১.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে৷ আইন্সটাইন তখন আমেরিকায় আত্মগোপনে। মাঝমধ্যে হাওয়া খেতে সন্ধ্যে নামার আগে বের হন। একদিন হাওয়া খাওয়ার পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাড়ি ফেরার রাস্তা গুলিয়ে ফেললেন। একে তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তার উপর শত্রুদের চোখ রাঙানিতে আমেরিকা এসে আত্মগোপনে আছেন। কে কখন দেখে ফেলবে তার ঠিক নেই। আইনস্টাইন পড়লেন মহাবিপদে৷ ফোন করলেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরিচালক বন্ধুকে। তবে ভালো খবর এই যে, বন্ধুর সহযোগিতায় সেদিনের মত বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন৷
গতবছরের কথা। আইনস্টাইনের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা টুকলি করে বিজ্ঞানপ্রিয় পরিবারে ঠুকে দিলাম। ঘন্টা দুয়েক পর এক ভদ্রলোক এসে বলল, ইয়ার্কি করেন? যার বাড়ির ঠিকানা মনে থাকে না তার ফোন নাম্বার মনে থাকে কিভাবে?
আমি ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে যাচ্ছিলাম, বিজ্ঞানী মানুষ তাই বোধহয় ঠিকানার চেয়ে সংখ্যা-সূত্র মনে রাখাটা সহজ।
অমনি আরেক ভদ্রলোক আমার কথা কেড়ে নিয়ে সবজান্তা সেজে বলে দিলেন, আইনস্টাইন তার বাম পকেটে একটা ডায়েরি রাখতেন। ঐ ডায়েরির ভেতরে পরিচিতজনদের ফোন নম্বর লিখা থাকত।
মন্তব্য বাক্সে আরেক ভদ্রমহিলার আবির্ভাব হলো। কৌতূহলী চোখ নিয়ে প্রশ্ন করলেন, ফোন নম্বরের পাশে নিশ্চয়ই ঠিকানা লিখারও জায়গা থাকত। ঠিকানা না লিখে শুধু ফোন নম্বর লিখে রাখতেন কেন?
ব্যাপারটা গভীর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে দেখে টুক করে গল্পটা সরিয়ে দিয়ে চলে আসলাম। আমার যতদূর ধারণা আলোচনা আরো কিছুক্ষণ চললে আইনস্টাইনের শ্রাদ্ধে কি কি রান্না হয়েছিল তাও বের করে নিয়ে আসা যেত।
২.
ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো। প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছে। ক্লাসে রোল ২-৩ এর নিচে নামত না। বাবার অনেক ইচ্ছে ছেলে বড় ডাক্তার হয়ে গ্রামের লোকের সেবা করবে৷ নবম শ্রেণিতে এসে ভর্তি হলো বিজ্ঞান শাখায়। কিছুদিন পর ছেলের লেখাপড়ার সাফল্যে গর্বিত হয়ে পিতৃদেব পুত্রকে স্মার্টফোন কিনে দিলেন।ছেলেটা এখন বিজ্ঞান পাঠের গ্রুপগুলোতে নিয়মিত বিজ্ঞান শেখে।
মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে ছেলেটার শখ হলো কবুতর পুষবে।
হাট থেকে কিনেও আনল দুইজোড়া। ক'দিন পর কবুতর ডিম দিল। অধীর আগ্রহ নিয়ে ছেলেটা বাচ্চা ওঠার অপেক্ষা করল। একসময় কবুতরের ডিম ভেঙে বাচ্চা ফুটল, সেই বাচ্চাগুলো ধীরে ধীরে বড় হলো, আকাশে উড়াল দিতে শিখল। ছেলেটা প্রতিদিন স্মার্টফোন দিয়ে একটা করে ছবি তুলে রাখত। এরপর একদিন সব ছবিগুলো একসাথে কোলাজ করে ফেসবুকে ছেড়ে শিরোনামে লিখল 'বিবর্তন'।
ছেলেটার বড়ভাই নামকরা এক প্রতিষ্ঠানে স্নাতক পড়ছে৷ বড় ভাইয়েরও ছবি তোলার দারুণ নেশা রয়েছে৷ একদিন সেও একেবারে ১০ বছর বয়স থেকে ২২ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি জন্মদিনের ছবি একসাথে কোলাজ করে ফেসবুকে দিয়ে শিরোনামে লিখল 'বিবর্তন'।
৩.
একদা এক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে জীববিজ্ঞানের রেচন অধ্যায় পড়াচ্ছিলেন৷ এক ছাত্র হঠাৎ প্রশ্ন করে বসল, স্যার একটা প্রশ্ন ছিল। মূত্রের রঙ মাঝেমধ্যে হলুদ হয় কেন?
শিক্ষক বললেন, ঐ তো দেখ বইয়ের অমুক পাতায় লেখা আছে। ইউরোক্রম নামক রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে মূত্র হলুদ হয়।
কিছুক্ষণ পর আরেক ছাত্র দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, স্যার মূত্র তো মাঝেমধ্যে হলুদ হয়। কিন্তু মল মাঝেমধ্যে বাদে প্রায় সবসময়ই হলুদ হয় কেন?
শিক্ষক মশাই পড়ে গেলেন মহা ফাঁপড়ে। এ কেমন ধারার প্রশ্ন৷ এর উত্তর তো বইতে দেওয়া নেই। তবে তিনি যথেষ্ট সৃজনশীল। ভেবেচিন্তে একটা উত্তর বের করে ফেললেন।
বললেন, আরে গাধা এটাই তো বলছিলাম৷ মল যখন অতিরিক্ত ইউরোক্রোম ধারণে অক্ষম হয় তখন মূত্রকে খানিকটা দান করে মূত্রকেও হলদে বানিয়ে ফেলে।
ছাত্ররা সৃজনশীল উত্তর পেয়ে খুশি। ক্লাস শেষের পর মাস্টার মশাই খানিকক্ষণ বসে বসে ভাবলেন এত সহজ একটা উত্তর বৈজ্ঞানিকেরা এখনও বের করতে পারেনি৷
তারপর আয়নায় নিজের মুখখানার দিকে চেয়ে আপসোস করে বললেন, আসলেই এই দেশে মেধাবীদের কোনও মূল্য নেই।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।