এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ফিল্ডার - ১১ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ জুলাই ২০২২ | ৬৩৬ বার পঠিত
  • চিকিৎসা কর্মীরা ইরাবানের চোখের পাতা ফাঁক করে টর্চের আলো ফেলে চোখের মণির অবস্থা দেখল। রক্তচাপ, পালস বিট, অক্সিজেন স্যাচুরেশানের মাত্রা, জুতো খুলে বাঁ পায়ের তলার সাড় এসব প্রাথমিক পরীক্ষা করল। তেমন হতাশ হতে দেখা গেল না তাদের। ইরাবানকে একটা ইঞ্জেকশানও দিল। দীপেন বাবু এসে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়লেন ইরাবানের শরীরের ওপর। একজন চিকিৎসা কর্মী তাকে সরিয়ে দিল। দীপেনবাবু বাধ্য হয়ে খানিক তফাতে গেলেন। একজন ছুটতে ছুটতে মাঠের বাইরে গেল। তাকে একটু পরে একটা স্ট্রেচার নিয়ে আসতে দেখা গেল।

    ইরাবানের শরীরের পাশে স্ট্রেচার পাতা হল। দুজন চিকিৎসা সহায়ক ইরাবানকে দুদিকে খুব সাবধানে তুলে স্ট্রেচারে রাখল মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যম্বুলেন্সে তোলার জন্য। এই ঘটনাগুলো ঘটল মিনিট পাঁচেকের মধ্যে।

    দুজন স্ট্রেচারের দুদিক ধরল তোলবার জন্য। ঠিক এই সময়ে ইরাবান চোখ মেলল। কয়েক সেকেন্ড ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল সকলের মুখের দিকে। তারপর ধড়মড় করে উঠে বসল। সন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল, 'একি তোরা মাঠে কেন? আমার কি সেঞ্চুরী হয়ে গেছে?'

    সন্ময় নীচু হয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বলল, 'না ...একটা রান বাকি আছে ... বলছি যে টিম তো মোটামুটি ভাল জায়গায় আছে .... তুই এখন একটু রেস্ট নিয়ে নে ... যদি সম্ভব হয় পরে এসে সেঞ্চুরীটা কমপ্লিট করিস ... একজন ডাক্তারকে ঠেকে পাঠানো হয়েছে। এক্ষুণি আসবে। বাইরে অ্যম্বুলেন্সও রেডি আছে ....'

    ইরাবান উঠে দাঁড়ায়।
    ---- 'না না ... ওসব লাগবে না ... কি হয়েছে কি? দুটো বল তো বাকি আছে এই ওভারে ... হঠাৎ হলটা কি? তোরা যা ... ওভারটা ফিনিশ করতে দে। সেঞ্চুরীটা হয়ে যাক, তারপর দেখা যাবে .... '

    মেডিক্যাল টিমের একজন ইরাবানকে প্রচুর গ্লুকোজ ওয়াটার খাওয়াল। একটা মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেটও দিল।

    দীপেন বাবু হাঁটা দিয়েছেন আগেই। তিনি এত ধকল নিতে পারছেন না। তার পিছন পিছন সন্ময়রাও স্ট্রেচার তুলে নিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে গেল। হোয়াইট বর্ডারের ক্যাপ্টেন সঞ্জীব ভাটিয়া কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। ইরাবানের বলা কথাগুলো শুনতে পেল।

    আম্পায়ার দুজন আবার নিজেদের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। সৌরাশিসের ওভার শেষ হয়নি। সে বল হাতে নিয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাটিয়া ফিল্ডিং সাজাতে লাগল।

    সকলে অবাক হয়ে দেখল এক অভিনব ফিল্ডিং সজ্জা। ব্যাটসম্যানের পিছনে উইকেটকিপার সহ দশজন। সামনে শুধু বোলার। উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার। প্রথম বলেই ইরাবানকে সেঞ্চুরীটা পেতে দেওয়া। এ কৌশলের পিছনে কোন কূট ভাবনা ছিল না যে.... সেঞ্চুরীটা করে ইরাবান মাঠ থেকে বেরিয়ে গিয়ে হোয়াইট বর্ডারকে স্বস্তিতে রাখবে। এর মূলে ছিল নিছকই মহানুভবতা। একজন প্রতিভাদীপ্ত ক্ষত বিক্ষত সংগ্রামী যোদ্ধার প্রতি সম্মান প্রদর্শন। জীবনের কিছু পাওনা কোথাও না কোথাও তোলা থাকে। তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলেই তারা আবরণ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে।

    ইরাবান মাঠের চারদিকে নজর ঘুরিয়ে তার সামনে কোন ফিল্ডার দেখতে পেল না। দেখে অবাক হয়ে গেল বোলার ছাড়া পুরো টিম তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।

    সে স্টান্স নিল। তার শরীর থেকে আবার ঘাম দিতে শুরু করেছে। বুকের কাছে কেমন তিরতির করছে। সৌরাশিস বল ছাড়ল। অতি ধীর গতির হাফ ট্র্যাকার। কোন বাবা তার পাঁচ বছরের ছেলের সঙ্গে 'ব্যাটবল ' খেলার সময় যে রকম বল করে থাকে। বল ড্রপ খেতে খেতে মিডল স্টাম্প লাইনে ইরাবানের দিকে আসতে লাগল। ইরাবান ব্যাপারটা ধরতে পারল এবার। মাঠের যে কোন জায়গায় বল পাঠাবার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে তাকে। ইরাবানের অহমবোধে ঘা পড়ল। সে অতি মৃদুভাবে বলটা বোলারের দিকে ঠেলল যেভাবে কোন শিশু তার বাবার দিকে বল ঠেলে । আশ্চর্যের ব্যাপার সৌরাশিস যেন শুকনো ডাঙায় আছাড় খেল। নিশ্চিতভাবেই ইচ্ছাকৃত। হড়কে পড়ে গেল এবং বলটা থামাবার কোন চেষ্টাই করল না। বলটা গড়িয়ে চলে যাচ্ছে। অন্তত একটা সিঙ্গল খুব সহজেই হয়ে যায়। ওদিক থেকে টোপাই স্বল্প গতিতে ছুটতে শুরু করল ব্যাটে তালি বাজাতে বাজাতে। ইরাবান হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিল এবং ফিরে যেতে বলল।

    সঞ্জীব ভাটিয়ার পুরো ব্যাপারটা বুঝতে কোন অসুবিধে হল না। সে নিজেও একজন প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। এ মনস্তত্বে কোন ধোঁয়াশা নেই তার কাছে।

    সৌরাশিস মাটি থেকে উঠে খানিক দূরে গিয়ে থেমে যাওয়া বলটা কুড়িয়ে নিয়ে এল। ভাটিয়া মিড অফে এসে দাঁড়াল। পয়েন্ট, কভার, মিড অন, স্কোয়্যার লেগও লাগানো হল বাধ্য হয়ে।

    সৌরাশিসের এই ওভারের শেষ বল। স্বাভাবিক খেলায় ফিরে এল সে। অফস্টাম্পের বাইরে জোরালো অফব্রেক। ইরাবানের ঘাড় পিঠ জ্বলে যাচ্ছে। দু পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে বলটা ঘোরার জন্য অপেক্ষা করল দু আড়াই সেকেন্ড তারপর উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে যে শটটা তুলল, ইদানীংকালে তাকে বলা হয় 'দিলস্কুপ'। ঠিকমতো ব্যাটেবলে হলে এ শট আটকানো যায় না .... ইরাবান একশ তিন।

    সৌরাশিসের ওভার শেষ। উদয়নের রান দেড়শো পেরিয়ে গেল। ইরাবান আবার বসে পড়ল মাঠে। যেন হামাগুড়ি দিয়ে খানিকটা গেল। তারপর শুয়ে পড়ল। ডান হাত নেড়ে টোপাইকে ইশারায় বলল, ' আমাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যা .... '

    মেডিক্যাল ইউনিট স্ট্রেচার নিয়ে ছুটে আসছে। অ্যম্বুলেন্স এসে অপেক্ষা করছে হোয়াইট বর্ডার টেন্টের পাশে একটা বাবলা গাছের তলায়।

    সকলকে অবাক করে দিয়ে সন্ময় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিল।

    লাঞ্চ করতে করতে সন্ময় টোপাইয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল, 'বোলাররা আপ্রাণ চেষ্টা করবে ঠিকই .... ইরাবানের এই ইনিংসের ইজ্জত রাখার আসল দায়িত্ব কিন্তু তোর ... ইরাবান অ্যম্বুলেন্সে ওঠার সময় নিজে এ কথা বলে গেছে ... '

    টোপাই সন্ময়ের চোখে চোখ রেখে বলল, 'জান বাজি ... '

    ( ক্রমশ )

    **********************************************************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Mousumi Banerjee | ২২ জুলাই ২০২২ ১১:০৪510137
  • বেশ লাগছে । মাঠের মধ্যেই অথচ মাঠের বাইরের কত ঘটনা!   জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে যে কত কিই পার করতে হয়!
  • Aranya | 73.197.***.*** | ২২ জুলাই ২০২২ ১১:১২510138
  • সুন্দর 
  • Anjan Banerjee | ২২ জুলাই ২০২২ ১২:৪৫510142
  • অনেক ধন্যবাদ । মাঠের ভিতরে, মাঠের বাইরে... দু জায়গার লড়াই এসে মিশে যায় একটা রেখায় এসে ।
  • Ranjan Roy | ২২ জুলাই ২০২২ ১৬:০৯510145
  • খেলা টা  যে न চোখের সামনে হচ্ছে। 
     জীবন্ত।  টুপি খুলে দাঁড়ালাম ।
  • Anjan Banerjee | ২২ জুলাই ২০২২ ১৯:৫৬510150
  • আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভকামনা 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন