এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  স্মৃতিচারণ   স্মৃতিকথা

  • এল ডোরাডো

    যোষিতা লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ৩০ নভেম্বর ২০২৩ | ১২৭৭৪ বার পঠিত | রেটিং ৪.৩ (৭ জন)
  • এখানে লিখব সোনার দেশ সুইটজারল্যান্ডের নানান অভিজ্ঞতা ও মানুষের কথা।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.***.*** | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:১৪744428
  • ডট,
    শেফ ভিকাস খান্না। এখন ছটা মিশেলিন স্টার আছে ওঁর। কিন্তু বলেছিলেন যে ফ্রান্সে ছিলেন একটা সময়ে। ওখানকার কোনো রেস্তোরাঁয় শুধু ডেলিভারি বয় বা ডিশ ওয়াশার,এই কাজ ছাড়া করতে দেওয়া হতোনা। বাদামী গায়ের রঙের কারণে।
  • . | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৫744429
  • বোঝো!
    এবার আরও গল্প আসবে। 
    মিঃ খান্না খ‍্যাতির শিখরে উঠে স্বীকার করলেন ব‍্যাপারটা। নইলে চাপা পড়ে যেত সত‍্যটুকু।
  • সমরেশ মুখার্জী | ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৩৯744645
  • ৩.৩.২৪ অবধি পড়ে পরবর্তী পর্বে‍র জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। বেশ কয়েকবার ঢুঁ মেরেছি। তারপর আমি‍ও গুরুতে অনিয়মিত হয়ে গেছি। 
     
    লেখাটা বুকমার্ক করা ছিল। আবার ঢুকে একটানা ২৪.১.২৫ অবধি পড়ে গেলাম। কাছ থেকে দেখে, অনুভব করে, বিশদে লেখা এমন সুলিখিত বৃত্তান্ত পড়ে গোল্ডিজীর জন্য মনটা ভারী হয়ে গেল। এক্ষেত্রে গোল্ডিজী নিছক একজন ব্যক্তি নন, এমন পরিস্থিতিতে থাকা বহু মানুষের প্র‍তিভূ। তবে এসব সত্ত্বেও ওনার অন্ত‍রে শ্বেতাঙ্গপ্রীতি রয়ে গেছিল - এটা পড়ে একটু অবাক লাগলো।
     
    সটান আঙ্গিকে লেখা এই আঁখো দেখা হাল পড়তে বেশ লাগছে। ইউটিউব ভিডিও‍তে ছবির মতো প্রাকৃতিক সুন্দর দেশটি দেখতে ভালোই লাগে। কিন্তু বিশেষ, উচ্চ যোগ্যতা না থাকা তৃতীয় বিশ্বের সাধারণ মানুষের ওখানে বাস করার অভিজ্ঞতা এমন প্রত্যক্ষদর্শী‍র বিবরণ ছাড়া জানা সম্ভব নয়। 
     
    লেখা চলুক। অপেক্ষা করবো।
  • . | ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৩৬744654
  • হ‍্যাঁ, গোল্ডিজি অচিরেই আবার প‍্যাটেলের রেস্টুরেন্টে পুনর্বহাল হয়ে গেলেন। এটা অদ্ভুত কিছু নয়, অন্তত আমার দেখা অভিজ্ঞতার মধ্যে এ জিনিস পুরুষদের মধ্যে বেশ কমন। পুরুষদের মধ্যে এরকম ছেটোখাটো আত্মসম্মানবোধ চাকরির জগতে তুলনামূলক ভাবে কম দেখেছি। হয়তো তাদের এটা সহজাত ইন্সটিংক্ট। নিজের এবং নিজের পোষ্যদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হয় তাদের বেশিরভাগকেই। সেই চাপের সামনে কর্মক্ষেত্রের টুকটাক কি বড়োসড়ো অপমানকেও সহজেই ভুলে যেতে হয় তাদের। ঠিক যেমন মহানগর সিনেমায় মাধবী ঝোঁকের মাথায় চাকরিটা ছেড়ে দিতে পারে, স্বামী বেকার জানা সত্ত্বেও সে রিস্কটা নিয়ে ফেলে, আমাদের প্রচলিত সামাজিক বিচারের ভাষায় "একটু ইম্পালসিভ", "ইমোশনাল" আখ‍্যা দিই, ওর স্বামী সেটা হয়ত কখনই করতো না। কখনই কেন, নিশ্চয়ই করতো না। তার ঘাড়ে প্রাথমিকভাবে রোজগার করবার দায়িত্ব আছে যেহেতু। গোল্ডিজিও এর মধ্যেই প‍্যাটেলের করা সমস্ত অপমানের স্মৃতি সময় নামক ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফিকে করে করে প্রায় মুছেই ফেলেছেন। ছেলেমেয়েরা বেড়িয়ে ফিরে যাবার পরে উনি আবারও সেই চেনা কাজের পরিসরে দিন অতিবাহিত করতে লাগলেন।
    এর সঙ্গে মাঝে মাঝেই চড়া সুদে এবং চক্রবৃদ্ধিহারে ঋণ নিতে লাগলেন। ঐ ঋণ পরিশোধ হতো এক দু বছর ধরে। মূল ঋণের চেয়ে সুদের পরিমাণটা বেশিই ছিল, কিন্তু গোল্ডিজি নাচার, ঐ অর্থ দেশে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি জমি কিনছেন কিংবা দোকানঘর।
    আমি বলেছিলাম আমার থেকে বিনাসুদে ধার নিতে, পরে সময় করে মিটিয়ে দিলেই হবে, কিন্তু উনি নিতেন না। হয়ত মেয়েমানুষের থেকে টাকা ধার নিতে আত্মসম্মানে বাধত, নয়ত অবাক হতেন এই ভেবে যে বিনাসুদে টাকা দেওয়ার পেছনে আমার নির্ঘাত কোনও মতলোব থাকবে। কিংবা দুটোই হতে পারে কারণ। 
    এদেশে যেহেতু ব‍্যাংকে টাকা রাখলে সুদ প্রায় নেই, উপরন্তু ট‍্যাক্স আছে, ফলে টাকা কমে যায় একটু একটু করে। তাই উনি ব‍্যাংক ফাঁকা করে এবং মাইক্রোক্রেডিটের ঋণের সব টাকা দেশে পাঠিয়ে দেবার নেশায় মেতে উঠলেন।
    দেশে তখন ফুর্তির টাইম। বৌকে ফোনে জানাচ্ছেন টাকা পাঠানো হয়েছে, বৌ জানাচ্ছেন যে প্রথমে এই থোক টাকা দিয়ে বাড়ির পাশের জমিটা কিনে নিয়ে যেটুকু বাঁচবে সেটা দিয়ে বাউন্ডারি ওয়াল বানানোর ব্যবস্থা করবেন। এইরকম সব প্ল‍্যান চলত। গোল্ডিজিতো ধরেই রেখেছিলেন যে বুড়ো বয়সে দেশে ফিরে একটা বিজনেস শুরু করবেন। একটা ক‍্যাফে কাম লাইব্রেরি। কিঞ্চিৎ অংশে বুকশপ। স্বপ্নের মতো সেই বুকশপ বা ক‍্যাফে। স্পষ্ট সেসব দেখতে পেতেন চোখের সামনে। লোকজন ক‍্যাফেতে ঢুকে গরম কফি খেতে খেতে বই পড়ছে। কেউ কেউ একটা দুটো বই কিনেও ফেলল। 
    সেই স্বপ্নের বিজনেস এতটাই বাস্তবের মতো করে কথায় ও ভঙ্গিতে প্রকাশ করতেন তিনি, যে আমি আরাবিকা কফির গন্ধ পর্যন্ত যেন অনুভব করে ফেলতাম।
  • . | ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:১২744655
  • আসলে আমারও তো স্বপ্ন ছিল। কার না স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে হয় না?
    তবে আমি ছিলাম অন্য প্রকৃতির। সেই বিশ বছর বয়স থেকে ঘরছাড়া হয়েছি, কোনও দিল একটা পয়সাও নিজের খাবার বা পড়াশুনোর বা জামাকাপড় কি বাসস্থানের জন‍্য মায়ের কাছ থেকে নিইনি, তবুও হঠকারিতা হোক কি ইম্পালসিভ বা ইমোশনাল সিদ্ধান্ত নেবার বিলাসিতা করতে পেরেছি। আমারও কি ডিপেন্ডেন্টের সংখ‍্যা কম ছিলো? মোটেই না। তবু দুম করে চাকরি ছেড়ে দেওয়া বা অন‍্যায়ের প্রতিবাদ করে চাকরি খোওয়ানোর ঘটনা কম ঘটেনি জীবনে। সেইজন্যই ঐ কথাগুলো গোড়াতেই লিখলাম, হয়ত মেয়েমানুষ বলেই অপমান হজম করে নিয়ে, হে হে করে হেসে শেকহ‍্যান্ড করে পুরোনো এম্পলয়ারের কাছে কোনও দিনও ফিরে যাবার কথা ভাবি নি। 
    কর্মক্ষেত্রে গেলেই তো বেশি বেশি করে বর্ণবৈষম্য এবং তার সুচারু প্রয়োগগুলোর সঙ্গে পরিচয় ঘটে।
    মনস্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে ব‍্যাপারটা এইরকম, যে সমস্যাকে তুমি ইনভাইট না করলে সে তোমার কাছে আসবে না। কিংবা, তুমি হয়তো ওরকম ভাবছ, আসলে ব‍্যাপারটা সেরকম না।
    এর পাল্টা উত্তর দেওয়াই যায়। সমস‍্যাকে ইনভাইট করা জিনিসটা যে কী, তা আমি জানতাম না, এখনও জানি না, বা সম্ভবত আমার বুদ্ধি বিবেচনার বাইরের কোনও বিষয় । কিন্তু সেকেন্ড পয়েন্টটা নিয়ে আমার বেশ আপত্তি আছে। "তুমি হয়তো ওরকম ভাবছো" ব‍্যাপারটাও বেশ গোলমেলে। প্রায় কোয়ার্টার শতাব্দী পরে এই দুটো ধাঁধার মতো বাক‍্যবন্ধের উত্তর আমি পেয়েছি। শুধু তাইই নয়। রেসিজমের বিরুদ্ধে যে লড়াইটা আমার জারি ছিল নানান সময়ে, সেটা ফাইনালি জিতে গেলাম। নানান সময়ে আমি বাঘাবাঘা উকিলের পরামর্শ নিয়েছি, কিন্তু তারা পথ দেখাতে পারেনি। তাদের সকলেরই বক্তব্য ছিলো মোটামুটি একই ধাঁচের — আমরা জানি এগুলো হয়, কিন্তু আদালত মানবে না। যারা এগুলো করে, তারা অত‍্যন্ত সুচারুভাবে প্রমাণ না রেখে এগুলো করে। রেসিজম তো দূরের কথা কর্মক্ষেত্রে বুলিইং ও আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না। বরং অন‍্য চাকরি খুঁজুন। কী সুন্দর সলিউশন না? 
    কোনও কেসই তাই নথিভুক্ত হয় না, আর নথিভুক্ত না হলে যা হয়, লাই ... ড‍্যাম লাই... হয়ে স্ট‍্যাটিসটিক্স বলে এদেশে এসব খারাপ জিনিসের সংখ্যা খু উ উ ব কম। 
    কিন্তু অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমার যেটা বাড়ছিল, সেটার নাম হচ্ছে সাহস।
    যে ঘটনার কথা লিখতে চলেছি, সেটা গেল মাসের একটা সাফল্যের খবর আমার। বলা যেতে পারে অ‍্যাচিভমেন্ট। এইটে করে উঠতে না পারলে নিজের ওপরই একটা ক্ষোভ থেকে যেত। তবুও চাকরি জীবনে যখন খুব বেশি সময় বাকি নেই হাতে, একটা খোয়লে নতুন চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য, সেই সময়েই আমি রিস্ক নিয়েছি এই লড়াইটা করবার। আবারও। তবে এবার আমি জিতে গেলাম। কীভাবে পারলাম সেসব তো লিখবোই। এসব লিখতে গেলে আরও বেশ কিছু ঘটনা ইত্যাদি আগে বলে নিতে হবে।
  • . | ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:২১744657
  • বাংলাদেশ স্টাইলের চেয়েও কয়েক কাঠি এগিয়ে ধুলিয়ানের অ‍্যাটাক স্টাইল। পুকুরের জল, খাবার জলের ট‍্যাংকে বিষ মেশানো হয়েছে। এমনিতে খুন বোমা গুলি লুঠতরাজ আগুন জ্বালানো তো করেইছে, তবে জলে বিষ মেশানোটা নতুন আইডিয়া। এগিয়ে বাংলা।
  • . | ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:২২744658
  • ভুল জায়গায় পোস্ট। এটা ভাটিয়ালিতে লিখতে চেয়েছিলাম।
  • . | ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০২:৪৯744661
  • মানুষ যে কোনওমতেই উদ্ভিদ নয়, এইটুকু, শুধু এইটুকুই মন থেকে উপড়ে ফেলতে ফেলতে অভিবাসীদের কম সে কম একটা প্রজন্ম কেটে যায়। অন্তত ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষদের তো বটেই। তারা শিকড় নামক একটি ধারণার বোঝা বহন করে চলে দীর্ঘ সময় ধরে, এই অদৃশ্য বোঝাটির ভার বেশ ভালোই। এই বোঝার মধ্যে রয়েছে তার জমিয়ে রাখা নানান ধ‍্যান ধারণা এবং অসংখ্য কনফিউশন। শুধু যে এই বোঝাটি বয়ে চলার দায় সে নিজের কাঁধে চাপিয়ে প্রবাসী জীবন ধারণ করে তাইই নয়, এই বোঝাটিকে নিজের ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে বা কমিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কাঁধেও তুলে দিতে চায়, রিলে রেসের দৌড়বাজের মতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরবর্তী প্রজন্ম রাজি হয় না এতে, আর যদিবা জোরাজুরিতে রাজি হয় ও বা, এই বোঝাটি তাদের কাঁধে কনফিউশনের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। 
    অথচ এই শুকনো শেকড় বাকড়ের বোঝাটুকু যে তাদের জীবনে কোনও বনৌষধির মতো নিরাময়ক ঔষধির মতো ব‍্যবহারে আসবে না, তা তারা হয়তো বুঝতেও পারে না।
    বুঝতে পারে না যে মানুষ উদ্ভিদ নয়। মানুষ উদ্ভিদ হয়ে জন্মালে সে রাস্তাঘাট তৈরি করতে যেত না, জলপথে বা আকাশপথে পাড়ি জমাতো না দূরের দেশে, বহু দূরের কোনও দেশে। সে বেড়াতে যেত না, অভিবাসী হয়ে ওঠাও তার ক্ষমতার বাইরে থাকত। অন‍্য পরিবেশে, অন‍্য আবহাওয়ার মধ্যে সে প্রবল শীতে বা অসহ‍্য গরমে, কিংবা ঝড়ে বৃষ্টিতে মরে গিয়ে নিঃশেষ হয়ে যেত।
    সে শিকড় বয়ে নিয়ে যেতে পারে না, যেটা বয় সেটা মরা শেকড় বাকড়, তবে সঙ্গে করে যেটা নিয়ে যায় সেটা তার মাতৃভাষা, কিছুটা খাদ‍্যাভ‍্যাস, কিছু স্মৃতি এবং ধর্ম, কিছু পরিমাণ মূল্যবোধ, যেগুলো ক্রমশই পরিবর্তিত হতে হতে ক্রমে ফিকে হয়ে হয়ে মিলিয়ে যাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। এবং কিছু কিছু সে ছড়িয়ে দেবে নতুন দেশ্র নতুন সমাজে, যতটুকু সে পারবে তার সাধ‍্য ও সদিচ্ছার জোরে। 
    কিন্তু শিকড় আমার সেথায় গেঁথে রয়েছে — এই মনোভাব নিয়ে চললে প্রথম প্রজন্ম কনফিউশনের ত্রিশঙ্কু হয়ে ঝুলতে থাকবে জীবনের শেষ মুহূর্ত অবধি। 
    এ আমার দেখা এবং অনুভবের থেকে তৈরি হওয়া উপলব্ধি। এর ঠিক ভুল বিচার বিশ্লেষণ নানান ভাবে হতেই পারে।
     
  • . | ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:২৬744663
  • এল ডোরাডোতে আসবার সময়ে আমার লাগেজ ছিল মেরেকেটে বারো কিলো, সুটকেসের ওজন সহ। বিশ কি বাইশ কেজি অ‍্যালাওড থাকত তখন ফ্লাইটে এক্সেস ব‍্যাগেজ চার্জ না দিলে। জিনিস আমার বরাবরই কম থাকে, ভারি মালপত্র সঙ্গে রাখলে ছুটোছুটি দৌড়োদৌড়িতে বাধা হয়ে ওঠে। দুসেট কাপড়জামা, অল্প কিছু দরকারি জিনিস, জরুরি কাগজপত্রের ভার, এইসবের বাইরে যা নেব সবটাই এক্সেস ব‍্যাগেজ হয়ে যাবে ছুটেছুটির জীবনে, পায়ে বেড়ির মতো ঠেকবে। এসবের ওপরে আবার শেকড় বাকড় বওয়া! আমি নেই, আমি নেই ওসব আতিশয্যে।
    অনেক দেখেছি। শেকড়ের টান বলে যেটা মনে করে করা হয়, সেটা আসলে স্থাবর সম্পত্তির ওপরে অসীম মায়া। এই মায়া যত বাড়বে, দূরের ভূমির স্থাবর সম্পত্তি তোমায় টেনে রাখবে শেকড়ের মতো। সম্পত্তির ওপর মায়া থাকা স্বাভাবিক মনোভাব। সেই টানের ফলে অভিবাসী নতুন দেশটাকে পুরোপুরি কাছের করতে পারে না। প্রবাসী হয়েই কেটে যায় অন্তত প্রথম প্রজন্মটুকু কতকটা অনিশ্চয়তায়, কতকটা অনির্ভরতায়, জানা অজানা আতঙ্কে তে বটেই, নাগরিকত্ব পরিবর্তনের পরেও অনিশ্চয়তা মনের ভেতর থেকে মুছে ফেলা দুষ্কর হয়ে ওঠে, কেবলই মনে হতে থাকে শিকড় টানছে আমায় পেছনের দিকে, অতীতের দিকে, স্থাবর যেটুকু পড়ে রয়েছে ঐ পুরোনো বাসভূমিতে, বা যা হয়তো নিজেই তৈরি করে রেখেছি একটু একটু করে, যদি কখনো ফিরে যেতে হয় সেই আশঙ্কায়। 
    মুখে এরকম বললে সুবিধে হয় নিজেকে বোঝানোর যে, আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবদের টান, বুড়ো বাপ মা বেঁচে থাকলে তাদের দেখে রাখার টানেই আমি দেশে শিকড় তৈরি করেছি, কিন্তু সত‍্যিই কি তাই? অত টান থাকলে বাস্তবিকই দেশ ছাড়বে না কেও। এ সবই নিজেকে ভুলিয়ে রাখার জন‍্য নিজের জন‍্যই ঘুমপাড়ানি গান গাওয়া। 
    তুমি তোমার গোটা সংসারটুকু সঙ্গে করে নিয়ে বিদেশে থাকতে চললে চিরতরে, অথচ মুখে বলবে যে তুমি উদ্ভিদ, তোমার শিকড় রয়ে গেছে সেইখানে যেখানে তুমি জন্মেছো বড়ো হয়েছো, এ তোমার দ্বিচারিতা, কোনও এক ছদ্ম অপরাধবোধ থেকে এই নিজেকে প্রবোধ দেবার চেষ্টা। এই ব‍্যাগেজ তোমার পরবর্তী প্রজন্ম কেন বইতে চাইবে?
    সকলে তো গোল্ডিজির মত গোটা সংসার মানে আক্ষরিক অর্থেই দারা পুত্র পরিবার এবং কন‍্যাকে দেশে রেখে একাই অন‍্যদেশে অনির্দিষ্টকালের জন‍্য যায় না। বিশেষ করে যে সমস্ত দেশ বিদেশ থেকে আগত অভিবাসীদের পরবর্তীতে নাগরিকত্ব দেবার অপশন খোলা রাখে। 
    অবশ‍্যই ভালোভাবে খেয়ে পরে থাকার জন্য মানুষ মাইগ্রেট করে অন‍্য দেশে, এতে অন‍্যায়ের কিছুই নেই। কেউ সেটা অকপটে স্বীকার করতে পারে, কেউ লজ্জা পায়, অন‍্য কারণ দেখাতে চায়।
  • . | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:১৬744672
  • এল ডোরাডোতে আসবার পরে আমার নিজস্ব একটা লোভের জিনিস আমি মাঝেমধ্যেই কিনতাম। ভদ্রভাষায় বললে, লোকে বলে সখের জিনিস, কিন্তু আসলে তো ওটা লোভ। আমি অনেক খরচ বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে দামী দামী পারফিউম কিনতাম। প্রাণে ধরে খুব বেশি ব‍্যবহার করতেও পারতাম না, যদি ফুরিয়ে ‍যায় এই ভেবে। অথচ সেগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশই উবে যাচ্ছিল, অনেক বছর পরে দেখেছি শিশিগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে, তলানি হয়ে পড়ে রয়েছে খুব অল্প কিছু তরল, যেটার রঙ অপেক্ষাকৃত গাঢ়। এই শিশিগুলো রেখে না দিয়ে ফেলে দেওয়া উচিৎ বলে আমার মনে হতো। এ জিনিস জমানোর কোনও মানে হয় না, পুরোনো হয়ে যাওয়া বিবর্ণ দামি পোশাকের মত, আলমারিতে জায়গাই কেবল দখল করে রাখে শুকনো শেকড় যেমন খামোখা জায়গা নেয় জীবনে, ঠিক সেই রকম। এছাড়াও অনেক জিনিস ফেলে দিতে হয় অহেতুক মায়ায় না জড়িয়ে। তার মধ‍্যে থাকতে পারে পুরোনো জুতো, যেটা হয়ত প্রায় ব‍্যবহার করাই হয় নি, দেখতে সুন্দর ছিল, কিন্তু পরতে গেলে প্রতিবারই পায়ে ব্যথা লাগত, ফোস্কা পড়ে ছাল উঠে যন্ত্রণা হতো, সে জুতো জমিয়ে রাখা যায় না, যচ দামীই হোক না কেন, যত পুরোনোই হোক না কেন। অসুস্থ সম্পর্ক যেমন বাদ দিয়ে দেওয়াই ভালো, হোক না তা পুরোনো, নাহয় অনেক সময় ব‍্যয় হয়ে গেছে সেসবের জন্য, তাই বলে বয়ে বেড়াতে হবে সারাটা জীবন, এমন মাথার দিব্যি তো নেই। এই কনফিউশনগুলো থেকে বের হতে হতেই কত সময় অযথা অপচয় হয়ে যায়। 
    এই স্বগতোক্তির প্রয়োজন হয়ত নেই, তবু দেখতে পাই দোটানায় পড়ে রয়েছে প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীরা। কোনটা তাদের দেশ, নাকি অনেকগুলো দেশই তাদের দেশ, এই বুঝতে বুঝতেই জীবন কাটিয়ে দেয়।
    ফলতঃ নিজের পায়ের তলায় তৈরি করা জমিটুকুর প্রতি যে দাবী রয়েছে, স্বীকৃতির অধিকার রয়েছে, সেটা নিজের মন থেকেই মেনে নিতে পারেনা। 
    এ জিনিস আমার মধ‍্যে প্রথম দিকে কিছুটা তৈরি হচ্ছিলো। নিজের দাবী বুঝতাম না। আমি এল ডোরাডোয় পর্যটক নই, এটাই আমার নিজের দেশ হতে চলেছে, এইই আমার দেশ — এই উপলব্ধি বড্ড বেশি দরকার নিজের ভালোর জন‍্য। শুধু পাসপোর্ট বদলানোটা দিয়ে এটা হয় না। 
    লাল টকটকে পাসপোর্ট হাতে পেয়েও গোল্ডিজি তাই পর্যটকই রয়ে গেলেন। 
  • :|: | 2607:fb90:bd92:1d54:b1df:c89c:9d88:***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৩744673
  • এই অংশটি খুবই ফিলোসোফিক্যাল হয়েছে। আরও বড়ো করে ভাবলে এটি বেদান্তের কথা। এই দেহমনের সঙ্গে আইডেন্টিফাই করাটাই মস্ত বড়ো ব্যাগেজ। যাকে টেকনিক্যালি বলে মায়া। সেই জন্য নিত্য-শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত আত্মা হিসেবে "স্বদেশ ভুবনত্রয়"-এর পাসপোর্ট হাতে পেয়েও পৃথিবীতে ক্ষণিকের পর্যটকরূপে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ভোগ করে যায় বেশীরভাগই।
  • kk | 172.56.***.*** | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৫744676
  • লেখার প্রবাহের এই বাঁক নেওয়াটা খুব ভালো লাগলো পড়তে।
  • সমরেশ মুখার্জী | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১১:১৩744677
  • আমার জন্ম‍প্রদেশ পশ্চিম‍বঙ্গ ছেড়ে ভারতের মধ্যে‍ই প্রায় ৩৫ বছর নানা জায়গায় ভিন্ন প্রদেশে কাটিয়েছি তবে কখনো বিদেশে থাকিনি। আমি স্বভাবে কিছুটা Recluse বা একান্ত‍চারী  বলে বহুদিন ভিন্ন প্রদেশে থেকেও কলকাতা বা বঙ্গের জন্য শিকড়ের টান অনুভব করিনি। লেখিকার (এবং তাঁর মেয়ের) ক্ষেত্রেও শিকড়ের টান সেভাবে অনুভব না করার কিছু বাস্তব কারণ লেখাতেই এসেছে।
     
    ১৬.৪ / ২:৪৯ এবং ৪:২৬ এর পোষ্ট দুটিতে লেখিকার "শিকড়" সংক্রান্ত  ভাবনার প্রকাশ আমাকেও বেশ ভাবালো। 
    চলুক। পড়ছি। 
  • . | ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:১০744682
  • আমিও গোড়ার দিকে পর্যটক মনোভাব নিয়েই যেন এল ডোরাডোতে কাটিয়েছি কিছু বছর। সমস্ত সময়ে আমি/আমরা এবং ওরা র সঙ্গে মনের ভেতর অজান্তেই যেন তুলনা চলত, যেমন প্রতিনিয়ত খরচের হিসেব কেনও এক গুণিতক দিয়ে গুণ করে ভারতীয় মুদ্রায় ফেলে ফেলে চলত এক ধরনের ম‍্যাপিং। এক সময়ে হঠাৎই খেয়াল করেছি যে যে ঐ গুণ করার অভ‍্যাস কেটে গেছে চুপিসারে।
    তবে আমরা ওরার তুলনা অত সহজে যাবার ছিল না।
    উন্নয়নশীল দেশের মধ‍্যবিত্ত পরিবারের ব‍্যাকগ্রাউন্ড থেকে যারাই বিদেশে বাস করতে যায়, তাদের প্রায় সকলেই মনের মধ্যে বাসা বাঁধে এক ধরনের কুণ্ঠা, যার পেছনে থাকে নানান কারণ। অন‍্য পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া, সে দেশের আবহাওয়া, খাদ‍্যাভ‍্যাস, পথঘাট, নিয়ম কানুন, হিসেব নিকেশ খরচ, সামাজিকতা — এসমস্ত যেমন একটা দিক, তেমনি নতুন চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত শুধু নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা আরও একটা দিক।
    ইয়োরোপে সমস্তর ওপরে থাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি — ভাষা। কর্মক্ষেত্র হোক কি হাটে বাজারে, টিঁকে থাকতে হলে দেশের ভাষা জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে, সে ভাষায় কথা বলতে হবে, পড়তে হবে সমস্ত প্রয়োজনীয় এবং আবশ্যিক নথিপত্র, সে ভাষাতেই লিখতে হবে, অন‍্য কিছু চলবে না। অন‍্য কিছু বলতে বোঝাচ্ছি ইংরেজি। ইংরেজি অচল এল ডোরাডোয়। ফুল টাইম চাকরি, ঘরের কাজ, মানিয়ে ওঠার মত কাজের সঙ্গে জুড়ে যায় নতুন করে একটা ভাষা শেখার দায়িত্ব। এ কোনও সখের শেখা নয়। 
    তবে গরীব দেশের মানুষ আমি, সেভাবে দেখতে গেলে বেটার লাইফ, সুস্থ সমাজের খোঁজে এত দূর অবধি পাড়ি জমাতে পেরেছি গোটা কতক সমুদ্র আর অসংখ্য নদী নালা পর্বত পার হয়ে, জাস্ট একটা নতুন ভাষা শিখতে পারব না? নিশ্চয়ই পারব। আমার নিজের জন্য, সন্তানের জন্য, জাস্ট বেঁচে থাকার জন‍্য, খুন হয়ে মরে না যাবার জন‍্য তো অনেক বেশি বুঝি এবং শ্রম দিতে হয়েছে জন্মভূমিতে। এল ডোরাডো আমায় ডেকে নিয়েছে এই আশ্বাস দিয়ে যে, সেখানে আমার প্রাণনাশের আশঙ্কা নেই, শিশুর জন‍্য কোনো ভয় নেই, সে আর পাঁচজনের মতই বইখাতাকলম বদলদাবা করে পড়াশুনোর জন্যে ইস্কুলে যেতে পারবে। এই ইস্কুলে যাওয়ার অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না, আমিও না। তো এত কিছু যখন পাচ্ছি, তখন ভাষা শেখা কী এমন রকেট সায়েন্স? ভাষা শিখে মস্ত সাহিত্য রচনা করে গোয়েথে কি শীলার তো হতে হচ্ছে না, সেসব সাহিত্য কি কাব‍্যও পড়বার দায় নেই। 
     
  • . | ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৪৫744683
  • মধ‍্যবিত্তের আরেকটা বাধা থাকে মনের মধ্যে, পিছিয়ে পড়ার ভয়। সমস্ত সময়ে একটা অহেতুক অ‍্যাংজাইটির শিকার হতে দেখতাম কোলকাতায় আমার চারপাশের মানুষদের। তখন সবে দেশে ফিরে চাকরি বদলে বদলে একটায় থিতু হয়েছি। মোটামুটি ভালোই কোম্পানি, সবাই উচ্চশিক্ষিত। আমরা সকলেই হয় ইঞ্জিনিয়ার নয় চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, অল্প সংখ্যক এমসিয়ে বা অন‍্য কোনও ডিপ্লোমা। সকলেই তরুণ, অনেকেই সংসার শুরু করেছে, সন্তান ও আছে কারো কারো। প্রত্যেকেই ভালো উপার্জন করছে কিন্তু কী প্রবল টেনশনের জীবন তাদের, সব কিছুতে সমস্যার ভয়, সবসময় অ‍্যংজাইটিতে ভুগছে। কেমন আছো? এই প্রশ্নের উত্তরে কখনো বলতে পারে নি এরা — ভালো আছি। 
    এরা বলবে — "চলে যাচ্ছে", কিংবা "তিনি যেমন রেখেছেন", কিংবা "আর বোলো না", এই ধরনের অদ্ভূত বাক‍্যবন্ধ। 
    শুনতে অসভ‍্যের মতো লাগে। তবু এরা এগুলো বলে। এরা সত‍্যিই আসলে ভাল নেই। এরা "আমি ভাল আছি " টুকু বলতেও ভয় পায় — পাছে কারো নজর লেগে যায়।
    লাগাতার কম্পিটিশনে লড়তে লড়তে এদের স্নায়ু সবসময়ই সচেতন আরও সমূহ কম্পিটিশনের মোকাবিলা করার জন‍্য। সহজে কিছু হয়ে গেলে সে জিনিস মেনে নিকে পারবে না। এদের মতো ই কারো কারো সঙ্গে ফের দেখা হয় এল ডেরাডোয় কখনও সখনও। সহজে যেটা পাওয়া যাবে সেটা নিতে চাইবে না প্রথমে, সন্দেহ করবে, পরে জলটা ঘোলা হলে ঐ জলটাই খাবে। 
    তো যে কথা হচ্ছিলো, ভাষা শেখার বেলায় এরা মোটেই রাজি হতে চাইবে না। ঘুষ দিতে পর্যন্ত প্রস্তুত ভাষা পাশের সার্টিফিকেট পাবার জন‍্য — এমন লোকের দেখাও পেয়েছি। 
     
    পিছিয়ে পড়ার ভয়টা আসলে তৈরি হয় সীমিত সম্পদের যখন অনেক বেশি পরিমাণে সম্ভাব‍্য গ্রহীতা থাকে তখন। ইস্কুলে হয়ত ক্লাস ওয়ানে একশো জনকে ভর্তি নেবে, পাঁচশো জন‍্য ক‍্যান্ডিডেট। মারামারি হবেই। 
    উচ্চশিক্ষা নিতে যাবে, সেখানেও সীট সীমিত, ফের অসুস্থ কম্পিটিশন, তারপর ভালো চাকরির জন্য, বসকে খুশি রাখার জন‍্য, ক্লায়েন্টকে হাতে রাখার জন‍্য, কম্পিটিশন যদি সর্বক্ষণ চলে, মানুষ তো ক্রনিক অ‍্যাংজাইটিতে ভুগবেই। 
  • . | ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৫৫744684
  • এই আমরা-ওরা র তুল‍্যমূল‍্য বিচার সর্বক্ষণ যদি চলতে থাকে বিদেশে গিয়ে, তবে সে দেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সেখানকারই একজন মানুষ হয়ে ওঠার প্রসেসে বাধা পড়বেই। তারা আমায় আপন করে নিতে পারল কি না পারল, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই আমি সেই দেশটাকে নিজের করে নিতে পারলাম কি না, সেটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ  বলে মনে হয় আমার।
    কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ হিসেবে আমার মনের মধ্যে কম বেশি কলোনিয়াল হ‍্যাংওভার থাকবেই, স্বীকার করি বা না করি। শ্বেতাঙ্গ মানুষ দেখলেই তাদের নিজের থেকে উন্নত মনে করার একটা ঝোঁক অজান্তেই কাজ করে মনের ভেতর, সবসময় তা নিজে টের পায় না মানুষ। 
    একটু বেশি ভদ্রতা দেখানোর প্রবণতা, একটু বেশি পাত্তা পাবার আকাঙ্খা কাজ করে। আমরা সকলেই সমান এটা মনের ভেতর থেকে আসে না সবসময়। এই রেশিয়াল প্রোফাইলিংটা যতদিন নিজের ভেতর থাকবে, তুমি নিজেকে পুরোপুরি সম্মান করতে পারবে না। তুমি রেসিজম এর শিকার হলেও তা মুখ ফুটে বলতে পারবে না, তোমার তা গা সওয়া হয়ে যাবে। তুমি কিছু পরিমাণ অন‍্যায় অ‍্যাকসেপ্ট করে নেবে, তুমি ধরেই নেবে যে — ও কিছু না, ওরা ওরকম করে, কই আমার তো মনে হলো না যে আমার সঙ্গে মন্দ ব‍্যবহার করল!
    অথচ ঐরকম ব‍্যবহারই যদি তোমার মতই কেউ তোমার সঙ্গে করতো, তুমি তাকে ছেড়ে দিতে না, যদি না তার সামাজিক অবস্থান তোমার চেয়ে উঁচুতে থাকত। 
    এই যে তুমি দিনের পর দিন মন্দ ব‍্যবহার বা কটুক্তির জবাব না দিয়ে "ইগনোর" করে চলেছো, তাতে তুমি নিজেও জানো ইগনোরে খুব বেশিদিন রোগকে ঠেকিয়ে রাখা যায় না। 
    আমি নিজে যখন এসবের ভেতর দিয়ে গেছি তখন ভেবে দেখেছিলাম ইগনোর নামক ব‍্যাপারটা দীর্ঘস্থায়ী কোনও সমাধান হতে পারে না। "ইগনোর" ক্রমশঃ আক্রান্তকে স্বচ্ছন্দে থাকতে দেয় না। সমাজ বা কর্মক্ষেত্র কোনও জেলখানা নয় যে সব কিছু মেনে নিয়ে চলতে হবে, আমরা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নই। ইগনোরের সামাধান কাজে না দিলে, তবে কি অ‍্যাকসেপ্ট করে নিতে হবে? তাহলে তো নিজেকে অবমানব হিসেবে নিজেই স্বীকৃতি দেওয়া। নাহ, এই অপশনও পছন্দ হলো না আমার। আমি যদি আত্মসম্মান বোধ নিয়ে থাকতে চাই, তাহলে "অ‍্যাকসেপ্ট" আমার অপশন নয়। এর পরবর্তী অপশন তাহলে কী হতে পারে? আমার সামনে তখন দুটো অপশন এলো। রিজেক্ট অথবা অ‍্যাড্রেস।
    আমি ঐ রেসিজমের পরিবেশ ছেড়ে দিয়ে অন‍্যত্র চলে গেলাম — এটা একটা উপায়। কিন্তু যদি অন‍্যত্র গিয়েও আবারো রেসিজমের সম্মূখীন হই, তখন? আবার রিজেক্ট করে অন‍্যখানে? কতবার? কতদিন? 
    তখন শেষ অপশন পড়ে থাকে "অ‍্যাড্রেস" । এ সমস্তই আমার নিজের থিওরি, এবং প্র‍্যাকটিস। শেষ অপশনে অর্থাৎ অ‍্যাড্রেস করে আমি ফল পেলাম আশাতীত। তবে সেই কাজটুকু করতে আমার বিস্তর কষ্ট তো হয়েইছে, তার সঙ্গে ছিল তুমুল ক‍্যালকুলেশন এবং ডকুমেন্টেশন। প্রমাণ। 
    সমস্ত অপরাধীই প্রমাণ রেখে যায়। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো প্রমাণগুলোকে রক্ষা করা যায় নি, সে চেষ্টা করবেই প্রমাণ না রাখতে, তবু ভিকটিমের উচিত মাথা ঠাণ্ডা রেখে যতটুকু সম্ভব প্রমাণই হোক না কেন, সংরক্ষণ করা। 
    অবশ্যই সবক্ষেত্রে যে রেসিজম এর প্রমাণ গৃহীত হবে, তা নয়।
    রেসিজম কেন হয়, কারা করে, এসব নিয়ে হয়তো বিস্তর মেটিরিয়াল বাজারে পাওয়া যাবে, তবে প্রত‍্যেকটা কেসই আলাদা। আমার সাকসেস স্টোরি ও একটা আলাদা বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
  • . | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৫৩744713
  • হ‍্যাঁ। লিখে রেখে যাই। সময় যতক্ষণ আছে ডকুমেন্ট করে কাখা যেতেই পারে।
    যে প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল সেটা রেসিজম। এক ধরণের বিকৃত মানসিকতা, অন্য জাতের, রেসের মানুষকে। মানুষই এটা করে থাকে। 
    এল ডোরাডোয় এবং পার্শ্ববর্তী কয়েকটা দেশে এই জিনিস বেশ প্রচলিত। তবে ঐ যে বললাম, ডকুমেন্টেড তথ্য তুলনায় অনেক কম, ফলতঃ স্ট‍্যাটিসটিকালি দেখা যাচ্ছে খুবই কম মাত্রায় হচ্ছে। অধিকাংশই এগুলো গায়ে মাখে না, অর্থাৎ জেনেও ইগনোর করে। কেউ কেউ অ‍্যাকসেপ্ট করে নেয়। এর জ্বলন্ত প্রমাণ আমাদের গোল্ডিজি। 
    যে রেসিজম আমি সপাটে প্রতিহত করতে চাইবো, উনি সেটা মেনে নেবেন। আমি এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখেছি যে উনি তো এসবে বরাবরই অভ্যস্ত ছিলেন। বংশপরম্পরায় ভারতীয় সমাজে তথাকথিত নীচু জাতের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এই অন‍্যায় বরাবর মেনে নিয়েছে। এক কি দু জেনারেশন আগে চুড়ান্ত দারিদ্র‍্যের কবল থেকে রক্ষা পেতে ধর্মান্তরিত হয়ে ক‍্যাথলিক হয়েছেন এঁরা। দারিদ্র‍্য প্রথম দিকে তুলনামূলক ভাবে কমলেও তেমন উন্নতিও কিছু হয় নি। এখনও প্রবলভাবে জাতপাত মানেন। তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষের প্রতি এক ধরনের বিশেষ শ্রদ্ধা, গদোগদো ভাব, ঠিক যেমনটা শ্বেতাঙ্গ ইয়োরোপিয়ান দেখলে এই উপমহাদেশের অনেকের মনে উদ্রেক হয়।
    তুলনায় আমি মেয়ে হয়েও তথাকথিত নিম্ন বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের নই, দারিদ্র্য কাকে বলে তা শৈশবে সরাসরি অনুভব করা হয় নি, যুগপৎ প্রবল অন্নকষ্ট এবং উচ্চবর্ণের ঘৃণা কেমন করে জীবন ব‍্যালেন্স করে গ্রহণ করে নিতে হয়, সেসব কৌশল আমার কোনওদিন জানা হবে না। তাই জাতিভেদমূলক অন‍্যায় আচরণ দেখলে আমার গায়ে ফোস্কা পড়ে। গোল্ডিজিকে যখন রান্নার কাজের বদলে জঞ্জাল পরিষ্কার করতে দেওয়া হয়েছিল, কিংবা ওঁর চেহারা নিয়ে খিল্লি করতো কোলিগরা, উনি গায়ে মাখতেন না অথবা মেনে নিতেন, জানতেন এটাই এইবারের এই জন্মের দস্তুর। উনি জানেন যে ওঁর চেহারা দেখতে খারাপ, এবং তা এই জন্মে বদলানো যাবে না, অতএব এই খিল্লি ওঁর প্রাপ্য ছাড়া আর কীই বা হতে পারে? মাসের শেষে বেতনটুকু ব‍্যাঙ্কের অ‍্যাকাউন্টে ঢুকে যাওয়াটাই তো বটমলাইন। তাই আক্রমণকারীরা আস্কারা পাচ্ছিলো যা ক্রমে এমন বেড়ে উঠেছিল যে গোল্ডিজির বেতন আর নিশ্চিত থাকে নি।
    এই দেশে এই ধরনের অত‍্যাচারগুলোকে সরাসরি রেসিজম এর তকমা দিতে চায় না সমাজ। এগুলোতে ওয়ার্কপ্লেস বুলিইং এর লেবেল সাঁটলে অপরাধের গুরুত্ব কিছুটা হলেও কমে। যদিও এই বুলিইং বা স্থানীয় ভাষায় মবিং জিনিসটা প্রমাণ করা প্রায় শিবেরও অসাধ্য। যারা এগুলো করে তাদের মধ্যে আছে শৈশবে বা অল্প বয়সে নানান ধরণের ভায়োলেন্স ও টর্চারের শিকার হওয়া মানুষ। এ তো গেল তাদের সাইকোলজিকাল অবস্থা। এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। যেটা পাওয়া যায় কম, সেটা হচ্ছে সঠিক প্রতিকারের ব্যবস্থা বা উপায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো প্রমাণ করা দুরূহ ব্যাপার। তার ওপরে রয়েছে অত‍্যাচারের তীব্রতার তারতম্য নিয়ে সূক্ষ্ণ বিচার বিশ্লেষণের খেলা। ভার্বাল খিল্লি বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে যে সমস্ত অপরাধ অত‍্যাচার হয়, সেগুলো ক্ষণিকের জন্যে হলেও আক্রান্তের মনে ক্ষত রেখে যায় গভীরভাবে। শারীরিক ক্ষতি না করা পর্যন্ত এসব অপরাধ বিশেষ গুরুত্ব পায় না প্রমাণাভাবে। আর কোন মূর্খ মারামারি করতে যাবে? খিল্লি করেই যখন উদুম মজা পাওয়া যাচ্ছে, তখন মারামারি করবার দরকার নেই। সমস্ত ফ্রাস্ট্রেশন ঝেড়ে ফেলার জন‍্য পাঞ্চব‍্যাগ একটা পাওয়া গেলে, দেয়ার ইজ নাথিং লাইক দিস্।
  • . | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:২২744716
  • এবার আমার প্রসঙ্গ টেনে আনার পালা। 
    প্রথমে যে চাকরিতে যোগদান করে এল ডোরাডোতে এলাম সেখানে আমার কোলিগ গশা আমাকে বলেছিল যে অন‍্য এক কোলিগ হাইকো নাকি আমাকে পছন্দ করে না। না, গশা ঠিক ওভাবে বলে নি। ও যেভাবে বলেছিল সেটা এইরকম।
    — আচ্ছা, হাইকো তোমাকে পছন্দ করে না কেন বলো তো?
    — কে হাইকো?
    — হাইকো ফিশার।
    — কোন ডিপার্টমেন্ট বলো তো, আমি চিনি না মনে হয়, আলাপ হয়েছে কিনা মনে করতে পারছি না।
    — ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের হাইকোকে চেনো না?
    — নাহ।
    — ও কিন্তু তোমাকে চেনে। তবে কথা শুনে মলে হলো তোমাকে পছন্দ করে না। কেন বলো তো?
     
    আমি সেই সময়ে এখনকার তুলনায় বোকা ছিলাম। আমি ভাবছি তখন, সত্যিই তো, কেন হাইকো আমায় অপছন্দ করে?
    এরকম অদ্ভুত অপ্রীতিকর প্রশ্ন যে গশা নামের পোলিশ মেয়েটি আমাকে করছে, তার স্পর্ধা নিয়ে আমি ভাবি না এতটুকুও। এই সংলাপকে বোকার মতো এন্টারটেইন করি। গশা প্রশ্রয়টুকু পেয়ে যায়।
    পরে অন‍্য সময়ে ভেবে দেখি, যে হাইকো নামের ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের কোনও লোক কেন আমাকে অপছন্দ করছে সে নিয়ে আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করা হলো? অদ্ভুত তো! হাইকোকে জিজ্ঞাসা না করে আমাকে কেন?
     
    যদিও এ নিয়ে আর কোনোদিন কথা হয় নি, অনেক পরে ভেবে দেখেছি যে, এটা এক ধরণের ডিসক্রিমিনেশন ছিল। খুব সূক্ষ্ম ভাবে।
    পরের কিছু চাকরিতে গ্রুপের কিছু কোলিগের থেকে অসহযোগিতা বা ব‍্যক্তিগত লেভেলে আমাকে মূর্খ বা বোকা মনে করানোর খেলা প্রচুর চলেছে। অবশ্যই আমার গায়ের রঙ নিয়েই তাদের অসন্তোষ আপত্তি। এমন রঙের একটা মেয়ে সমানে সমানে কাজ করছে, খানিকটা বেশিই কাজ করছে, আবার কঠিন কাজগুলো যেগুলোর সমাধান হচ্ছিলো না সেগুলোও ঐ কালো মেয়েটা করে ফেলেছে, কী সাহস! কোথায় ওর টয়লেট সাফ করার কথা, পুৎসফ্রাউ হয়ে ব্রাশ হাতে পায়খানার প‍্যানের দাগ পরিস্কার করবে, তা নয়, সাহসটা দেখো ওর একবার। নিজের দেশে তো খেতে পেতো না, তাই খাবারের লোভে লোভে এখানে এসে জুটেছে। চলো চলো, ওকে একটু ঠুকরিয়ে আসি।
    এই ঠুকরোনোগুলোর জন্য বিশেষ বিশেষ কিছু বাক‍্য থাকে। ওপর ওপর শুনলে মনে হবে নিষ্পাপ সব প্রশ্ন।
  • :|: | 2607:fb90:bd9d:8266:e567:d0b1:fca:***:*** | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৩৩744717
  • "পুৎসফ্রাউ হয়ে ব্রাশ হাতে ... " -- পুৎসফ্রাউ ব্যাপারটিকে নিশ্চয়ই আপনি খারাপ চোখে দেখছেননা? 
  • . | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৫৭744718
  • প্রচণ্ড খারাপ চোখে দেখছি। কেন দেখছি তার কারণও আছে। পোলিটিকাল কারেক্টনেসের জন্য দ্বিচারিতা করাটা পাপ। পরে সুযোগ হলে লিখব। তবে, "আমার জীবনের লক্ষ‍্য পুৎসফ্রাউ হওয়ার" এরকম কেরিয়ার প্ল‍্যানিং যেদিন শুরু হবে, তার আগেই লিখে রাখতে পারব বলে মনে হচ্ছে।
  • . | ০২ মে ২০২৫ ১০:২৯744760
  • নিষ্পাপ প্রশ্নের তালিকায় অনেক কিছুই থাকে। ঝপ করে শুনলে বোঝা যায় না। কিন্তু বিভিন্ন জনের কাছে একই প্যাটার্নের প্রশ্ন নানা সময়ে শুনলে চোখ কান বন্ধ করে ভ্রমটারে রোখা নিজের সঙ্গেই জোচ্চুরি করা।
    প্রথমে আমি জুরিখ শহরেই থেকেছি টানা দুবছর। এই শহরের সরকারি ভাষা জারমান। ফলতঃ পার্শবর্তী দেশ জারমানি এবং অস্ট্রিয়া থেকে অনেক মানুষ এখানে চাকরি করতে আসে। এমন চাকুরের সংখ্যাও প্রচুর যারা এখানে স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনও পদ্ধতিতেই বাস করে না, প্রত্যেক দিন জারমানি থেকে যাতায়াত করে। অবশ্যই এই যাতায়াতের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বাসস্থান থেকে কর্মস্থলের দূরত্ব যদি অ্যাতো কিলোমিটারের মধ্যে থাকে, অথবা একপিঠের ট্র্যাভেল টাইম দুঘন্টার কম, বা ঐ গোছের কিছু যদি হয়, তবে তাকে আলাদা খরচ করে এদিকে ঘর ভাড়া করে থাকতে হবে না। আবার যদি কেউ পাকাপাকিভাবে এল ডোরাডোয় এসে থাকবার পারমিট না পায়, তবে তার বাসস্থান অনেক দূরে হলে, সে সপ্তাহে চার কি বড়োজোর পাঁচটা রাত এলডোরাডোয় কাটাতে পারে, তবে উইকেন্ডে দেশের বাড়িতে ফিরে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক। এই দুই ধরণের অপশনই এক ধরণের ওয়ার্ক পারমিটের আওতায় পড়ে, জারমানে এদের বলা হয় গ্রেনৎ্স্গেঙ্গার।
    অর্থাৎ নিয়মিত বর্ডার পেরিয়ে পেরিয়ে যারা যাতায়াত করে। এছাড়াও যারা এদেশে বসবাস করে কাজ করে তাদের জন্য নানান ধরণের ওয়ার্ক পার্মিট তথা রেসিডেন্স পার্মিট রয়েছে। ইয়োরোপের নানান দেশ থেকে তো বটেই, এমনকি অস্ট্রেলিয়া কি আমেরিকা মহাদেশ থেকেও চাকরির কারণে বা বিয়ে থা করে এদেশে বসবাস করতে আসেন প্রচুর মানুষ। একেকটা অফিসে স্থানীয় মানুষের তুলনায় বিভিন্ন দেশ থেকে আগত কর্মচারীর সংখ্যাই তুলনায় বেশি।
    আমার অনভ্যস্থ চোখ শুধু চেহারাটুকু দেখে চট করে বুঝতে পারে না যে এরা অধিকাংশই বিদেশি। তবে এদের প্রশ্ন করবার প্যাটার্ন অভিন্ন। ক্রমে ক্রমে কান তৈরি হয়ে যায় উচ্চারণ শুনে বুঝে নেবার মতো, নইলে সবই তো সাদা, আলাদা করতে পারে না আমার চোখ সাদার নানান শেড।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন