এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বিলেতি ফটো_১ 

    এস এস অরুন্ধতী লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ৪১৮ বার পঠিত
  • ভূষণ বড়ালরা সোনার বেনে হলে কি হবে, ওদের জাজ্বল্যমান বাসনের দোকান কড়েয়াপট্টির মোড়ে।

    ভূষণরা ভেন্নপাক হয়েছে বাপ মরতেই। ভূষণের বাপের আমলের মত রোজ খান পনেরোটা আনকা লোকের পাত না পড়লেও, দুচারটে বাড়তি লোক রোজই খেয়ে যায় এই বাড়িতে। ভূষণ যেহেতু বড় বড়াল, তাই মা রয়েছে তার সঙ্গেই। চারবোনের যে কেউ আসলেও এখেনেই ভাতটা খেয়ে অন্য ভাইদের বাড়ি ঘুরতে যায়। বাকি কুটুমও কম নেই।

    তো যাই হোক, এই সব এসোজন বসোজনে মাছের যোগানটা তো বজায় রাখতে হয়। রোজ বাজার গিয়ে চৌপর ঘুরে মাছ কেনার সময় ভূষণের নেই। তাই সদু মেছুনি রোজ এসে একবার বড়বৌকে মাছটা একেবারে বেটে, কুটে গুছিয়ে দিয়ে যায়। মাস পয়লায় বড় কত্তা হিসেব করে পাওনা বুঝিয়ে দেন। সদু আবদার করে দুটো পয়সা বেশী চেয়ে নেয় বই কম পায় না। আবার পুজো আর গাজনে দুটো কাপড়ও মিলে যায়। মাছটা তাই সদু তাই ভালোই দেয়।

    আজই যেমন বড়বৌ একটু বেশীই মাছ নিল। ছোট ননদের ছেলেমেয়ে দুটো গরমের ছুটিতে মামার বাড়ি এসেছে। তা আম কাঁঠালের ছুটি বলে তো তিনবেলা ভাত বন্ধ নেই। সকালের ফেনা ফেনা ভাতে ঘি আর মটর ডালের চাপড় দিয়ে খাইয়ে দিয়েছে ওদের। দুপুরের জন্য সদু এখন একটা রূপচাঁদ ফালি ফালি করে কেটে দিয়ে গেল, আর কয়েকটা পাবদা। চ্যালা আর মৌরলা দিয়ে হাতঅম্বল হবে। রাতে আবার ভূষণ ছোটমাছের কাঁটা বাছতে পারেনা বলে কাতলা কাটা রোজই খানিকটা নেওয়া হয়।

    তা এই মাছ আঁশ ছাড়িয়ে, কেটে ধুতে ধুতেই এসে দাঁড়িয়েছে ‘মুক্তো জাঁইবাবু’।
    না জামাইয়ের নাম মুক্তো নয়। এ পাড়ার মেয়ে মুক্তোদিদির সোয়ামি।
    মুক্তো বাপ মায়ের একটিই মেয়ে ছিল। তাই ঘরজামাইকে নাইয়ে খাইয়ে শ্বশুর ভিটেতেই বসত করিয়ে ছিল। কিন্তু কপালের নাম গোপাল। বিয়োতে গিয়ে মুক্তো মুক্তি পেয়েছে। এখন গলার কাঁটা এই মুক্তোজামাই। সে নড়েও না, সরেও না।

    সেই জামাই এখন সেজেগুজে সারা গ্রামের মুক্তোজামাই হয়ে ঘুরে বেড়ায়। দুপুরে আর রাতে চাট্টি খেতে ঠিকই বাড়ি আসে। তবে আড়ায় পাড়ায় এর ওর উটকো কাজ করে তাদের কাছে দুটো পাত পেড়ে খেতে তার জুড়ি নেই। আজকে যেমন এই বড়াল বাড়িতে ঘাঁটি গেড়েছে। ওদের বাজার সওদা কিছু করে দিয়েছে হয়তো, দুপুরের পাতটিও আজ এখেনেও পাতবে।
    আর একটা বদ স্বভাব রয়েছে লোকটার। একটু একলা মেয়েছেলে দেখলেই আলগা ছুঁকছুঁকুনি। সদুকেই তো দুএকবার ইশারা করেনি তা নয়। বিধবা হলে কি হয় সদু কিন্তু চরিত্তির ভালো। শাশুড়ি আর ছোটছেলে নিয়ে মরা স্বামীর ব্যাবসা করে খাচ্ছে সে। দু একবার এড়িয়ে গিয়ে, রেগে, গাল দিয়ে বলে দেখেছে সদু। কিন্তু গায়ে পড়া ভাবটা মিনসের যাচ্ছে না।

    আজকে আবার বড়াল বাড়ির খিড়কি দুয়ারে তাকে ধরেছে ঐ বিটকেল মুক্তো।
    “কিরে সদু তোর তো দেখচি বড্ড গুমোর। তা গুমোর ধুয়ে কি জল খাবি?”
    “গুমোরের কি দেখলে জাঁইবাবু? আমি গরিব মানুষ গতর খাটিয়ে খাই।”
    “তা গতরটা কেবল খাটালেই হবে? তার খাঁই ও তো মেটাতে হবে। তা সে যাকগে যাক। তোকে যে বললাম, ঐ রাতভোরে উঠে তোকে আর জেলেদের থেকে মাছ নিতে যেতে হবে না। তুই কেবল রাত থাকতে তোর হাঁড়িসরাগুলো গোয়ালঘরের পেছনে এসে দিয়ে যাবি। ও তোর মাছ আমি এমনি এনে দেব।”
    এ কথার ইশারা বুঝবে না এমন নেকি নয় সদু। তবে আজকের ইশারাটা সে একটু খেলে দিল। খানিকটা ভেবে বলল, “তা কাল অবশ্যি তুমি আসলে ভালোই হয়। ভোলা কাল টাটকা মাগুর দেবে বলিছে, আবার বেজ্জও ভোরেই আমাকে মাঝলা রুই দিয়ে শ্যামপুরের হাটে ছুটবে। একজায়গায় তুমিই তবে চলে যেও। ভুলো না যেন, কাকভোরে গোয়ালের পেছনে…।”
    হাসতে হাসতে চলে গেল সদু।

    কসাই হাজুশেখ সদুকে বোন পাতিয়েছে। তাকেই কাল ডেকে আনবে সদু। পাঁঠাকাটা ছুরি নিয়ে হাজুশেখের ভীষণ মূর্তি দেখে রাতভোরে কেমন চমকাবে মুক্তোজামাই তা ভেবেই সদুর পেট থেকে ভসভসিয়ে হাসি উঠে এল।
    ........................
    কি? এটা সাহেব মেমদের ছবি?



    পড়তি জমিদার রুডলফদের বখাটে ভাগ্না এডমণ্ড ফলওয়ালি ফ্লোরেন্সের সঙ্গে ফ্লারট করছে একটু আড়ালে? ‘ইফ যদি ইজ হয় বাট কিন্তু হোয়াট কি’ বলে ইংরেজি ফটফটিয়ে ওরা অন্য কিছু বলছে?

    হবে হয়তো। আমরা তো অত ইংরিজি জানিনি, আমাদের সদুই ভালো, আমাদের মেছুনিই ভালো।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন