এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • উপমহাদেশে পারিবারিক আইনের সংস্কার: সংখ্যাগুরু-লঘু ভেদবুদ্ধি

    Millat Hossain লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ নভেম্বর ২০২০ | ১৭০২ বার পঠিত
  • উপমহাদেশে ধর্মীয় পারিবারিক আইনে ইতিবাচক সংস্কার আনার সাথে সংখ্যা গুরু-লঘু ভেদবুদ্ধির একটা সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়।

    স্বাধীনতার ০৯ বছরের মধ্যে ভারত হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫; হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ১৯৫৬; হিন্দু নাবালকত্ব ও অভিভাবকত্ব আইন ১৯৫৬ এবং হিন্দু ভরণপোষণ আইন ১৯৫৬ প্রণয়নের মাধ্যমে হিন্দু পারিবারিক আইনে যুগান্তকারী সংস্কার আনতে সক্ষম হয়েছে।

    অন্যদিকে, এর পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৬১ সালের মধ্যেই মুসলিম আইনের ক্ষেত্রে যে সব সমস্যা ছিল তার মধ্যে নারীদের উত্তরাধিকারে অসমতা ও দত্তকের ব্যাপার দু'টি ছাড়া পারিবারিক আইনের বাকি সমস্যাগুলোতে কমবেশি সংস্কার আনতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তানও। পরবর্তীতে, ভারত-পাকিস্তান এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশও সংখ্যাগুরুদের আইনে আরো উন্নতি করেছে।

    বিপরীতে, এসব দেশের সংখ্যালঘুদের আইন এর দিকে তাকালে কিন্তু একেবারেই ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়।

    ১৯৪৭ এর পর থেকে পাকিস্তানী আমলের ২৪ বছরের পর ১৯৭১ একাত্তরে স্বাধীনতার পর থেকে আজ ২০২০ সাল পর্যন্ত হিন্দু পারিবারিক আইনে যে একমাত্র সংস্কারটি বাংলাদেশে আনা গেছে সেটি হচ্ছে হিন্দু বিবাহের নিবন্ধন করার বিধান, তাও আবার ঐচ্ছিক! বাকি সব ক্ষেত্রে ১৯৪৭ পূর্ববর্তী তিমিরেই রয়ে গেছে হিন্দু আইন। বাংলাদেশে হিন্দুনারীর বিবাহবিচ্ছেদ নেই, সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার নেই- আজো।

    বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, এক্ষেত্রে সবচে' প্রগতিশীলতা দেখিয়েছে পাকিস্তান! তাদের সিন্ধু প্রদেশে ২০১৬ এবং জাতীয়স্তরে ২০১৭ সালে পাস হয়ে গেছে হিন্দুদের বিবাহ, বিচ্ছেদ ও নিবন্ধন সম্পর্কিত আইন!

    আর সবচে' হতাশ করেছে ভারত! স্বাধীনতার ৭০ বছর পর ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে তিন তালাককে অসাংবিধানিক ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ভারত সরকার আরও এক কাঠি এগিয়ে ২০১৯ সালে তিন তালাককে অপরাধ বলে আইন পাস করে। অবশ্য এর আগে ১৯৮৫ সালে শাহবানু মামলায় তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর ভরণপোষণ নিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট একটা রায় দিলেও তা আইন পাসের মাধ্যমে রদ করা হয়। ২০০১ সালে দানিয়েল লতিফি মামলার মাধ্যমে শাহবানুর রায় অবশ্য পুনরুদ্ধার করা হয়। কিন্তু লক্ষণীয় যেটা তা হলো- নাগরিকদেরকেই আদালতে লড়াই করতে হচ্ছে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য; রাষ্ট্র আইন করতে এগিয়ে আসছে না, বরং আইন করে আদালতের রায় নস্যাত করছে। আর যখন একটা আইন করছে তাতে বিদ্বেষের ছাপ স্পষ্ট!

    বিবাহবিচ্ছেদকে আইন পাস করে "ক্রিমিনালাইজ" করার মতো অবাক করা ঘটনা আধুনিক যুগে সম্ভবতঃ এই প্রথমবার হলো! বিয়ের মতো বিচ্ছেদও যে কোন ব্যক্তির স্বাধীন ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার। রাষ্ট্রগুলো যা করে তা হলো- ডিভোর্স এর আগে একটা কুলিং পিরিয়ড ঠিক করে দেয়। যাতে পক্ষরা ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত ও করণীয় পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

    পাকিস্তানের ১৯৬১ সনের আইনে (যা বাংলাদেশেও এখন প্রযোজ্য) তিন তালাকের ক্ষেত্রে ০৩ মাসের একটা কুলিং পিরিয়ড রাখা হয়। ১৯৫৫-তে ভারতে হিন্দু বিবাহবিচ্ছেদের যে আইন করা হয় তাতেও ০৬ মাসের কুলিং পিরিয়ড রাখা হয়। কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদকে কোনভাবেই ক্রিমিনালাইজ করা হয়নি। ভারতীয়রা বরং একটা আইন করতে পারতো- কুলিং পিরিয়ড শেষের পরও যদি আপোষ না হয়ে তালাকই ঘটে তবে দম্পতির সম্পদ-দায়দেনা, ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের জন্য বাড়তি সুবিধা দেয়া, সন্তানদের দায়দায়িত্ব ইত্যাদির জন্য।

    লক্ষণীয় যে, সব দেশই শাস্ত্র-শরিয়ার চোখরাঙানি মোকাবেলা করেই ধর্মীয় সংখ্যাগুরুদের মধ্যে যতদূর সম্ভব সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যে শ্রম, উদ্যম ও মমতার হাত বাড়িয়ে দেয়; সংখ্যালঘুদের জন্য তার সমান তো দূরস্থান সিকিভাগ উদ্যোগও নেয়নি। সংখ্যালঘুদের মধ্যে থেকে সংস্কারের বিরোধিতা থাকার যুক্তিও ধোপে টিকবে এক্ষেত্রে। কারণ, সংখ্যাগুরু মোল্লা/শাস্ত্রতন্ত্রের থেকে বিরোধিতা আরো প্রবল থাকার কথা। তাদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করেই সংস্কারগুলো আনা হয়েছিলো।

    ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি খোলাখুলি রাষ্ট্রীয় উপেক্ষা বা তিন তালাকের ক্রিমিনালাইজেশনের ব্যাখ্যা উপমহাদেশীয় সংখ্যা 'গুরু-লঘু'র ভেদবুদ্ধির বরাত ছাড়া আর কোনভাবেই বা মিলবে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন