*জল ঝরার রাতে*
১
এলইডি আলোর তলা দিয়ে যাওয়ার সময় হেলমেট আর আকাশের মাঝখানে এক পশলা ইলশেগুড়ি নেমে আসতে দেখে *অভিযানের* মনে পড়ে গেলো ছোটবেলার কথা ! সেই প্রথমবার তার ইলশেগুড়ি দেখা, সে আশ্চর্য হয়ে দেখেছিলো দুহাত বাড়ানো আকাশ জুড়ে নেমে আসা মুঠো মুঠো আনন্দ! পাশে থাকা বন্ধুরা ততক্ষনে রাস্তার ধারের দোকানের শেডে ঢুকে গেছে, রাস্তা আর দোকানের মাঝের রাস্তা টুকু মাথায় স্কুল ব্যগ দিয়ে ভিজে যাওয়া আটকেছে কোনোক্রমে! যদিও *অভিযান* সেসব করেনি ! অবাক করা ইলশেগুড়ি কে দুহাতে আপন করে নিয়ে যখন বাড়ি ঢোকে ততক্ষনে তার মা বুঝে গেছে ছেলে তার মুষলধারা বৃষ্টিতে ভেসে এসেছে!
২-
বাজারের সামনে স্কুটি টা দাড় করাতেই দেখলো ছোট্ট একটা বিড়াল ছানা ট্যবি তার মায়ের গা ঘেষে বসে হোটেলের ডাস্টবিন দেখছে আর হয়তো মনে মনে বলছে আজকাল খাবার কম জমছে কেন? সে জানে তার মা কম খায়! আজকাল পাশের পাড়ার লালুভুলু রাও দলবল নিয়ে মাঝে মধ্যে চলে আসে খাবার খেতে! সে কি করবে?? লুকিয়ে থাকে সন্ত্রস্ত দৃষ্টি নিয়ে! চোখের সামনে তাদের অর্জিত অধিকারের হাত বসায় দুষ্টু কুকুর গুলো! ট্যবি জানে লালুভুলু এরকম নয়, বাধ্য হয়ে আসে! ট্যবিদের মতো লালুভুলু দেরও খুব কষ্ট, বিশেষ করে যখন ভিজতে।হয়, তারওপরে ঘর জল
ঢুকে গেলে আরও বিপদ, যদিও তার মা খুব বুদ্ধিমতি, সে ট্যবি কে ভিজতে দেয়নি! বন্ধ কারখানার হোস্টেল ঘরের সোফা তে তার নতুন ঘর পাতা হয়ে গেছে!
৩-
স্কুটি চলিয়ে সোজা ফাড়ির পাশ দিয়ে বেড়োতে হসপিটালের সামনে সাড়ি সাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেখে *অভিযান* বুঝতে পারে লড়াই এখনো চলছে, সম্মুখ সমর হয়তো বদলে গেছে গেরিলা যু্দ্ধে কিন্তু তবুও চলছে! পুলিশ ফাড়ির পাশের ছোটো জঙ্গলটার কাছে তার গাড়ি থেমে যায়! জায়গা বেশ অন্ধকার! যদিও ভয় তেমন কিছু নেই তবুও মনে হয় কোনো অস্পষ্ট বুড়োটে গলার আওয়াজ শুনতে পায় সে, কাতর আবেদন "সামনে লড়াই তৈরি হও! এ লড়াই লড়তে হবে!!!! এ লড়াই জিততে হবে!!!!! " স্কুটিতে তেল আছে, তাহলে মনে হয় স্পার্ক প্লাগ টা গেছে! অগত্যা কি আর করবে?? ঠেলো গাড়ি! !
৪-
জঙ্গলের পাশেই শহরের ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির স্টোর।হাউস, একজনই কর্মচারী সকাল থেকে এই রাত অবধি একাই বসে থাকে! কয়েক মাস আগে
দু একবার চোখাচুখি হতে হাসি বিনিময় হয়েছে ( *তখন মাস্ক পড়া কমপালসরি ছিলোনা তাই হাসলে বোঝাও যেতো আর দেখাও যেতো* )
৫-
অলড্রিন মোড়ে জমে থাকা জল ছাপিয়ে পেড়িয়ে আসতেই অভিযান দেখতে পেলো তার দিকে ধেয়ে আছে তামলা , সিঙ্গারন, নুনিয়া আর গাড়ুই নদী ! ও ভুলেই গিয়েছেলো আজ চারদিন যাবৎ প্রবল বৃষ্টিতে শহর ধুয়ে গেছে, ব্যরেজ, ড্যমের দুয়ার খুলতেই ভেসে গেছে কয়েকশো গ্রাম! সেসব ভেসে আসছে ওঁকে লক্ষ্য করে! ছোট নদীকে এতো জলের ক্ষমতা দিলে সে ডুবিয়ে নেবেই!
৬-
ইল্যুশান টা বুঝতে অভিযানের সময় লাগলো পাক্কা ২ মিনিট! দুটো যুগ পেড়িয়ে যখন সে আবার শহিদ সরনীতে গাড়ি ঠেলে উঠতেই দেখতে পেলো একটা বাচ্চা দু হাত দিয়ে আগলে আছে একরাশ জল, সেও এগিয়ে গেলো, অজস্র ইলশেগুড়ি আজ জমে জমে ঢেউ হয়ে এসেছে তাদের ভাসাতে! ঠেলে ধরেছে অভিযান , তার সাথে তার পাশেই তার সমান্তরাল সময়ে দাড়িয়ে ছোট অভিযান! সেও সময় পেড়িয়ে এসেছে! সেদিনকার সেই স্কুল থেকে আসার পথের ইলশেগুড়িকে যতটা ভালোবেসে ছিলো আজ ততটাই সে আটকাতে চাইছে এই ঢেউ কে! পিছনের জঙ্গল থেকে অভিযান শুনতে।পাচ্ছে " এ লড়াই লড়তে।হবে! এ লড়াই জিততেই হবে "
©️অর্ক গোস্বামী