এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • উৎসাহী

    Aditi Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ | ৬৪২ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ফুলচোর উপন্যাসে এক মাস্টার মশাই ছিলেন যিনি কিনা কোয়ালিফিকেশন খ্যাপা! টাইপ শেখো, ইলেকট্রিকের কাজ শেখো.. দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে শুধু শিখে যাও!এতগুলি বিজাতীয় যোগ্যতা ধুয়ে কী ভাবে জল খাবো সেটি জিজ্ঞেস করেছো তো মরেছো! বাস্তব জীবনে এরকম নানান কিসিমের উৎসাহদাতার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত।এক অংক স্যার বিদঘুটে সময়ে অংক করাতে আসতেন, শীতের রাত সাড়ে দশটা বা লু বয়ে যাওয়া গরমের রবিবার দুপুর দুটো --- যখন কিনা চানটি সেরে সবাই ভাতটি খাবার তোড়জোড় করছে! সেটাই বুঝি তাঁর মার্কেট ডিমান্ড স্টেটমেন্ট যার বলে তিনি অনেক অভিভাবকের কাছেই আসতে আসতে মিথ হয়ে উঠছিলেন! আর আমাদের কাছে পেঁচো ঠাকুর! তিনি তাঁর নির্দিষ্ট ছাত্রটি ছাড়াও আসেপাশে যাকেই ওই ক্লাসের পেতেন তাকেই একটা প্রশ্নপত্র দিয়ে অংক পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করতেন! যতই বোঝাই মাধ্যমিকের অংক প্রশ্ন সরকারি বই থেকেই আসবে, শুধু মুদু আমার এই মধ্যমেধা নিয়ে কে সি নাগকে আর বিব্রত করা কেন? -- কে শোনে! আবার কোনো এক পুজোর ছুটিতে বাবার হারিয়ে যাওয়া এক বন্ধু কোথা থেকে যেন ফিরে এসে আমাদের আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ালেন!বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস আর ভূগোল থেকে নানান প্রশ্ন এসে ছুঁড়ে দিতে লাগলেন। তবে কিছুদিন পরেই উনি নিখোঁজ হলেন আবার। "শীতের আগে... বাড়ে" -- এমন কিছু কথাও কানে ভেসে এসেছিলো যেনো বাবা মায়ের ফিসফাস থেকে। আর কোনোদিন তাঁকে দেখিনি। 
     
    বিয়ের পর ইতিউতি পরিচয়পর্ব ও খাওয়া দাওয়ার আনন্দ মাটি হতে বসেছিল কুটমস্য কুটুম জাতীয় রাশভারী এক অবসরপ্রাপ্ত দিদিমনির সারস্বত উৎসাহের চোটে! সেবার ছিলো সুলতানি আমলের ইতিহাসের প্রশ্নবাণ। তবে ভোগান্তি এবার জোড়ে, আর সেটাতেই আনন্দ। অনেকটাই একসাথে কান ধরে ক্লাসের বাইরে দাঁড়ানোর মত! তিনি আবার আমাদের দুজনের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতার আবহাওয়া সৃষ্টি করে দুজনকে আরো উন্নতির পথে এগিয়ে দিতে চাইলেন। মনে আছে সেদিন শীতের বেলা গড়িয়ে রোদে কমলা রং এর ছোঁয়া লেগেছিলো, গঙ্গা ছুঁয়ে শির শিরে উত্তরে হাওয়ায় মাছের বড়া ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো, পোলাও ও। তারপর থেকে ও বাড়ি যাবার আগে ইনিয়ে বিনিয়ে জিগ্যেস করতাম উনি আছেন কিনা ----- কত কি শেখার আছে - এমন মানুষের সান্নিধ্য ---- ইত্যাদি। নেই শুনলে আনন্দ করে চলে যেতাম সেখানে দুজনে,পরে ছেলে কাঁখে।
    মাঝে মাঝেই নানান উৎসাহদাতা ব্যক্তি বা ঘটনা আমাদের আলসেমির কুসুম বিছানো পথে এসে দাঁড়ান। রবিবার সকালে ফোন করে কুশল বিনিময় টুকু করে নিয়েই হয়তো কেউ শুরু করেন  নানান সম্ভাব্য রোগের আলোচনা --- হয়নি, কিন্তু হতে কতক্ষণ? খুনী কে --- সেই রহস্য যখন ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে কোনো রহস্য উপন্যাস এর একেবারে ক্লাইম্যাক্স এ, ঠিক তখনই হয়তো কারুর তোমায় বলতে ইচ্ছে করলো তার প্রিয় সিরিয়ালটির গল্প। এই আরকি।
     
    কাজেই আনন্দে থাকা সহজ নয়, চারপাশে নানান চক্রান্ত!! তবে সময় বুঝে এই ধরণের উৎসাহীদের কাছ থেকে লুকিয়ে পড়ার, পিছিয়ে পড়ার, ক্যাবলা হয়ে তাকিয়ে থাকার কিছু স্কিল ডেভেলপ করতে পারলে ততটা অসুবিধা না হওয়ারই কথা।
     
    আসলে আনন্দে থাকার আর আনন্দে রাখার দায়িত্বটা বেজায় ভারী। নানান রংএ নিজেকে রহি রহি প্রদর্শন করলেই যেমন আনন্দ আসেনা তেমন ই "আনন্দ উৎসব করো!" হুঙ্কার ছেড়েও সে কর্তব্য করে ফেলা যায়না। উৎসব, উৎসাহ, উৎসাহী তিনটিই শেষ পর্যন্ত উপদ্রব হয়ে দাঁড়ায়।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সমরেশ দাশগুপ্ত | 42.***.*** | ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:১২527539
  • এতো পলাশীর শান্ত নন্দী । আমার স্কুল জীবনের বিভীষিকা। কোনভাবে সাড়া পেলেই ইংরেজী ট্রান্সশ্লেসন জিজ্ঞেস করত । তুই দেখিসনি। সদর পুকুরের রাস্তা ধরে হাতপাড়া যেতে পুকুরের ওপারে দেখতে পেলে অনেক ঘোরা রাস্তা ধরতাম। 
  • kk | 2607:fb91:87a:52eb:483c:ece2:b7bd:***:*** | ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৪৩527542
  • এই রে, ঐ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে খালি শিখে যাবার অভ্যেস তো আমার আছে! ঐ বিজাতীয় যোগ্যতা ধুয়ে জল খাওয়া যাবে কিনা সেসব চিন্তা মাথায় আসেনা। মনে হয় এ একটা বিদ্যা, শিখে রাখা ভালো। কাজে লাগতেই হবে তার কী মানে আছে? অবশ্য অন্য কাউকে শেখার জন্য আদৌ ইনসিস্ট করিনা। একদম না।
  • Aditi Dasgupta | ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:০০527548
  • একেবারে ঠিক জায়গাটি ধরেছেন। অনেক ধন্যবাদ। এই জায়গাটি আমাকেও ভাবিয়েছে লেখার সময়। তারপর লিখেই দিলাম প্রেক্ষিতের কথা চিন্তা করে। বিষয়টা আসলে ঐ প্রেক্ষিতে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং রিলেটেড, যে সময় জীবিকার সংস্থানের কথা মাথায় রেখে জীবনের বিশেষ মোড় টিতে এসে আমরা দাঁড়াই, যখন সময় ও সংস্থান দুই ই কম অথচ নির্দিষ্ট একটি পথ বাছতে হবে। তাইতো,শেখার তো সত্যিই কোনো শেষ নেই আর সেটিই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। কৌতুহল ছাড়া জীবন তো পুনরাবৃত্তি মাত্র ---বেরং  । আবারও ধন্যবাদ।
  • Amiya Kumar Panda | ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৫৫527549
  • ভ্যাবলাই ভালো 
  • Faltu | 223.19.***.*** | ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৯527551
  • চালিয়ে যান  । সেদিনের  ভয় বিরক্তি গুলো -- আজ বড্ড মিষ্টি। সবার জীবনেই মনে হয়  । সেগুলো কে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।  সবাই পারেন না।  
  • Arindam Basu | ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:২৯527561
  • এই রে, ঐ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে খালি শিখে যাবার অভ্যেস তো আমার আছে! ঐ বিজাতীয় যোগ্যতা ধুয়ে জল খাওয়া যাবে কিনা সেসব চিন্তা মাথায় আসেনা
     
    কেকে, যোগ্যতা ধুয়ে জল না খাওয়া গেলে শেখা অপ্রয়োজনীয় একটা মানসিকতা। আপনার নেই জেনে ভাল লাগল। বহু মানুষ এই গণ্ডির বাইরে বেরোতে পারেন না। আমাদের ছোটবেলায় আমরা এক প্রবাসী বাঙালি ভদ্রলোককে পারিবারিক সূত্রে জানতাম, তিনি যাকে বলে পলিম্যাথ।  আমাদের মা মাসি মামারা খামোকা ভদ্রলোককে পাগল দাগিয়ে দিয়েছিলেন, অথচ ভদ্রলোক সে আমলে প্রিনসটনের অধ্যাপক ছিলেন। 
  • kk | 2607:fb91:87a:52eb:483c:ece2:b7bd:***:*** | ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ০২:৪৯527562
  • অরিনবাবু,
    আমি অবশ্যই ঐ লেভেলের নই, তবু আমাকেও অনেকেই পাগল বলে দাগিয়ে থাকেন। প্রায়ই শুনতে হয় -- "কিছু জিনিষ শিগ্গির আনলার্ন কর, নাহলে তোর মাথা সারবে না।" এইসব নিয়েই চলা আর কী।

    অদিতি,
    আপনি কী ভেবে লিখেছেন সুন্দর বুঝতে পেরেছি। আপনার লেখা ভালো লাগছে। লিখতে থাকুন।
  • Aditi Dasgupta | ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১০527567
  • আপনাদের সব্বাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন