#কলমনামা #কুণালশেখর
তিন বছর বয়সে আমার হাতেখড়ি হয়েছিল। পাড়ারই এক কাকু ফি বছর আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পুজো করতেন। এখনো স্পষ্ট মনে আছে তাঁর কোলে বসে চক খড়ি দিয়ে স্লেটে প্রথমে লিখেছিলুম অ আ ক খ আর তার নিচের লাইনে এ বি সি ডি।
স্লেটে চক পেন্সিল দিয়ে লেখা পড়ার শুরু। তারপর স্কুলে ভর্তি হতে উড পেন্সিল দিয়ে লিখতুম। আমাদের স্কুলের কড়া নিয়ম ছিল ক্লাস ওয়ান থেকে পেন ব্যবহার করার। তার আগে শুধুই পেন্সিল।
তো ক্লাস ওয়ানে উঠে আরেক ধাপ প্রোমোশন হলো। পেন্সিল ছেড়ে পেন হাতে নিলুম। পেন বলতে ডট পেন বা বল পয়েন্ট পেন। ঝর্ণা কলমের চল কবেই উঠে গেছে। ডট পেনের জয়জয়কার তখন। কিন্তু জয়জয়কার হলেও ডট পেনের কোন ছিরি ছাঁদ ছিলনা। দেখতে বিচ্ছিরি রকমের হত পেনগুলো। ওদিকে ফাউন্টেন পেন জনপ্রিয়তা হারালেও কি সুন্দর সব চেহারা ছিল তাদের। পার্কার, শেফার, পাইলট, চাইনিজ ফাউন্টেন পেন। যেমন দেখতে তেমনই লিখতে। কিন্তু সে সব কলমে ছোটদের হাত দেওয়া বারন ছিল। কারন কলমগুলো হত ভীষন শৌখিন। উল্টোদিকে ডট পেনগুলো ছিল যেন রাজার দুয়োরানী। না ছিল রূপ না ছিল গুন। তাই খাতির ছিলনা।
বেশ মনে পড়ে তখন একরকম লোহার ডট পেন পাওয়া যেত। লোহার নাকি পিতলের ঠিক বুঝিনি তখন। পেনের রঙটা ছিল রুপোলি। গায়ে লম্বা লম্বা খাঁজ কাটা। আকারে ছোট এবং খুবই সরু। ঠিক মত খেতে পেতনা বোধহয়। তবে পেনটার ওজন ছিল বেশ। ছুঁড়ে মাথায় মারলে আলু গজাবেই গজাবে।
পার্কার কোম্পানির একটা ডট পেন ছিল। নাম ছিল জটার পেন। কোম্পানি পার্কার হলেও পেনটা দেখতে ছিল ভারী সাদামাটা। পেনগুলো দ্বিরঙা হত। মাঝখান থেকে ওপর দিকটা সবসময় রুপোলি। নিচের দিকটা হত গাঢ় নীল, কালো বা মেরুন রঙের। আর পকেটে আটকানোর ক্লিপটা দেখতে ছিল ঠিক একটা তীরের মত। স্কুলের দিদিমনিদের হাতে দেখতুম ওই পেন।
এছাড়াও আরো নানা রকমের ডট পেন পাওয়া যেত। সবই রদ্দি প্লাস্টিকের। গুনগত মানও যাচ্ছেতাই। আর সব থেকে ভয়ঙ্কর ছিল সেই সব পেনের রিফিল। পঞ্চাশ পয়সা মাত্র দাম। একটা রিফিল থেকে মসৃন লেখা পেতে চাইলে প্রথমে রিফিলটাকে পুরোন খবরের কাগজে ঘষে ঘষে তৈরি করতে হত। তাতেই রিফিলের অর্ধেক কালি খতম। দোকানে যখন রিফিল কিনতে যেতাম তখন দোকানদার কাকু রিফিলের বান্ডিল থেকে এক একটা রিফিল বার করে একটা বাতিল কাগজে ঘষে ঘষে দেখতেন। অধিকাংশই সরতনা। শীতকাল হলে কাকু বলতেন ঠান্ডায় কালি জমে গেছে। আর গরমকাল হলে বলতেন গরমে কালি শুকিয়ে গেছে। একটু আধটু সরলেই সেই রিফিল কিনে নেবার প্রথা ছিল। তারপর তাকে বাড়িতে এনে কাগজে ঘষে গোল গোল সার্কেল বানিয়ে সড়গড় করতুম।
অফিসের বাবুরা একরকম পেন ব্যবহার করতেন। দু মুখো পেন। একদিকে নীল কালি আরেকদিকে লাল কালি। সেই পেনগুলোর কোন ঢাকনা থাকত না। দুটো মুখই খোলা। তখন অধিকাংশ পেনগুলোই হত মাথা টেপা পেন। মানে মাথার ওপরে বোতাম টিপলে রিফিল বেরিয়ে আসত। আবার মাথা টিপলে ভেতরে ঢুকে যেত।
আরেক রকম পেন ছিল যেটার মাথা টিপলে রিফিল বেরোত কিন্তু বন্ধ করার জন্য পাশের একটা বোতাম টিপতে হত। সেই পেনের রিফিল বদলানোর একটা বিশেষ প্রক্রিয়া ছিল। পাশের বোতামটা আলপিন বা ওই জাতীয় সরু কিছু দিয়ে ঠেলে ভেতরে ঢোকালে ওপরে মাথা সমেত রিফিলটা বেরিয়ে আসত।
একবার একটা ভারী মজার পেন দেখেছিলুম। তাতে একসাথে চারটে চার রকম রঙের রিফিল ভরা থাকত। তাই স্বাভাবিক ভাবেই পেনটা গায়ে গতরে একটু বেশিই মোটা হত। পেনটার রঙ ছিল একেবারে দুধ সাদা। তার মাথায় ছিল লাল, নীল, সবুজ আর কালো রঙের চারটে বোতাম। যেকোন একটা বোতাম ঠেলে নিচে নামালে স্প্রিংয়ের সাহায্যে সেই রঙের রিফিল বেরিয়ে আসত লেখার জন্য। আবার বোতামে চাপ দিলেই রিফিল ভ্যানিশ।
ছোটবেলায় পুরী বেড়াতে গিয়ে একটা কাঠের পেন কিনেছিলুম। কারুকার্য করা ভারী সুন্দর পেন। তার মাঝখানটায় চারকোনা ডিজাইন থাকত। সেখানে দু পাশে বাংলায় আর দু পাশে ইংরেজিতে লেখা থাকত 'জগন্নাথ' আর 'পুরী'। মাথার দিকটা হত একটু পাতলা এবং ছুঁচোল। আর ধরার দিকটা ছিল সরু পিতলের। তার না ছিল ঢাকনা আর না ছিল রিফিল চালু বন্ধের কোন বোতাম। ও পেন সারাক্ষন খোলাই থাকত।
তবে এমন নয় যে তখন ঢাকনা ওয়ালা পেন একেবারেই ছিলনা। ছিল কিছু পেন। তবে তখনকার পেনের ঢাকনাগুলো এখনের মত টানলে খুলতনা। ফাউন্টেন পেনের মত প্যাঁচ ঘুরিয়ে খুলতে হত। তখন মানুষ পেন নিয়ে বিশেষ মাথাও ঘামাতনা। লেখা গেলেই হল।
আরেকটা প্রিমিয়াম লেভেলের পেন ছিল লাক্সর। ঢাকনা দেওয়া পেন। টেনে খুলতে হত। তার রিফিল ছিল স্কেচ পেনের মত। একটা সরু লম্বা স্পঞ্জের পাইপ। তাতে লিক্যুইড কালি ড্রপার দিয়ে ঢেলে দিতে হত। লেখা পড়ত সরু এবং ঝর্ণা কলমের মত। তবে সেই পেন সাধারণ লেখা লিখির জন্য ব্যবহার হতনা। সেই পেন দিয়ে শুধু নাম সই করারই চল ছিল।
তারপর নব্বইয়ের দশকের মাঝা মাঝি ভারতবর্ষের পেনের বাজারে হল নবজাগরণ। বাজারে এলো রোটোম্যাক পেন। একই সময়ে আসল রেইনল্ডস। এই দুটো কোম্পানি এসে পেনের জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে দিল। আগে ডট পেন মানে ছিল শুধুই লেখার সামগ্রী। এরপর থেকে ডট পেনও হয়ে উঠল একটা স্টেটাস। এতদিন জোরে জোরে ঘষে লেখার আদত ছিল মানুষের। রিফিলের মুখগুলো হত মোটা। রোটোম্যাক আর রেইনল্ডস দেখিয়ে দিল বল পয়েন্ট পেন দিয়েও কত মসৃন ভাবে লেখা যায়। আর রিফিলের মুখগুলো হত সরু, 0.5 টিপ। রেইনল্ডস এর জেটার নামে একটা পেন খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আমারও একটা ছিল। হালকা নীল রঙের। জেটার ছিল মাথা টেপা পেন। যদিও শুরুর দিকে রোটোম্যাক আর রেইনল্ডসের সব পেনই ছিল ঢাকনা ওয়ালা পেন। জেটার ছিল তার মধ্যে ব্যতিক্রম।
তারপর আরো অনেক কোম্পানি তাদের পেন বাজারে আনতে লাগল। সেলো, মনটেক্স, লিংক। পরে পরে এলো পেন্টেল, সেবার, টুডেইস, ফ্লেয়ার, উইনজ এবং আরো অনেক ব্র্যান্ড। প্রতিটা কোম্পানিই একাধিক পেন এনে হাজির। কোনটা ছেড়ে কোনটা নিই। লিংক ই বোধহয় সর্ব প্রথম ইউজ অ্যান্ড থ্রো পেন আনে বাজারে। সাদা রঙের হত পেনগুলো। তার মধ্যে যে রঙের কালি সেই রঙের লম্বা লম্বা লাইন টানা। তার ঢাকনাটাও হত ঠিক কালির রঙ অনুযায়ী। নীল, কালো, লাল, সবুজ আর আকাশী রঙের পাওয়া যেত।
মনটেক্স কোম্পানির একটা পেন ছিল তার নামটা এখন আর মনে নেই। মাথা থেকে ল্যাজ অব্দি পুরো পেনটাই ছিল স্বচ্ছ রঙিন। সেটাই বোধহয় ছিল প্রথম 0.3 রিফিল টিপ। সরু চুলের মত লেখা পড়ত।
তারপর এলো দুটো জাপানি কোম্পানী। মিৎসুবিশি আর অ্যাড (ADD)। তারা নিয়ে এলো জেল পেন। কোম্পানীর ভাষায় রোলার পেন। সেই কালি আরো মসৃন। অনেকটা ঝর্ণা কলমের মত রূপ দিত লেখাকে। তবে ওদের পেনগুলো একটু দামি হত। তাই বোধহয় পড়ুয়াদের মধ্যে খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি। পরে পরে অবশ্য বাকি কোম্পানীগুলোও জেল পেন নিয়ে আসে বাজারে। সেগুলোর দাম অপেক্ষাকৃত কম। তাই সেগুলো খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।
আগে লাল, নীল সবুজ আর কালো এই চার রকম রঙেরই রিফিল পাওয়া যেত। এইসব কোম্পানিগুলো আরো বিভিন্ন রঙের রিফিল বাজারে আনলো। আনকমন সব রঙ। যেমন বেগুনি, কচু কলাপাতি, গোলাপী, খয়েরী, সোনালী।
তবে আমার বরাবরের পছন্দ ছিল কালো কালি। ক্লাস নাইন থেকে যখন যে কলমই কিনতাম কালো কালি দেখেই কিনতাম। কালো কালির প্রতি আমার একটা আলাদাই ফ্যাসিনেশন ছিল। কেন কে জানে। হয়তো ছাপার অক্ষর কালো হত বলে। তাই স্কুলের পরীক্ষায় আমার বন্ধুরা যখন আলেকজান্ডারের রাজ্যবিস্তার সম্পর্কে লিখতে গিয়ে নীল কালিতে উত্তর আর কালো কালিতে পয়েন্ট হেডিং লিখত আমি করতাম ঠিক তার উল্টো।
সেলো কোম্পানির গ্রিপার বলে একটা পেন ছিল আমার খুব পছন্দের। পুরো পেনটাই ছিল সাদা স্বচ্ছ। তাই কালি কতটা শেষ হয়েছে তা দেখার জন্য পেন খুলে রিফিল বার করতে হতনা। বাইরে থেকেই দিব্যি দেখা যেত। পেনটার সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব ছিল এই যে আঙুলে ধরার জায়গাটায় রবারের গ্রিপ থাকত একটা। তাতে পেন ধরতেও সুবিধে হত আর ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে লিখলেও আঙুলে ব্যাথা হতনা। মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিকের সমস্ত পরীক্ষা আমি ওই পেনেই কালো কালিতে দিয়েছি। গ্রিপ দেওয়া পেন বাজারে ওটাই প্রথম।
তারপর জেল পেন ব্যবহার করতে শুরু করি। কলেজ আর ইউনিভার্সিটির যত পরীক্ষা সব জেল পেন দিয়েই লিখেছি। ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ব্র্যান্ডের পেন। তবে কালিটা কালোই ছিল সব সময়। আজও আমি কালো কালিতেই লিখতে পছন্দ করি। তবে এখন আর পেন নিয়ে বাছ বিচার নেই। হলেই হল যেকোন একটা।
তখন বন্ধুদের মধ্যে পেন নিয়ে প্রতিযোগিতা চলত। কেউ কোন নতুন পেন কিনলেই সগর্বে ক্লাসে এনে দেখাতুম। এক সহপাঠী ছিল যার বাতিক ছিল নিত্য নতুন পেন ব্যবহার করা। দোকানে নতুন কোন পেন এলেই সাথে সাথে কিনে নিত। তারপর পরবর্তী নতুন পেন বেরোন পর্যন্ত সেটাতেই লিখত। তবে নতুন পেন কিনে পুরোনটা কিন্তু অবহেলায় ফেলে রাখত না। বরং বেশ যত্ন করেই জমিয়ে রাখত নতুন রিফিল ভরে। একটা এলুমিনিয়মের বই রাখার স্যুটকেস ছিল ওর। তাতেই রাখত সমস্ত পেন। ওর সংগ্রহে যত পেন ছিল তেমনটি আর কারো কাছে দেখিনি। এখন আর তার সাথে যোগাযোগ নেই। কে জানে এখনও ওর পেন বাতিক আছে কিনা।
এখন তো আরো হাজারটা কোম্পানীর পেন বেরিয়ে গেছে। সেসবের নামও জানা নেই। পেনের বিজ্ঞাপনও খুব বেশি চোখে পড়েনা এখন। তখন কিন্তু জোরকদমে বিজ্ঞাপন দিত প্রতিটা কোম্পানি। টিভি থেকে শুরু করে খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন মায় হোর্ডিং পর্যন্ত। বড় বড় সব সেলিব্রিটিদের দিয়ে প্রোমোট করাত। রেইনল্ডস এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর, পার্কার এর ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, রোটোম্যাক এর ছিলেন অভিনেত্রী রবিনা ট্যান্ডন এবং গীতিকার জাভেদ আখতার, আর সেলো তে দেখা যেত মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। এখন আর পেনের বাজারে সেরকম চটকদার বিজ্ঞাপন চোখে পড়েনা। জানিনা এখনকার পড়ুয়াদের মধ্যে পেন নিয়ে সেরকম বাতিক বা পাগলামো আছে কিনা।
©
ওহ, ওইটা কুণাল খেমু নাকি?
এই হলো আমাদের দেখা প্রথম মাইক্রোটিপ। তারপর তো আরো অনেক এলো।
Right. This is the pen i was talking about.
১
অনেক পুরনো কথা মনে করিয়ে দিলেন।
এপারে সাতের দশকেও সরকারি দপ্তরে "হ্যান্ডেল পেন" চালু ছিল। ছোটবেলার সেই স্মৃতি এখনো আবছা মনে আছে। মা সৈয়দা আজগারী সিরাজী ছিলেন সরকারি রেডিও অফিস "বেতার বাংলা" র আপার ক্লার্ক। মা'র অফিসে এই কলমের আকছার ব্যবহার দেখেছি। কাঠের ডাঁটিওয়ালা কলমগুলোর একদিকে নিব জুড়ে কালো কালির দোয়াতে বার বার ডুবিয়ে লেখা হতো। বিশেষ আদেশের জন্য লাল ও বেগুনি রংগের কালি ছিল। আর নিব ভোঁতা হলে তা পাল্টে নেওয়া যেত। নিবগুলো ছিল পেতলের, সাদামাটা, আধ ইঞ্চি লম্বা।
শুনেছি, তখন সদ্য স্বাধীন দেশের সরকার পাকিস্তান আমলের বাতিল পাঁচ পয়সার পেতলের চৌকো পয়সা গলিয়ে নাকি নিব তৈরির সংকট মিটিয়েছিল।
সম্ভবত হ্যান্ডেল পেন ছিল আদি কুইল পেন বা খাগের কলমের পরবর্তী সংস্করণ।
বছর দুয়েক আগে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের হ্যান্ডেল পেনের বিচিত্র সংগ্রহ দেখে চমকিত হয়েছি।
২
স্লেট-চকে অক্ষর বিদ্যার পরে পেনসিলে প্রোমোশন পেয়েছিলাম। হাইস্কুলে প্রথম ফাউন্টেন পেন পাই "ইয়থ" নামের চাইনিজ কলম, এর ক্যাপটি সোনালী বা রূপালী হতো। আর কালিও ছিল "পেলিক্যান" ব্ল্যাক ও রয়েল ব্লু রংগের। অন্য কলমও তখন ছিল, কিন্তু সে সবের নাম মনে নেই।
পার্কার ফাউন্টেন ছিল প্রয়াত বাবা আজিজ মেহেরের, সে সবে হাত দেওয়া নিষেধ ছিল। একটি কলমের নিব নাকি সোনার ছিল, খুব সুন্দর নকশা কাটা। বাবা পরে পার্কার বল পেনও কিনেছিলেন, এগুলোর আলাদা রিফিল পাওয়া যেত।
হাইস্কুলে কলম লিক করে সাদা ইউনিফরম শার্টের পকেটে কালির ছোপ পড়েছে, এ ছিল সাধারণ ঘটনা। পরীক্ষার সময় আমাদের প্রত্যেকের আলাদা কালির দোয়াত ও আরেকটি বাড়তি কলম নিয়ে যেতে হতো।
৩
আটের দশকে এলো বল পেন, জাপানি "রেড লিফ" স্বচ্ছ প্লাস্টিকের কলমটি স্কুল-কলেজে খুব জনপ্রিয় ছিল। লাল, কালো, নীল -- এই তিন রংগের রিফিল আলাদা পাওয়া যেত। এছাড়া চাইনিজ সস্তার বলপেনও ছিল।
পরে এলো দেশি "ইকোনো" ওয়ান টাইম পেন, দাম ছিল মাত্র দুটাকা। এই কলম মোটামুটি একচেটিয়া বাজার পেয়েছিল। দেখাদেখি আরও কয়েকটি ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বল পেন চালু হলো। আর ঝেঁটিয়ে বিদায় হলো সব সস্তার ফাউন্টেন পেন। সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ সর্বত্র ব্যবহার হতো এই কলম।
এখনো মনে আছে, সাদাকালো টিভির বিজ্ঞাপন ছিল অনেকটা এরকম, বাচ্চা একটি ছেলে কলম দিয়ে লিখছে আর বলছে, "ইকোনো লেখে চমৎকার, এক কলমে মাইল পার!"
৪
রিপোর্টিঙের দীর্ঘ পেশাগত জীবনে সব সময় কালো কালির বল পেন ব্যবহার করেছি। ঢাকার বাইরে থেকে সরেজমিন নিউজ ফ্যাক্সে পাঠাতে হতো। নীল কালির লেখা ফ্যাক্সে ঝাপসা আসে বলে ঝুঁকি নিতাম না।
জাপানি "পাইলট" বলপেনই বেশী ব্যবহার করেছি, সাদা স্বচ্ছ প্লাস্টিকের এই কলমে আংগুলে ধরার জায়গায় কালো রংগের নরম রাবারের গ্রিপ থাকে, এতে আংগুল ব্যথা হয় না, আবার কলমটিও ফস্কে যায় না।
নয়ের দশকে কম্পিউটার ও ইমেইল চালু হলে নোট নেওয়া ছাড়া কলমের ব্যবহার থাকে না। এখন সিনিয়র নিউজ ডেস্কে কাজ করায় কলমের ব্যবহার স্বাক্ষর দেওয়া ছাড়া প্রায় নেই। তবু পাইলট বল পেনের প্রতি এখনো মায়া আছে।
এখনকার রিপোর্টারদের দেখি, স্মার্ট ফোনে সরাসরি ভয়েজ রেকর্ড করতে, না হয় গুগল নোট প্যাডে লিখতে।
আর এই মন্তব্যটি এখন লিখছি গুরুর এপে স্মার্ট ফোনে অভ্র ফনেটিক কি বোর্ডে, শুধুমাত্র অক্ষর ছুঁয়ে, ভাবা যায়!