এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চন্দননগরের প্রবর্তক সংঘ এবং জীবিত নেতাজীর আগমন (১৯৬৭)

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ নভেম্বর ২০২৩ | ৮১৮ বার পঠিত
  • শ্রীরামপুর (১১ই অক্টোবর ১৮৪৫ এর পরে এখানে ইংরেজ শাসন শুরু হয়, ডেনিশরা ইংরেজদের বিক্রি করে দেয় শ্রীরামপুর), চন্দননগর, চুঁচুড়াসহ আদি হুগলী জেলায় ইংরেজ শাসন চালু হতে পারেনি কোনোকালেই। ইংরেজদের কুদৃষ্টি থাকলেও তার প্রভাবমুক্ত ছিল এইসব এলাকা। বরং এইসব এলাকায় চলত ডেনিশ, ফরাসী, ওলন্দাজদের শাসন। ইংরেজদের শাসনাধীন এলাকা ছিল না বলে এবং কলকাতার এত কাছের এলাকা বলে ভারতীয় বিপ্লবীদের নির্জনঝাট চারণভূমি ছিল এইসব এলাকা। ব্রিটিশ ভারতবর্ষে বিভিন্ন ধরনের বিপ্লবী কাজকর্ম করে বিপ্লবীরা এইসব এলাকায় এসে গা ঢাকা দিয়ে থাকতেন দিনের পর দিন। আবার একই কারণে এইসব এলাকায় অসংখ্য বিপ্লবী এবং বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন গুপ্ত সমিতির চারণভূমি ছিল এই উপনিবেশগুলো। ইংরেজদের সাথে সুসম্পর্ক না থাকার কারণে ফরাসী বা ডেনিশ বা ওলন্দাজ সরকারও এই বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিত না। আবার সমগ্র জেলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চারণভূমি বা বিপ্লবীদের তীর্থক্ষেত্র ছিল চন্দননগর। কে আসেননি বা কে এসে চন্দননগরে গা ঢাকা দিয়ে থাকেননি বলা খুব মুশকিল। আর বিপ্লবীদের মহাগুরু রাসবিহারী বসুর জন্মস্থান এবং একটা বৃহৎ সময়ের কর্মস্থান ছিল চন্দননগর। আর এক মহান বিপ্লবী কানাইলাল দত্তের জন্মস্থানও এখানে। এখানে মহাত্মা গান্ধী থেকে ঋষি অরবিন্দ থেকে রবীন্দ্রনাথ থেকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু থেকে উল্লাসকর দত্ত থেকে বারিনচন্দ্র ঘোষ থেকে চারুচন্দ্র ঘোষ, কে আসেননি বা থাকেননি এখানে? আক্ষরিক অর্থেই বিপ্লবীদের মহান তীর্থক্ষেত্র ছিল হুগলী জেলার ফরাসী ঔপনিবেশিক এলাকা চন্দননগর। ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয় আজও। সেই চন্দননগরেই জন্মেছিলেন দুইজন মহাত্মা, সংঘগুরু শ্রীযুক্ত মতিলাল রায় আর লিটল গান্ধী নামে খ্যাত এবং শহীদ কানাইলাল দত্তের দাদা শ্রীযুক্ত অরুণ চন্দ্র দত্ত। 
     
    ৫ই জানুয়ারি, ১৮৮৩ সালে চন্দননগরের বোরাইচন্ডিতলায় জন্মগ্রহণ করেন শ্রীযুক্ত মতিলাল রায়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যোগ দেন এবং পরের বছরই সস্ত্রীক ব্রহ্মচর্যে দীক্ষিত হন। তাঁর বাড়ী ছিল অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের কাঙ্ক্ষিত আশ্রয়স্থল এবং তিনি ছিলেন সেই বিপ্লবীদের অন্যতম পরামর্শদাতা। রাসবিহারী বসু থেকে শ্রীশচন্দ্র ঘোষ, কানাইলাল দত্ত তাঁর কাছে নিয়মিত আসতেন। ১৯১০ সালে ঋষি অরবিন্দ তাঁর বাড়ীতে বেশ কিছুদিন আত্মগোপন করেছিলেন। তিনি তাঁকে ভক্তি, কর্ম ও মহাযোগে দীক্ষিত করেন। আবার ঋষি অরবিন্দের শিষ্যও ছিলেন তিনি। তাঁর বাড়ী থেকেই ঋষি অরবিন্দ পন্ডিচেরিতে চলে যান এবং পুরোপুরিভাবে আধাত্মবাদে নিজেকে সঁপে দেন। ১৯১৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন "প্রবর্তক সংঘ", যার মুখপাত্র ছিল "প্রবর্তক" পত্রিকা। প্রবর্তক সংঘ ছিল সেই সময়ের বিপ্লবীদের আশ্রয়স্থল। মনীন্দ্রনাথ নায়েক, কানাইলাল দত্ত সহ অনেক বিপ্লবীরাই এখানে বোমা তৈরী করতেন। লর্ড হার্ডিঞ্চকে মারার জন্য তৈরী করা বোমাটিও এখানেই তৈরী হয়েছিল। ১৯২৫ সালে তিনি সংঘগুরু পদে বৃত হন। ১৯২৯ সালে পত্নী তথা সংঘজননী, রাধারাণী দেবীর মৃত্যু হলে তিনি সক্রিয় আন্দোলনের পথ থেকে সরে গিয়ে নিজেকে সমাজসেবায় নিয়োজিত করেন। তবুও বিপ্লবীদের আশ্রয়স্থল থেকেই যায় তাঁর প্রবর্তক সংঘ। এরপরে সংঘ ও জাতিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রবর্তক ট্রাস্ট গঠন করেন। এই ট্রাস্টের পরিচালনায় গ্রন্থাগার, পাঠশালা, বেসিক স্কুল, ছাত্র ছাত্রী আবাস, বৃদ্ধাশ্রম, মহিলা সদন, প্রকাশনা সংস্থা, সমবায়, ছাপাখানা-সংক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জুট মিল ইত্যাদি স্থাপিত হয়। সংঘের মুখপত্র প্রবর্তক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন অপর এক প্রবীন বিপ্লবী মণীন্দ্রনাথ নায়েক। দেশবাসীর সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা প্রদান, পত্রিকা প্রকাশ, কুটীর ও ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন ছিল এই সংঘের কাজ। প্রবর্তক সংঘের একাধিক শাখা প্রতিষ্ঠা ভারতের হয় নানা জায়গায়। ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বর্ধমান, অবিভক্ত ২৪ পরগনা, হাওড়া, ফরিদপুর এমনকি বার্মার রেঙ্গুনেও এর শাখা ছিল। চট্টগ্রাম শাখার দায়িত্বে ছিলেন বিপ্লবী মহিমচন্দ্র দাশগুপ্ত। প্রবর্তক ব্যাংক ও ইনসুরেন্স কোম্পানী, পাট কারখানা, খাদি বস্ত্রবয়ন, স্বনির্ভর প্রকল্প ইত্যাদির সাথে যুক্ত ছিলেন প্রবর্তক সংঘের নেতারা। মন্দির, গ্রন্থাগার, ছাপাখানা, বৃদ্ধাশ্রম, ছাত্রাবাস স্থাপন করা হয় এই সংস্থার নামে। সারা বাংলা জুড়ে ২১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে প্রবর্তক সংঘ। সংঘের লাভজনক ব্যবসার আয় থেকে এই বিদ্যালয়গুলির ব্যয় বহন হতো। ১০ই এপ্রিল, ১৯৫৯ সালে তিনি দেহত্যাগ করেন। প্রথমতঃ, দেশভাগের পরে প্রবর্তক সংঘের কাজকর্ম হ্রাস পায়, দ্বিতীয়তঃ ১৯৫৯ সালে মতিলাল রায়ের মৃত্যুর পর অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ হয়ে যায় ও সংঘের কর্মকাণ্ড প্রধান কেন্দ্র চন্দননগর অভিমুখী হয়ে পড়ে। ১৯৬৩ তে সংস্থার ব্যাংক ব্যবসা ইউনাইটেড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাংকের সাথে মিশে কাজ করতে থাকে। ১৯৬৫ সালে জুট কারখানাটি সোহনলাল মিল ও পরে বহুজাতিক সংস্থা অধিগ্রহণ করে। চট্টগ্রাম প্রবর্তক সংঘ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধকালে আক্রান্ত হয়। ১৯৭১ সালে সংঘের সকল কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় প্রবর্তক সংঘের কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সংঘের প্রতিষ্ঠিত প্রেস, ব্যাংক, কুটির শিল্প, কৃষি প্রকল্প, ট্রেনিং সেন্টার, চিকিৎসা কেন্দ্র, আবাসন প্রকল্পসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এরপরে সংঘ বলতে গেলে চন্দননগর কেন্দ্রিক একটি সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানের চেহারা নেয়। মতিলাল রায়ের পরে সংঘের দ্বায়িত্ব নেন আর এক বিপ্লবী এবং মতিলাল রায়ের শিষ্য অরুণ চন্দ্র দত্ত। যিনি ফরাসী সরকারের খাদ্যমন্ত্রী অব্দি হয়েছিলেন একসময়ে।
     
    ১৯৫৭ সালে এই প্রবর্তক সংঘের সাথে যুক্ত হন এক মহীয়সী নারী, মমতা দাস। আদি নিবাস অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা। দেশবিভাগের পরে এদেশে এসে এই সংঘের সাথে যুক্ত হন। সংঘগুরুকে তিনি দুই বছর পেয়েছিলেন। এরপরে আর এক মহাত্মা শ্রী অরুণ চন্দ্র দত্তের অধীনে সংঘের কাজ চালিয়ে যেতে শুরু করেন। আজীবন অবিবাহিত এই মহীয়সী নারীর বর্তমান বয়স ৮৭ বছর। কিন্তু কর্মক্ষমতায়, স্মৃতিতে, মানসিক শক্তিতে তিনি এখনও বয়সকে হার মানিয়েছেন।
     
    মতিলাল রায় এবং অরুণ চন্দ্র দত্তের বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপ এবং প্রবর্তক সংঘের কাজকর্ম সম্পর্কে সারা ভারতবর্ষের বিপ্লবীদের অজানা ছিল না। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসেরও অজানা ছিল না। তিনি বারবার এই সংঘে এসেছেন। মতিলাল রায় এবং অরুণ চন্দ্র দত্তের সাথে তাঁর সুগভীর সম্পর্ক ছিল। শৌলমারীতে যে একজন সাধুর হঠাৎ করেই দেখা মেলে এবং পুলিশি ক্রিয়াকর্ম বাড়তে থাকলে সারদানন্দ বলে একজন সাধুকে পাওয়া যায় সেখানে, যিনি নিজেই দাবী করেছিলেন যে, তিনি নেতাজী নন। এই জায়গায় অনেকটাই ধোঁয়াশা আছে, পরবর্তীতে ভগবানজীর কথাতেও আমরা শৌলমারীর সেই সাধু সম্পর্কে কিছুটা জানতে পেরেছি। ভগবানজীর কথা অনুযায়ী সন্দেহ তীব্র হয় এবং স্পষ্ট ভাবেই বোঝা যায়, যে সারদানন্দকে সেখানে পাওয়া গিয়েছিল, তিনি আদপে একজন নেতাজীর ডামি ছিলেন। আবার নেতাজী যে সেই শৌলমারী থেকে প্রকট হতে চেয়েছিলেন সেটা স্পষ্ট ভগবানজীর কথা থেকেই। এই শৌলমারীর কিছুটা পরে নেতাজীকে পাওয়া যায় নবদ্বীপের একটি আশ্রমে। এই নবদ্বীপ পর্ব কিন্তু খবরের পাতায় আমরা দেখতে পাইনি কোনোদিন। আজও অজানা সেই কাহিনী। সেটা ১৯৬৭ সাল। অরুণ চন্দ্র দত্তের কাছে খবর আসে সেই নবদ্বীপ আশ্রমের, নেতাজীর। চন্দননগরের এক বাসিন্দা যিনি সেই সময়ে চাকুরীসূত্রে কৃষ্ণনগরে ছিলেন এবং অরুণ চন্দ্র দত্তের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তার মারফত ঘটনার সত্যতা যাচাই করা হয়। এরপরে অরুণ চন্দ্র দত্ত তার মারফতেই চিঠি পাঠান নেতাজীকে। উত্তর আসে। বোঝা যায় ঘটনা একদম সত্য। এরপর অরুণ চন্দ্র দত্ত নবদ্বীপে যান এবং স্বয়ং সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। যদিও ওই সাক্ষাতের ব্যাপারে বাইরের কাউকে জানাতে নিষেধ করেছিলেন নেতাজি, অন্ততঃ পরের ছয়মাস সময়ের জন্য। এর কয়েক মাসের মধ্যেই স্বয়ং নেতাজী প্রবর্তক সংঘে আসেন থাকার জন্য। নেতাজী চন্দননগরে আসার পরে সেই অঞ্চলে পুলিশি তৎপরতা বাড়ে একটা সময়ে। নেতাজীর আত্মগোপনের জায়গাও পরিবর্তন করা হয় সেই কারণে। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমেই অন্য রকমের হচ্ছিল বলে বাধ্য হয়েই নেতাজীকে চন্দননগর ছেড়ে চলে যেতে হয়। নেতাজী চন্দননগরে অবস্থান কালে তাঁর সান্নিধ্য পান মমতা দাস। নেতাজীর সেবা করার, তাঁর সাথে কথা বলার, তাঁকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছিলেন মমতা দাস। 
     
    পরবর্তীতে নেতাজীর কার্বাঙ্কল হয়েছিল, ফলে তাঁকে কলকাতায় গিয়ে সেটি অপারেশন করাতে হয়। মমতাদির কথায়, সেই অপারেশন হয়েছিল গড়িয়া অঞ্চলের মিত্র নার্সিংহোমে। তিনি সেই নার্সিংহোমে গিয়ে নেতাজীকে দেখেও এসেছিলেন অপারেশনের পরে। এরপরে আর দেখা হয়নি নেতাজীর সাথে। আজও মমতাদি প্রবর্তক সংঘের সক্রিয় কর্মী এবং আশায় থাকেন নেতাজী সম্পর্কে সঠিক কথাগুলো বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে জানতে পারে। তিনি সরাসরি নেতাজীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাঁর বিবাহ সম্পর্কিত গুঞ্জনের সত্যতা জানতে চেয়েছিলেন। মমতাদির ভাষায়, তিনি যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছিলেন সেই প্রশ্নে। নেতাজী উত্তর দিয়েছিলেন, তাঁকে অনেক মহিলার সাথেই কাজ করতে হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামে। কিন্তু কোন মহিলা তাঁকে ভালোবেসেছেন বা ঘৃনা করেছেন তা তার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তিনি যে জীবনযাপন করেন ছোটবেলা থেকেই, সেখানে বিবাহের স্থান নেই। তাঁর বিবাহের কথা পরিকল্পিত গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়।
     
    মমতাদির কথাগুলো জানার পরে একটা কথা দিনের আলোর মত পরিস্কার হয় যে, নেতাজী বহু চেষ্টা করেছিলেন প্রকাশিত হওয়ার এবং এই বাংলা থেকেও। স্থান এবং সালগুলো মিলিয়ে দেখলেই সেটা পরিস্কার হয়ে যায়। এই বাংলায় তিনি ছিলেনও অনেকদিন। ডাঃ পবিত্র মোহন রায়ের (নেতাজীর আজাদ হিন্দ বাহিনীর সিক্রেট সার্ভিসের প্রধান ছিলেন ইনি) লেখা বই "নেতাজীর সিক্রেট সার্ভিস" পড়লে বোঝা যায়, এই বাংলার ওপর নেতাজীর অনেকটাই ভরসা ছিল। নেতাজী ভেবেছিলেন, আজাদ হিন্দ ফৌজ যখন উত্তর পূর্ব ভারতে প্রবেশ করবে তখন এই বাংলা থেকে দলে দলে বিপ্লবী এবং সাধারণ মানুষ সেই ফৌজে যোগ দেবে এবং ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া বাহিনীর সাথে লড়াই করবে। ব্রিটিশ সরকার জাপান তথা আজাদ হিন্দ ফৌজের বীরত্বের কাহিনী ভারতবর্ষে প্রচারিত হতে দেয়নি। সেই কারণেই নেতাজী তাঁর গোয়েন্দা বাহিনীকে কাজে লাগিয়েছিলেন। তাদের তিনি দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন ভারতবর্ষে এসে সেই বীরত্বের কাহিনী প্রচার করতে এবং ব্রিটিশ সরকারের গোপন খবর সংগ্রহ করে আজাদ হিন্দ সরকারের হেড কোয়ার্টারে পাঠানোর জন্য। বিপ্লবী সংঘঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ তৈরী করে তাদের আজাদ হিন্দ বাহিনীতে যোগ দেওয়া নিশ্চিত করার জন্য। বাস্তব কিন্তু অন্য রকমের হয়েছিল। ভারতবর্ষের কোনো বিপ্লবী দল সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। বাংলার ক্ষেত্রেও একই কথা, বামপন্থীরাও এগিয়ে আসেনি। বামপন্থীরা বরং ইংরেজদের সাথে যোগ দিয়ে জাপানের গুষ্টির তুষ্টি করতে বেশী ব্যস্ত ছিল। জাপানের সাথে সাথে নেতাজীরও চূড়ান্ত মাত্রায় অপমান করতে ছাড়েনি। এমনকি আজাদ হিন্দ ফৌজের কিছু কিছু গোয়েন্দা ভারতবর্ষের মাটিতে পা রেখে ব্রিটিশদের সমস্ত তথ্য সরবরাহ করেছিল যাতে করে নেতাজীর পাঠানো গোয়েন্দাদের চরম অসুবিধা হয়েছিল। এমনকি আজাদ হিন্দ ফৌজের গোয়েন্দারা যখন ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়ে এবং আদালতে বিচার হয় তাদের, তখন সেই সুবিধাবাদী গোয়েন্দারা রাজসাক্ষী হয়ে দেশপ্রেমিক গোয়েন্দাদের ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের কারণ হয়। নেতাজীর প্রকাশিত হওয়ার ক্ষেত্রেও সেই একই ঘটনা লক্ষ করি আমরা। 
     
    মমতাদির কথা শুনতে শুনতে এইসব কথাগুলোও মনে পড়ে যাচ্ছিল বারবার। অনেককিছুই প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয় আছে সকলের। তাই তো নেতাজীকে আমরা সেই ১৯৪৫-এর খাঁচায় বন্দী করে দিয়েছি, আর এগোতে দিইনি। দিলে যে আমাদের সকলের বিপদ। কিন্তু মমতাদির মত অনেকেই এখনো অপেক্ষায় আছেন সেইসব তথ্য সকলকে জানানোর জন্য। তাঁদের আশা দেশবাসী জানুক এইসব মহান বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ, কৃচ্ছতা, সংযম এবং সর্বোপরি দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসার কথা। এই স্বাধীনতা তো তাঁরা কেউই চাননি। সেই আশা কি পূরণ হবে কোনোদিন? কে জানে! তবুও আশায় বুক বেঁধে, মমতাদির কথাগুলো, নেতাজী সম্পর্কিত - প্রবর্তক সংঘ সম্পর্কিত, সবকিছুই মাথায় সাজিয়ে নিয়ে, আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হলাম। তখন যে দিনের আলো ফুরিয়ে গেছে। দেশের কিনা জানিনা।
     
    মমতাদির কথাগুলো শুনুন নিচের লিংকে ক্লিক করে।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :/ | 37.235.***.*** | ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৪৫526224
  • এই লেখাটা মিসিয়ে গিয়েছিলুম। আলোকিত হলেম দাদা!
  • Thanks | 223.29.***.*** | ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৪১526227
  • পত্রিকার নাম ছিল "প্রবর্তক"। টাইপো ঠিক করা সম্ভব? 
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:b556:de5e:c75a:***:*** | ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৪৬526229
  • নেতাজি আর বিপ্লব কি একসাথেই আসবে? 
  • &/ | 107.77.***.*** | ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:০৮526230
  • এই তো !!!!  সুভাষচন্দ্র । ইশ আপনারা যদি আগে বলতেন !!!! 
  • জনৈক গবেষক | 223.29.***.*** | ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০০:১৮526231
  • সুরজিৎবাবুর (আসলে মমতা দাস মাসিমার) নাম্বার প্রয়োজন। প্রবর্তক সংঘের মুখপত্র বিষয়ে কথা বলার জন্যে। যদি, নয় শূন্য পাঁচ এক পাঁচ তিন চার এক চার আট এ একটু টোকা দেন, বড় উপকার হয়।
  • &/ | 151.14.***.*** | ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৫৫526236
  • হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওই নার্সিং হোমেও যাবেন প্লীজ। ১৯৬৭ সাল তো বেশিদিন আগের কথা নয়। নার্সিং হোমের রেকর্ডে কী পান সেটা দেখুন। আর ছবি টবি যদি পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শী যীনি জীবিতা আছেন, তিনি কী বলেন--- সব মিলিয়ে একটা শক্তপোক্ত কড়া কাজ হওয়া উচিত অবশ্যই।
  • গঙ্গারাম | 115.187.***.*** | ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৫৬526251
  • শ্রীরামপুর, চন্দননগর, চুঁচুড়াসহ আদি হুগলী জেলায় ইংরেজ শাসন চালু হতে পারেনি কোনোকালেই।

    কে বলল? শ্রীরামপুর ১৮৪৫ সালের পর থেকেই ইংরেজদের হাতে চলে যায়। ডেনিসরা ইংরেজদের বিক্রি করে। চুঁচুড়া বিদারের যুদ্ধের পর ইংরেজদের হাতে চলে যায়।
  • &/ | 151.14.***.*** | ২১ নভেম্বর ২০২৩ ০৩:৪৫526318
  • আচ্ছা, ইউটিউবে এই যে শয়ে শয়ে ভিডিও-- নেতাজীকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এখানে দেখা গেছিল ওখানে দেখা গেছিল, এই প্রত্যক্ষদর্শী এই বলছেন ওই প্রত্যক্ষদর্শী ওই বলছেন, এইসব ভিডিওর বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু? কোনোটাই কি কিছু এস্টাব্লিশ করতে পারে? যদি তাই হবে তবে এত বছর পরেও কিছুরই স্থিরতা প্রতিষ্ঠা হয় না কেন? এইসব ভিডিওগুলো যাঁরা করেছেন তাঁরাও বা কিছু বলেন না কেন? নেতাজীর পরিবারের তাবড় তাবড় লোকেরাই বা কিছু প্রতিষ্ঠা করেন না কেন? সবটাই রাজনীতি-বাজারের খেলা?
  • গঙ্গারাম | 115.187.***.*** | ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:১৬526349
  • ইউটিউব ভিডিওগুলো স্রেফ ভিউ বাড়ানোর জন্য জালি ভিডিও। আজকাল লোকে স্রেফ উড়ো ভিডিও দেখে ইতিহাস শিখে ফেলে,কিন্তু বিতর্কিত সেন্সিটিভ ইতিহাস চর্চার জন্য প্রাইমারী সোর্স ঘাঁটা দরকার
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন