এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  ভ্রমণ

  • আফ্রিকা

    যোষিতা লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | ০৫ অক্টোবর ২০২২ | ৩০৮২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ইদানীং মরক্কো বেড়িয়ে ফিরলাম, সেই নিয়ে লিখব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ২৭ নভেম্বর ২০২২ ০৫:২৮739026
  • একটা প্রবাদ আছে—
    পড়েছ মোগলের হাতে,
    খানা খেতে হবে সাথে।
    তা সেটাই বদলে নিয়ে বলছি—
    পড়েছি বেদুইনের হাতে,
    খানা খেতে হবে সাথে।
     
    ক্রমশঃ যেতে যেতে বুঝলাম যে এরা দিনে পারলে চার পাঁচবার খাবার জন্য ব্রেক দিতে প্রস্তুত।
    কাজে কাজেই পাহাড় টাহাড় পেরিয়ে একটু সমতলে এসে পৌঁছতে না পৌঁছতেই প্রকৃতির রূপ যেমন বদলে যেতে লাগল, তেমনি ইয়াসির গাড়ি থামালো তেল ভরার জন্য। তেল এখানে ইউরোপের তুলনায় অনেক সস্তা। 
    সবচেয়ে সস্তার তেল দেখেছি বহুবছর আগে সোভিয়েত দেশে। এমনকি ২০১৯ এর ডিসেম্বরে উজবেকিস্তান গেছলাম, বেনজিনের দাম দেখে বিশ্বাস করতে পারি নি, এত কম কেমন করে হয়। মরক্কোয় অতটা সস্তা না হলেও বেশ সস্তা।
    দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে বসে থাকার পরে নেমে হাঁটাহাঁটি করতে ভালোই লাগে। আরও গোটা দুয়েক গাড়ি থেমেছে আমাদের মত। সেসব গাড়িতেও ইয়োরোপের টুরিস্ট। একপাশে টয়লেটের ব্যবস্থা। আর আছে বেঞ্চিপাতা ছোট্ট পার্কের মত, সেখানে দোলনা রয়েছে। দুজন টুরিস্ট মহিলা অদূরে বেঞ্চিতে বসে রোদ পোহাচ্ছে।
    বৃষ্টি টিষ্টি বহু আগেই থেমে গেছে। নরম রোদ ধীরে ধীরে গরম হচ্ছে। দোলনার বসতে গিয়ে পিছলে পড়েই গেলাম। মেয়েদুটো তাই দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছে। এখানে পড়লে ব্যাথা লাগে না। এখানে মাটি নরম, নাকি বালির তোষক পাতা, ঠিক কোন কারনে ব্যাথা লাগে না তা বলা শক্ত।
    মেয়ে দুটোর কাছে গিয়ে একটা পাথরের ওপর বসেছি, তারা আমার দুহাত দেখে সে কী উত্তেজিত! আমরাও হেনা করিয়েছিলাম, দ্যাখো দ্যাখো আমাদের হেনা একদিনেই ফিকে হয়ে উঠে গিয়েছে, এই দ্যাখো—
    এইসব বলে ওরা ওদের হাত, উরু, বাহু নানান জায়গা দেখাতে লাগল। বড্ড ঠকে গেছে। আধ মিনিট আফশোস করল। তারপর অন্য আলাপ পরিচয়। ওরা এসেছে ব্রিটেন থেকে, উচ্চারণে ব্রিটিশ অ্যাকসেন্ট থাকলেও ইংরিজি শব্দ বা ব্যাকরণ ঠিক নয়। একটু যাচাই করার জন্য জিগ্যেস করতেই বেরিয়ে পড়ল এরা পূর্ব ইউরোপ থেকে মাইগ্রেট করেছে। পোল্যান্ড থেকে।
    আমরা যারা ফার্স্ট জেনারেশনের ইমিগ্র্যান্ট, আমাদের জন্মভূমি সহজে পিছু ছাড়ে না।
    এখানেও লোকে খুচখাচ খাচ্ছে, সিগারেট তো ফুঁকছেই। 
    এর পরে আমাদের গন্তব্য হবে সেই বিখ্যাত শুটিং স্পট। যেখানে বহু নামকরা সিনেমার শুটিং হয়েছে।
    আমি এমনই গর্দভ যে ভেবেছিলাম বলিউডের সিনেমা হবে হয়ত বা। এরা যেমন হিন্দিবইয়ের ভক্ত, বোকার মত দুইয়ে দুইয়ে চার করে ফেলেছিলাম।
    উঁহু। দুইয়ে দুইয়ে মাঝে মাঝে পাঁচও হয়।
     
  • যোষিতা | ২৭ নভেম্বর ২০২২ ০৫:৩৫739027
  • ইশ্, বলতেই ভুলে গেছি এইযে এত পাহাড় পর্বতের বর্ণনা দিচ্ছি,এ সবই আটলাস পর্বতমালা। আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পর্বতশ্রেণী। 
    প্রথমটাতো সবাই জানি, মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো, সেটা অবিশ্যি দক্ষিন গোলার্ধে।
     
    একটু ছবি দিয়ে দিই শুটিং স্পট থেকে শুরু করে আরও কয়েকটা সিনারির।
     
  • যোষিতা | ২৭ নভেম্বর ২০২২ ০৫:৩৬739028
  • অনেক হলিউড সিনেমার শুটিং হয়েছে এখানে। গ্ল্যাডিয়েটর, লরেন্স অফ আরাবিয়া, অ্যাস্টেরিক্স, ওবেলিক্স, প্রিন্স অফ পারসিয়া, গেম অফ থ্রোনস।
     
  • যোষিতা | ২৭ নভেম্বর ২০২২ ০৫:৪২739029
  • এরপরে গাইড এসে উপস্থিত। সব মূল্য ধরা আছে প্যাকেজে। এ গাইড যে সে গাইড নয়। ইনি বেশ কয়েকটি হলিউডের ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অ্যাকটিং করেছেন। টিপিক্যাল বারবেরিয়ান বেদুইন। যেমন চালাক চতুর, তেমনি সুঠাম তার চেহারা। তার সাজপোশাক পুরো বেদুইনের মতো।
  • যোষিতা | ২৭ নভেম্বর ২০২২ ০৫:৪৩739030
  • ঐযে ওপরের ফোটোগুলোর মধ্যে নীল আলখাল্লা নীল পাগড়িতে যিনি, তিনিই গাইড।
  • যোষিতা | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫৩739312
  • এই জায়গাটার নাম ওয়ার্জ়াওয়াৎ। যেখানে আমরা রাত্রিবাস করব। গাড়ির সারথি ইউসুফ একটানা গাড়ি চালিয়ে চালিয়ে এতটুকুও ক্লান্ত হয় বলে মনে হয় না। দুপুরে যে রেস্টুরেন্টে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা আকারে আয়তনে বিশাল, ধাপ কাটা অট্টালিকার মতো, নানান হলঘরে নানান অতিথি খাচ্ছে দাচ্ছে। আমাদের আটজনের জন্য টেবিল নির্দিষ্ট, খরচ এখানে যার যার তার তার। যার যেমন খুশি মেন্যুকার্ড দেখে পছন্দ করো।
    মরোক্কান ছেলেটি ও প্যাট্রিশিয়া ছাড়া আমরা এখানে তিন কাপল। যে যার মত খাবার বেছে বেছে অর্ডার দিচ্ছি, হঠাৎ প্যাট্রিশিয়া ঘোষণা করল যে সে কিচ্ছুটি খাবে না।
    ভোরে সেই মেঘলা পাহাড়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে যখন আমরা কফি খাচ্ছিলাম, তখনও তাকে কিছু খেতে দেখিনি, সারাটা দিন না খেয়ে আছে, এখন দুপুর পেরিয়ে বিকেল হতে চলল, এই মেয়ে এরকম উপোস করে থাকলে শরীর টরির খারাপ করবে না তো?
    আমরা সকলেই বলি, অল্প কিছু খাও, ছোট্ট কোনও একটা ডিশ নাও...
    প্যাট্রিশিয়া বলে যে সে খাবার দাবার্র ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে, চুজ়ি।
    অবশ্য আমরা যখন খেলাম, তখন সে আমাদের সকলের প্লেট থেকেই টুকটাক তুলে তুলে খেলো। 
    গোটা তুনিসিয়া সফরেও সে নাকি খুঁটে খুঁটে খেয়েছে জানালো।
    খাওয়া দাওয়া ধোঁয়া গেলা শেষ করে আমরা ফের চললাম আরও পূবের দিকে, আরও বেশ কয়েকঘন্টা চলবে গাড়ি, জল টল কিনে এবার এখানেই শেষ সুযোগ। পথে একটা জনপদ পড়ল, সেখানে কার্ফুর (Carrefour) এর সুপার মার্কেট থেকে নেওয়া হলো পানীয় জল, ওয়াইন, অল্পস্বল্প বাদাম, বিস্কুট।
    জলের দাম বাড়ছে। এরপরে প্রায় দুর্মূল্য হয়ে যাবে।
    পাহাড় এবার কেবল চড়াই উৎরাই এবড়ো খেবড়ো হতে লেগেছে। রোদ পড়ে গিয়ে বিকেলও শেষ হতে চলল। 
    বলা হয় নি, পথে যে কটি গ্রাম চোখে পড়েছে সবকটাতেই মাটির বাড়ি।
    দেশের রাজা এরকমই নিয়ম করে দিয়েছেন। গ্রামে বাড়ি তৈরি হবে লালমাটি দিয়ে, আমাদের সারথি এবং সেই গাইড কাম অভিনেতাও একথা জানিয়েছিল। শুকনো খড় ও মাটি মিশিয়ে তৈরি করা  হয় এসব বাড়ি। শীতে বা গ্রীষ্মে তাপমাত্রার প্রখরতার প্রকোপ তেমন নাকি পড়ে না এসব বাড়ির ভেতরে। তার ওপর সিমেন্ট কংক্রিট এসবের ব্যবহার নেই বলে দূষণও নেই। পাহাড় মরুভূমির মানুষ এমনি করেই রয়েছে যুগ যুগ ধরে।
    অবশ্য আমরা যেসব হোটেলে থাকব আশাকরি সেগুলো মাটির বাড়ি হবে না।
    অন্ধকার ঘনিয়ে আসার পরেই গাড়ি কিছুটা হুড়মুড়িয়ে রাস্তার একদিকে খাদের মধ্যে নেমে গেল। গাড়ি থেমে গেল। আমরা একটু চমকেছি। কী কেস?
    দরজা খুলে বাইরে নামতেই এবড়ো খেবড়ো নুড়ি পাথরের ওপর পা হড়কে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম।
    খাদের পাশে একটা সরু পথ দেখা যাচ্ছে, কিছু গাছ, আলোর শেষ রশ্মিটুকু মিলিয়ে যেতে যেতে ইউসুফ ঐ পোলিশ চারজনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তল্পি তল্পা সহকারে পা চালিয়ে সেই সরু পথে নীচের দিকে নামিয়ে নিয়ে গেল। ওখানেই ঐ চারজনের হোটেল।
     
  • | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:০২739315
  • এইত্তো।
    হ্যাঁ তারপর?
  • kk | 2601:14a:500:e780:fee3:3778:4fd4:***:*** | ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৩:৩৯739952
  • ভিডিও তো খুবই ভালো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি গল্পটা আপনার ভাষায় পড়তেও চাই। বইয়ের মত।
  • যোষিতা | ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৩:৫৪739953
  • লিখব লিখব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন