এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আধার: গণতান্ত্রিক ভারতের ফ্যাসিস্ট প্রকল্প (১)

    বকলম -এ অরিত্র লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২১৯ বার পঠিত
  • শুরুর কথা | পরিচয়পত্র
    # শুরুর কথা #
     
    এক প্রখ্যাত মার্কিন সংস্থার পাঞ্চ কার্ড প্রযুক্তির সহায়তায় নাৎসি জার্মানিতে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, জীবিকা প্রভৃতি তথ্য সংগ্রহ করে একটি নাগরিক পঞ্জী (citizens’ register/tabulation) নির্মাণ করা হয়েছিল, অনেকেই জানেন হয়তো। একটি আরও ব্যাপক ব্যবস্থা আজকের ভারতে গড়ে উঠছে, যার বুনিয়াদি (foundational) প্রকল্পটি হল আধার (Aadhaar) আর এটিও চরিত্রে, আমি মনে করি ফ্যাসিস্ট। আমরা এর সম্ভাব্য অপব্যবহার ও বিপদের জায়গাগুলো এখানে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আলোচনাটি সব ধরণের পাঠকের কথা ভেবে সহজ ভাষায় ও বিশদে করার চেষ্টা করলেও, অতিরিক্ত দীর্ঘ করে না ফেলার দিকেও নজর থাকবে।

    এদেশে আধার নিয়ে ওজর আপত্তি অনেকই হয়েছে, তবে বেশিরভাগই পরিচয় চুরি (identity theft, impersonation), তথ্য চুরি (data theft), আর্থিক চুরি জালিয়াতি (financial fraud) ইত্যাদি নিয়ে। এই ধরণের ব্যক্তিগত আর্থিক ও তথ্যগত সুরক্ষা সম্পর্কিত আশংকা নিয়ে আমি চিন্তিত নই কারণ রাষ্ট্র নিজেই চাইবে না এই সমস্ত সমস্যা থাকুক, তাহলে ব্যবস্থাটি আস্থা অর্জন করতে পারবে না ও ব্যর্থ হবে! এই, মূলত রূপায়ণঘটিত খামতি বা প্রযুক্তিগত ত্রুটি, গুলো রাষ্ট্র (বা UIDAI) নিজেই ঠিক করে নিতে চাইবে। এই ভায়বস্থাটির প্রতি নির্ভরতা জনিত অসন্তোষ গুলো ঠিক প্রকল্পটির নীতিগত বিরোধিতা সবসময় নয়, বরং অনেকসময়ই সেটাকে আরও নির্ভরযোগ্য করে তোলার দিকে একটা দাবি। এইগুলো ছাড়া নাগরিক সমাজ থেকে, জঁ দ্রেজ প্রমুখ উল্লেখ্য, সামাজিক বহিষ্করণ (social exclusion) এর মতন অন্যায়কে সামনে তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে সামাজিক ন্যায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচিত হয়েছে, কিন্তু তবুও বহিস্করণ নিয়ে আপত্তিরও অন্তঃকরণের মধ্যে দিয়ে সমাধান হয়। এগুলোও সম্পূর্ণভাবে প্রকল্পটির বিরোধিতা নয়।

    যেটা জরুরি, সেই আধার প্রকল্প ও সার্বিক ডিজিটাল ব্যবস্থাটির পূর্ণ-বাস্তবায়ন-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র-নাগরিক ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তন এবং নাগরিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মতো সমষ্টিগত (of the mass) বিষয়ের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে নীতিগত উদ্বেগ বা আপত্তিগুলো সংগঠিতভাবে জনসাধারণের সামনে খুব একটা আসেনি। রূপায়ণগত ত্রুটির থেকে নীতিগত আপত্তির এবং ব্যক্তিগত সমস্যার থেকে সমষ্টিগত সমস্যাগুলো প্রশ্নাতীতভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তথা প্রধান। তাই এই “গুরু” বিষয়গুলোই আলোচনার পরিসরে থাকবে, অন্যগুলো নয়। তা নাহলে পাঠকের কাছে, গুরু-লঘু মিশে, আপত্তির প্রধান ও অপ্রধান কারণগুলো গুলিয়ে যেতে পারে।

    আলোচনায় আধার সম্পর্কে বা তার সপক্ষে যে চলতি প্রশ্ন বা যুক্তিগুলোর আমরা উত্তর খুঁজবো সেগুলো নিম্নরূপ:
    ১) আধার তো একটি পরিচয়পত্র, তেমন আরও পরিচয়পত্র ছিল আছে থাকবে, তাহলে আলাদা কী?
    ২) আমাদের তথ্য সমস্ত জায়গায় সংগৃহিত হচ্ছে, আধার নিয়ে আপত্তি করে কি লাভ?
    ৩) আচ্ছা যদি তথ্য নিয়েই থাকে, তাহলেই বা অসুবিধে কী?

    এটাও বলে রাখা ভালো যে রাষ্ট্রব্যবস্থা, তার পরিচালনকারী ক্ষমতাকে, আবশ্যিকভাবে মঙ্গলময় (benevolent) মনে হলে, সেক্ষত্রে এই আলোচনা অর্থহীন মনে হতে পারে। ভূমিকা অংশকে দীর্ঘায়িত না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে, আলোচনার শেষে গিয়ে এই প্রেক্ষিতে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারি। হতে পারে আলোচনার পরে আমাদের এই উপলব্ধি তৈরি হবে যে নাগরিকের স্বাধীনতার বা গণতন্ত্রের সংঘাতটা প্রযুক্তির সঙ্গে আসলে নয়, হয়তো প্রযুক্তির ব্যবহারের ধরণের সঙ্গে এবং তার থেকে তৈরী হওয়া ক্ষমতার মালিকানার সঙ্গে।

    আলোচনা এগোবে এইভাবে – প্রথমে পরিচয়পত্র নিয়ে কিছু চেনা জানা জিনিস ঝালিয়ে নেওয়া, এরপরে আধার-এর বিশেষত্ব, এই নিরিখে ডিজিটাল ব্যবস্থার তাৎপর্য, ডিজিটাল ব্যবস্থায় আধার-এর কার্যকারিতা ও তার অপব্যবহার, যথা – প্রতক্ষ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, আধার তথ্য ব্যবহার করে জনসমাজ সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি অর্জন, ইত্যাদি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    শুরুর কথা | পরিচয়পত্র
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন