এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অক্লান্ত সময়

    Kajal Sen লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ মে ২০২৩ | ৭৫০ বার পঠিত
  • অনেকদিন থেকেই একটা দ্বন্দ্বে আছি, সময় কি মানুষকে প্রভাবিত করে, নাকি মানুষ সময়কে প্রভাবিত করে? সমঝদাররা বলেন, সময় তার নিজের নিয়মে চলে, নিজের ছন্দে চলে, সে কারোর ওপর নির্ভরশীল নয়, সোজা কথায় সময় কারও ধার ধারে না। কথাটা আপাতবিচারে ঠিকই। সময়কে তো কেউ সৃষ্টি বা নির্মাণ করেনি, আবার কারও ক্ষমতা নেই তার গতি রুদ্ধ করার এবং তাকে ধ্বংস করার। সময় আদি অন্তহীন। তার কোনো সামগ্রিক মাপজোকও করা যায় না। যদিও আমরা প্রায় সব ক্ষেত্রেই সময়কে মাপি, তাকে ভাগ করি অনেক  অনেক মাপকাঠিতে। অসীম ব্রক্ষ্মান্ডের একটি ক্ষুদ্র গ্রহের বাসিন্দা আমরা নিজেদের বিচারবুদ্ধিতে সুবিধার জন্য আমাদের সীমার অন্তর্গত বিভিন্ন নক্ষত্র ও গ্রহ উপগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত সময়কে নিজেদের বাগে আনার চেষ্টা করি।  সূর্য নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আমাদের গ্রহ পৃথিবীর ক্লান্তিহীন ঘূর্ণন এবং পৃথিবীকে কেন্দ্র করে উপগ্রহ চাঁদের অক্লান্ত ঘূর্ণন, আমাদের সময়ের মাপকাঠি নির্ধারণে সহায়তা করেছে। আমরা নিজেদের প্রয়োজনে সময়কে বাঁধার অভিপ্রায়ে তাই নির্দিষ্ট করেছি কিছু একক, যেমন – দিন, সপ্তাহ, পক্ষ, মাস, বছর, যুগ, শতাব্দ, সহস্রাব্দ... অন্যদিকে ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ড, পল, অনুপল... নির্দিষ্ট করেছি চান্দ্রমাস, চান্দ্রবছর, সৌরমাস, সৌরবছর...

    তা না হয় করলাম, সময়ের তাতে থোড়াই কিছু এলো গেলো কি? কিন্তু আসল  কথাটা হচ্ছে, মানুষ কি আদৌ সময়কে প্রভাবিত করতে পারে, অথবা সময়ই মানুষকে প্রভাবিত করে? উদাহরণ বা নমুনা হিসেবে যেমন কিছু কিছু সময়ের  কথা উদ্ধৃত করা যেতে পারে, যা মানুষই নির্ধারিত করেছে, যেমন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যক্ষেত্রে আদিযুগ, মধ্যযুগ, আধুনিকযুগ, উত্তর আধুনিকযুগ, প্রাক ঔপনিবেশিকযুগ, ঔপনিবেশিকযুগ, নয়া ঔপনিবেশিকযুগ ... যেমন চৈতন্য  পূর্ববর্তীযুগ, চৈতন্যযুগ, চৈতন্য পরবর্তীযুগ, ফোর্ট উইলিয়ামযুগ, বঙ্কিমযুগ, রবীন্দ্রযুগ ইত্যাদি ইত্যাদি। আর যদি এইসব যুগের কথা স্বীকার করতে হয়, তাহলে সমকালীন সময়ে এইসব যুগের প্রভাবের কথাও স্বীকার করতে হয়। তা সে সাহিত্যের ক্ষেত্রেই হোক বা সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান,  ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, সভ্যতা সব সব ক্ষেত্রেই। অর্থাৎ অনন্ত  সময়ের ক্ষমতার সঙ্গে সীমিত মানুষের ক্ষমতার তুলনার মতো বোকামি না করেও একথা বলা যায় যে, সর্বগ্রাসী সময় যতই শক্তিশালী হোক না কেন মানুষের মস্তিষ্কেও আছে অপরাজেয় দুর্বিনীত সৃষ্টিশীল মনন ও মেধা। আর তাই সে হয়তো সময়কে বাঁধতে পারে, প্রভাবিতও করতে পারে!

    লিখতে বসে সময় সম্পর্কিত এই দ্বন্দ্বের কথা স্বাভাবিক কারণেই এসে গেল আমাদের সমকালীন সময়ের  পরিপ্রেক্ষিতে। আমরা সাধারণ মানুষ  মনে করি যে, যে সময়ে আমরা এই পৃথিবীতে বসবাস করছি, তা ক্রমশই থাকার অযোগ্য হয়ে উঠছে। তা সে প্রাকৃতিক সমস্যার কারণেই হোক বা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণেই হোক। পৃথিবীর বাতাস ক্রমশ দূষিত হচ্ছে, জল দূষিত হচ্ছে, মাটি দূষিত হচ্ছে, উৎপাদিত ফসল দূষিত হচ্ছে এবং এই সামগ্রিক দূষণের জন্য মূলত দায়ী মানুষই। অন্যদিকে প্রায় সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে মানবিকদূষণ। জাতি, ধর্ম, বর্ণকে কেন্দ্র করে হানাহানি; তথাকথিত জাতীয়তাবোধকে কেন্দ্র করে লড়াই, বিশেষত আন্তর্জাতিক বাজার দখলের জন্য সংঘটিত যুদ্ধ সমকালীন সময়কে কলুষিত করে তুলেছে, নষ্ট করে তুলছে। আর এই নষ্ট সময়ে মানুষ এখন অন্য মানুষের প্রতি প্রেমহীন, আস্থাহীন, বিশ্বাসহীন, নির্ভরতাহীন। এ এক অসহনীয় অস্থিরতার সময়। এবং বলা বাহুল্য, এর জন্য একদিকে যেমন দায়ী ঘৃণ্য কায়েমী স্বার্থসম্পন্ন কিছু মানুষ, গোষ্ঠি, চক্র ও আঁতাত; অন্যদিকে তেমনই দায়ী তাদেরই পদলেহনকারী কিছু জনসাধারণ। যাদের কখনই ক্ষমা করতে পারবে না অনাগত সময়ও। ভাবতে কষ্ট হয়, মূর্খ কালিদাসের যুগের বুদ্ধি ও বিবেচনা থেকে আজও আমরা মুক্ত হতে পারলাম না!
     
    কাজল সেন

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিমান মৈত্র | 2401:4900:7066:af98:9b4:e95f:e82f:***:*** | ০২ মে ২০২৩ ১৫:২৯519287
  • সময়োপযোগী লেখা।‌‌‌ ভালো লাগলো।
  • অদিতি সেন চট্টোপাধ্যায় | 42.***.*** | ০২ মে ২০২৩ ১৫:৫৬519288
  • ভালো লাগলো 
  • পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি। | 45.249.***.*** | ০২ মে ২০২৩ ১৮:৫১519311
  • প্রবন্ধের উপসংহারের সঙ্গে মানুষ এবং সময়ের মধ্যে পারস্পরিক প্রভাব-সম্পর্কের সঙ্গতি পরিষ্কার হলো না।
     
    সময়ের ধারণা হিসাবে বিজ্ঞান একটু অন্য কথা বলে। কোন বস্তু বা ঘটনার অবস্থান বোঝাতে প্রচলিত ত্রিমাত্রিক পরিমাপের বাইরে সময়কেও নিয়ে আসেন আইনস্টাইন। ফলে চতুর্মাত্রিক পরিমাপের সৃষ্টি হয়। তিনি এও দেখিয়েছেন যে দুইটি সিস্টেমের মধ্যে যদি গতির পার্থক্য থাকে তাহলে তা সেই দুই সিস্টেমে অনুভূত ঘটনাকে প্রভাবিত করবে। এটা এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গীতেও। কারণ কোন ঘটনাকেই পরম সত্য বলা যাবে না। প্রত্যেকেই আপাত সত্য। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত বিচার করে।
     
    আবার হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা সূত্র বা আনসার্টেন্টি প্রিন্সিপল অনুযায়ী দুইটি পরস্পরের উপর নির্ভরশীল পরিমাপকে একই সঙ্গে সঠিক ভাবে নির্ণয় করা অসম্ভব। অর্থাৎ দুইটি পরিমাপের একটি যদি চূড়ান্ত সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় তাহলে অপরটির নির্ণয় চুড়ান্তভাবে অসম্ভব হবে। এর ফলে অবস্থানের পরিমাপ (x) এবং সময়ের পরিমাপকে (t) একই সঙ্গে সঠিক ভাবে নির্ণয় করা অসম্ভব। যেমন একটি চলন্ত ট্রেনের অবস্থানের পরিমাপ (x)-এর দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে অর্থাৎ আমরা যদি দূরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ট্রেনের অবস্থানকে (x) বোঝার চেষ্টা করি তাহলে আমরা ট্রেনের গতিকে বুঝতে পারবো না, যা সময় এবং সরণ (x)-এর উপর নির্ভরশীল।
     
    এইসব বিষয়ের সঙ্গে ওয়েলশের টাইম মেশিন এবং রাউলিং-এর হ্যারি পটার উপন্যাস আমাদের ভাবায়। আপনার লেখায় আমার মনে হয় প্রবন্ধের শুরু এবং শেষের মধ্যে অসঙ্গতি আছে, আমার উল্লিখিত সময় সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক-দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রেখেও।
  • ইন্দ্রাণী দত্ত পান্না | 103.218.***.*** | ০২ মে ২০২৩ ১৯:২৪519313
  • ভাল লেখা মানে এই সময়ের সাথে মানানসই।
  • শৈলেন সরকার | 223.19.***.*** | ০২ মে ২০২৩ ২৩:০৯519343
  • কোনও সন্দেহ নেই বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সময় সম্পর্কে লেখকের ধারণা ভুল। নিউটনের পৃথিবীতে দেশ ও কাল বিচ্ছিন্ন ছিল কিন্তু আইনস্টাইনের পৃথিবীতে টাইম-স্পেস একটি কন্টিনিউয়াম। কিন্তু লেখক এখানে সময়কে খুবই প্রচলিত অর্থে ধরেছেন। সেদিক থেকে ধারণাটি ভুল হলেও উনি কী বলতে চাইছেন তা বুঝতে অসুবিধে হয় না।
  • শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস | 139.5.***.*** | ০৩ মে ২০২৩ ১০:৩৭519383
  • অক্লান্ত সময়, এটি প্রবন্ধের নামকরণ। অথচ শেষ অংশটিতে এসে ক্লান্তিহীনতা কোথায় গিয়ে গোত্তা খেলো?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন