: তুমি ফড়িবায় নি? ফড়ো, এখান তাখি।: না দাদা, আপনিই পড়েন আজকে।
: খিতা?
: ফড়ৌক্কা আপনে। যুদ্ধের সময় শ্রবণশক্তি প্রায় গেছে, পাশ থেকে দাদুকে জোরে বলতে হচ্ছে তাই।
সফলকাম হওয়া বহু উচ্চ পর্যায়ের জিনিস। সফলতা শব্দটি যেখানেই উল্লিখিত হয়, উহা দ্বীন ও দুনিয়ার যাবতীয় উন্নতি ও কামিয়াবির অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইমাম রাগেব (রহ.) লিখিয়াছেন, দুনিয়াবি সফলতা ঐ সমস্ত গুণাবলি অর্জন করার নাম যাহা দ্বারা দুনিয়ার জীবন উন্নত হইয়া যায়। আর তাহা হইল স্থায়িত্ব, অমুখাপেক্ষিতা ও সম্মান। আর আখেরাতের সফলতা হইল চার জিনিস: এমন স্থায়িত্ব যাহা কখনও শেষ হয় না, এমন অমুখাপেক্ষিতা যাহার মধ্যে অভাবের লেশমাত্র নাই, এমন সম্মান যাহার মধ্যে কোনো প্রকার অপমান নাই, এমন এলেম যাহার মধ্যে মূর্খতার দখল নাই।
সান্ধ্য-তালিমে দাদা পড়ে যাচ্ছেন ফাজ়ায়েলে সাদাকাত থেকে থেমে থেমে, নিচুস্বরে; আমরা টেবিলের চারপাশ ঘিরে বসে আছি। তাহলে সম্মানেও অপমান থাকে? আর এলেমের ভেতরও থাকে মূর্খতার দখল? এইসব পৃচ্ছা আমার তখন জাগে নাই, বিশাল পরিবারে আমার চেয়ে বড়ো অনেকের এখনো জাগে নাই; তাঁরা সবকিছুতেই অন্তিম রায়টা পেয়ে বসে আছেন—নিশ্চিন্ত যাপন। নিশ্চিন্ত মানুষের সাথে কথা বলে আরাম কম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইগুলো দেখলেই দাদার কথা মনে পড়ে; তাঁর 'মুকাশাফাতুল কুলুব', ছারছীনা থেকে বের হওয়া 'কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী', 'জুমা কে খুতবে' না জানিয়ে দখল করার পর তাঁর পড়ার ছোট্টো ডেস্কটেবিলটায় চিঠি রেখে আসার কথা। তাঁর ছুটে চলার সময়ে প্রকাশিত বইগুলো এখনো ফাউন্ডেশনে অবিক্রীত-অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। তাদেরকে বলা-না বলা অন্য অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই ফলদায়ক কিছু না। আক্ষরিক অর্থেই এর বিপরীতে ঝকঝকে-তকতকে বেসরকারি গ্রন্থবিপণি গড়ে উঠছে, সামনে স্তূপীকৃত আমদানি করা বইয়ের চালান।
সৈয়দ শাহ এমরানের 'ইসলামী পরিভাষা'—মুসত়লাহ়া-ত—অবশ্য জীবিতাবস্থায় দাদা দেখে যেতে পারেন নাই। এটা ২০১৮ সালের। মুসত়লাহ়া-ত না বলে সংক্ষিপ্ত ধর্মকোষ বলা ভালো। ২৬ খণ্ডের 'ইসলামী বিশ্বকোষ'টা তো আছে, কিন্তু অন্য শৃঙ্খলার (discipline) অধীনে থেকে দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার সময় হয়তো হবে না। আর ছাব্বিশ খণ্ডের বিশ্বকোষটাও অনেক আগের, যার নতুন সংস্করণ খুব প্রয়োজন।
পুরানা পল্টন
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।