এই আমরা-ওরা র তুল্যমূল্য বিচার সর্বক্ষণ যদি চলতে থাকে বিদেশে গিয়ে, তবে সে দেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সেখানকারই একজন মানুষ হয়ে ওঠার প্রসেসে বাধা পড়বেই। তারা আমায় আপন করে নিতে পারল কি না পারল, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই আমি সেই দেশটাকে নিজের করে নিতে পারলাম কি না, সেটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় আমার।কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ হিসেবে আমার মনের মধ্যে কম বেশি কলোনিয়াল হ্যাংওভার থাকবেই, স্বীকার করি বা না করি। শ্বেতাঙ্গ মানুষ দেখলেই তাদের নিজের থেকে উন্নত মনে করার একটা ঝোঁক অজান্তেই কাজ করে মনের ভেতর, সবসময় তা নিজে টের পায় না মানুষ।
একটু বেশি ভদ্রতা দেখানোর প্রবণতা, একটু বেশি পাত্তা পাবার আকাঙ্খা কাজ করে। আমরা সকলেই সমান এটা মনের ভেতর থেকে আসে না সবসময়। এই রেশিয়াল প্রোফাইলিংটা যতদিন নিজের ভেতর থাকবে, তুমি নিজেকে পুরোপুরি সম্মান করতে পারবে না। তুমি রেসিজম এর শিকার হলেও তা মুখ ফুটে বলতে পারবে না, তোমার তা গা সওয়া হয়ে যাবে। তুমি কিছু পরিমাণ অন্যায় অ্যাকসেপ্ট করে নেবে, তুমি ধরেই নেবে যে — ও কিছু না, ওরা ওরকম করে, কই আমার তো মনে হলো না যে আমার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করল!
অথচ ঐরকম ব্যবহারই যদি তোমার মতই কেউ তোমার সঙ্গে করতো, তুমি তাকে ছেড়ে দিতে না, যদি না তার সামাজিক অবস্থান তোমার চেয়ে উঁচুতে থাকত।
এই যে তুমি দিনের পর দিন মন্দ ব্যবহার বা কটুক্তির জবাব না দিয়ে "ইগনোর" করে চলেছো, তাতে তুমি নিজেও জানো ইগনোরে খুব বেশিদিন রোগকে ঠেকিয়ে রাখা যায় না।
আমি নিজে যখন এসবের ভেতর দিয়ে গেছি তখন ভেবে দেখেছিলাম ইগনোর নামক ব্যাপারটা দীর্ঘস্থায়ী কোনও সমাধান হতে পারে না। "ইগনোর" ক্রমশঃ আক্রান্তকে স্বচ্ছন্দে থাকতে দেয় না। সমাজ বা কর্মক্ষেত্র কোনও জেলখানা নয় যে সব কিছু মেনে নিয়ে চলতে হবে, আমরা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নই। ইগনোরের সামাধান কাজে না দিলে, তবে কি অ্যাকসেপ্ট করে নিতে হবে? তাহলে তো নিজেকে অবমানব হিসেবে নিজেই স্বীকৃতি দেওয়া। নাহ, এই অপশনও পছন্দ হলো না আমার। আমি যদি আত্মসম্মান বোধ নিয়ে থাকতে চাই, তাহলে "অ্যাকসেপ্ট" আমার অপশন নয়। এর পরবর্তী অপশন তাহলে কী হতে পারে? আমার সামনে তখন দুটো অপশন এলো। রিজেক্ট অথবা অ্যাড্রেস।
আমি ঐ রেসিজমের পরিবেশ ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে গেলাম — এটা একটা উপায়। কিন্তু যদি অন্যত্র গিয়েও আবারো রেসিজমের সম্মূখীন হই, তখন? আবার রিজেক্ট করে অন্যখানে? কতবার? কতদিন?
তখন শেষ অপশন পড়ে থাকে "অ্যাড্রেস" । এ সমস্তই আমার নিজের থিওরি, এবং প্র্যাকটিস। শেষ অপশনে অর্থাৎ অ্যাড্রেস করে আমি ফল পেলাম আশাতীত। তবে সেই কাজটুকু করতে আমার বিস্তর কষ্ট তো হয়েইছে, তার সঙ্গে ছিল তুমুল ক্যালকুলেশন এবং ডকুমেন্টেশন। প্রমাণ।
সমস্ত অপরাধীই প্রমাণ রেখে যায়। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো প্রমাণগুলোকে রক্ষা করা যায় নি, সে চেষ্টা করবেই প্রমাণ না রাখতে, তবু ভিকটিমের উচিত মাথা ঠাণ্ডা রেখে যতটুকু সম্ভব প্রমাণই হোক না কেন, সংরক্ষণ করা।
অবশ্যই সবক্ষেত্রে যে রেসিজম এর প্রমাণ গৃহীত হবে, তা নয়।
রেসিজম কেন হয়, কারা করে, এসব নিয়ে হয়তো বিস্তর মেটিরিয়াল বাজারে পাওয়া যাবে, তবে প্রত্যেকটা কেসই আলাদা। আমার সাকসেস স্টোরি ও একটা আলাদা বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।