা জলের অস্তিত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই এলাকার উত্তরেই ছিল বিস্তৃত বেলাভূমি। সেই বালিয়াড়ি থেকেই বালিচক।

    কালিদাসের ১২০০ বছর পর কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের লেখায় সেই নদীর নাম বলা হচ্ছে কংস। চন্ডীমঙ্গল কব্যে কবি বলেছেন, " নৈবেদ্য দিলেন পাদ্য কংস নদী জল।।' মুকুন্দরামের কংস কথাটিও আমাদের চমকে দেয়। এই কংস থেকেই কী কাঁসাই বা কংসাবতী? দক্ষিণ পশ্চিম বাংলার স্থান নাম গবেষক প্রয়াত পন্ডিত ডঃ বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি বলেছেন, সাঁওতালি ভাষায় কন্ থেকে কানাস (ক্রোধার্থক)। অর্থাৎ ও নদী যখন কুপিত হয় তখন দুকূল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সাঁওতাল তথা তাবৎ আদিবাসী সমাজে প্রকৃতি পূজিত হয় দেবজ্ঞানে। নদীও তাই। নদী তাদের কাছে মাতৃসমা। সাঁওতালি ভাষায় মাকে ডাকা হয় আইয়ো, মধ্যযুগীয় বাংলাতে 'আই' অর্থে বৃদ্ধা মা। তাই কানাস্-এর সাথে আই যুক্ত হয়ে কাঁসাই। নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই কাঁসাই-এর সংস্কৃতায়ন কংসাবতী। ডঃ মধূপ দে-র মতই ডঃ বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি-র এই ভাবনাকে খন্ডন করবনা। যে ব্যপ্তি নিয়ে এঁরা কাজ করেছেন তা শ্রদ্ধার জায়গা রাখে। আমরা বরং বিকল্প একটি ভাবনার কথা বলি। আমার মতে মুকুন্দরামের কংস নদী আদতে কংস বা কাঁসা বহনকারী নদী। কাঁসা অর্থ ব্রোঞ্জ, তাম্রযুগ ছাড়িয়ে আরও উন্নত যুগের উদ্ভব হয়েছিল তারাফেনি উপত্যকায়, সে যুগের নাম ব্রোঞ্জ যুগ আর কাঁসাই সেই যুগেরই স্বাক্ষ্য। তামার চেয়েও কঠিন, তামার চেয়েও অক্ষয় আর তামার চেয়েও মুল্যবান একটি ধাতুর বানিজ্যের জন্যই এক্সক্লুসিভলি স্বল্প দূরত্বের কাঁসাইকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল? কাঁসা গরবিনী বলেই কী কংসাবতী? ব্যবসায়ী সেই জৈন দিগম্বর ধর্মাবলম্বী সরাক সম্প্রদায়ের নগরী থেকেই খড়গপু্রের জিনশহর? কাঁসাই তীরবর্তী সেই জৈনদের ভগ্ন দেউল কত অজানা যুগের কথা বলে যায়, কে জানে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb91:89c:cac0:6172:3685:ad95:***:*** | ২৭ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৭529875
  • ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম।
  • Q | 49.207.***.*** | ২৭ মার্চ ২০২৪ ২২:১৫529879
  • চমৎকার  লাগলো ! 
  • Amit | 163.116.***.*** | ২৮ মার্চ ২০২৪ ০১:২৯529885
  • খুব ইন্টারেষ্টিং লেখা। অসাধারন। এসব ইতিহাস ​​​​​​​কিভাবে ​​​​​​​আমাদের দেশে নেগলেক্টেড ​​​​​​​হয় ​​​​​​​লজ্জার ​​​​​​​কথা। এগুলো ​​​​​​​পুরো সিভিলাইজেশনাল ​​​​​​​ফুটপ্রিন্টস ফসিলের মত। একবার ​​​​​​​মুছে ​​​​​​​গেলে ​​​​​​​আর ​​​​​​​কোনোদিন ​​​​​​​জানা ​​​​​​​যাবেনা। 
     
    একটা প্রশ্ন: ব্রোঞ্জ তো টিন আর কপার এর মিক্সড এলয়। আবার কাঁসা অর্থে যদি পেতল ধরা হয় - সেটাও কপার +  জিঙ্ক। তাহলে এই এরিয়া গুলোর র কাছাকাছি কোথাও টিন বা জিঙ্ক এর সোর্স জানা গেছে ?
  • অরিন | 119.224.***.*** | ২৮ মার্চ ২০২৪ ০১:৩৩529886
  • ভারি চমৎকার লেখা।
  • গৌতম সরকার, মালদা | 103.55.***.*** | ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫৮529892
  • আরেব্বাস! এ তো দারুন লেখা! সত্যিই এ ইতিহাস জানা ছিল না। ধন্যবাদ আপনাকে।
  • মৃণাল | 2401:4900:3ee2:b3d2:0:67:610f:***:*** | ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৯:০৫529893
  • দারুণ 
  • Dipak Kr Roy | ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৯:৩৭529896
  • অনেক তথ্য দিয়ে লেখা পড়ে আনন্দ পেলাম।
  • সব্যসাচী সরকার | 42.***.*** | ২৮ মার্চ ২০২৪ ১০:১৭529898
  • নরেশদা
    খুব সুন্দর। 
    আরো লেখো
  • সুচন্দ্রা | 2409:4060:402:714c::100:***:*** | ২৮ মার্চ ২০২৪ ১০:৪৩529899
  • অসাধারণ গবেষণা, অসাধারণ লেখা। খুব ভালো লাগলো। 
  • মহুয়া ব্যানার্জী | 2405:201:9003:ff68:14b6:7581:da7f:***:*** | ২৮ মার্চ ২০২৪ ১২:০৩529901
  • অসাধারণ তথ্য সমৃদ্ধ লেখা। খুব ভালো লাগলো 
  • দেবাশিস সরকার | 27.6.***.*** | ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪০529902
  • খুবই মূল্যবান লেখা । ক্ষেত্রসমীক্ষাজাত  উপলব্ধি গবেষকদর সমৃদ্ধ করবে।
  • Naresh Jana | ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৪:০৫529903
  • সব্বাইকে আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।
  • | ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৪:০৬529904
  • তথ্যসমৃদ্ধ চমৎকার লেখা। খুব ভাল লেগেছে।
  • Amiya Kumar Panda | ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৭:৫৫529909
  • শ্রদ্ধেয় নরেশ বাবু ,
    এক লহমায় আপনি সম্পূর্ন ছবিটি তুলে ধরেছেন।
    প্রণাম
  • অর্ঘ | 125.2.***.*** | ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫:৫৯529952
  • প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থাকলেও শুধু কথা দিয়ে এত সুন্দর ছবি আঁকতে মুন্সিয়ানা লাগে। আর প্রাঞ্জল বর্ণনায় যেন স্থানীয় মানচিত্রটাই চোখের সামনে ভেসে উঠল। লেখকের সাথে এরকম কোন অভিযানে সঙ্গী হতে পারলে দারুণ হত। এই চোখ,এই চিন্তা, এই মনন সকলই দীর্ঘজীবী হোক। আমরা সমৃদ্ধ হই।
  • সঞ্জয় আচার্য | 2409:40e0:103c:d94d:8000::***:*** | ০১ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৩২530081
  • চমৎকার লেখা। শিকড়ের সন্ধান।পুরাতত্ত্ব এর দৃষ্টি আর মুক্ত গদ্যের কলমের সংমিশ্রণ
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০১ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৪৯530092
  • সময় নিয়ে পড়লাম। ভালো লাগল‌। পুরাতাত্ত্বিক বস্তুর প্রতি প্রশাসনের অবহেলার মনোভাবের কথা পড়ে খারাপ লাগল‌।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন