এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আধার: গণতান্ত্রিক ভারতের ফ্যাসিস্ট প্রকল্প (২)

    বকলম -এ অরিত্র লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৪৭ বার পঠিত
  • শুরুর কথা | পরিচয়পত্র
    << এই লেখার এই অংশটি/পর্বটি এখন অসমাপ্ত, কিছু পরিমার্জনার পরে এই ট্যাগটি উঠিয়ে দেওয়া হবে >>
     
    # পরিচয়পত্র #

    পরিচয় কী? না কোনো ব্যক্তির প্রাথমিক পরিচয়গত তথ্য, যেমন নাম, বয়স, ছবি এবং হয়তো ঠিকানা, অর্থাৎ সেই তথ্য যা তাকে চিনতে অন্যদের সাহায্য করে। 

    পরিচয়পত্র অবশ্য বেশ সাম্প্রতিক ব্যাপার। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানের সদস্য বা গ্রাহক হওয়ার জন্যে নিজের পরিচয় দিতে হয়। যেকোনো প্রামাণ্য বৈধ নথির একটা দিলেই হত। এগুলো ঠিক পরিচয়পত্র নয়, এদের পরিচয়গত তথ্যের শংসাপত্র (certificate) ছিল। এই পরিচয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হত।

    কিছু ক্ষেত্রে যেমন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা বা ইমেইল অ্যাকাউন্টে লগ ইন করার সময় ব্যক্তিকে নিজের প্রামাণীকরণের (authentication) মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, অর্থাৎ তিনি প্রকৃতই সেই ব্যক্তিই কিনা তা নিশ্চিত করা। গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের সাথে তার সই মিলিয়ে বা পাসওয়ার্ড, পিন-এর মাধ্যমে। এখানে তিনি সেই একই ব্যক্তি কিনা শুধু সেটা নিশ্চিত করাই উদ্দেশ্য, সেই ব্যক্তির পরিচয় নির্ণয় করা সবক্ষেত্রে ‘আবশ্যিক নয়’। আর এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির একান্ত ‘স্বসূচিত, সক্রিয় ভূমিকা’ থাকে।

    শনাক্তকরণের জন্য পরবর্তীকালে ফটোগ্রাফ নেওয়ার সূত্রপাত হয়। এর ফলে সামনাসামনি কোনো গ্রাহককে তার জমা করে রাখা ফটোগ্রাফের সঙ্গে মিলিয়ে চেনা সম্ভব। তবে এখানে কর্মরত ব্যক্তির দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল হতে হয় এবং তা নির্ভুল হয় না। ফলে ফটোগ্রাফের অন্তর্ভুক্তি সই বা পাসওয়ার্ড-এর মত ব্যক্তি প্রামাণীকরণ ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপিত করেনি। তাছাড়া এই শনাক্তকরণ পদ্ধতিতেও গ্রাহক আইডি বা অ্যাকাউন্ট নাম্বারের জন্য গ্রাহকের ‘সক্রিয় অংশগ্রহণ’ একান্ত প্রয়োজনীয় (ডিজিটাল ফেস রেকগনিশন প্রযুক্তির কথা এই মুহূর্তে বাদ রাখছি)।

    এই সমস্ত চেনাজানা ব্যাপার গুলো বলার কারণ কয়েকটি জিনিস লক্ষ্য করা। সেগুলি হল – 
    এক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শংসাপত্র প্রয়োজন হত পরিচয়গত ‘তথ্যের প্রামাণ্যতার’ জন্য।
    দুই, কোনো ব্যক্তি এই প্রামাণ্যতা একাধিক উপায়ে দিতে পারতেন, যেকোনো বৈধ শংসাপত্রই গ্রহণযোগ্য ছিল।
    তিন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংগৃহীত পরিচয়গত তথ্যের ব্যবহার প্রতিষ্ঠানের ‘অভ্যন্তরীণ গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ’ থাকতো।
    চার, কোনো ব্যক্তি কোনো প্রতিষ্ঠানে পরিচয় দাখিল করতেন তার নিজের ‘ইচ্ছে, স্বার্থে ও প্রয়োজনে’। কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না।

    দশক দুই আগে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য (প্রথমে করদাতার জন্য) যে প্যান (PAN) তৈরি হল, সেটা উপরের বিষয়গুলোর অনেকগুলোই লঙ্ঘন করল। প্রথমত এই প্যান করদাতাদের প্রয়োজন বা স্বার্থে নয় বরং ‘আয়কর দপ্তরের প্রয়োজনে’, তাদের নিজস্ব হিসেবরক্ষার স্বার্থে তৈরি হল এবং বাধ্যতামূলক ভাবে হল। দ্বিতীয়ত এটি প্রকৃতিতে কোনো শংসাপত্র নয় (যদিও সেই হিসেবে এর ব্যবহার আছে) এটি একটি আর্থিক ক্ষেত্রের জন্য পরিচয় গঠন করার জন্য নির্মিত ‘পরিচয়পত্র’। আর তৃতীয়ত, যদিও আয়কর দপ্তরের নিজস্ব পরিচয়পত্র, এর ব্যবহার একটি প্রতিষ্ঠানের গণ্ডি পেরিয়ে একটি সম্পূর্ণ ‘ক্ষেত্রের’, সমগ্র আর্থিক ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য হলো। এছাড়া সম্ভবত পাসপোর্ট, যার সীমিত নির্দিষ্ট ব্যবহার ছিল, বাদ দিলে এটাই প্রথম একটি সাধারণ উদ্দেশ্যে নির্মিত (general purpose) ফটোগ্রাফ-যুক্ত পরিচয়পত্র, অর্থাৎ ফটো আইডি এবং যার সঙ্গে একটি সার্বিক ব্যবহারের জন্য অনন্য নাম্বার, অর্থাৎ প্যান নাম্বার, জুড়লো।

    এরপর আমরা পাচ্ছি (২০০৩ সালের পরিকল্পনা) একটি সার্বজনীন পরিচয়পত্র অর্থাৎ Universal ID যার প্রথম নামও ছিল UID এবং পরে সেটাই নামকরণ করা হয় ‘আধার’ – বা আধার কার্ড হিসেবে। এই আধার পরিচয়পত্রটি প্যান কার্ডের সমস্ত ধর্মই ধরে রাখলো এবং তার ওপরে এটি বিশেষ জোর দিলো শনাক্তকরণে এবং এর ব্যবহারিক ব্যাপ্তিতে। আধার শুধু আর্থিক ক্ষেত্র নয়, সমস্ত ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য একটি সার্বিক রাষ্ট্রব্যাপী পরিচয়পত্র হিসেবে উঠে এলো এবং কার্যত প্রায় বাধ্যতামূলক পরিচয় হিসেবে। একটি জন-পরিচয় ও পরিচিতি নির্মাণ প্রকল্প।
     
    কিন্তু পরিচিতি কী? পরিচিতি বলতে সাধারণভাবে যেমন কোনো মানুষ কিসের জন্যে পরিচিত বা খ্যাত (বা কুখ্যাত) বোঝায়, অর্থাৎ তার কর্ম সম্বন্ধীয়, ঠিক এখানেও তেমনি পরিচিতি মানে কোনো মানুষের নানান কার্যকলাপ (activities) বিশেষত যার digital footprint থাকে সেইসব ক্রিয়াগত তথ্য সমবেতভাবে তার ‘পরিচিতি’ নির্মাণ করে (প্রসঙ্গত আইডেন্টিটি অর্থাৎ পরিচয় ও পরিচিতি সম্পর্কে একটি সুন্দর বক্তব্য রেখেছেন লরেন্স লেসিগ দেখা যেতে পারে)। কিরকম তার ধারণা আমরা পরে করবো, তবে তার আগে দেখে নেয়া যাক এই আধার-এর বিশেষত্ব গুলো কী।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    শুরুর কথা | পরিচয়পত্র
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন