এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  ভ্রমণ  ঘুমক্কড়

  • পায়ের তলায় সর্ষেঃ অজন্তা ইলোরা ঔরঙ্গাবাদ 

    Shuchismita
    ভ্রমণ | ঘুমক্কড় | ১৬ আগস্ট ২০২২ | ১৮৮৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • প্রথম গুহার সামনে জুতো খোলার সময় থেকেই "গাইড চাহিয়ে দিদি?", " জাতক কহানিয়া হ্যায়, হাম এক্সপ্লেন কর দেঙ্গে" শুরু হয়ে গেল। "না না, গাইড চাই না" বলে ভিতরে ঢুকছি, ততক্ষণে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির চোখ আমার হাতের বইতে। "যিনকি পাস নারায়ণ সানিয়ালকা কিতাব হো উনকি গাইডকা ক্যা জরুরত!" তারপর থেকে "অজন্তা অপরূপা" ভিআইপি পাসের মত কাজ করল। গুহার মধ্যে আলো অত্যন্ত কম। আমাদের কাছে টর্চ নেই। বেশিরভাগ মানুষই কিছুই না দেখে সেল্ফি তুলে চলে যাচ্ছে। এরই মধ্যে যারা এক্টু জানতে চায় গাইডরা তাদের টর্চ দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের তো অমন এক ঝলকের দেখায় আশ মিটবে না। নিজস্ব টর্চ হলে ভালো হয়। প্রথমবার চেয়ে পেলাম না। মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছি, দেখি এক গাইড এসে টর্চ দিয়ে গেলেন -"দেখ লো আপ। মেরে পাস এক্সট্রা হ্যায়"। ষোলো নম্বর গুহায় প্রায় ঘন্টাখানেক বসে ছিলাম। তেমন ভীড় ছিল না। গাইড ভাই এসে বললেন - "নারায়ণ সানিয়ালজিকা কিতাব সবসে আচ্ছা হ্যায়। জাতক কহানিয়া পুরা ডিটেল মে হ্যায় ইস কিতাব মে। হামে তো ইতনা ডিটেল পতা নেহি হোতা। যব দাদা-দিদি লোগ আতে হ্যায় লিখ লেতা হুঁ।" সত্যি করেই সতেরো নম্বর গুহায় যখন গেছি গাইড এসে জানতে চাইলেন, দিদি জুজুক কোন কোন ফ্রেমে আছে দেখে দিন তো আপনার বই থেকে। বিশ্বান্তর জাতকের কাহিনির যে কটি ফ্রেম "অজন্তা অপরূপা"য় কপি করা হয়েছে সেগুলো ধরে ধরে জুজুককে চিনে নিলাম গাইডের সাথে। গাইডও হাসিমুখে দেখিয়ে দিলেন কৃষ্ণা অপ্সরাকে। ঐ জায়গাটায় ম্যাপ পড়তে ভুল করছিলাম। সব গুহাগুলো দেখে দিনের শেষে যখন আরেকবার ফিরে আসছি চিত্রবহুল ষোলো, সতেরো, এক ও দুই গুহায়, গাইডরা হেসে বলছেন, "আবার দেখতে হবে? সমঝতা হুঁ। হামারা তিস সাল হো গ্যায়া। ফিরভি অজন্তা কমপ্লিট নেহি হুয়া।" তখন ভীড় বেশ কম। প্রথম বার যে ছবিগুলো চিনতে পারি নি, সেগুলো চেনার চেষ্টা। কৃষ্ণা রাজকুমারীকে খুঁজে পাইনি প্রথম বার। গাইড তাঁর শক্তিশালী টর্চ ধরলেন ম্যাপে বর্ণিত জায়গায়। মিঠুন খুঁজে পেল রাজকুমারীকে। গাইড এনাকে চেনেন না। "অজন্তা অপরূপা"য় প্রতীক্ষারত কৃষ্ণা রাজকন্যার কথা যতটুকু লেখা আছে আমার ভাঙা হিন্দীতে বর্ণনা করলাম। তিনিও মহাজনক জাতকের সমুদ্রতরীর দৃশ্যটি আরও অন্য ছবির ভীড় থেকে খুঁজে দিলেন আমাদের। এক রাজপুত্রের অভিষেকের দৃশ্য দেখিয়ে জানতে চাইলেন বইতে সেই রাজপুত্রের পরিচয় দেওয়া আছে কিনা। শ্যাম জাতক ও রামায়ণের অন্ধমুনির উপাখ্যানের সাদৃশ্য নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হল। এ কাহিনী হিন্দু নাকি বৌদ্ধ তা নিয়ে বিবাদ যে অর্থহীন তা নিয়ে সকলেই একমত হলাম। বেরোনোর আগে এখনকার দুহাজার টাকার নোটে অজন্তার যে নকশাগুলো আছে সেগুলো চিনিয়ে দিয়ে দরাজ গলায় হাসলেন " আপকা কিতাব মে ইয়ে নেহি হোগা, কিঁউকি দো হাজারকা নোট তব নেহি থা।"
    কোনো আর্থিক লেনদেন ছিল না। আমরা প্রতিটা ছবিওয়ালা গুহা দুবার গেছিলাম। বকশিশ যে দেবো না তা এনারা জানতেন। দুজন ছাত্র তাদের পছন্দের বিষয় পেলে যেভাবে কথা বলবে ঠিক তেমনই বিনিময়।
     
    (সাথের ছবিটি অজন্তার সতেরো নম্বর গুহার - ভিক্ষাপাত্র হাতে বুদ্ধ, সামনে রাহুল ও যশোধরা) 
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Shuchismita | 2607:fb90:8d17:3ec2:baeb:3ad5:4abb:***:*** | ১৬ আগস্ট ২০২২ ২১:৫২738233
  • হ্যাঁ, প্রচ্ছদ দেখে গাইডরা বুঝতে পেরেছিলেন ওটা অজন্তা অপরূপা। শুনলাম এর আগেও কিছু বাঙালী টুরিস্ট অজন্তা অপরূপা নিয়ে ওখানে গেছেন। গাইডরা তখন ওনাদের ওই বই থেকে ট্রান্সলেট করে গল্পগুলো শোনাতে বলেছেন এবং নিজেরা লিখে নিয়েছেন। অজন্তার ওপরে এর চেয়ে ভালো গাইড বই হয়না এটা বলছিলেন ওখানকার গাইডরা। ওনাদের যা ট্রেনিং দেওয়া হয় তাতে এত ডিটেল থাকে না। 
  • Ranjan Roy | ১৬ আগস্ট ২০২২ ২৩:২১738235
  • শুচির লেখা পড়ে মনে হল কতবার ভেবেছি যাব, এবার মনে হচ্ছে না গেলেই নয়। পরে দেরি হয়ে যাবে।
  • শিবাংশু | ২৪ আগস্ট ২০২২ ২৩:২৫738263
  • ভালো লাগলো।

    ১৯৭৬ আর ১৯৯৮-য়ে গিয়েছি। আরেকবার যাবার ছিলো এর মধ্যে। কোভিডের প্রতাপে পিছিয়ে গিয়েছি। নারায়ণ সান্যালের মুখ্য আকর্ষণ জাতকের গল্পের সঙ্গে গুহাচিত্রগুলিকে যুক্ত করা। এই কাজটি তিনি বিশ্বস্তভাবে, সযত্নে করেছিলেন। ছবির ধারাবিবরণী ব্যাপারটা দর্শকদের টানে। সেজন্যই তিনি নিজে 'অপরূপা অজন্তা'কে 'গাইড বই' বলেছেন। তাঁর লেখায় উল্লেখ আছে গ্রিফিথ, হেরিংহ্যাম  থেকে গুলাম ইয়াজদানির। তার পরে ও আগে আরও অনেক লেখালেখি আছে নানা জনের। আসলে 'অজন্তা' বিষয় হিসেবে অতি বিস্তৃত। একটা বিস্ময়।
  • Politician | 2603:8001:b143:3000:ad05:cfbe:7336:***:*** | ২৯ আগস্ট ২০২২ ০২:৪২738282
  • অজন্তার সতেরো উনিশ কুড়ি নম্বর গুহা রাজা উপেন্দ্রগুপ্তের তৈরী। এক নম্বর গুহা সম্রাট হরিসেনের। মজা হল উপেন্দ্রগুপ্ত ছিলেন হরিসেনের সামন্তরাজা। ষোলো নম্বর বানিয়েছিলেন হরিসেনের মন্ত্রী বরাহদেব। দু নম্বর গুহা সম্ভবত: হরিসেনের কোন রানীর বানানো। আর তিন নম্বর বানান মথুরাদাস বলে এক ধনী বনিক। ছাব্বিশ নম্বর অশ্মকদের তৈরী। যারা বাকাটক সম্রাট হরিসেনের মৃত্যুর পর এই অঞ্চলটা দখল করে নেয়।

    অজন্তার মহাযান পর্বের গুরুত্বপূর্ণ গুহাগুলো মোটামুটি এই। 
  • | ১৮ অক্টোবর ২০২২ ২০:২২738620
  • হুচি তো লিখছেইনা, তুলে দিই যদি মনে পড়ে। 
  • | ১৮ অক্টোবর ২০২২ ২২:৫১738622
  • এই সেই ভরন্ত ঝর্ণা। 
     
     
     
     
    গোটা ইলোরাতেই বিভিন্ন জায়গা জুড়ে জল ঝরছে
     
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন