কাজেই এ কাহিনি একটি বইয়ের আলোচনার সূত্রে হলেও বরং বলা উচিৎ একাধিক অভিযাত্রীর, তাদের মধ্যে অন্তত দু’জন অভিযাত্রীর, ৪০ বছরের তফাতে, এ আলোচনার কেন্দ্রে থাকবেন।
একজন Antonia Bolingbrok-Kent, লেখিকা, বক্তা, বিবিসির সাংবাদিক, দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানো পর্যটক, আরেক জন নবনীতা দেবসেন | দুজনের লেখাতেই অরুনাচল প্রদেশের তাওয়াং মঠে যাবার গল্প। মঠ যাবার গল্প হতে পারে, কিন্তু দুজনের গল্পে যেমন মিল রয়েছে, তেমন ভিন্নতাও বিস্তর, তা সে হবারই কথা। নবনীতা গেছিলেন আলটপকা, হঠাৎ ম্যাকমাহন লাইন দেখব, তাওয়াং মঠ যাব করে, জোড়হাটের লেখক সম্মেলনের সূত্রে, হঠাৎ করে রীতিমতন খাবার নিয়ে যাবার ট্রাক/লরিতে করে | Antonia যাচ্ছেন আঁটঘাট বেঁধে, বিলেত থেকে ব্যবস্থা করে, তথাপি দু’জনের ভ্রমণ কোথায় যেন এক হয়ে যায়। সবটা তো সে পথে পরিকল্পনা করেও আপনি কিছু করতে পারবেন না। Antonia শুরু করছেন গৌহাটি থেকে একটি hero impulse বাইকে, পূর থেকে পশ্চিমে। পথে পড়বে মিশমি, ইদু, মনপাদের কথা। নবনীতা পৌঁছচ্ছেন তাওয়াং মঠে, সেখান থেকে তিনিও আবিষ্কার করছেন উপজাতি জীবন। অনবদ্য দুই অভিযাত্রী, দুই গল্প। কাজেই শুধু তো তাওয়াং মঠ নয়, সেখানে পৌঁছনোর অভিতাও এক অসামান্য অভিযান। যেখানে গন্তব্য শেষ কথা নয়, যাওয়াটাও বড় কথা।
কিন্তু কেন?
সে উত্তর খুঁজতে হলে কোথা থেকে শুরু করি? মন চলুক অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি।এখন যেখানে পাকিস্তানের সোয়াট নদীর উপত্যাকা, সে দেশ সেই সময় বৌদ্ধধর্মের এক ভর কেন্দ্র | তিব্বতেও তখন বৌদ্ধধর্মের প্রসার শুরু হয়েছে, শান্তরক্ষিত তিব্বতে বৌদ্ধধর্মের সংঘ প্রতিষ্ঠা করবেন, মঠ তৈরী হবে। সেই কাজে সাহায্যের জন্য তিব্বত-রাজ ত্রিসং ডেটসেন সোয়াট থেকে পদ্মসম্ভবকে আমন্ত্রণ করলেন তিব্বতে শান্তরক্ষিতের সঙ্গে মিলে মঠ গড়তে। সেই শুরু। এর পর পদ্মসম্ভব তিব্বতে বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের পত্তন করবেন, স্থানীয় বন প্রথার সঙ্গে মিলে, এবং আমরা তাঁকে জানব দ্বিতীয় বুদ্ধদেব বলে। সে জীবনের কথা অন্য কোন সময় লেখা যাবে, এখানে কেন তিনি স্মরণে এলেন? আজ থেকে হাজার বছর আগে মহাগুরু রিনপোচে পদ্মসম্ভব এমন বহু উপত্যকার এবং জায়গার সন্ধান করেছিলেন এবং লিখেছিলেন যে জায়গগুলো সাধারণ মানুষের অগোচরে, হিমালয়ের গভীর, গহণে লুকিয়ে রয়েছে (“বিউল” ), হিমালযের রত্বভাণ্ডার, যেখানে পৌঁছতে গেলে মানুষকে অনেকটাই অধ্যাত্মচেতনার উন্মেষের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। হয়ত সমাপতন, হয়ত নয়, নবনীতা ও Antonia, দুজনের লেখার মধ্যেই এই “চেতনা”উন্মেবের একটা পরিচয় ফুটে উঠেছে।
যেমন ধরুন দুজনের লেখাতেই Shangri la র প্রসঙ্গ এসেছে|
Shangri La কে পশ্চিমের নজরে জনপ্রিয় করেন জেমস হিলটন তাঁর লস্ট হরাইজন বইতে, পরে সে বই নিয়ে দু দুবার সিনেমা হয়েছে, ১৯৩৭ এর আর ১৯৭৩ এ |
নবনীতা লিখছেন,
> ক্রমশ দিনের আলো নিভে আসছে। সামনে পড়ল আবার একটা গ্রাম | প্রত্যেক গ্রামেই একটা সাইনবোর্ড আছ, গ্রামের নাম লেখা। এই নামটা পড়েই বুকের ভেতর ধ্বস নামল।
-- শাংগ্রিলা!
-- শাংগ্রিলা তো সেই আশ্চর্য তিব্বতী গ্রাম? হিমালয়ের তুষার রাজ্যের এককোণে সেই চিরযৌবনের গ্রাম মহাকাল যেখানে হাত ছোঁয়তে ভুলে গিয়েছেন। 'দি লস্ট হরাইজন' ছবির সেই মায়াময় জাদুগ্রাম, তারই তো নাম শাংগ্রিলা?"
আর Antonia? লিখছেন,
“The notion of hidden Himalayan utopias had existed in Tibetan scholarship for centuries, but it was Hilton who introduced the idea into the Western mainstream. His timing couldn’t have been better. For a generation who’d experienced the horrors of the Great War and the Depression – and were now sliding towards another cataclysm – Hilton’s imagined paradise ignited a potent nostalgia for a vanished age. ...“They don’t need to be the Rinpoche’s spellbound lands of rainbow waterfalls and mind-expanding magical herbs (although that would be a bonus), they just need to be the antithesis of our hectic, technology-driven modern lives.
But such places are fast disappearing, consumed by soaring human populations and our fathomless greed for land and resources: our forests are vanishing, our rivers are being dammed, our deserts are being encroached upon, our wildlife is being poached, mass tourism is fingering its way into all but the most distant parts of the planet. Could the Indian side of Pemako be a surviving, modern-day Shangri-La, a hidden valley free from the ravages of consumer capitalism? There was only one way to find out, and that was to try to travel there myself ”
সেটা একটা দিক।
দুই লেখিকার অভিযান আর adventure এর গল্পগুলো অনবদ্য |
আসছি সে কথায় |