হৈমন্তী প্রেমে পড়েছিল। একবার নয়, বারংবার। এর কিছুটা ও আমাকে বলেছিল নিজে থেকেই। আমি কখনও ওকে গায়ে পড়ে কিছুই জিজ্ঞাসা করি নি। দিনের পর দিন ক্রমাগত কথা হতো আমাদের। একেবারেই গুছিয়ে কথা হয় নি। ফলতঃ প্রেমের ক্রনোলজিও সেভাবে জানা হয়ে ওঠে নি। সেই সময়ে ওর লেটেস্ট প্রেম চলছে। সেই যখন দমদম জেল থেকে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে যাচ্ছিল। বয়ফ্রেন্ডের গাড়িতেই যাচ্ছিল। পাশে বয়ফ্রেন্ডই ছিল তখন। সেই বয়ফ্রেন্ডই জোগাড় করে দিয়েছে জামিনের টাকার একটা অংশ, বাকিটা দিয়েছে হৈমন্তীর স্বামী। স্বামী অবশ্য নিজে যায় নি, রনিকে নিয়ে আসার সময়ে। তার বয়স হয়েছে বিস্তর। একমাত্র সন্তানের এই বিপদের সময়ে হৈমন্তীর স্বামী ছিল চুপচাপ, তার ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন দেখা দেয় নি।
স্বামী একজন চিত্রশিল্পী। কথ্য বাংলায় আমরা যাদের বলি আর্টিস্ট।
ইনি সারাটা কর্মজীবন কেবল ছবি এঁকেই রোজগার করেছেন। বয়সে হৈমন্তীর চেয়ে পঁচিশ বা তিরিশ বছরের বড়ো তো হবেনই। হৈমন্তী নিজেও জানে না তার স্বামীর বয়সের গাছ পাথরের ব্যাপারে। এঁর সঙ্গে বিয়ে হবার পরে একটা দীর্ঘ সময়ে ওরা থেকেছিল বোম্বের একটা বস্তিতে। সে গল্প হৈমন্তী আমায় পরে বলেছিল।
মানে, ঐ যাকে বলে, গল্পতো ঠিক ক্রনোলজি মেনে হয় না।
যে কথা হচ্ছিলো, ওর লেটেস্ট প্রেম নিয়ে।
ছেলে ছাড়া পাবার পর পর ই হৈমন্তীর বড্ড মন খারাপ।
বয়ফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। গত আট ন বছর ধরে এই সম্পর্ক। অথচ এই বিয়ে রুখবার ক্ষমতা ওর নেই।
শুধু তাই ই নয়, ওর ওপরেই ভার পড়েছে পাত্রী পছন্দ করবার।
এ জিনিস আমার কাছে চরম ন্যাকামি মনে হলো।
আর পারলাম না জাস্ট শ্রোতা হয়ে থাকতে। বললাম, তুই কি ন্যাকা? বয়ফ্রেন্ডের জন্য পাত্রী খুঁজতে যাচ্ছিস? এত ঢ্যামনামির মানে টা কী?
— না রে, তুই বিশ্বাস কর, ওর বাড়ি থেকে চাপ দিচ্ছে, ওর মা পাগল করে দিচ্ছে বিয়ে বিয়ে করে।
— অসহ্য! আমি ফোন রাখছি।
— তোকে আমি বোঝাতে পারব না ব্যাপারটা। জীবনটা আমার ঠিক অন্যদের মতো নয়।
— সে বুঝলাম। কিন্তু মেয়েও তোকেই খুঁজতে হবে? তুই কি শরৎচন্দ্রের গল্পের নায়িকা? থুড়ি, উপমাটা কারেক্ট হলো না। আমার কোনও তুলনা আসছে না। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে দে।
— না না। কাগজে অ্যাড দিয়ে হবে না। আমি এখন অরফ্যানেজে যাব। ওখান থেকেই পছন্দ করব মেয়ে।
— তুই আমাকে আর কোনও দিনও ফোন করিস না। মনে থাকে যেন।
আমি ফোন কেটে দিয়েছিলাম। রাগে।