এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হাসতে তাদের মানা

    Supriya Debroy লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ জানুয়ারি ২০২২ | ৭৯০ বার পঠিত
  • করোনা মহামারিকালে যখন জীবনযাপন ধীরেধীরে স্বাভাবিকের দিকে এগোচ্ছিল, স্কুল-কলেজ-অফিস-সিনেমা হল খুলতে আরম্ভ করেছিল, বাচ্চারা শুরু করেছিল যাওয়া মাঠে-ঘাটে খেলতে; ঠিক সেই সময়ই আবার করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকায় ঝুপ করে সব আবার বন্ধ হতে শুরু করেছে। আবার প্রায় ঘরবন্দি অবস্থা সকলের। আবার নানারকম বিধি-নিষেধের আরোপ : সপ্তাহে তিনদিন বাজার খুলবে, সিনেমাহল-জিম-পার্লার থাকবে বন্ধ, স্কুল-কলেজ আবার সব বন্ধ, লোকাল ট্রেন চলবে কমসংখ্যক এবং রাত ১০টা পর্যন্ত - এইরকম সব মিনি লকডাউন স্বরূপ নানারকম নিয়ম-বিধি-নিষেধ। কিন্তু আমাদের অবাক হয়ে যেতে হয়, যখন জানা যায় আমাদের এই ভূখন্ডেরই একটি দেশে গত ডিসেম্বর মাসে ১১ দিনের জন্য ঐ দেশের সরকার আরোপ করেছিল এরচেয়েও কঠিন বিধি-নিষেধ এবং তার কারণ করোনা মহামারী নয়। অনেকটা যেন রূপকথার গল্পের মতো।

    আমরা সবাই পড়েছি - সুকুমার রায়ের জনপ্রিয় বাংলা কবিতা 'রামগরুড়ের ছানা'।

    "রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা, / হাসির কথা শুনলে বলে, / 'হাসবো না-না, না-না"।

    কেউ কি ভেবেছিলেন, আসলে পৃথিবীতে এমন রামগরুড়ের ছানার মতন চিড়িয়া আছে ! লেখক, সাহিত্যিকরা বোধহয় পৃথিবীর ভবিষ্যৎ রূপটা বুঝতে পারেন, দেখতে পারেন। তাই হয়তো সুকুমার রায় প্রায় একশো বছর আগে এরকম একটা কবিতা রচিত করতে পেরেছিলেন। যখন পৃথিবীর মানুষ লাখ লাখ টাকা খরচ করে মানুষকে হাসানোর জন্য কিংবা বিনোদন দেওয়ার জন্য, তখন ১১ দিনের জন্য হাসির ওপর নিষেধাঞ্জা করেছে একটি দেশ ! আশ্চর্য লাগছে শুনতে, তাই না ! ভাবছেন নিশ্চয়ই, গাঁজাখুরি রূপকথার গল্প শোনাচ্ছে।

    ছোটবেলায় আমরা সবাই শুনেছি রূপকথার গল্প মা, ঠাকুমাদের থেকে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে - ঘুমোতে যাওয়ার আগে। রূপকথা শোনেনি এমন মানুষ পাওয়া বোধহয় বিরল। এক যে ছিল দেশ, আর সেই দেশে ছিল এক রাজা - রূপকথার গল্প শুরু হতো এই ভাবে, আর রূপকথার গল্প শুনতে শুনতে চলে যেতাম আমরা সবাই আমাদের কল্পিত সেই রূপকথার দেশে।

    রূপকথার দেশে সবাই যেতে চায়, কারণ রূপকথা আমাদেরকে পুলকিত করে। হয়তো একটু বড় হয়ে আফসোস হয়, এমন কোনো দেশের অস্তিত্ব বাস্তবে না থাকায়। কিন্তু যদি আমাদের কল্পনাকে সত্যি করে সেরকম দেশের দেখা মেলে, আর যদি আমরা ঐ রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে যাই - তাহলে কি হতো ?

    ঠিক সেরকমই ঘোষণা করা হলো উত্তর কোরিয়া দেশে সম্প্রতি। উত্তর কোরিয়ার প্রাক্তন নেতা এবং কিম জং উনের পিতা, কিম জং-ইলের ১০-তম মৃত্যু বার্ষিকীতে ১১ দিনের শোকপালনের অংশ হিসাবে ১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার থেকে উত্তর কোরিয়া তার নাগরিকদের হাসতে, মদ্যপান করতে এবং বাজার করতে নিষিদ্ধ করেছিল। এমনকি শোকের সময়কালের মধ্যে লোকেরা তাদের নিজেদের জন্মদিনও পালন করতে পারবে না এবং যদি শোকের সময়কালে কারও পরিবার থেকে কেউ মারা যায় তবে তাদের উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করার অনুমতি নেই এবং শোকের সময় শেষ হওয়ার পরে মৃতদেহটি বের করতে পারবে সৎকারের জন্য। যদি কেউ এই ঘোষণার অমান্য করে, তাহলে তাকে বন্দী করা হবে এবং আদর্শিক অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে।

    খুব অবাক হয়ে যাচ্ছেন নিশ্চয়ই, এরকম কি সম্ভব আজকের দিনে ! যেন আমরা সত্যজিৎ রায়ের 'হীরক রাজার দেশে' সিনেমাটি দেখছি। মনে পড়ে যাচ্ছে নিশ্চয়ই সেই বুলিগুলো - 'হীরক রাজা বুদ্ধিমান, করে সবাই তার জয়গান', 'যায় যদি যাক প্রাণ, হীরক এর রাজা ভগবান'; পছন্দ না হলেও গাইতে হবে সবাইকে এইরকম সব গানগুলো রাজার আদেশে, নাহলে যাবে গর্দান।

    ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলে, কোরিয়া দেশটি দুটো ভাগে বিভক্ত হয় - উত্তর কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়া। কিম টু-সাং, কিম জং-ইল র পিতা ছিলেন উত্তর কোরিয়ার প্রধান নেতা ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। তারপর ওনার ছেলে কিম জং-ইল দেশ শাসন করেছেন ওনার মৃত্যুদিন ১৭ ডিসেম্বর ২০১১ সাল পর্যন্ত। এখন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নেতা, কিম জুং-ইল এর পুত্র কিম জং-উন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন